রক্ত ও সঞ্চালন অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর(৪র্থ অধ্যায়) রক্ত ও সঞ্চালন অনুধাবনমূলক সাজেশন

রক্ত সঞ্চালন অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর(৪র্থ অধ্যায়) রক্ত ও সঞ্চালন অনুধাবনমূলক সাজেশন এইচএসসি জীববিজ্ঞান ২য় পত্রের অনুধাবনমূলক প্রশ্নের সাজেশন ও অনুশীলন হিসেবে দেওয়া হয়েছে। অনুধাবন স্তরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর

রক্ত

প্রশ্ন ১। রক্তকণিকাগুলোর মধ্যে বর্ণের ভিন্নতা দেখা যায় কেন? [রা. বো. ২১)
উত্তর : রক্তকণিকাগুলোর মধ্যে বর্ণের ভিন্নতার কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো-
১. লোহিত কণিকার মধ্যে হিমোগ্লোবিন উপস্থিত থাকার কারণে লোহিত কণিকা লাল বর্ণ দেখায়।
২। শ্বেত কণিকায় হিমোগ্লোবিন অনুপস্থিত থাকার ফলে শ্বেতকণিকা সাদা দেখায়। এখানে কিছু ক্ষারধর্মী শ্বেতকণিকা থাকে।
৩. অণুচক্রিকাতে হিমোগ্লোবিন অনুপস্থিত থাকে তাই অণুচক্রিকা বর্ণহীন দেখায়।

প্রশ্ন ২। লোহিত কণিকার কাজ ব্যাখ্যা কর। [সি. বো. ২১]
উত্তর : লোহিত কণিকার কাজ নিম্নরূপ :
১. O2 এবং CO2 পরিবহন করে।
২. বাফার হিসেবে অম্ল ও ক্ষারের সমতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
৩. রক্তের সান্দ্রতা বজায় রাখে।
৪. রক্তের ধনাত্মক ও ঋণাত্মক আয়নের সাম্যাবস্থা বজায় রাখে।

প্রশ্ন ৩। রক্তের কাজ উল্লেখ কর।
উত্তর : রক্ত দেহে নানাবিধ কাজ করে, যেমন-
১. দেহকোষে অক্সিজেন পরিবহন করে।
২. দেহের বাইরে কার্বন ডাই-অক্সাইড অপসারণ করে।
৩. দেহের সর্বত্র তাপের সমতা রক্ষা করে।
৪. খাদ্যসার পরিবহন করে।
৫. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

প্রশ্ন ৪। হিমোগ্লোবিনের ভাঙ্গন প্রক্রিয়াটি লিখ।
উত্তর : হিমোগ্লোবিন লাল বর্ণের একটি শ্বাসরঞ্জক। হিমোগ্লোবিনকে ভাঙ্গলে সরল প্রোটিন নামক গ্লোবিন (৯৬%) এবং লৌহঘটিত পদার্থ হিম (৮%) পাওয়া যায়। হিম অংশের ৩৩.৩৩% লৌহ থাকে।হিমোগ্লোবিনের প্রতিটি হিম অংশে এক অণু করে ফেরাস আয়রন (Fe++) থাকে। এটি অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে ফেরাস অক্সাইড গঠন করে (Feo)। প্রতিটি হিমোগ্লোবিনের চারটি হিম অংশ থাকায় এর চারটি ফেরাস অণু চার অণুর সাথে যুক্ত হতে পারে।

রক্ত

প্রশ্ন ৫। অস্থিকে রক্ত উৎপাদনের কারখানা বলা হয় কেন?
উত্তর : ভ্রূণীয় অবস্থা হতে শুরু করে শৈশবে, এমনকি জীবনের শেষ পর্যায়ে লাল অস্থিমজ্জার হিমোপোয়েটিক স্টেম কোষ লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদন করে। এজন্য অস্থিকে রক্তকণিকা উৎপাদনের কারখানা বলা হয়।

প্রশ্ন ৬ । লিউকোসাইটকে কেন শ্বেত রক্তকণিকা বলা হয়?
উত্তর : লিউকোসাইট নিউক্লিয়াসযুক্ত বড় আকারের রক্তকণিকা। এরা নির্দিষ্ট আকৃতিবিহীন এবং এদের কোনো হিমোগ্লোবিন থাকে না। হিমোগ্লোবিন নামক রঞ্জক পদার্থ না থাকার কারণে এদের শ্বেত রক্তকণিকা বলা হয়।

