ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র): শিক্ষার্থীরা তোমাদের বাংলা পদ্য তাহারেই মনে পড়ে এর সর্বশেষ বোর্ড প্রশ্ন উত্তরসহ এখানে দিয়েছি। আশাকরি তোমরা এখান থেকে প্রস্তুতি ও পরীক্ষার ধারণা নিতে পারবে।

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)
ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)

ঢাকা বোর্ড ২০১৯

শাবাশ, বাংলাদেশ,
এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়।
জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার
তবু মাথা নোয়াবার নয়।”

ক. ‘হরিৎ উপত্যকা’ অর্থ কী?
খ. “সালামের মুখ আজ তরুণ শ্যামল পূর্ব বাংলা” – ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার কোন অংশের সাদৃশ্য রয়েছে? আলোচনা কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার মর্মবাণীকে পুরোপুরি ধারণ করে না”- মন্তব্যটি নিজের ভাষায় ব্যাখ্যা কর ।

Read More:

২নং প্রশ্নের উত্তর

ক জ্ঞান

‘হরিৎ উপত্যকা’ অর্থ— সবুজ দেশ। এখানে ‘হরিৎ উপত্যকা’ বলতে পূর্ব বাংলাকে অর্থাৎ বাংলাদেশকে বোঝানো হয়েছে।

খ অনুধাবন

“সালামের মুখ আজ তরুণ শ্যামল পূর্ব বাংলা” বলতে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে আত্মদানকারী সালামের চেতনার বিস্তার এবং পূর্ব বাংলাজুড়ে তার সতেজতাকে বোঝানো হয়েছে।

বর্তমান বাংলাদেশ ছিল তৎকালীন পূর্ব বাংলা। পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বাঙালিরা নানাভাবে শাসিত-শোষিত হতে থাকে। পাকিস্তানি শাসকরা বাঙালির মাতৃভাষার ওপর আঘাত হানে। সেদিন সালামের চোখে-মুখে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা এবং বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার যে সতেজতা ছিল সেটা যেন আবার ফিরে এসেছে ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯-এ।

তাই তো সালামের চোখে ঢাকা আজ উজ্জ্বল, তরুণ শ্যামল পূর্ব বাংলা আজ অপূর্ব সুন্দর, তাদের সবার চোখে-মুখে মুক্তির আশার আলো ঝলকিত। সালামের মুখের সেই প্রতিবাদ, দীপ্তি, সাহসের বিস্তার যেন আজ পূর্ব বাংলাজুড়ে । প্রশ্নোক্ত কথাটি দ্বারা এটাই বোঝানা হয়েছে।

সারকথা : ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে সালামের যে চেতনা প্রকাশ পেয়েছিল, ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯-এ এসে সেই চেতনা যেন পূর্ব বাংলার সবার মধ্যে বিস্তার লাভ করেছে।

গ প্রয়োগ

উদ্দীপকের সঙ্গে ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার বাঙালির সংগ্রামী চেতনা বর্ণনা অংশের সাদৃশ্য রয়েছে।

অধিকার আদায়ের জন্য বাংলার মানুষ বারবার সংগ্রাম করেছে। সেই সংগ্রাম কখনো কখনো গণআন্দোলনে রূপ নিয়েছে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার সংগ্রাম বাঙালির সংগ্রামী চেতনা ও বীরত্বের পরিচয় বহন করে।

উদ্দীপকের কবিতাংশে বাংলাদেশের মানুষের সংগ্রামী চেতনা ও তাদের আত্মত্যাগের বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে। এখানে অন্যায়, শোষণ, শাসন, অত্যাচার-নির্যাতনে বাংলাদেশের মানুষের পরাজয় না-মানা এবং কারও কাছে নতি স্বীকার না করার সংগ্রামী চেতনা প্রকাশ পেয়েছে।

