হাইড্রার গ্যাস্ট্রোডার্মিস / হাইড্রার অন্তঃত্বক

হাইড্রার গ্যাস্ট্রোডার্মিস / হাইড্রার অন্তঃত্বকঃ গ্যাস্ট্রোডার্মিস বা অন্তঃত্বক-এর কোষসমূহ

Hydra-র দেহপ্রাচীরের অন্তঃস্তরকে গ্যাস্ট্রোডার্মিস বলে । এটি সিলেন্টেরকে পরিবেষ্টন করে অবস্থান করে । ভ্রূণীয় এন্ডোডার্ম থেকে এটি গঠিত হয়। এটি পাঁচ প্রকারের কোষ নিয়ে গঠিত, যথা-পেশি-আবরণী কোষ বা পুষ্টি কোষ, ইন্টারস্টিশিয়াল কোষ, সংবেদী কোষ, স্নায়ু কোষ এবং গ্রন্থি কোষ । নিচে এদের বর্ণনা দেয়া হলো-

১. পেশি-আবরণী কোষ বা পুষ্টি কোষ (Musculo-epithelial Cell or Nutritive Cell) : কোষগুলো আকারে বড়, স্তম্ভাকার এবং অন্তঃত্বকের বেশিরভাগ অংশ জুড়ে থাকে । প্রতিটি কোষে দানাদার সাইটোপ্লাজম, একটি বড় নিউক্লিয়াস, কয়েকটি গহ্বর এবং বিভিন্ন অঙ্গাণু বর্তমান । ভিতরের প্রান্তের শেষভাগের দু’দিকে পেশিলেজ নামক দু’টি উপবৃদ্ধি থাকে যা দেহঅক্ষের সমান্তরালে অবস্থান করে । পেশিলেজের মধ্যে মায়োনিম নামক সঙ্কোচনশীল তন্তু থাকে । কোষগুলো পুষ্টি প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে বলে এদেরকে পুষ্টি কোষ বলা হয় ।

ভিতরের মুক্ত প্রান্তের গঠনের উপর ভিত্তি করে পুষ্টি কোষগুলো দুরকম, যথা-

i. ফ্ল্যাজেলীয় কোষ (Flagellated Cell) : এগুলোর মুক্ত প্রান্তে ১-৪টি সুতার মতো ফ্ল্যাজেলা সংযুক্ত থাকে ।

ii. ক্ষণপদীয় কোষ (Pseudopodial Cell) : এগুলোর মুক্ত প্রান্ত ক্ষণপদযুক্ত ৷

কাজ : (i) পেশি প্রবর্ধনগুলো সঙ্কোচন-প্রসারণের মাধ্যমে দেহকে সরু ও মোটা করে । (ii) মুখ ও কর্ষিকার গোড়ায় অবস্থিত পেশি-প্রবর্ধনগুলো মুখের ছিদ্র খোলা ও বন্ধ করতে স্ফিংক্টার (sphincter)-এর মতো কাজ করে । (iii) ফ্ল্যাজেলীয় কোষের ফ্ল্যাজেলা আন্দোলিত হয়ে খাদ্যবস্তু ক্ষুদ্র কণায় পরিণত করে । (iv) প্রয়োজনে এ কোষ আন্দোলিত হয়ে মুখছিদ্রপথে পানি প্রবেশ করায় । (v) ক্ষণপদীয় কোষের ক্ষণপদ খাদ্যকণা গলাধঃকরণ করে অন্তঃস্থ খাদ্যগহ্বরে পরিপাক করে ।

২. গ্রন্থি কোষ (Gland Cell) : বিক্ষিপ্তভাবে পুষ্টি কোষের ফাঁকে ফাঁকে এসব কোষ অবস্থান করে। এগুলোর সংখ্যা মূলদেহ ও হাইপোস্টোমে সবচেয়ে বেশি, পদতলে কম এবং কর্ষিকায় অনুপস্থিত ।

গ্রন্থিকোষ অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র ও পেশি-প্রবর্ধনবিহীন । এগুলো দুরকম হয়ে থাকে-

i. মিউকাস ক্ষরণকারী (Mucous secreting) : এগুলো প্রধানত হাইপোস্টোম অঞ্চলে অবস্থিত এবং পিচ্ছিল মিউকাস ক্ষরণ করে ।

ii. এনজাইম ক্ষরণকারী (Enzyme secreting) : অন্যান্য স্থানের কোষগুলো এ ধরনের যা থেকে পরিপাকের জন্য এনজাইম ক্ষরিত হয়।