রক্ত সঞ্চালন অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর(৪র্থ অধ্যায়) রক্ত ও সঞ্চালন অনুধাবনমূলক সাজেশন

রক্ত জমাট বাঁধা

প্রশ্ন ৭। ক্ষতস্থানে রক্ত জমাট বাঁধে কেন? [চ. ৰো, ‘২১]
উত্তর : যে প্রক্রিয়ায় ক্ষতস্থান থেকে নির্গত হওয়া রক্তের প্লাজমা থেকে ফাইব্রিনোজেন আলাদা হয়ে ফাইব্রিনজালক গঠনপূর্বক রক্তপাত বন্ধ করে এবং রক্তের অবশিষ্টাংশকে জেলির ন্যায় থকথকে পিণ্ডে পরিণত করে তাকে রক্ত তঞ্জন বা রক্তের জমাট বাঁধা বলে। সমগ্র রক্ত তঞ্জন প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া। এটি কমপক্ষে ১৩টি ভিন্ন ভিন্ন ফ্যাক্টরের সমন্বিত কার্যের দ্বারা সংঘটিত হয়।

প্রশ্ন ৮ । রক্ত তঞ্চন বলতে কী বুঝ? [দি. বো, ‘২১]
উত্তর : যে প্রক্রিয়ায় ক্ষতস্থান থেকে নির্গত হওয়া রক্তের প্লাজমা থেকে ফাইব্রিনোজেন আলাদা হয়ে ফাইব্রিনজালক গঠনপূর্বক রক্তপাত বন্ধ করে এবং রক্তের অবশিষ্টাংশকে জেলির ন্যায় থকথকে পিণ্ডে পরিণত করে তাকে রক্ত তঞ্চন বা রক্তের জমাট বাঁধা বলে। সমগ্র রক্ত তঞ্চন প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া। এটি কমপক্ষে ১৩টি ভিন্ন ভিন্ন ফ্যাক্টরের সমন্বিত কার্যের দ্বারা সংঘটিত হয়।

রক্ত জমাট বাঁধা

প্রশ্ন ৯। দেহ অভ্যন্তরে রক্ত জমাট বাঁধে না কেন?
উত্তর : দেহের অভ্যন্তরে রক্ত জমাট না বাধার কারণ-
১. রক্ত প্রচণ্ড গতিতে অবিরাম প্রবহমান থাকে।
২. রক্ত তঞ্চনকারী প্রভাবকসমূহ ২ ধরনের (১) প্রো-কোয়াগুলেট এবং (২) অ্যান্টিকোয়াগুলেট ফ্যাক্টর। রক্ত জমাট বাধা নির্ভর করে এদের ভারসাম্যের উপর। স্বাভাবিক অবস্থায় অ্যান্টিকোয়াগুলেট প্রোকোয়াগুলেটের উপর প্রকট। ফলে রক্তনালীর অভ্যন্তরে রক্ত জমাট বাঁধে না।

প্রশ্ন ১০। রক্তবাহিকায় রক্ত জমাট বাঁধে না কেন?
উত্তর : নিম্নলিখিত কারণে রক্তবাহিকায় রক্ত জমাট বাঁধে না-
১. বেসোফিল হেপারিন নিঃসৃত করে রক্তকে রক্তবাহিকায় জমাট বাঁধতে বাধা দেয়।
২. রক্তবাহিকার মধ্য দিয়ে অনবরত সঞ্চালিত হতে থাকে।

লসিকা

প্রশ্ন ১১। শিরা ও ধমনির মধ্যে পার্থক্য দেখাও।
উত্তর : শিরা ও ধমনির মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-

ধমনিশিরা
১. হৃৎপিণ্ডে উৎপন্ন হয়ে দেহের কৈশিক জালিকায় সমাপ্ত হয়।১. কৈশিক জালিকা হতে উৎপন্ন হয়ে হৃৎপিণ্ডে শেষ হয়।
২. পালমোনারি ধমনি ছাড়া অন্য সকল ধমনি O2 যুক্ত রক্ত পরিবহন করে।২. পালমোনারি শিরা ব্যতীত সকল শিরা CO2 সমৃদ্ধ রক্ত পরিবহন করে।

