লালসালু উপন্যাসের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)

লালসালু উপন্যাসের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র): শিক্ষার্থীরা তোমাদের বাংলা সহপাঠ লালসালু উপন্যাসের সর্বশেষ বোর্ড প্রশ্ন উত্তরসহ এখানে দিয়েছি। আশাকরি তোমরা এখান থেকে প্রস্তুতি ও পরীক্ষার ধারণা নিতে পারবে।

লালসালু উপন্যাসের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)

সাজেশন

আরো পড়ুনঃ

সর্বশেষ বোর্ড প্রশ্নের সাজেশন

প্রশ্ন ১। “শস্যের চেয়ে টুপি বেশি, ধর্মের আগাছা বেশি” ব্যাখ্যা কর।
প্রশ্ন ২। “জমিলা যেন ঠাটাপড়া মানুষের মতো হয়ে গেছে”- বাক্যটি ব্যাখ্যা কর।
৩। “কেবল ধীরে ধীরে কাঠের মত শক্ত হয়ে ওঠে তার মুখটা”– কার মুখ শক্ত হয়ে ওঠে এবং কেন?
প্রশ্ন ৪। কোন ঘটনায় মজিদ ‘বিস্ময়করভাবে নিঃসঙ্গ বোধ’ করে?
প্রশ্ন ৫। “বিশ্বাসের পাথরে যেন খোদাই সে চোখ” – ব্যাখ্যা কর।

লালসালু উপন্যাসের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)

৬। “দলিল-দস্তাবেজ জাল হয়, কিন্তু খোদাতালার কালাম জাল হয় না।” – বুঝিয়ে লেখ।
প্রশ্ন ৭। “যেন বিশাল সূর্যোদয় হয়েছে, আর সে আলোয় প্রদীপের আলো নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।”— বিষয়টি বুঝিয়ে দাও।
প্রশ্ন ৮। “গ্রামের লোকেরা যেন রহিমারই অন্য সংস্করণ।”-বুঝিয়ে লেখ।
৯। ‘দুনিয়াটা বড় বিচিত্র জায়গা’- ব্যাখ্যা কর।
প্রশ্ন ১০। গ্রামে আক্কাসের স্কুল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন কীভাবে ভেঙ্গে যায়?

লালসালু উপন্যাসের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)

প্রশ্ন ১১। “ধান দিয়া কী হইব, মানুষের জান যদি না থাকে?”—ব্যাখ্যা কর।
১২। জমিলা মজিদের মুখে থুথু দিয়েছিল কেন?
প্রশ্ন ১৩। “মজিদের শক্তি ওপর থেকে আসে, আসে ঐ সালু কাপড়ে আবৃত মাজার থেকে”—ব্যাখ্যা কর।
প্রশ্ন ১৪। “চোখে তার তেমনি শিকারির সূচাগ্র-একাগ্রতা”-বুঝিয়ে লেখ।
১৫। “তাই তারা ছোটে, ছোটে”– কেন? ব্যাখ্যা কর।

প্রশ্ন ১৬। “আজ সেখানে নির্ভেজাল নিষ্ঠুর হিংস্রতা”– এর অর্থ বুঝিয়ে দাও।
প্রশ্ন ১৭। “রহিমার অলক্ষে ছাপিয়ে ওঠা অধুর সঙ্গে কতক্ষণ লড়াই করে জমিলা তারপর কেঁদে ফেলে।” – তার এই কান্নার কারণ কী?
১৮। ‘দেশটা কেমন মরার দেশ’- এখানে কোন অঞ্চলের কথা বলা হয়েছে, কেন?
প্রশ্ন ১৯। মজিদ কীভাবে মহব্বতনগর গ্রামে শিকড় গেড়েছিল?
প্রশ্ন ২০। হাসুনির মাকে তার বাপ পিটিয়েছিল কেন?
অথবা, প্রাণের আশ মিটিয়ে বুড়ো কেন তার মেয়েকে মারে?বুঝিয়ে দাও।

লালসালু উপন্যাসের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)

২১। “এখন সে ঝড়ের মুখে উড়ে চলা পাতা নয়,সচ্ছলতায় শিকড়গাড়া বৃক্ষ।”- ব্যাখ্যা কর।
প্রশ্ন ২২। ‘খোদার এলেমে বুক ভরে না তলায় পেট শূন্য বলে’—ব্যাখ্যা কর।
প্রশ্ন ২৩। “ব্যাপারটা ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়ার মতো।” বুঝিয়ে দাও।