বাঙালি জ্বলে-পুড়ে-মরে ছারখার হয়ে যাবে তবু শত্রুর কাছে মাথা নত করবে না। উদ্দীপকের এই সংগ্রামী চেতনাটি ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় প্রকাশিত বাঙালির সংগ্রামী চেতনার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। ১৯৬৯ সালে এদেশের মানুষ জাতিগত শোষণ ও অন্যায় শাসনের বিরুদ্ধ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। অত্যাচারী শাসকদের শাসন-শোষণ প্রতিহত করতে তারা সমবেত হয় রাজপথে। তারা আত্মদানের প্রতিজ্ঞা নিয়ে স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছে। কবি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সংগ্রামী চেতনাকে ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯-এ ধারণ করে বাঙালিকে

অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অনুপ্রাণিত ও জাগরিত করতে চেয়েছেন। কবিতার চেতনার সঙ্গে উদ্দীপকের চেতনার সাদৃশ্য রয়েছে। কাছে কখনো মাথা নত করেনি। এই দিক থেকে উদ্দীপকের সংগ্রামী চেতনাটি ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার সংগ্রামী চেতনার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

ঘ উচ্চতর দক্ষতা

“উদ্দীপকটি ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার মর্মবাণীকে পুরোপুরি ধারণ করে না।” – মন্তব্যটি যথার্থ।

বাঙালিরা অন্যায়ের কাছে কখনো মাথা নত করেনি। তারা নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য যুগে যুগে অনেক আন্দোলন, সংগ্রাম করেছে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের প্রেরণায় বাঙালি ১৯৬৬, ১৯৬৯-এর মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জন করে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছে।

উদ্দীপকে বাংলাদেশের মানুষের সংগ্রামী চেতনা, তাদের আপসহীনতা ও আত্মত্যাগের বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে। এই বিষয়টি ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার সংগ্রামী চেতনার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। তবে তা কুবিতার সম্পূর্ণ ভাব ধারণ করে না। কারণ ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায়

ভাষাসংগ্রামী সালাম-বরকতের আত্মদান, ভাষা আন্দোলনের সংগ্রামী চেতনাকে স্মরণ করে ১৯৬৯-এর ফেব্রুয়ারিতে বাঙালির ন্যায্য অধিকার আদায়কে বেগবান করেছেন । এই ধরনের ঐতিহাসিক সংগ্রামী চেতনা ও অনুপ্রেরণা উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়নি।

‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় কবি বাঙালির দেশপ্রেম ও সংগ্রামী চেতনার স্বরূপ তুলে ধরেছেন। এদেশের সাধারণ মানুষ ১৯৬৯ সালে জাতিগত শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। আন্দোলনের এই অমিত শক্তি বাঙালি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে সঞ্জয় করেছে।

উদ্দীপকে এই দিকটি অনুপস্থিত। শহরের পথে পথে থরে থরে কৃষ্ণচূড়া ফুল ফোটার এবং সেই রঙে পথঘাট ছেয়ে যাওয়ার যে কথা কবি এই কবিতায় বলেছেন সেই চেতনার প্রতিফলন উদ্দীপকে নেই। এসব দিক বিচারে প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ ।

সারকথা : উদ্দীপকে যে সংগ্রামী চেতনার প্রতিফলন ঘটেছে তা ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার সংগ্রামী চেতনার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ হলেও যথার্থ নয়। কারণ কবিতায় বাঙালির সংগ্রামী চেতনায় ভাষা আন্দোলনে শহিদ এবং সেই দিনের প্রকৃতি ও পরিবেশকে যেভাবে স্মরণ করা হয়েছে উদ্দীপকে তা নেই।

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)

যশোর বোর্ড ২০১৬

“অন্তহীন মিছিলের দেশ,
সারি সারি মানুষের আকারে হলে মূর্তিময়ী
সমস্ত স্বদেশ আজ রাঙা রাজপথে।
দিবালোক হয়ে ফোটে প্রাঞ্জল বিপ্লব
সাত কোটি মুখ হাসে মৃত্যুর রঙিন তীর হাতে নিয়ে ।
শ্রেণিবদ্ধ এই ভিড়ে সকলেই সবার আগে

ক. ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় কবি ‘কমলবন’কে কিসের প্রতীকরূপে ব্যবহার করেছেন?
খ. ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় ‘ঘাতকের অশুভ আস্তানা’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? ব্যাখ্যা কর ।
গ. উদ্দীপকটিতে ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার যে দিকটি আলোকপাত করে তা তুলে ধর ।
ঘ. “উদ্দীপক এবং ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতা মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সংগ্রামী চেতনার এক অসাধারণ শিল্পভাষ্য”— বিশ্লেষণ কর।