প্রশ্ন ১২। লসিকাতন্ত্র বলতে কী বুঝ? [ম. বো. ২১]
উত্তর : লসিকা নালি ও লসিকা গ্রন্থির সমন্বয়ে গঠিত যে তন্ত্রের মাধ্যমে সমগ্র দেহে লসিকা রস প্রবাহিত হয় তাকে লসিকাতন্ত্র বলে। ডেনিস বিজ্ঞানী Olaus Rudbeck এবং Thomas Bartholin, ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম মানুষের লসিকাতন্ত্রের বিবরণ দেন। রক্ত সংবহনতন্ত্র এবং লসিকাতন্ত্র উভয়েই সমগ্র দেহে ফ্লুইড সংবহন করে বলে লসিকাতন্ত্রকে কখনো কখনো দ্বিতীয় সংবহনতন্ত্র বলেও অভিহিত করা হয়। লসিকাতন্ত্র প্রধান দুটি উপাদান নিয়ে গঠিত, যথা- লসিকানালি ও লসিকাগ্রন্থি.

রক্ত সঞ্চালন অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর(৪র্থ অধ্যায়) রক্ত ও সঞ্চালন অনুধাবনমূলক সাজেশন

মানুষের হৃৎপিণ্ডের গঠন

প্রশ্ন ১৩। বাম ও ডান নিলয়ের মধ্যে কোনটির প্রাচীর পুরু এবং কেন? (ঢা. বো. ১৯)
উত্তর : বাম নিলয়ের প্রাচীর অপেক্ষাকৃত পুরু। হৃৎপিণ্ডের বাম নিলয়ের প্রাচীর ডান নিলয়ের প্রাচীর অপেক্ষা পুরু হওয়ার কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো-
হৃৎপিণ্ডের ডান নিলয় থেকে ফুসফুসে রক্ত প্রেরিত হয় এবং এটি হৃৎপিণ্ডের খুব নিকটে অবস্থিত বলে খুব কম শক্তি প্রয়োগ করা লাগে। অন্যদিকে হৃৎপিণ্ডের বাম নিলয় থেকে সমগ্রদেহে রক্ত প্রেরিত হওয়ার কারণে অনেক বেশি শক্তি প্রয়োগ করতে হয়। ফলে সমপরিমাণ রক্ত প্রেরণ করলেও ডান নিলয় থেকে বাম নিলয়ের বেশি কাজ করতে হয়। এ কর্মদক্ষতার তারতম্যের কারণে বাম নিলয়ের প্রাচীরের অঙ্গসংস্থানিক পরিবর্তন ঘটে অর্থাৎ বাম নিলয়ের প্রাচীর ডান নিলয়ের প্রাচীর অপেক্ষা অধিক পুরু হয়।

প্রশ্ন ১৪। পারকিনজি ফাইবার বলতে কী বুঝ?
উত্তর : বান্ডল অব হিজ থেকে সৃষ্ট বিশেষ ধরনের তন্তু যা হৃৎপিণ্ডের নিলয়ের প্রাচীরে জালিকার মতো বিস্তৃত থাকে। এই বিশেষ ধরনের তন্তুই হলো পারকিনজি ফাইবার। এই ফাইবারের মাধ্যমে উদ্দীপনা সবচেয়ে দ্রুত ও কার্যকরভাবে সঞ্চারিত হয়।

হার্টবিট-কার্ডিয়াক চক্র

প্রশ্ন ১৫ । বান্ডল অব হিজ বলতে কী বুঝ? [য, বো, ‘২১]
উত্তর : বান্ডল অব হিজ হচ্ছে হৃৎপিণ্ডের আন্তঃনিলয় প্রাচীরের দৈর্ঘ্য বরাবর অবস্থিত একটি বিশেষ ধরনের তন্তু, যা বাম ও ডান শাখায় বিভক্ত হয়ে পারকিনজি তন্তুর সাথে মিলিত হয়। সুইস কার্ডিওলজিস্ট উইলহেলম হিজ ১৮৯৩ সালে এটি আবিষ্কার করেন। AVN থেকে প্রেরিত হৃদ উদ্দীপনা বান্ডল অব হিজ কলা কর্তৃক গৃহীত হয়।