২৪। মজিদ কীভাবে দিনের পর দিন তার আত্মবিশ্বাস ফিরে পায়?
উত্তর : মজিদ দিনের পর দিন নানাভাবে ধর্মের ভয় দেখিয়ে একসময় গ্রামবাসীর বিশ্বাস অর্জন করে। এর মধ্য দিয়েই সে আত্মবিশ্বাস ফিরে পায় । বতোরের দিন যায়, আবার আসে। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে মজিদের জমি-ঘরবাড়ি। সেই সঙ্গে সম্মানও। মজিদ যা বলে গাঁয়ের মাতব্বর তা-ই করে।

শলাপরামর্শ, আদেশ, উপদেশের জন্য মজিদের কাছেই আসে। খরা পড়লে তার কাছে খতম পড়াতে আসে। মজিদ সবাইকে বোঝায় রিজিক দেওয়ার মালিক খোদা। মাঠের বুকে গান গেয়ে গজব কাটানো যায় না। মজিদ লালসালু আবৃত মাজারের একনিষ্ঠ সেবক। তাই সবাই তাকে ভয় করে, তার কথা শোনে। গ্রামবাসীর এমন অন্ধ অনুকরণ ও বিশ্বাসের কারণে মজিদও তাদের সঙ্গে প্রতারণা করার আত্মবিশ্বাস ফিরে পায়।

প্রশ্ন ২৫। মজিদ পীর সাহেবকে শয়তান আখ্যা দিল কেন?
উত্তর : মজিদের মতে আওয়ালপুরে আসা পীর সাহেব মানুষকে প্রলুব্ধ করে বিপথগামী করতে চাইছে। তাই সে খালেক ব্যাপারী ও গ্রামবাসীকে নিয়ে এক বৈঠকে উক্ত পীরকে শয়তান বলে আখ্যায়িত করে। মজিদ মহব্বতনগর গ্রামে বৈঠকে সবাইকে বলে শয়তান মানুষকে প্রলুব্ধ করার জন্য মনোমুগ্ধকর রূপ ধারণ করে সামনে উপস্থিত হয়।

আর অত্যন্ত কৌশলে মানুষকে বিপথে চালিত করার চেষ্টা করে। আওয়ালপুরে আগত পীর সাহেবের উদ্দেশ্যও তাই মানুষকে বিপথে নেওয়া, খোদার পথ থেকে সরিয়ে নেওয়া। সেই উদ্দেশ্যেই তথাকথিত পীর কৌশল চরিতার্থ করার চেষ্টায় রত। এসব যুক্তির মাধ্যমে মজিদ পীর সাহেবকে ‘শয়তান’ বলে আখ্যা দেয়।

লালসালু উপন্যাসের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)

প্রশ্ন ২৬। আমেনা বিবিকে কিরূপ শাস্তি দিয়েছিল মজিদ?
উত্তর : প্রতিহিংসাবশত মজিদ আমেনা বিবিকে শাস্তি স্বরূপ খালেক ব্যাপারীকে তালাক দিতে বাধ্য করেছিল। নিঃসন্তান আমেনা বিবি মজিদের নিষেধ অমান্য করে আওয়ালপুরে আগত পীরের পানিপড়া খেতে চেয়েছিল। এক্ষেত্রে মজিদ অমানবিক, নিষ্ঠুর, ধর্মব্যবসায়ী। সে গ্রামের সবাইকে আওয়ালপুরে আগত পীরের কাছ থেকে দূরে রাখতে চেয়েছিল নিজের প্রভাব-প্রতিপত্তি বজায় রাখার জন্য। তাই আমেনা বিবি তা অমান্য করায় মজিদ তাকে শাস্তি দিতে খালেক ব্যাপারীকে বাধ্য করেছিল তার স্ত্রী আমেনাকে তালাক দিতে।

