মানব-কল্যাণ প্রবন্ধের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)

মানব-কল্যাণ প্রবন্ধের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র): শিক্ষার্থীরা তোমাদের বাংলা গদ্য অংশ মানব-কল্যাণ সর্বশেষ বোর্ড প্রশ্ন উত্তরসহ এখানে দিয়েছি। আশাকরি তোমরা এখান থেকে প্রস্তুতি ও পরীক্ষার ধারণা নিতে পারবে।

মানব-কল্যাণ প্রবন্ধের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)

সাজেশন

আরো পড়ুনঃ

গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন অনুশীলন

প্রশ্ন ১। লেখক অনুগ্রহকারী অনুগৃহীতের সম্পর্কে কী বলেছেন?
উত্তর : লেখকের মতে, মনুষ্যত্ব আর মানব-মর্যাদার দিক থেকে অনুগ্রহকারী ও অনুগৃহীতের মধ্যে অনেক পার্থক্য বিদ্যমান। অনুগ্রহকারী অর্থাৎ যে দান করে আর অনুগ্রহীত যে দান গ্রহণ করে। এদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এ পার্থক্য ব্যক্তির বেলায় যেমন সত্য,তেমনই দেশ ও রাষ্ট্রের বেলায়ও সত্য। কারণ রাষ্ট্র জাতির যৌথ জীবন আর যৌথ চেতনার প্রতীক। রাষ্ট্রের দায়িত্ব শুধু প্রশাসন চালানো নয়, জাতিকে আত্মমর্যাদাসম্পন্ন করে তোলাও তার এক বৃহত্তর দায়িত্ব। তাই অনুগ্রহকারী ও অনুগৃহীতের সম্পর্কে লেখকের অভিমত হলো- এদের সম্পর্ক হতে হবে মানবিক ও মনুষ্যত্ববোধসম্পন্ন।

প্রশ্ন ২। মানবকল্যাণের প্রাথমিক সোপান সম্পর্কে লেখক কী বলেছেন?
উত্তর : মানবকল্যাণের প্রাথমিক সোপান সম্পর্কে লেখক বলেছেন, মানুষকে মানুষ হিসেবে এবং মানবিক বৃত্তির বিকাশের পথেই বেড়ে উঠতে হবে। আর তার যথাযথ ক্ষেত্র রচনা করাই হলো। মানবকল্যাণের প্রাথমিক সোপান। মানবকল্যাণের প্রাথমিক সোপান রচনা করা সমাজ আর রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সমাজের ক্ষুদ্রতম অঙ্গ পরিবার। তাই পরিবারকেও এ দায়িত্ব পালন করতে হবে। কারণ মানুষের ভবিষ্যৎ জীবনের সূচনা হয় পরিবার থেকেই। তবে অনেকটা পরিবেশ ও ক্ষেত্র গড়ে তোলার ওপর নির্ভর করে। প্রত্যেক মানুষ যেমন সমাজের সঙ্গে সম্পর্কিত তেমনই তার কল্যাণও সামগ্রিকভাবে সমাজের ভালো-মন্দের সঙ্গে সংযুক্ত।

মানব-কল্যাণ প্রবন্ধের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)

প্রশ্ন ৩। কোন ধরনের মানবকল্যাণকে লেখক নিন্দা জানিয়েছেন?
উত্তর : লেখক শুধু জৈব অস্তিত্বের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শনমূলক মানবকল্যাণকে নিন্দা জানিয়েছেন। জৈব অস্তিত্বতাড়িত মানবকল্যাণ কখনো ফলপ্রসূ হতে পারে না।তাছাড়া এ ধরনের মানবকল্যাণের কুৎসিত ছবি দেখার জন্য দূরদূরান্তে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ আমাদের চারপাশে এর নিদর্শন পাওয়া যায়। লেখকের মতে, বর্তমানে মানবকল্যাণ অর্থে আমরা যা বুঝি তা মানুষকে মেলায় না, বরং বিভক্ত করে দেয়। আর বিভক্তিকরণের মনোভাব নিয়ে কারও কল্যাণ করা সম্ভব নয়।

প্রশ্ন ৪। “সত্যিকার মানবকল্যাণ মহৎ চিন্তা-ভাবনারই ফসল”—ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : সত্যিকার মানবকল্যাণ মহৎ চিন্তা-ভাবনারই ফসল। কারণ একমাত্র সমতা ও সহযোগিতার পথে তা ফলানো যায়। বাংলাদেশের মহৎ প্রতিভাধররা সবাই মানবিক চিন্তা আর আদর্শের উত্তরাধিকার রেখে গেছেন। কিন্তু বড় অনুতাপের বিষয় হলো, সেই উত্তরাধিকারকে আমরা জীবনে প্রয়োগ করতে পারিনি। প্রাচীন কবি বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস, লালন থেকে আধুনিককালের রবীন্দ্রনাথ-নজরুল এঁরা সবাই এই মানবিক চেতনার কথা বলেছেন। কারণ সত্যিকার মানবকল্যাণ মহৎ চিন্তাভাবনারই ফসল। আর তা এক জাগতিক মানবধর্ম।

প্রশ্ন ৫। যথাযথ কল্যাণ সাধনে লেখকের পরামর্শ কী?
উত্তর : মানবের যথাযথ কল্যাণ সাধনের লক্ষ্যে লেখক আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পালটানোর পরামর্শ দিয়েছেন। বিভিন্ন ধর্মগুরু আর মহাপুরুষেরা অজস্র প্রার্থনা বাণী রেখে গেছেন। তা সত্ত্বেও সুখ, শান্তি, নিরাপত্তা ক্রমেই মানুষের জীবন থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তাছাড়া মানবকল্যাণ সম্পর্কে আমাদের ধারণায় কোথাও একটি গলদ রয়েছে। তাই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে সব সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে, যা হবে বৈজ্ঞানিক ও সুবুদ্ধি-নিয়ন্ত্রিত। সুতরাং মুক্তবুদ্ধির সহায়তায় সুপরিকল্পিত পথেই কল্যাণময় পৃথিবী রচনা করা সম্ভব।