প্রশ্ন ১৬। কার্ডিয়াক চক্র বলতে কী বোঝ?
উত্তর : হৃদস্পন্দনের সময় হৃৎপিণ্ডের অভ্যন্তরে রক্ত চলাচলের জন্য ধারাবাহিকভাবে কতকগুলো ঘটনা ঘটে। একটি হৃদস্পন্দন বা ইটিবিট সম্পন্ন করতে হৃৎপিণ্ডে পরপর সংঘটিত ঘটনার সমষ্টিকে কার্ডিয়াক চক্র বা হৃদচক্র বলে। এ চক্রে হৃৎপিণ্ডে অ্যাট্রিয়াম ও ভেন্ট্রিকলের বারবার সংকোচন এবং প্রসারণের সাথে সংশ্লিষ্ট। যদি প্রতি মিনিটে গড়ে ৭৫ বার হৃদস্পন্দন হয় . তবে কার্ডিয়াক চক্রের সময়কাল = ০.৮ সে. ।স্বাভাবিকভাবেই একটি কার্ডিায়ক চক্রের স্থিতিকাল ০.৮ সেকেন্ড।

রক্তচাপ ও ব্যারোরিসিপ্টার

প্রশ্ন ১৭। রক্তচাপ বলতে কী বুঝ?
উত্তর : হৃৎপিণ্ডের সংকোচন ও প্রসারণের ফলে রক্তনালিতে দুধরনের চাপ অনুভূত হয়। রক্তনালি বা ধমনিগাত্রের এ চাপকেই রক্তচাপ বলে। হৃদপ্রকোষ্ঠের সিস্টোল অবস্থায় ধর্মনি গাত্রে যে পার্শ্বচাপ প্রয়োগ করে তাকে সিস্টোলিক চাপ বলে। অপরদিকে হৃৎপিণ্ডের ডায়াস্টোল অবস্থায় ধমনি গাত্রে যে পার্শ্বচাপ অনুভূত হয় তাকে ডায়াস্টোলিক চাপ বলে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ ব্যক্তির সিস্টোলিক চাপ ১০০-১৪০ মি.মি. এবং ডায়াস্টোলিক চাপ হলো ৭০ – ৯০মি.মি. ।

প্রশ্ন ১৮। ব্যারোরিসেন্টর বলতে কী বুঝ?
উত্তর : মানুষের রক্তবাহিকার প্রাচীরে বিশেষ সংবেদী স্নায়ু প্রান্ত থাকে। এগুলো রক্তচাপ পরিবর্তনে বিশেষভাবে সাড়া দেয় এবং দেহে রক্ত চাপের ভারসাম্য রক্ষা করে। এ সংবেদী স্নায়ু প্রান্তকে ব্যারোরিসেপ্টর বলে । এসব স্নায়ু প্রান্ত অস্বাভাবিক রক্তচাপ শনাক্ত করে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে যে বার্তা পাঠায় তার প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র হৃৎস্পন্দন মাত্রা ও শক্তি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রক্তচাপ স্বাভাবিককরণে ভূমিকা পালন করে।

রক্ত সঞ্চালন অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর(৪র্থ অধ্যায়) রক্ত ও সঞ্চালন অনুধাবনমূলক সাজেশন

মানবদেহের রক্ত সংবহনতন্ত্র

প্রশ্ন ১৯। পালমোনারি সংবহন বলতে কী বুঝ? [য..বো. ২১]
উত্তর : যে সংবহনে রক্ত হৃৎপিণ্ডের ডান ভেন্ট্রিকল থেকে ফুসফুসে পৌছায় এবং ফুসফুস থেকে বাম অ্যাট্রিয়ামে ফিরে আসে তাকে পালমোনারি সংবহন বলে। পালমোনারি সংবহনের শুরু হয় পালমোনারি ধমনি থেকে, আর পালমোনারি ধমনির উদ্ভব ঘটে ডান ভেন্ট্রিকল থেকে। ডান ভেন্ট্রিকলের সঙ্কোচনের ফলে কার্বন ডাইঅক্সাইড সমৃদ্ধ রক্ত পালমোনারি ধমনিতে প্রবেশ করে। [কু.বো. ‘২১]