কাজ : (i) হাইপোস্টোমের গ্রন্থিকোষ নিঃসৃত মিউকাস খাদ্যদ্রব্য পিচ্ছিল করে গলাধঃকরণে সাহায্য করে (ii) অন্যান্য স্থানের গ্রন্থিকোষ সিলেন্টেরনে এনজাইম-এর ক্ষরণ ঘটিয়ে পরিপাকে সাহায্য করে ।

৩. ইন্টারস্টিশিয়াল কোষ (Interstitial Cell) : এগুলো পেশি-আবরণী কোষের ফাঁকে ফাঁকে অবস্থান করে । প্রকৃতপক্ষে এসব কোষ এপিডার্মিস থেকে আগত কোষ । এগুলো গোল, ডিম্বাকার বা ত্রিকোণাকার এবং সুস্পষ্ট নিউক্লিয়াস, মসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক জালিকা, মুক্ত রাইবোজোম ও কিছু মাইটোকন্ড্রিয়া বহন করে । কাজ : এন্ডোডার্মিসের প্রয়োজনীয় যে কোনো কোষ গঠন করাই এর কাজ ।

৪. সংবেদী কোষ (Sensory Cell) : এগুলো পেশি-আবরণী কোষের ফাঁকে ফাঁকে অবস্থিত লম্বা ও সরু কোষ । কোষের মুক্ত প্রান্ত থেকে নির্গত সূক্ষ্ণ সংবেদী রোম সিলেন্টেরনে উদগত এবং মেসোগ্লিয়া সংলগ্ন প্রান্ত থেকে নির্গত রোম স্নায়ুতন্তুর সাথে যুক্ত থাকে ।

কাজ : পানির সাথে সিলেন্টেরনে প্রবেশিত খাদ্য ও অন্যান্য পদার্থের গুণাগুণ যাচাই করে স্নায়ুকোষে প্রেরণ করে ।

৫. স্নায়ু কোষ (Nerve Cell) : এসব কোষ মেসোগ্লিয়া ঘেঁষে অবস্থিত, সংখ্যায় খুব কম । অনিয়ত আকারবিশিষ্ট এবং একটি ক্ষুদ্র কোষদেহ ও দুই বা ততোধিক সূক্ষ্ণ শাখান্বিত তন্তু নিয়ে গঠিত । তন্তুগুলো পরস্পর মিলে স্নায়ু-জালিকা গঠন করে ।

কাজ : সংবেদী কোষ কর্তৃক সংগৃহীত উদ্দীপনার উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ।

হাইড্রার এপিডার্মিস ও এন্ডোডার্মিসের মধ্যে পার্থক্য

হাইড্রার গ্যাস্ট্রোডার্মিস
হাইড্রার গ্যাস্ট্রোডার্মিস / হাইড্রার অন্তঃত্বকঃ গ্যাস্ট্রোডার্মিস বা অন্তঃত্বক-এর কোষসমূহ

মেসোগ্লিয়া (Mesogloea)

Hydra-র এপিডার্মিস ও গ্যাস্ট্রোডার্মিসের মাঝখানে অবস্থিত জেলির মতো, স্বচ্ছ, স্থিতিস্থাপক স্তরকে মেসোগ্লিয়া বলে । মেসোগ্লিয়া স্তরটি দেহ ও কর্ষিকা উভয় স্থানে বিস্তৃত, তবে কর্ষিকায় সবচেয়ে পাতলা এবং পাদ-চাকতিতে সর্বাধিক পুরু । মেসোগ্লিয়ার এ ধরনের বিন্যাস পাদ-চাকতির অতিরিক্ত যান্ত্রিক প্রসারণ প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং কর্ষিকাকে অধিকতর নমনীয়তা দান করে । Hydra-র মেসোগ্লিয়া প্রায় ০.১ মাইক্রোমিটার পুরু । এপিডার্মিস ও গ্যাস্ট্রোডার্মিস উভয় স্তরের কোষ মেসোগ্নিয়া গঠনে অংশ গ্রহণ করে ।