ক) ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় কবি কমলবনকে মানবিকতা, সুন্দর ও কল্যাণের প্রতীকরূপে ব্যবহার করেছেন।

খ অনুধাবন

‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় ‘ঘাতকের অশুভ আস্তানা’ বলতে পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশকে বোঝানো হয়েছে।

পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশকে নানাভাবে শাসন-শোষণ করেছে। এদেশে বসেই তারা এদেশের মানুষের ওপর অত্যাচার করেছে। নির্বিচারে মানুষ হত্যার মাধমে তারা বাঙালির স্বাধীনতার স্পৃহাকে স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল। এই কারণে কবি এই দেশকে ‘ঘাতকের অশুভ আস্তানা’ বলেছেন।

সারকথা : পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এদেশে বসেই এদেশের মানুষের ওপর অত্যাচার করেছে। তাদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। তাই কবি এদেশকে ‘ঘাতকের অশুভ আস্তানা’ বলে অভিহিত করেছেন।

গ প্রয়োগ।

উদ্দীপকটি ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার গণআন্দোলনের দিকটিকে প্রতিফলিত করে।

`অধিকার আদায়ের জন্য বাংলার মানুষ বারবার সংগ্রাম করেছে। এই সংগ্রাম কখনো কখনো গণআন্দোলনে রূপ নিয়েছে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার সংগ্রাম বাঙালির সংগ্রামী চেতনা ও বীরত্বের পরিচয় বহন করে।

● ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় ১৯৬৯ সালের গণঅভুত্থানের বিষয়টি ফুটে উঠেছে। জাতিগত শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে এদেশের মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল ১৯৬৯ সালে। প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জ থেকে, হাটবাজার থেকে, কলকারখানা থেকে, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অসংখ্য মানুষ সমবেত হয়েছিল ঢাকার রাজপথে। বাংলার মানুষের এই সম্মিলিত আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠী পদত্যাগ করতে বাধ্য হয় । উদ্দীপকে এই গণআন্দোলনের বিষয়টিই প্রতিফলিত হয়েছে। অধিকার আদায়ের জন্য বাংলার মানুষ রাজপথে নেমে আসে। মনে হয় সমস্ত দেশই যেন নেমে এসেছে রাজপথে।

সারকথা : উদ্দীপকটি ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথে বাঙালির ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করার বিষয়টি আলোকপাত

ঘ উচ্চতর দক্ষতা

“উদ্দীপক এবং ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতা মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সংগ্রামী চেতনার এক অসাধারণ শিল্পভাষ্য”— মন্তব্যটি যথার্থ।

● সংগ্রাম বাংলার মানুষের জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে। কারণ শোষকের হাত থেকে মুক্তির জন্য বাঙালি জাতি যুগে যুগে সংগ্রাম করেছে। ১৯৫২ সালে বাঙালি ভাষার জন্য সংগ্রাম করেছে, ১৯৭১ সালে সে সংগ্রাম করেছে দেশকে স্বাধীন করার জন্য।

‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় বাঙালি জাতির এই সংগ্রামী জীবনের পরিচয় পাওয়া যায়। অত্যাচারী, স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে বাংলার মানুষ আন্দোলন শুরু করে। পরে তা গণআন্দোলনে রূপ নেয়। অবশেষে এদেশের সংগ্রামী মানুষের আত্মাহুতির মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটে। উদ্দীপকেও বাঙালির এই সংগ্রামী জীবনচেতনার প্রতিফলন ঘটেছে। রাজপথে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে বাঙালির যে সংগ্রাম তা অধিকার আদায়ের সংগ্রাম। সাত কোটি সংগ্রামী মানুষ প্রয়োজনে মৃত্যুকে বরণ করবে, তবু শত্রুর কাছে মাথা নত করবে না।