প্রশ্ন ২৭। “তার চোখ যেন পৃথিবীর দুঃখ-বেদনার অর্থহীনতায় হারিয়ে গেছে”— উক্তিটির তাৎপর্য কী?
উত্তর : “তাঁর চোখ যেন পৃথিবীর দুঃখ-বেদনার অর্থহীনতায় হারিয়ে গেছে।”— এখানে জমিলার চোখের কথা বলা হয়েছে। ‘লালসালু’ উপন্যাসে মজিদ তার প্রথম স্ত্রী রহিমা সন্তানহীন বলে দ্বিতীয় বিয়ে করে। অল্পবয়সী জমিলা মজিদের দ্বিতীয় স্ত্রী। মজিদ জমিলাকে ধর্মভীরু করে তার বশে আনার জন্য নানা বিষয় অবলম্বন করে ।

একদিন সকালে খ্যাংটা বুড়ি মাজারে এসে তীক্ষ্ণ আর্তনাদ করে মজিদকে পাঁচ আনা পয়সা দিয়ে তার মৃত ছেলের জান ফিরিয়ে দিতে বলে। মজিদ তাকে সান্ত্বনা দিয়ে পয়সা কুড়িয়ে নিয়ে চলে যায়। এই ঘটনা দেখে জমিলার মন খারাপ হয়, সে দরজার কাছাকাছি চৌকাঠের ওপর নিথর বসে থাকে। এ সময় তার চোখের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে লেখক প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছেন

লালসালু উপন্যাসের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)

প্রশ্ন ২৮। মজিদের হঠাৎ মহব্বতনগর গ্রামে আগমনের কারণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : মজিদের হঠাৎ মহব্বতনগর গ্রামে আগমনের কারণ জীবিকার সন্ধান। মজিদ যে এলাকার মানুষ সেই দেশটা কেমন মরার দেশ, শস্যশূন্য। তাই সেই দেশ ছেড়ে মজিদ জীবিকার সন্ধানে বের হয়ে মহব্বতনগর গ্রামে এসে উপস্থিত হয়। সেখানে সে কথিত মোদাচ্ছের পীরের মাজারকে কেন্দ্র করে ধর্মের দোহাই দিয়ে শোষণের জাল বিস্তার করে। শঠতা, প্রতারণা ও মিথ্যার মাধ্যমে সে তার প্রভুত্ব চালিয়ে ঐ গ্রামে শিকড় গেড়ে বসে। নানা কূট-কৌশল অবলম্বন করে, প্রচলিত কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস টিকিয়ে রাখার মাধ্যমে আর্থিকভাবে সচ্ছলতা অর্জন করে

প্রশ্ন ২৯। “অন্ধকারে সাপের মতো চকচক করে তার চোখ।”— কেন?
উত্তর : আলোচ্য উক্তিটিতে মজিদের লালসার দিকটি প্রকাশ পেয়েছে। মজিদ ধার্মিকতার আড়ালে স্বার্থান্বেষী ও লালসাপূর্ণ এক ব্যক্তি। সে সবার সামনে ধর্মের দোহাই দিলেও তার ভেতরে ছিল এক ধরনের লালসা ও মোহ। তার বাড়িতে ধানের কাজে সহযোগিতা করার জন্য হাসুনির মা আসে। রাতের অন্ধকারে আগুনের আলোয় সেই হাসুনির মাকে দেখে তার মোহ জাগে।

কিন্তু সেই মোহ সংবরণ করে সে তার স্ত্রী রহিমাকে কাছে ডাকে। রহিমার দিকে তার মনোযোগ থাকলেও সেই মনোযোগের অন্তরালে তার মাঝে জাগ্রত হয় হাসুনির মাকে ঘিরে এক ধরনের বাসনা। মজিদের এমন মনোভাবের অভিব্যক্তি ঘটে তার চোখের মধ্য দিয়ে। মজিদের লালসাপূর্ণ মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে আলোচ্য উক্তিটিতে।

প্রশ্ন ৩০। ‘ওস্তাদের মার শেষ কাটালে।’ উক্তিটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর : ‘ওস্তাদের মার শেষ কাটালে’— কথাটি আমেনা বিবি আওয়ালপুরে আগত পীরের নানা কীর্তির সংবাদে মা হওয়ার বাসনায় বলেছিল। আমেনা বিবি ত্রিশ বছর বিবাহিত জীবন পার করলেও তাদের কোনো সন্তান হয়নি। সন্তানের আশায় বুক বেঁধে তার দিন অতিবাহিত হয়। তাই আওয়ালপুরে আগত পীরের নানা কীর্তির সংবাদ পেয়ে মনের মধ্যে একটা আশা জাগে যে, পীরের দোয়ায় সে মা হতে পারবে। মনের কষ্ট দূর করে সে সবাইকে জানিয়ে দিতে পারবে যে, সে মা হওয়ার ক্ষমতা রাখে। বড় বিবি হিসেবে সে মা হতে পারবে এ কথাটি বোঝানোর জন্যই আমেনা বিবি আলোচ্য উক্তিটি করেছে।

