সুভা গল্পে সুভার চরিত্র বিশ্লেষণ বা চরিত্র পরিচিতি

সুভা গল্পে সুভার চরিত্র বিশ্লেষণ বা চরিত্র পরিচিতি এর বিস্তারিত নিচে দেওয়া হল যা তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য সহায়ক হবে। তাই এই আর্টিকেলটি অনুসরণ করো এবং অনুশীলন অব্যাহত রাখো। তোমাদের জন্য শুভকামনা।

চরিত্র পরিচিতি (Character) 

সুভ৷ : ‘সুভা’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র সুভা। বাবা তার নাম সুভাষিণী রাখলেও সে কথা বলতে পারে না। মা তাকে নিজের ত্রুটিস্বরূপ গর্ভের কলঙ্ক মনে করতেন। বাবা তাকে অন্য দুই মেয়ে অপেক্ষা বেশি আদর করতেন। সুভা কথা বলতে না পারলেও অনুভব করতে পারত। তার বড় বড় কালো চোখের উজ্জ্বল দৃষ্টির ভাষা বুঝতে কারও অসুবিধা হতো না। সে কাজকর্মে অবসর পেলে নদীতীরে 

করতে চাইত। সে মনে মনে প্রতাপের জন্য জলকুমারী, মণিদীপ্ত গভীর নিস্তব্ধ পাতালপুরীর একমাত্র রাজকন্যা হতে চাইত। আর তার জন্য সে এক অলৌকিক ক্ষমতা প্রত্যাশা করত। পূর্ণিমা রাতে সে নিস্তব্ধ ব্যাকুল পূর্ণিমা প্রকৃতি উপভোগ করত। বিয়ের উদ্দেশ্যে তাকে কলকাতা নিয়ে যাওয়ার আয়োজনের সময় প্রতাপের কথায় সে মর্মবিদ্ধ হরিণীর মতো আহত হয়।

যাওয়ার দিন স্থির হলে সুভা গোয়ালঘরে বাল্যসাথিদের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় অশ্রুসিক্ত হয় এবং শুক্লাদ্বাদশীর রাতে চিরপরিচিত পরিবেশ ছেড়ে চলে যায়। যাওয়ার সময় সে চিরচেনা প্রকৃতি, পরিবেশ ও মাটির কাছে আবেদন জানায়, তাকে যেতে না দেওয়ার জন্য।

বাণীকণ্ঠ : ‘সুভা’ গল্পের অন্যতম চরিত্র বাণীকণ্ঠ সুভার বাবা। তিনি অন্য দুই মেয়ে সুকেশিনী ও সুহাসিনী অপেক্ষা সুভাষিণী তথা সুভাকেই বেশি ভালোবাসতেন। তিনি নদীর তীরে চণ্ডীপুর গ্রামের সচ্ছল গৃহস্থ। বাঁখারির বেড়া, আটচালা, গোয়ালঘর, ঢেঁকিশালা, খড়ের স্তূপ, তেঁতুলতলা, আম কাঁঠাল এবং কলার বাগান নৌকাবাহী-মাত্রেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সচ্ছল অবস্থার জন্য. বাণীকণ্ঠর শত্রু ছিল। তারা সুভার বিয়ে নিয়ে নানা কথা বলতে শুরু করে। কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা হিসেবে তিনি সব লোকনিন্দা সহ্য করেছেন।

অবশেষে সৎপাত্রে পাত্রস্থ করার জন্য মেয়েকে কলকাতা নিয়ে যাওয়ার আয়োজন করেছেন। তিনি স্নেহমমতাবোধসম্পন্ন এবং আত্মমর্যাদার অধিকারী একজন পিতা। সংসারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের সময় তিনি স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করেছেন, তার মতামত নিয়েছেন। গল্পে কোথাও তার অর্থ-বিত্তের অহংকার এবং পবিারের লোকদের প্রতি দায়িত্বহীনতার প্রমাণ পাওয়া যায় না। তিনি একজন যথার্থ দায়িত্বশীল ব্যক্তি। 

সুভার মা : ‘সুভা’ গল্পের অন্যতম নারী চরিত্র সুভার মা। তিনি বাণীকণ্ঠর স্ত্রী, তিন কন্যাসন্তানের জননী। সুভা জন্ম থেকেই কথা বলতে পারে না বলে তিনি মেয়েকে নিজের ত্রুটিস্বরূপ দেখতেন। তিনি সুভাকে তার গর্ভের কলঙ্ক জ্ঞান করতেন এবং মেয়ের প্রতি তিনি অত্যন্ত বিরক্ত ছিলেন। তিনি সুভাকে বিশেষ আদর-যত্ন করতেন না। তবে লোকনিন্দা থেকে বাঁচতে মেয়েকে পাত্রস্থ করার সিদ্ধান্তে তিনি স্বামী বাণীকণ্ঠর সঙ্গে একমত হয়েছেন। মেয়েকে দূরে নিয়ে গিয়ে বিয়ে দেওয়ার কথায় তিনি রাজি হয়েছেন।

প্রতাপ : ‘সুভা’ গল্পের অন্যতম পুরুষ চরিত্র প্রতাপ। সে গোঁসাইদের ছোট ছেলে, নিতান্ত অকর্মণ্য। কাজকর্ম করে সংসারের উন্নতি করার ক্ষেত্রে তার কোনো আগ্রহ নেই। তার প্রধান শখ ছিপ ফেলে মাছ ধরা। নদীতীরে মাছ ধরতে গিয়ে সুভার সঙ্গে তার প্রায় দেখা হতো। মাছ ধরার সময় বাক্যহীন সঙ্গীই সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ বিবেচনায় সুভাকে প্রতাপ সঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করে। সুভাকে সে আদর করে ‘সু’ বলে ডাকত। প্রতাপ মাছ ধরার সময় সুভার সাজিয়ে আনা পান খেত। সুভা যে তাকে পছন্দ করত সেটা প্রতাপ অনুধাবন করেনি। সুভাকে তার বাবা কলকাতা নিয়ে যাচ্ছে শুনেও প্রতাপ তাই অবাক হয়নি। বরং হেসে বলেছে— “কী রে সু, তোর নাকি বর পাওয়া গেছে, তুই বিয়ে করতে যাচ্ছিস? দেখিস আমাদের ভুলিসনে।” এখানে প্রতাপের উদাসীনতা ও অমানবিকতা প্রকাশ পেয়েছে। 

Read More:

Leave a Comment

You cannot copy content of this page