উদ্দীপক এবং ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় বাঙালির সংগ্রামী জীবন সম্পর্কে বলা হয়েছে। অধিকার আদায়ের সংগ্রামে বাঙালির দৃঢ়তা উভয় স্থানেই এক অনবদ্য শিল্পরূপ পেয়েছে। প্রতিবাদী চেতনায় বাঙালির যে স্বতন্ত্র অবস্থান তারই শিল্পভাষ্য উদ্দীপক ও আলোচ্য কবিতা । এই বিবেচনায় তাই বলা যায় মন্তব্যটি যথার্থ ।

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)

প্রশ্ন ০৩ এবং উত্তর

পরিচয়ে আমি বাঙালি, আমার আছে ইতিহাস গর্বের-
কখনোই ভয় করিনিকো আমি উদ্যত কোন খড়গের!
শত্রুর সাথে লড়াই করেছি, স্বপ্নের সাথে বাস;
অস্ত্রেও শান দিয়েছি যেমন শস্য করেছি চাষ,
একই হাসি মুখে বাজিয়েছি বাঁশি গলায় পড়েছি ফাঁস
আপস করিনি কখনোই আমি— এই হলো ইতিহাস।

ক. সালাম কখন আবার পথে নামে?
খ. ‘সেই ফুল আমাদের প্রাণ’- বুঝিয়ে দাও।
গ. উদ্দীপকের ইতিহাস প্রসঙ্গ এবং ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার ঐতিহ্য চেতনার সাদৃশ্য নির্ণয় কর।
ঘ, “উদ্দীপকের প্রতিফলিত সংগ্রামী চেতনা যেন ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার ভাবসত্যের সংহত রূপ”– এ অভিমত মূল্যায়ন কর।

জ্ঞান

সালাম উনিশশো ঊনসত্তরে আবার পথে নামে।

খ অনুধাবন

‘সেই ফুল আমাদেরই প্রাণ’ বলতে কবি ভাষা আন্দোলনকারীদের আত্মত্যাগে দুঃখিনী মায়েদের চোখের জলে যে ফুল ফুটেছিল তা বুঝিয়েছেন । ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় কবি এদেশের মানুষের সংগ্রামী চেতনা, গণজাগরণ ও দেশপ্রেম তুলে ধরেছেন। কবির মনে হয়েছে।

ভাষাশহিদদের রক্তের বুদ্বুদ কৃষ্ণচূড়া ফুল হয়ে শহরের পথে পথে ফুটে আছে। তিনি একুশের কৃষ্ণচূড়াকে বাঙালি জাতির চেতনার রঙের সঙ্গে মিশিয়ে নিতে চেয়েছেন। ভাষার জন্য যাঁরা রক্ত দিয়েছেন সেই বীরদের রক্তে, সন্তানহারা মায়েদের চোখের জলে যে চেতনাদীপ্ত ফুল ফোটে তা কবির কাছে প্রাণস্বরূপ। সেই চেতনাতেই বাঙালি আজ স্বাধীন জাতি। এই বিষয়টি বোঝাতেই কবি প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছেন।

সারকথা : কবি কৃষ্ণচূড়া ফুলের রঙে ‘৫২-এর ফেব্রুয়ারিতে আত্মদানকারী ভাষা আন্দোলনকারীদের রক্তের প্রতিফলন এবং আমাদের সংগ্রামী চেতনার প্রতিফলন বলে মনে করেন।

গ প্রয়োগ

উদ্দীপকের ইতিহাস প্রসঙ্গ এবং ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’-কবিতার ঐতিহ্য চেতনার মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে। অন্যায়ের কাছে বাঙালি কখনো মাথানত করেনি। যুগে যুগে তারা শাসকগোষ্ঠীর অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে। তারা অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে।

উদ্দীপকের কবিতাংশে কবি নিজেকে ‘বাঙালি’ বলে পরিচয় দিয়ে বাংলার সমৃদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্য স্মরণ করেছেন। বাঙালি তার স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে কীভাবে শত্রুর মোকাবিলা করেছে, স্বদেশের মুক্তির মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে এদেশের মানুষ কীভাবে আত্মাহুতি দিয়েছে উদ্দীপকের কবিতাংশে তার ইঙ্গিত রয়েছে।