লালসালু উপন্যাসের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)

প্রশ্ন ৩১। তাহেরের বাপ নিরুদ্দেশ হয়ে যায় কেন?
উত্তর : স্ত্রীর দেওয়া মিথ্যা বদনাম এবং সালিসের অপমান সইতে না পেরে তাহেরের বাপ নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। সংসারে অভাব থাকায় তাহেরের বাপ-মায়ের মধ্যে সারাক্ষণ ঝগড়া লেগে থাকত। একদিন বুড়ি মনের খেদে তার সন্তানদের জন্ম নিয়ে কথা বললে বুড়ো খেপে গিয়ে বুড়িকে মারতে যায়। এ ঘটনার কথা তার মেয়ে হাসুনির মা মজিদের কাছে গিয়ে বলে এবং মজিদ তার বিরুদ্ধে সালিস ডাকে। সালিসে মজিদ বুড়োকে তার মেয়ের কাছে মাফ চাইতে বলে। স্ত্রীর দেওয়া মিথ্যা বদনাম এবং সালিসের অপমান সইতে না পেরে তাহেরের বাপ বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়।

প্রশ্ন ৩২। “নধর নধর হয়ে ওঠা কচি কচি ধানের ডগার পানে চেয়ে বুক কেঁপে ওঠে তাদের।”- উক্তিটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর : আলোচ্য উক্তিটি দ্বারা ফসলের প্রতি গ্রামের মানুষের ভালোবাসার পাশাপাশি প্রকৃতির রুদ্ররোষে স্বপ্নভঙ্গের আশঙ্কার দিকটি প্রকাশ পেয়েছে। ‘লালসালু’ উপন্যাসে গ্রামের ফসলসমৃদ্ধ মাঠ-ঘাটের দৃশ্য বর্ণনা করা হয়েছে। গ্রামের মানুষের কাছে ধানই সব। তারা ধানের জন্য অনেক পরিশ্রম করে।

এরপরেও যখন দেখে আকাশে সূর্যের প্রতাপে জমির পানি শুকিয়ে যাচ্ছে, তখন কচি ধান গাছগুলোর কথা চিন্তা করে তাদের ভেতরে কেঁপে ওঠে। যেখানে ধানের চিন্তায়, পানির চিন্তায় ন্যায়-অন্যায়বোধ হারিয়ে ফেলে, অন্যকে আঘাত করতেও তাদের দ্বিধা হয় না, সেখানে পানির অভাবে কচি ধানগাছের দুরবস্থার কথা ভেবে তাদের বুক কেঁপে ওঠে। আলোচ্য উক্তিটি দ্বারা এই বিষয়কেই বোঝানো হয়েছে।

লালসালু উপন্যাসের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)

প্রশ্ন ৩৩। “তোমার দাড়ি কই মিঞা?”- এ কথার তাৎপর্য তুলে ধর।
উত্তর : “তোমার দাড়ি কই মিঞা!”— কথাটি স্বার্থান্বেষী, ধূর্ত মজিদ প্রগতিশীল চেতনার অধিকারী আক্কাসকে অপ্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে বলেছিল । সন্ধ্যার পর আক্কাস স্কুল তৈরি করবে এ বিষয়ে বৈঠক ডাকা হলে আক্কাস ও তার বাবা মোদাব্বের সেখানে উপস্থিত হয়।আসল কথা শুরু করার আগে মজিদ আক্কাসকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে।

সভায় উপস্থিত সবারই মুখে ছিল দাড়ি। স্কুল নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনায় আক্কাস সর্বপ্রকার প্রশ্নের জন্য তৈরি হয়ে এসেছিল। হঠাৎ কঠিন হয়ে ঠাস করে চড় মারার ভঙ্গিতেই মজিদ আক্কাসকে হেয় করার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করল– “তোমার দাড়ি কই মিঞা?” মূলত এই কথার মাধ্যমে মজিদ প্রতিপক্ষকে অপ্রস্তুত করে প্রভাব বিস্তার করার কৌশল প্রয়োগ করেছে।