প্রশ্ন ৬। ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে লেখক মানবকল্যাণ ধারণাটির – বিচারে সচেষ্ট হয়েছেন কেন?
উত্তর : যথাযথ মানবকল্যাণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে লেখক মানবকল্যাণ ধারণাটির বিচারে সচেষ্ট হয়েছেন। লেখক তাঁর প্রবন্ধে মানবকল্যাণ ধারণাটির তাৎপর্য বিচারে সচেষ্ট হয়েছেন। সাধারণভাবে আমরা দুস্থ মানুষকে করুণাবশত দান-খয়রাত করাকে মানবকল্যাণ মনে করি, যা আমাদের সংকীর্ণ মনোভাবের পরিচয় বহন করে। তিনি মনে করেন পৃথিবীর মানুষের সার্বিক মঙ্গলের প্রয়াসই মানবকল্যাণ। মানুষকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থায় উত্তরণের জন্যই লেখক মানবকল্যাণ ধারণাটির বিচারে সচেষ্ট হয়েছেন।

মানব-কল্যাণ প্রবন্ধের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)

প্রশ্ন ৭। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পালটাতে হবে কেন? বুঝিয়ে লেখ
উত্তর : নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পালটাতে হবে। মানবকল্যাণ সাধন করতে গিয়ে আমাদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। সমস্যা মোকাবিলা করে মানবকল্যাণ সাধন করার জন্য আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। আর সমস্যা মোকাবিলার এই পথ হবে নতুন পদ্ধতির এবং বৈজ্ঞানিক, র‍্যাশনাল ও সুবুদ্ধি-নিয়ন্ত্রিত। মানবকল্যাণের পথে সমস্যা যত বড়ই হোক না কেন তা মোকাবিলা করতে হবে নতুন দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে সাহস আর বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে।

প্রশ্ন ৮। মানবকল্যাণ কথাটি স্রেফ মানব-অপমানে পরিণত হয়েছে কেন?
উত্তর : মানুষের স্বাভাবিক অধিকার আর মর্যাদার স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠা না পাওয়ার কারণে মানবকল্যাণ কথাটি স্রেফ মানব-অপমানে পরিণত হয়েছে। মানবকল্যাণ অলৌকিক কোনো বিষয় নয়। এ বিষয়টি মানব-মর্যাদার তথা Human dignity-এর সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। কিন্তু পৃথিবীতে দুস্থ, অবহেলিত, বাস্তুহারা, স্বদেশ-বিতাড়িত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে অবহেলিত মানুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে রিলিফ, রিহেবিলিটেশন ইত্যাদি শব্দের প্রয়োগ। রেডক্রস ইত্যাদি সেবামূলক সংস্থার বৃদ্ধি প্রমাণ করে পৃথিবীতে মানবকল্যাণ নেই। আর এ কারণেই লেখক মনে করেন মানবকল্যাণ কথাটি মানব-অপমানে পরিণত হয়েছে।

প্রশ্ন ৯। প্রবন্ধে মানবকল্যাণের কথা বলতে গিয়ে বিভিন্ন সাহিত্যিকের মানবিক চেতনার উদাহরণ আনা হয়েছে কেন? বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর : মানবকল্যাণ যে এক গভীর মূল্যবোধেরই উৎসারণ তা ব্যাখ্যা করতে গিয়েই বিভিন্ন সাহিত্যিকের মানবিক চেতনার উদাহরণ আনা হয়েছে। সত্যিকার অর্থে মানবকল্যাণ মহৎ চিন্তা-ভাবনার ফসল। মহৎ প্রতিভাবানরা মানবিক চিন্তা আর আদর্শের উত্তরাধিকার রেখে গেছেন। বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস থেকে লালন সবাই মানবিকতার কথা বলেছেন। বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বঙ্কিমচন্দ্র মানবিক চেতনার উদাত্ত কণ্ঠস্বর। আর মানবকল্যাণের গুরুত্ব উপস্থাপন করতে গিয়েই প্রবন্ধে মানবিক চেতনার অধিকারী সাহিত্যিকদের উদাহরণ আনা হয়েছে।

প্রশ্ন ১০। মানবকল্যাণ ফলপ্রসূ হতে পারে না কেন? বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর : মানুষের মনুষ্যত্বকে বাদ দিয়ে মানবকল্যাণ ফলপ্রসূ হতে পারে না। পৃথিবীতে মানবকল্যাণ প্রতিষ্ঠিত করতে গেলে অবশ্যই মনুষ্যত্বের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতে হবে। কারণ মনুষ্যত্বকে বাদ দিয়ে, মানুষের জৈব অস্তিত্বের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে মানবকল্যাণ সাধিত হয় না। মনুষ্যত্বকে বাদ দিয়ে মানবকল্যাণের ছবি হয় কুৎসিত, যা আমাদের চারপাশে তাকালেই দেখা যায়। আর এ কারণেই বলা হয়েছে, মনুষ্যত্বকে বাদ দিয়ে মানবকল্যাণ ফলপ্রসূ হতে পারে না।

এই মানব-কল্যাণ প্রবন্ধের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র) ছাড়াও আরো পড়ুন

You cannot copy content of this page