মানব শারীরতত্ত্বঃ শ্বসন ও শ্বাসক্রিয়া(অ্যালভিওলাস এর গঠন)

মানব শারীরতত্ত্বঃ শ্বসন ও শ্বাসক্রিয়া(অ্যালভিওলাস এর গঠন) / শ্বাস পেশি (Respiratory Muscles) / শ্বসনতন্ত্রের কাজ

Read more:

অ্যালভিওলাস এর গঠন

অ্যালভিওলাস ফুসফুসের কার্যকরী একক । এগুলো আঙ্গুরের থোকার মতো গুচ্ছাবদ্ধ, অতি ক্ষুদ্রাকায়, বুদবুদ সদৃশ বায়ুথলি এবং গ্যাস বিনিময়ের তল (gas exchange surface) গঠন করে। ফুসফুসে অ্যালভিওলাসের সংখ্যা বয়সের সাথে সম্পর্কিত । নবজাতক শিশুর ফুসফুসে মাত্র ২০ মিলিয়ন অ্যালভিওলাই থাকে, ৮ বছরে এ সংখ্যা ৩০০ মিলিয়ন; অন্যদিকে একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানুষের দুটি ফুসফুসে থাকে প্রায় ৪৮০ মিলিয়ন (২৭৪-৭৯০) অ্যালভিওলাই ।

অ্যালভিওলাইয়ের সংখ্যা ফুসফুসের আকারের উপর নির্ভরশীল । অ্যালভিওলাসের ব্যাস ০.২ মিলিমিটার এবং প্রাচীর মাত্র ০.২ মাইক্রোমিটার পুরু । এগুলোর বাইরের দিকে প্রচুর কৈশিকজালিকা নিবিড়ভাবে অবস্থান করে ।

পালমোনারি ধমনি থেকে এগুলোর উৎপত্তি হয় এবং পুনরায় মিলে পালমোনারি শিরা গঠন করে। প্রত্যেক অ্যালভিওলাসের প্রাচীর অত্যন্ত পাতলা, চাপা স্কোয়ামাস এপিথেলিয়াল কোষে গঠিত হওয়ায় সহজেই গ্যাসের ব্যাপন ঘটতে পারে । অ্যালভিওলাস প্রাচীর ফ্যাগোসাইটিক অ্যালভিওলার ম্যাক্রোফেজ ধারণ করে। ম্যাক্রোফেজ অণুজীব এবং অন্যান্য বহিরাগত কণা ধ্বংস করে।

তাছাড়া প্রাচীরে কোলাজেন ও স্থিতিস্থাপক তন্তু থাকে। এছাড়া স্থিতিস্থাপক তন্তুর কারনে প্রশ্বাস নিঃশ্বাসের সময় অ্যালভিওলাস সহজেই প্রসারিত হতে পারে। আবার পূর্বাস্থায় ফিরে আসতে পারে। অ্যাল্ভিওলাস প্রাচীররে সেপ্টাল কোষ থাকায় প্রাচীরের ভিতরের দিকে সারফ্যাক্টেন্ট নামক পদার্থ ক্ষরণ হয় যা (surface tension) হ্রাস করে অ্যালভিওলাসকে চুপসে যাওয়া থেকে রক্ষা করে এবং গ্যাসীয় বিনিময় সহজ করে ।

মানব শারীরতত্ত্বঃ শ্বসন ও শ্বাসক্রিয়া(অ্যালভিওলাস এর গঠন) / শ্বাস পেশি (Respiratory Muscles) / শ্বসনতন্ত্রের কাজ

সারফ্যাকট্যান্টবিহীন অ্যালভিওলাস তথা ফুসফুস যথাযথ কাজ করতে পারে না। ২৩ সপ্তাহ বয়স্ক মানবদ্রূণে সর্বপ্রথম সারফ্যাকট্যান্ট ক্ষরণ শুরু হয়। এ কারণে ২৪ সপ্তাহের আগে মানবদ্রূণকে স্বাধীন অস্তিত্বের অধিকারী গণ্য করা হয় না। অনেক দেশে তাই এ সময়কাল পর্যন্ত গর্ভপাতের অনুমতি দেয়া হয় ।

শ্বাস পেশি (Respiratory Muscles) : যে সব পেশি শ্বাসকার্যে সহায়তা করে, তাদেরকে শ্বাস পেশি বলে।এদের মধ্যে ডায়াফ্রাম পেশি এবং ইন্টারকোস্টাল পেশি উল্লেখযোগ্য । ডায়াফ্রাম বা মধ্যচ্ছদা বক্ষগহ্বর এবং উদর গহ্বরের মাঝখানে আড়াআড়িভাবে বিদ্যমান একটি মাংসল পর্দা বিশেষ । এটি ঐচ্ছিক পেশি নির্মিত । এর পৃষ্ঠদেশ কিছুটা উত্তলাকার । এর মাঝখানে একটি ছিদ্র থাকে, যার মধ্য দিয়ে অন্ননালি, নিম্ন মহাশিরা এবং অ্যাওটা বক্ষগহ্বর থেকে উদর গহ্বরে প্রবেশ করে। শ্বাসগ্রহণের সময় এটি সঙ্কুচিত হয়ে নিচের দিকে নেমে এসে সমতল হয়ে যায়। শ্বাসত্যাগের সময় এটি ওপরের দিকে ধনুকের মতো বেঁকে যায় ।