প্রশ্ন ৩৪। খালেক ব্যাপারী তার স্ত্রীকে তালাক দেয় কেন?
উত্তর : প্রতিহিংসাপরায়ণ মজিদের প্ররোচনায় খালেক ব্যাপারী তার স্ত্রীকে তালাক দেয়।খালেক ব্যাপারী একজন ব্যক্তিত্বহীন মানুষ। তার নিজস্ব কোনো চিন্তা-চেতনা নেই। খালেক ব্যাপারী ও মজিদ আওয়ালপুরে আগত পীরের বিরুদ্ধে একাট্টা। অথচ এই খালেক ব্যাপারী তার স্ত্রী আমেনা বিবির অনুরোধে ধলা মিয়াকে পীরের কাছ থেকে পানিপড়া আনতে পাঠায়। ধলা মিয়া মজিদকে সে কথা বলে দেয়। তখন মজিদ খেপে গিয়ে খালেক ব্যাপরীকে কুপরামর্শ দেয়- সে যেন তার বউ আমেনা বিবিকে তালাক দেয়। মজিদের এ পরামর্শে খালেক ব্যাপারী স্ত্রীকে তালাক দেয়।

প্রশ্ন ৩৫। “কি একটা গভীর অন্যায়ের তীব্রতায় খোদার আরশ পর্যন্ত যেন কেঁপে উঠেছে’- কেন বলা হয়েছে?
“উত্তর : মজিদের মুখে থুথু দেওয়ার পর জমিলা ও মজিদের মানসিক অবস্থা বর্ণনা এবং ঘটনার আকস্মিকতা ও পরিণতি ব্যক্ত করতে লেখক আলোচ্য উক্তিটি করেছেন। নামাজ পড়তে গিয়ে জমিলা জায়নামাজে ঘুমিয়ে পড়ে। তা দেখে মজিদ রাগে-ক্ষোভে জমিলাকে শাস্তি দিতে উদ্যত হলে জমিলা মজিদের মুখে থুথু নিক্ষেপ করে। ঘটনার আকস্মিকতায় মজিদ হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। সামান্য একটি মেয়ের দুঃসাহস ও অবাধ্যতা তাকে পাথর করে দেয়। রহিমা ঘটনা শুনে আর্তনাদ করে ওঠে। রহিমার আর্তনাদ শুনে ক্রোধে থরথর করে কাঁপতে থাকা জমিলা স্তব্ধ হয়ে যায়। সে মনে করে কাজটি করে সে অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছে। এ ঘটনার বর্ণনায় লেখক আলোচ্য উক্তিটি করেন।

প্রশ্ন ৩৬। রহিমার পর্বতের মতো অটল বিশ্বাসে ফাটল ধরে কেন?
উত্তর : জমিলার ব্যাপারে মজিদের যে জোরজবরদস্তি তাতে স্বামীর প্রতি রহিমার অটল বিশ্বাসে ফাটল ধরে। মজিদের প্রথম স্ত্রী রহিমা মজিদকে অত্যন্ত ভক্তি-শ্রদ্ধা করে, তার সব আদেশ পালন করে। কিন্তু দ্বিতীয় স্ত্রী জমিলা তা করে না। তাই মজিদ চায় সেও রহিমার মতো তাকে ও মাজারকে মান্য করুক এবং এ ব্যাপারে সে জমিলাকে জোর করে । এ বিষয়টিকে রহিমা সহজে গ্রহণ করতে পারে না। ফলে স্বামীর প্রতি তার দীর্ঘদিনের যে অটল ভক্তি, শ্রদ্ধা ও আনুগত্য তাতে ফাটল ধরে।

লালসালু উপন্যাসের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)