এই বিষয়টি ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার সংগ্রামী চেতনার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার জন্য এদেশের তরুণরা জীবন দিয়েছিলেন। তাঁদের চেতনার পথ ধরেই বাঙালি স্বাধীনতার পথে এগিয়েছে। ১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে কবি সেই চেতনায় প্রদীপ্ত হওয়ার কথা বলেছেন। এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে এদেশে মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়।

তাতে এ দেশের সর্বস্তরের মানুষ অংশ নিয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় এবং কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অর্জন করে। স্বাধীনতা বাঙালির সবচেয়ে গর্বের বস্তু। উদ্দীপকের কবিতাংশেও কবি এই বিষয়টি তুলে ধরেছেন। এখানে তিনি যে ইতিহাসের কথা বলেছেন তা বাঙালির রক্তাক্ত সংগ্রামের ইতিহাস । এভাবে উদ্দীপকের ইতিহাস প্রসঙ্গ এবং ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার ঐতিহ্য পরস্পর সাদৃশ্যপূর্ণ।

সারকথা : উদ্দীপকে বাঙালির সংগ্রামী ইতিহাসকে স্মরণ করা হয়েছে। এর সঙ্গে উদ্দীপকের সাদৃশ্য বিদ্যমান। কারণ উদ্দীপকও বাঙালির অনুরূপ ইতিহাস চেতনার প্রতিফলন ঘটেছে।

ঘ উচ্চতর দক্ষতা

“উদ্দীপকে প্রতিফলিত সংগ্রামী চেতনা যেন ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার ভাবসত্যের সংহত রূপ”- মন্তব্যটি যথার্থ।

পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী শুরু থেকেই এদেশের মানুষের উত্তপর শোষণ করতে থাকে। তারা বাঙালিদের নিপীড়ন ও নির্যাতন করতে থাকে । বাঙালিকে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে।

উদ্দীপকে শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালির ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম এবং তাদের আত্মদানের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। এখানে স্বাধীনতা অর্জনে বাঙালির সাহস ও আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে চূড়ান্ত লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে। শত্রু শাসকদের ভয় উপেক্ষা করে বাঙালি তাদের অস্ত্রে শান দিয়েছিল। এই চেতনাটি ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার চেতনার প্রতিফলক। ১৯৬৯ সালে এদেশের মানুষ জাতিগত শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। তারা ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারির চেতনা অনুপ্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করেছে। এই চেতনাই পরবর্তীতে ‘৬৯, ‘৭০ হয়ে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের রূপ পরিগ্রহ করেছে। এদিক থেকে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ একসূত্রে গাঁথা।

‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় কবি সংগ্রামী চেতনা ও স্বদেশপ্রেমের প্রকাশ ঘটিয়েছেন। কবি এখানে ১৯৬৯-এর কথা বলতে গিয়ে ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারির চেতনাকে স্মরণ করেছেন। উদ্দীপকের মূলভাবে সেই চেতনারই প্রতিফলন ঘটেছে। ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলনের চেতনা, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেছে। এসব দিক বিচারে তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

সারকথা : উদ্দীপকের কবিতাংশে বাঙালির সংগ্রামী ইতিহাসের যে পরিচয় ফুটে উঠেছে তা ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় প্রতিফলিত সংগ্রামী চেতনার সঙ্গে একসূত্রে গাঁথা। উভয় ক্ষেত্রেই শত্রুর বিরুদ্ধে বাঙালির ঐক্যবদ্ধ জাগরণের রূপটি লক্ষ করা যায়।

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)

প্রশ্ন ০৪ এবং উত্তর

আবার এসেছো তুমি,
প্রাচুর্যের রূপে, হে ফাল্গুন
সাজিয়ে দিয়েছ তুমি দিকে দিকে আরক্তিম ফুলে
মান্দারের শাখা, তুমি গেঁথেছো মালিকা সুনিপুণ,
সে মালা শোভিত হয় যেন বনরমণীর চুলে।
ঊর্মিমালাসম তুমি ঝরে যাবে, তুমি শেষ হবে
হে ফাল্গুন, তব তুমি বেদনা মধুর মনে রবে।