প্রশ্ন ২০। রক্তনালির ভিতরে রক্ত তঞ্জন হয় না কেন?
উত্তর : রক্তনালির ভিতরে রক্ত তঞ্জন হয় না কারণ-
১. রক্ত প্রচণ্ড গতিতে অবিরাম প্রবাহমান থাকে।
২. রক্ত তঞ্জনকারী প্রভাবকসমূহ ২ ধরনের (১) প্রো-কোয়াগুলেট এবং (২) অ্যান্টিকোয়াগুলেট ফ্যাক্টর। রক্ত জমাট বাঁধা নির্ভর করে এদের ভারসাম্যের উপর। স্বাভাবিক অবস্থায় অ্যান্টিকোয়াগুলেট প্রোকোয়াগুলেটের উপর প্রকট। ফলে রক্তনালির ভিতরে রক্ত তঞ্চন হয় না।

প্রশ্ন ২১। মুক্ত সংবহন বলতে কী বুঝায়? [রা. বো. সি. বো, ‘১৯]
উত্তর : যে সংবহনতন্ত্রে রক্ত হৃৎপিণ্ড থেকে নালিকা পথে বের হয়ে পরে উন্মুক্ত দেহ গহ্বরে প্রবেশ করে এবং দেহ গহ্বর থেকে পুনরায় নালিকা পথে হৃৎপিণ্ডে ফিরে আসে তা মুক্ত রক্ত সংবহন। অর্থাৎ রক্ত সর্বদা রক্তবাহিকার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয় না। চিংড়ি, পতঙ্গ, মলাস্কা প্রভৃতি প্রাণীর দেহে এ ধরনের সংবহন দেখা যায়।

মানবদেহের রক্ত সংবহনতন্ত্র

প্রশ্ন ২২। করোনারি সংবহন বলতে কী বোঝায়? [চ, বো, ‘১৭]
উত্তর : যে প্রক্রিয়ায় হৃৎপিণ্ড থেকে রক্ত করোনারি ধমনির মাধ্যমে হৃদপেশিতে সরবরাহ হয় এবং হৃদপেশি থেকে করোনারি সাইনাসের মধ্যে দিয়ে হৃৎপিণ্ডের ডান অলিন্দে ফিরে আসে তাকে করোনারি সংবহন বলে। উক্ত প্রক্রিয়া করোনারি ধমনি ও করোনারি সাইনাসের মধ্য দিয়ে সংঘটিত হয় বলে একে করোনারি সংবহনতন্ত্র বলে। করোনারি সংবহনের মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডের দেয়ালের কোষসমূহের O2,পুষ্টি, খনিজ লবণ ইত্যাদির চাহিদা পূরণ করে এবং বিপাকীয় বর্জ্য অপসারণ করে।

প্রশ্ন ২৩। সিস্টেমিক সংবহন বলতে কী বোঝ?
উত্তর : যে তন্ত্রের মাধ্যমে হৃৎপিণ্ড থেকে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত দেহের বিভিন্ন অঞ্চলে এবং দেহের বিভিন্ন অঞ্চলের ক্যাপিলারি জালক থেকে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত হৃৎপিণ্ডে প্রবেশ করে তাকে সিস্টেমিক সংবহন বলে। সিস্টেমিক সংবহন তন্ত্র দুই ভাগে বিভক্ত। যথা- (i) সিস্টেমিক ধমনিতন্ত্র ও (ii) সিস্টেমিক শিরাতন্ত্র

হার্ট অ্যাটাক ও হার্ট ফেইলিউর

রক্ত ও সঞ্চালন অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর(৪র্থ অধ্যায়) রক্ত ও সঞ্চালন অনুধাবনমূলক সাজেশন