প্রশ্ন ৩৭। মজিদ নাটকীয়ভাবে মহব্বতনগরে প্রবেশ করে কেন?
উত্তর : গ্রামের মানুষ স্বাভাবিকতার চেয়ে চমকপ্রদ আগমন বা নাটকীয়তা পছন্দ করে বিধায় মজিদ মহব্বতনগর গ্রামে যেভাবে প্রবেশ করে, তাতে নাটকীয়তা ছিল। মজিদের মহব্বতনগরে প্রবেশ হয় নাটকীয়ভাবে। প্রবেশটা মজিদ ইচ্ছে করেই নাটকীয় করেছে, কারণ গ্রামের লোকেরা ঐ ধরনের নাটকীয়তা পছন্দ করে। সরাসরি মতিগঞ্জের সড়ক দিয়ে যে গ্রামে এসে ঢুকবে তার চেয়ে বেশি পছন্দ হবে তাকে, যে বিলটার বড় অশ্বত্থ গাছ থেকে নেমে আসবে। মজিদও তাই চমকপ্রদভাবেই এসেছে। তার এই চমকপ্রদ আগমন মুহূর্তে গ্রামের সব মানুষকে চমকে দিয়েছে।

প্রশ্ন ৩৮। তাহেরের বাপ তার মেয়েকে মেরেছে এই কথা শুনে মজিদের মুখ কঠিন হয়ে যায় কেন?
উত্তর : তাহেরের বাপ তার মেয়েকে মেরেছে এই কথা শুনে ক্রোধে মজিদের মুখ কঠিন হয়ে যায়। ‘লালসালু’ উপন্যাসের তাহেরের বাপ আর তার বৃদ্ধা মায়ের মধ্যে সবসময় ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকত। একদিন বুড়ি মনের খেদে তার সন্তানদের জন্ম নিয়ে কথা বললে বুড়ো খেপে গিয়ে বুড়িকে মারতে যায়।

কথাটা তার মেয়ে হাসুনির মা মজিদের কান পর্যন্ত পৌঁছায় এবং মজিদ তার বিরুদ্ধে সালিস ডাকে। বৃদ্ধ বুঝতে পারে এ তার মেয়ের কাজ, কেননা মজিদের বাড়িতে তারই যাতায়াত আছে; তাই বৃদ্ধ তার মেয়েকে ধরে মারে। তাহেরের বাপ তার মেয়েকে মেরেছে এই কথা শুনে ক্রোধে মজিদের মুখ কঠিন হয়। কারণ এ যেন তার বিরুদ্ধেই প্রতিশোধ ।

প্রশ্ন ৩৯। ‘অবশেষে আগ্নেয়গিরির মুখে ছিপি দিয়ে মজিদ সরে যায়।’— কথাটির প্রসঙ্গ ও তাৎপর্য লেখ।
উত্তর : জমিলার প্রতি মজিদের ক্রোধের পূর্ণ প্রকাশ ঘটাতে না পেরে মজিদ সরে যায়। এখানে সে বিষয়টিই বোঝানো হয়েছে। মহব্বতনগরে মজিদের হুকুম কেউ অমান্য করে না। কিন্তু মজিদের দ্বিতীয় স্ত্রী জমিলা কিছুটা বিদ্রোহী স্বভাবের। মজিদের আদেশ-নির্দেশ সে খুব একটা মানে না। জমিলা নামাজ পড়েনি একথা জানার পর মজিদের মাথায় যেন আগুন ধরে যায়। কিন্তু জমিলা তাতে নির্বিকার। মজিদের হঠাৎ মনে হয় জমিলা যেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী। তাই সতর্কতা অবলম্বন করে এই প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বীর সামনে থেকে সে সরে যায়, যা আলোচ্য অংশে প্রকাশিত হয়েছে।

প্রশ্ন ৪০। আমেনা বিবির মনে আশার সঞ্চার হয় কেন?
উত্তর : সন্তানলাভের ক্ষীণ সম্ভাবনায় আমেনা বিবির মনে আশার সঞ্চার হয়। সন্তানলাভের তদবিরে আমেনা বিবি প্রথমে নিরাশ হয়েছিল। কারণ আওয়ালপুরে আগত পীর সাহেবের পানিপড়া সে পায়নি তাই সে ধরেই নিয়েছিল তার আর সন্তান হবে না। কিন্তু মজিদ যখন পেটের বেড়ির কথা বলে এবং সাতের বেশি বেড়ি না থাকলে তা খোলার ব্যবস্থার কথা জানায় তখন তার মনে আশার সঞ্চার হয়।

উত্তরমালা

এই লালসালু উপন্যাসের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র) ছাড়াও আরো পড়ুন

You cannot copy content of this page