ক. ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতাটি কোন ছন্দে রচিত?
খ. ‘সারা দেশ ঘাতকের অশুভ আস্তানা’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার সাদৃশ্য দেখাও।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতাটির মূল চেতনাকে ধারণ করে কি? যুক্তি দাও।

ক) ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতাটি গদ্যছন্দে রচিত ৷

খ অনুধাবন

‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় কবি রক্তবর্ণের কৃষ্ণচূড়া ফুল দ্বারা ভাষা আন্দোলনে শহিদদের রক্তের চেতনার প্রতিফলনকে বুঝিয়েছেন।

● ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় কবির চেতনায় ভাষাশহিদদের রক্তের বুদ্বুদ কৃষ্ণচূড়ার ফুল হয়ে ফুটেছে শহরের পথে। কবির চেতনাজুড়ে ভাষা শহিদের স্মৃতি বিরাজমান। তাই ১৯৬৯-এ এসেও তিনি সেই স্মৃতি ভুলতে পারেন না। তিনি সেই চেতনায় অনুপ্রাণিত হন। তাঁরা যেমন কোনো বাধা মানেননি কবিও তেমনই চেতনাদীপ্ত । কবির কাছে ১৯৬৯ সালের কৃষ্ণচূড়ার রং ১৯৫২ সালের কৃষ্ণচূড়ার রং এক। তাই তিনি সেদিনের ভাষা আন্দোলনের চেতনার সঙ্গে বর্তমানকে এক করে দেখেছেন।

উদ্দীপকের সঙ্গে ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার কিছু সাদৃশ্য রয়েছে। ১৯৫২ সালে বাঙালি সন্তানরা মাতৃভাষা বাংলার জন্য রাজপথে মিছিল করে রক্ত দিয়েছে। তাদের সেই আত্মত্যাগের পথ ধরেই পরবর্তীতে বাঙালি স্বাধীনতা অর্জন করেছে। বাঙালিরা জীবন দেয় কিন্তু অন্যায়ের কাছে মাথানত করে না।

গ অনুধাবন

‘সারা দেশ ঘাতকের অশুভ আস্তানা’ বলতে কবি পূর্ব বাংলার সর্বত্র শত্রুর আধিপত্য বিস্তারকে বুঝিয়েছেন।

‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় কবি ‘৫২-এর ভাষা আন্দোলনের প্রেরণায় ১৯৬৯-এ গণআন্দোলন শুরু হওয়ার কথা বলেছেন।

পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তৎকালীন পূর্ব বাংলার মানুষকে নানাভাবে শাসন-শোষণ করেছে। তারা এদেশে বসেই এদেশের মানুষের ওপর অত্যাচার করেছে। নির্বিচারে মানুষ হত্যার মাধমে তারা বাঙালির স্বাধীনতার স্পৃহাকে স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল ।

তারা পুরো দেশেই তাদের অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে। এই কারণে কবি এই দেশকে ‘ঘাতকের অশুভ আস্তানা’ বলেছেন ।

সারকথা : ‘সারা দেশ ঘাতকের অশুভ আস্তানা’ বলতে কবি পুরো দেশে শত্রুর অত্যাচার-নির্যাতনের দিকটি বুঝিয়েছেন।

উদ্দীপকের কবিতাংশে প্রকৃতির বিভিন্ন অনুষঙ্গের কথা বলা হয়েছে। এখানে ফাল্গুনের রূপবৈচিত্র্য, ফুল গাছপালার কথা বলা হয়েছে। ফাল্গুন চলে যাওয়ার পরও এসবের প্রতি ভালোবাসা অটুট থাকার দিক কবি তুলে ধরেছেন। অন্যদিকে ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় কৃষ্ণচূড়া ফুলের কথা বলা হয়েছে।

কবি কৃষ্ণচূড়া ফুলকে ভাষাশহিদদের রক্তের সঙ্গে তুলনা করেছেন। ভাষার জন্য যাঁরা রক্ত দিয়েছেন, জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের ত্যাগ আর মহিমা যেন মূর্ত হয়ে ওঠে থরে থরে ফুটে থাকা লাল কৃষ্ণচূড়ার স্তবকে স্তবকে । উদ্দীপকের সঙ্গে ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার প্রকৃতির উপাদানের বন্দনার দিক থেকে সাদৃশ্য রয়েছে।