প্রশ্ন ২৪। MI বলতে কী বুঝায়?
উত্তর : MI হলো মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন যা হার্ট অ্যাটাক নামে পরিচিত। মায়োকার্ডিয়াল অর্থ হৃদপেশি, আর ইনফার্কশন অর্থ অক্সিজেনের অভাবে দম বন্ধ হওয়া। দীর্ঘ সময় ব্যাপী হৃৎপিণ্ডের কোন অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ থাকলে ঐ অংশের পেশিগুলো অকার্যকর হয়ে কিংবা মরে গিয়ে যে সমস্যা সৃষ্টি করে তাকেই সাধারণ ভাষায় হার্ট অ্যাটাক বা মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন বলে।[য, বো, ‘১৯]

মানবদেহের রক্ত সংবহনতন্ত্র

প্রশ্ন ২৫। হার্ট অ্যাটাক বলতে কী বুঝ?
উত্তর : পর্যাপ্ত অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত সরবরাহের অভাবে কার্ডিয়াক পেশির ‘ধ্বংস বা মরে যাওয়াকে হার্ট অ্যাটাক বলে। যখন কারও হৃদযন্ত্রের কোনো অংশে রক্ত জমাট বাঁধার কারণে রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায় কিংবা বাধাগ্রস্থ হয় তখন হার্ট অ্যাটাকের মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়। হার্ট অ্যাটাককে মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন ও বলা হয় ।

প্রশ্ন ২৬। হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো লিখ। [দি. বো. ১৯]
উত্তর : হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো নিচে দেওয়া হলো-
১. বুকের ঠিক মাঝখানে অস্বস্তি হওয়া যা কয়েক মিনিট থাকে, চলে যায় আবার ফিরে আসে। বুকে অসহ্য চাপ বা ব্যথা অনুভূত হয়।
২।এক বা উভয় বাহু, পিঠ, গলা, চোয়াল বা পাকস্থলীর উপরের অংশে অস্বস্তি বা ব্যথা অনুভব ।
৩. বুকে অস্বস্তির সময় ঘন ঘন নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস ঘটে
৪. পাকস্থলীতে অস্বস্তির সঙ্গে বমি-বমি ভাব, বমি হওয়া, হঠাৎ মাথা ঝিমঝিম করা অথবা ঠাণ্ডা ঘাম বেরিয়ে যাওয়া।

মানবদেহের রক্ত সংবহনতন্ত্র

প্রশ্ন ২৭। অ্যানজাইনা বলতে কী বুঝ? (ঢা. বো.’১৫)
উত্তর : অ্যানজাইনা হলো এক প্রকার হূৎপিণ্ডজনিত বুক ব্যথা। হৃদপেশি যখন O2 সমৃদ্ধ পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ পায় না তখন বুকে এক ধরনের ব্যথা অনুভূত হয় এবং দম বন্ধ হয়ে আসছে বলে মনে হয়।এ ধরনের ব্যথাই হলো অ্যানজাইনা। হৃৎপিণ্ডজনিত বুক ব্যথা হওয়ায় অ্যানজাইনাকে হার্ট অ্যাটাকের পূর্বসুরী মনে করা হয়।

প্রশ্ন ২৮। মায়োজেনিক নিয়ন্ত্রণ বলতে কী বুঝ? [দি. বো ‘১৭]
উত্তর : মানুষসহ বিভিন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণীর হৃৎপিণ্ড স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংকুচিত প্রসারিত হয়ে সমগ্র দেহে রক্ত সঞ্চালন ঘটায়। এতে প্রচণ্ড গতিতে দেহে রক্ত প্রবাহিত হয়। বাইরের কোনো উদ্দীপনা ছাড়াই হৃৎপিণ্ডের ক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। এ ধরনের নিয়ন্ত্রণকে মায়োজেনিক নিয়ন্ত্রণ বলে অর্থাৎ স্নায়ুতন্ত্র বা হরমোন কিংবা অন্য কোনো উদ্দীপনা ছাড়াই নিজ থেকে হৃদস্পন্দন তৈরি হয়।[য. বো, ‘১৬]

প্রশ্ন ২৯। স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক বলতে কী বুঝ?
উত্তর : যখন মস্তিষ্কের কোনো অংশের শিরা বা ধমনি ছিড়ে যাওয়ার কারণে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায় তখন সে অবস্থাকে স্ট্রোক বলে। পর্যাপ্ত অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত সরবরাহের অভাবে কার্ডিয়াক পেশির ধ্বংস বা মরে যাওয়াকে হার্ট অ্যাটাক বলে। যখন কারও হৃদযন্ত্রের কোনো অংশে রক্ত জমাট বাঁধার কারণে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায় কিংবা বাধাগ্রস্ত হলে তখন হার্ট অ্যাটাকের মতো অবস্থা সৃষ্টি হয় ।