শ্বাসগ্রহণের সময় বক্ষপিঞ্জর প্রসারিত হয়। বক্ষপিঞ্জরের দুটো পর্ত্তকার (rib) মাঝে বিদ্যমান পেশিকে ইন্টারকোস্টাল পেশি বলে । শ্বাসগ্রহণের সময় ইন্টারকোস্টাল পেশি সঙ্কুচিত হয়, ফলে পশুকাগুলো বাইরের দিকে এবং উপরের দিকে উত্তোলিত হওয়ায় বক্ষপিঞ্জর প্রসারিত হয়ে বক্ষগহ্বরের আয়তন বাড়িয়ে দেয় । শ্বাসত্যাগের সময় ইন্টারকোস্টাল পেশি শিথিল বা প্রসারিত হয়, ফলে পশুকাগুলো নিজস্ব ওজনের জন্য নিম্নগামী হয়ে পূর্বের অবস্থানে ফিরে আসে, ফলে বক্ষপিঞ্জর সঙ্কুচিত হয়ে বক্ষগহ্বরের আয়তন কমিয়ে দেয় ।

শ্বসনতন্ত্রের প্রধান অঙ্গসমূহের নাম এবং কাজ

মানব শারীরতত্ত্বঃ শ্বসন ও শ্বাসক্রিয়া(অ্যালভিওলাস এর গঠন) / শ্বাস পেশি (Respiratory Muscles) / শ্বসনতন্ত্রের কাজ

শ্বসনতন্ত্রের কাজ

১. শ্বসনগ্যাসের বিনিময় : শ্বসনের সময় পরিবেশের O2 রক্তে মিশে এবং রক্ত থেকে CO2 পরিবেশে পরিত্যক্ত হয় ।

২. শক্তি উৎপাদন : শ্বসনতন্ত্রের মাধ্যমে গৃহিত O2 কোষীয় শ্বসনে ব্যবহৃত হয়ে শক্তি উৎপন্ন করে ।

৩. পানি সাম্য : নিঃশ্বাসের মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় ৪০০-৬০০ মিলিলিটার পানি দেহ থেকে বেরিয়ে যায় । এতে দেহের পানি সাম্য বজায় রাখতে সুবিধা হয়।

৪. তাপ নিয়ন্ত্রণ : নিঃশ্বাসের সময় CO2 এর সাথে দেহের কিছু তাপ নির্গত হয়ে দেহের তাপমাত্রা বজায় থাকে ।

৫. এসিড ও ক্ষারের সাম্যতা : নিঃশ্বাস বায়ুর মাধ্যমে CO2 দেহের বাইরে পরিত্যক্ত হওয়ায় pH নিয়ন্ত্রণে সহায়তা হয় ।

৬. শব্দ উৎপন্ন : ল্যারিংক্সের মাধ্যমে শব্দ উৎপন্ন হয় ।

৭. হোমিওস্ট্যাসিস : দেহাভ্যন্তরের স্থিতাবস্থা বা হোমিওস্ট্যাটিস (homeostasis; কোন জীব কর্তৃক অবিরত তার অন্তঃস্থ পরিবেশ রক্ষা করা বা জীবন ক্রিয়ায় অভ্যন্তরীণ স্থিতাবস্থা বজায় রাখা) এর ফলে পরিবর্তিত পরিবেশেও জীবকোষগুলো দক্ষতার সাথে কাজ করতে পারে।

৮. উদ্বায়ী গ্যাস : দেহ থেকে কিছু উদ্বায়ী গ্যাস, যেমন-ক্লোরোফর্ম, ইথার, অ্যামোনিয়া ইত্যাদি নিষ্কাশন করে ।

৯. দূষিত পদার্থের প্রবেশ রোধ : শ্বসনতন্ত্র বাতাসে বিদ্যমান জীবাণু ও অন্যান্য দূষিত পদার্থ প্রবেশ রোধ করে ।

১০. হরমোন ও আয়ন ঘনত্ব : শ্বসনতন্ত্র দেহে হরমোন ও আয়নের ঘনত্ব নিয়ন্ত্রণ করে ।

ব্যবহারিক

ফুসফুসের অনুচ্ছেদ (Section through Lung)

শনাক্তকরণ

১. অনুচ্ছেদের অভ্যন্তরভাগে বুদবুদ-এর মতো অসংখ্য অ্যালভিওলাই (alveoli) থাকে ।

২. অ্যালভিওলাইগুলো ট্র্যাবেকুলি (trabeculae) নামক ব্যবধায়ক পর্দার মাধ্যমে পৃথক ।

৩. অসংখ্য সূক্ষ্ম সিলিয়াযুক্ত বায়ু নালিকা বা ব্রঙ্কিওল (bronchiole) দেখা যায় ।

৪. অ্যালভিওলাই ও ব্রঙ্কিওলের ফাঁকে ফাঁকে রক্তনালি অবস্থিত ।

চিত্র ৫.৬ : ফুসফুসের অনুচ্ছেদ (অংশ বিশেষ)

মানব শারীরতত্ত্বঃ শ্বসন শ্বাসক্রিয়া(অ্যালভিওলাস এর গঠন) / শ্বাস পেশি (Respiratory Muscles) / শ্বসনতন্ত্রের কাজ ছাড়াও আরো পড়ুনঃ

HSC Zoology: Blood and Circulation

Leave a Comment

You cannot copy content of this page