সারকথা : উদ্দীপকের কবিতাংশে ফাল্গুনের আগমনে বাংলার রূপবৈচিত্র্যের পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায়ও ফাল্গুন কৃষ্ণচূড়া ফোটার কথা বলা হয়েছে।

ঘ) উচ্চতর দক্ষতা

উদ্দীপকটি ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার মূল চেতনাকে ধারণ করে না।

বাঙালি জাতি বীরের জাতি। যুগে যুগে বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হয়ে শাসকশ্রেণির বিভিন্ন অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে।

তারা বিভিন্ন সংগ্রাম-আন্দোলনে জীবন বিসর্জন দিয়েছেন।‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতাটি দেশপ্রেম, গণজাগরণ ও সংগ্রামী চেতনার কবিতা। ১৯৬৯ সালে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এদেশের মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে যে গণআন্দোলনের সূচনা করে, কবিতাটি সেই পটভূমিতে রচিত। জাতিগত শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে এদেশের মানুষ প্রতিবাদ করে। বিচিত্র শ্রেণি-পেশার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সংগ্রামী চেতনার অসাধারণ এক শিল্পভাষ্য রচিত হয়েছে এই কবিতায়। অন্যদিকে উদ্দীপকের কবিতাংশে বাংলাদেশের প্রকৃতির সৌন্দর্য বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে ফাল্গুনের রূপবৈচিত্র্যের প্রতিফলন ঘটেছে।

‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার মূল বিষয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে বাঙালির সংগ্রামী চেতনা। অন্যদিকে উদ্দীপকে দেশের প্রকৃতির প্রতি অনুরাগ প্রকাশ পেয়েছে। এই দিক বিচারে তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার মূল চেতনাকে ধারণ করে না।

সারকথা: ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের চেতনায় কবি ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের কথা বলেছেন। এখানে Fন তিনি ভাষাশহিদদের রক্তের বুদ্বুদকে শহরের পথে কৃষ্ণচূড়ার ফুল হয়ে ফুটে থাকার সঙ্গে তুলনা করেছেন। এই চেতনা উদ্দীপকে নেই।

সেখানে ফাল্গুন প্রকৃতির বৈচিত্র্য প্রতিফলিত হয়েছে। এদিক থেকে প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)

প্রশ্ন ০৫ এবং উত্তর

বারবার ফিরে আসে রক্তাপ্লুত শার্ট
ময়দানে ফিরে আসে, ব্যাপক নিসর্গে ফিরে আসে
ফিরে আসে থমথমে শহরের প্রকাণ্ড চোয়ালে
হাওয়ায় হাওয়ায় ওড়ে, ঘোরে হাতে হাতে,
মিছিলে পতাকা হয় বারবার রক্তাপ্লুত শার্ট।
বিষম দামাল দিনগুলি ফিরে আসে বারবার,
বারবার কল্লোলিত আমাদের শহর ও গ্রাম।

ক. ঘাতকের আস্তানায় কারা ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে?
খ. ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় কবি রক্তবর্ণের কৃষ্ণচূড়া ফুল দ্বারা কী বুঝিয়েছেন?
গ. উদ্দীপকের রক্তাপ্লুত শার্ট ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার কোন চেতনার সঙ্গে তুলনীয়? ব্যাখ্যা কর ।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার সংগ্রামী মানুষের আত্মত্যাগের আংশিক প্রতিনিধিত্ব করে, পুরো বিষয় সেখানে অনুপস্থিত।— মন্তব্যটির যথার্থতা প্রমাণ কর।

ক জ্ঞান

ঘাতকের আস্তানায় বাঙালিরা ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে।

খ অনুধাবন

উদ্দীপকের কবিতাংশের রক্তাপ্লুত শার্ট ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার ১৯৫২ সালের ভাষাশহিদদের চেতনার সঙ্গে তুলনীয়।

বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার দাবিতে ১৯৫২ সালের এদেশের ছাত্র-জনতা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাজপথে মিছিল করে। সেই মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে সালাম, বরকত, জব্বার, রফিকসহ আরও অনেকে শহিদ হন। ভাষা আন্দোলনের এ চেতনা পরবর্তী সময়ে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।

সারকথা : একুশের কৃষ্ণচূড়া ফুলের রক্তবর্ণকে কবি ১৯৫২ সালের ভাষাশহিদদের আত্মত্যাগ ও রক্তদানের চেতনার প্রতিফলন মনে করেছেন

১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে এসে।

উদ্দীপকের কবিতাংশে অধিকার আদায়-সংগ্রামে উনিশশো উনসত্তরে শহিদ আসাদের প্রতিবাদী চেতনার দিকটি তুলে ধরা হয়েছে।

এই চেতনা ১৯৫২ সালে মাতৃভাষা বাংলার জন্য এদেশের মানুষ জীবন উৎসর্গ করার চেতনাকে নির্দেশ করে। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি শত্রুর কাছে মাথা নত না করে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে তারা রাজপথে মিছিল করে গুলিবিদ্ধ হয়ে রাজপথ রক্তে রঞ্জিত করেছে। উদ্দীপকে সেই চেতনা প্রতিফলিত। এখানে রক্তাপ্লুত যে শার্টের কথা বলা হয়েছে তা সংগ্রামী চেতনার প্রতীক ।

• ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জনের পথে অগ্রসরের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে, যা উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়নি। এ কবিতায় কবি একুশের রক্তঝরা দিনের কথা স্মরণ করেছেন যা উদ্দীপকে নেই। ভাষার জন্য আত্মত্যাগের বিষয়টিও উদ্দীপকে অনুপস্থিত। তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

সারকথা : উদ্দীপকে উপস্থাপিত ভাবটি ছাড়া ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় আরও কিছু বিষয় রয়েছে যা উদ্দীপকে প্রকাশ পায়নি। এ দিক বিচারে প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

ঘ উচ্চতর দক্ষতা

উদ্দীপকটি ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার সংগ্রামী মানুষের আত্মাহুতির মাহাত্ম্যের আংশিক প্রতিনিধিত্ব করে, পুরো বিষয় সেখানে অনুপস্থিত।- মন্তব্যটি যথার্থ।

উদ্দীপকে, উনসত্তরের ছাত্র-জনতার সংগ্রামী চেতনা ও আত্মত্যাগের প্রতিফলন ঘটেছে। এখানে রক্তাপ্লুত শার্টের ময়দানে ফিরে আসার যে কথা বলা হয়েছে তা বায়ান্নর ভাষাশহিদের চেতনার সঙ্গে তুলনীয়। ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের চেতনার কথা বলা হয়েছে। সেই ‘৫২-এর পথ ধরে বাঙালি ‘৬৯-এ এসে আরও বেশি সংগ্রামী চেতনায় প্রদীপ্ত হয়েছে। ছাত্র অসন্তোষকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা আন্দোলন উনিশশো ঊনসত্তরে ব্যাপক গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিয়েছে। গ্রাম-গঞ্জ- শহরে সর্বত্র শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে মানুষ রুখে দাঁড়িয়েছে। এসব দিকের সমন্বয়ে উদ্দীপকের সংগ্রামী চেতনার ভাবটি ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার সঙ্গে তাৎপর্যময় হয়ে উঠেছে।

সারকথা : উদ্দীপকে রক্তাপ্লুত শার্টের ফিরে আসার সঙ্গে ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার ভাষা আন্দোলনকারীদের সংগ্রামী চেতনায় অনুপ্রাণিত হয়ে ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে বাঙালিদের অংশগ্রহণের সাদৃশ্য রয়েছে।

বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার আন্দোলন বাঙালির মধ্যে যে ঐক্যচেতনার জন্ম দিয়েছিল সেই চেতনাই ১৯৬৯-এ গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭১-এ স্বাধীনতা অর্জনের পথ প্রশস্ত করেছে।

এই ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র) ছাড়াও আরো পড়ুন

You cannot copy content of this page