রক্ত ও সঞ্চালন অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর(৪র্থ অধ্যায়) রক্ত ও সঞ্চালন অনুধাবনমূলক সাজেশন

পেসমেকার ও ওপেন হার্ট সার্জারি

[রা. বো, ‘২১]

প্রশ্ন ৩০ । প্রাকৃতিক পেসমেকার কীভাবে কাজ করে?
উত্তর : Sino-Atrial Node বা SAN কে পেসমেকার বলে। দেহের পেসমেকার বা SAN কাজ না করলে হৃৎপিণ্ডের সাথে কৃত্রিম পেসমেকার স্থাপন করে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে হার্টবিট স্বাভাবিক করা,যায়। পেসমেকার মন্থর হৃদস্পন্দনকে গতিশীল করে এবং দ্রুতশীল হৃদস্পন্দনকে স্বাভাবিক করে। এটি হৃৎপিণ্ডের উপরের ও নিচের প্রকোষ্ঠের মধ্যে বৈদ্যুতিক সংকেতের সমন্বয় ঘটায়। এটি অলিন্দদ্বয়ের মধ্যে বৈদ্যুতিক সংকেতের সমন্বয় ঘটায়। এটি বিপদজনক হার্টবিট নিয়ন্ত্রণ করে। এসব কারণে পেসমেকার ব্যবহার করা হয়।

প্রশ্ন ৩১। পেসমেকার ব্যবহার করা হয় কেন? [কু. বো, ‘১৬]
উত্তর : Sino-Atrial Node বা SAN কে পেসমেকার বলে। দেহের পেসমেকার বা SAN কাজ না করলে হৃৎপিণ্ডের সাথে কৃত্রিম পেসমেকার স্থাপন করে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে হার্টবিট স্বাভাবিক করা যায়। পেসমেকার মন্থর হৃদস্পন্দনকে গতিশীল করে এবং দ্রুতশীল হৃদস্পন্দনকে স্বাভাবিক করে। এটি হৃৎপিণ্ডের উপরের ও নিচের প্রকোষ্ঠের মধ্যে বৈদ্যুতিক সংকেতের সমন্বয় ঘটায়। এটি অলিন্দদ্বয়ের মধ্যে-বৈদ্যুতিক সংকেতের সমন্বয় ঘটায়। এটি বিপদজনক হার্টবিট নিয়ন্ত্রণ করে। এসব কারণে পেসমেকার ব্যবহার করা হয়।

করোনারি বাইপাস ও এনজিওপ্লাস্ট

প্রশ্ন ৩২। করোনারী বাইপাস সার্জারি বলতে কী বুঝ? [দি. বো, ‘২১]
উত্তর : এক বা একাধিক করোনারি ধমনির ল্যুমেন রুদ্ধ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দেহের অন্য অংশ থেকে একটি সুস্থ রক্তবাহিকা কেটে এনে রুদ্ধ ধর্মনির পাশে স্থাপন করে রক্ত সরবরাহের যে বিকল্প পথ সৃষ্টি করা হয় তাই করোনারি বাইপাস।

প্রশ্ন ৩৩ । অ্যানজিওপ্লাস্টি বলতে কী বোঝ?
উত্তর : বড় ধরনের অস্ত্রোপচার না করে হৃৎপিণ্ডের সংকীর্ণ লুমেনযুক্ত বা রুদ্ধ হয়ে যাওয়া করোনারি ধমনি পুনরায় প্রশস্ত লুমেনমুক্ত বা উন্মুক্ত করার পদ্ধতিই হলো এনজিওপ্লাস্টি।

এই রক্ত ও সঞ্চালন অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর(৪র্থ অধ্যায়) রক্ত ও সঞ্চালন অনুধাবনমূলক সাজেশন ছাড়া আরো জানতে ক্লিকঃ

Leave a Comment

You cannot copy content of this page