কাজ : (i) মেসোগ্লিয়া দেহের অবলম্বনে সহায়তা করে এবং এক ধরনের নমনীয় কঙ্কাল হিসেবে কাজ করে । (ii) মেসোগ্লিয়া দুটি কোষস্তরের ভিত্তিরূপে কাজ করে । (iii) স্নায়ুকোষ ও সংবেদী কোষতন্তুসমূহ এবং পেশি-আবরণী কোষের সঙ্কোচনশীল মায়োফাইব্রিল ধারণ করে। (iv) মেসোগ্লিয়ায় অবস্থিত পেশি-আবরণী কোষের সঙ্কোচনশীল মায়োফাইব্রিলের সঙ্কোচনে দেহ বা কর্ষিকা খাটো হয় ফলে দেহ বাঁকানো সম্ভব হয় ।

সিলেন্টেরন : পরিপাক-সংবহন বা গ্যাস্ট্রোভাস্কুলার গহ্বর (Coelenteron : Gastrovuscular Cavity)

Cnidaria পর্বভুক্ত প্রাণিদের (যেমন-Hydra) দেহাভ্যন্তরে একপ্রান্ত খোলা যে একটি নলাকার ফাঁকা গহ্বর থাকে, তাকে সিলেন্টেরন বলে । এটি গ্যাস্ট্রোডার্মিসে পরিবৃত্ত এবং মুখছিদ্র থেকে দেহের শেষপ্রান্ত পর্যন্ত লম্বালম্বিভাবে বিস্তৃত । এর উপস্থিতির কারণেই Hydra-র পর্বটি পূর্বে Coelenterata নামে পরিচিত ছিল । সিলেন্টেরনের মধ্যে খাদ্যবস্তু ফ্ল্যাজেলীয় কোষের ক্রিয়ায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয় এবং পরবর্তীতে বহিঃকোষীয় পরিপাক ঘটে।

হাইড্রার গ্যাস্ট্রোডার্মিস
চিত্র ২.১.১৭ : গ্যাস্ট্রোভাস্কুলার গহ্বর

কিছু সংখ্যক খাদ্যকণা সিলেন্টেরনের অন্তর্গামী পানিপ্রবাহের সাথে দেহের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত পর্যন্ত পরিবাহিত হয় এবং দেহের বিভিন্ন স্থানের গ্যাস্ট্রোডার্মিসের ক্ষণপদীয় কোষ দ্বারা গৃহীত হয় এবং অন্তঃকোষীয় পরিপাক ঘটায় । খাদ্যের অপাচ্য অংশ এবং বিপাকজাত বর্জ্যপদার্থ সিলেন্টেরনের বহির্গামী পানি প্রবাহের সাথে মুখছিদ্রের মাধ্যমে বাইরে নির্গত হয়।

অর্থাৎ, সিলেন্টেরন একদিকে খাদ্য পরিপাকে এবং অন্য দিকে খাদ্যসার, শ্বসন ও রেচন পদার্থ পরিবহনে সাহায্য করে । তাই সিলেন্টেরনকে গ্যাস্ট্রোভাস্কুলার গহ্বর বা পরিপাক-সংবহন গহব্বর বলা হয় । কর্ষিকায় সিলেন্টেরন প্রসারিত থাকে বলে এগুলো ফাঁপা হয়। সিলেন্টেরনকে অনেকসময় ব্লাইন্ড গাট (blind gut) বা ব্লাইন্ড স্যাক (blind sac) বলা হয়। কারণ দেহের উপরিভাগে অবস্থিত একটি মাত্র ছিদ্র, অর্থাৎ মুখছিদ্রের মাধ্যমে এটি খাদ্যগ্রহণ ও বর্জ্য পরিত্যাগ করে ।

সিলোম ও সিলেন্টেরনের মধ্যে পার্থক্য

হাইড্রার গ্যাস্ট্রোডার্মিস
হাইড্রার গ্যাস্ট্রোডার্মিস / হাইড্রার অন্তঃত্বকঃ গ্যাস্ট্রোডার্মিস বা অন্তঃত্বক-এর কোষসমূহ

আরো পড়ুনঃ

এই হাইড্রার গ্যাস্ট্রোডার্মিস / হাইড্রার অন্তঃত্বকঃ গ্যাস্ট্রোডার্মিস বা অন্তঃত্বক-এর কোষসমূহ ছাড়াও আরো দেখুন

Leave a Comment

You cannot copy content of this page