অশুদ্ধি-সংশোধন পর্ব ২

জটিল শব্দের বানান

কতকগুলো জটিল শব্দের বানান

বাংলা বানানের নিয়ম জানা থাকলে বানান ভুল যেমন পরিহার করা সম্ভব। তেমনি শব্দের দুরূহ বানান মুখস্থ করে মনে রাখা উচিত। এখানে কিছু শব্দের একটি নির্বাচিত তালিকা দেওয়া হলো। এসব শব্দের প্রত্যেকটির বানানেই কিছু-না-কিছু জটিলতা রয়েছে এবং ভালোভাবে শেখা বা জানা না থাকলে এসব শব্দের বানানে ভুল হতে পারে।

অকস্মাৎ – কৃচ্ছ্র – তূষ্ণীম্ভাব – পক্ষ্ম – ব্যঞ্জনা
অগ্ন্যাশয় – কৃত্তিবাস – ত্বক – পরাক্সমুখ – ব্যতিক্রম
অগ্নুৎপাত – ক্বচিৎ – ত্বরণ – পরিস্রাবণ – ব্যতিরেকে
অচিন্ত্য – ক্রূর – ত্বরান্বিত – পন্ডাদপসরণ – ব্যতিব্যস্ত
অধ্যাত্ম – ক্ষুব্ধ – ত্বরিত – পার্শ্ব – ব্যতীত
অনিন্দ্য – ক্ষুন্ন – ত্যক্ত – প্রতিদ্বন্দ্বিতা – ব্যত্যয়
অনূর্ধ্ব – ক্ষুন্নিবৃত্তি – দয়ার্দ্র – প্রতিদ্বন্দ্বী – ব্যথা
অন্তঃসত্ত্বা – গার্হস্থ্য – দারিদ্র্য – প্রত্যয়িত – ব্যথিত
অন্তর্জ্বালা – গূঢ় – দুরাকাক্সক্ষা – প্রত্যূষ – ব্যপদেশ
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া – গ্রীষ্ম – দুর্নিরীক্ষ্য – প্রাতঃকৃত্য – ব্যবচ্ছেদ
অপাঙ্ক্তেয় – ঘূর্ণ্যমান – দৌরাত্ম্য – প্রাতর্ভ্রমণ – ব্যবধান
অমর্ত্য – জলোচ্ছ্বাস – দ্বন্দ্ব – প্রোজ্জ্বল – ব্যবসা


অলঙ্ঘ্য – জাজ্বল্যমান – দ্বিতীয় – পৌরোহিত্য – ব্যবস্থা
অশ্বথ – জাত্যভিমান – দ্বিধা – বক্ষ্যমাণ – ব্যবহার
আকাক্সক্ষা – জীবাশ্ম – দ্বেষ – বন্দ্যোপাধ্যায় – ব্যয়
আর্দ্র – জ্বর – দ্বৈত – বন্ধ্যা – ব্যর্থ
উচ্চৈঃস্বরে – জ্বলজ্বল – দ্ব্যর্থ – বয়ঃকনিষ্ঠ – ব্যস্ত
উচ্ছ্বাস – জ্বলা – দ্যূতক্রীড়া – বয়ঃপ্রাপ্ত – ব্যুৎপত্তি
উজ্জ্বল – জ্বালা – ধ্বংস – বয়োজ্যেষ্ঠ – ব্যূহ
উতরাই – জ্বালানি – ধ্বজা – বর্ত্ম – ব্রাহ্মণ
উত্ত্যক্ত – জ্যেষ্ঠ – ধ্বনি – বহিরিন্দ্রিয় – ভৌগোলিক
উদ্ভিজ্জ – জ্যৈষ্ঠ – ধ্বন্যাত্মক – বাত্যাবিধ্বস্ত – ভ্রাতৃত্ব
উপর্যুক্ত – জ্যোৎস্না – নঞর্থক – বাল্মীকি – মধুসূদন
উপলব্ধি – জ্যোতি – নিক্বণ – বিদ্বজ্জন – মনস্তত্ত্ব
ঊর্ধ্ব – জ্যোতিষী – নিরবচ্ছিন্ন – বিদ্যুৎ – মন্বন্তর
এতদ্বারা – জোতিষ্ক – নির্দ্বন্দ্ব – বিভীষিকা – মর্ত্য
এতদ্ব্যতীত – টীকাটিপ্পনী – নির্দ্বিধা – বিভূতিভূষণ – মহত্ত্ব
ঔজ্জ্বল্য – তৎক্ষণাৎ – নীরোগ – বৈচিত্র্য – মাহাত্ম্য
ঔদ্ধত্য – তৎসত্ত্বেও – নৈর্ঋত – বৈদগ্ধ্য – মুহুর্মুহু
কর্তৃ – তত্ত্ব – ন্যস্ত – বৈশিষ্ট্য – মুহূর্ত
কর্তৃত্ব – তত্ত্বাবধান – ন্যুব্জ – ব্যক্ত – যক্ষ্মা
কর্ত্রী – তদ্ব্যতীত – ন্যূন – ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য – যশস্বী
কাক্সিক্ষত – তাত্ত্বিক – পক্ব – ব্যগ্র – যাচঞা
কুৎসিত – তীক্ষ্ণ – পঙ্ক্তি – ব্যঙ্গ – যাথার্থ্য
রশ্মি – শুভাকাক্সক্ষী – ষান্মাসিক – সম্মেলন – স্বাতন্ত্র্য
রূঢ় – শ্বশুর – সংবর্ধনা – সরসত্তা – স্বায়ত্তশাসন
লক্ষ্মণ – শ্বশ্রু – সত্তা – সাত্ত্বিক – স্বাস্থ্য
লক্ষ্মী – শ্বাপদ – সত্ত্ব – সান্ত্বনা – স্মরণ
লক্ষ্য – শ্মশান – সত্ত্বেও – ডসন্দুর – হীনম্মন্যতা
শস্য – শ্মশ্রু – সত্যায়িত – সূক্ষ্ম – হ্রস্ব
শ্বাশ্বত – শ্রদ্ধাস্পদেষু – সন্ধ্যা – সৌহার্য্য – হ্রাস
শিরচ্ছেদ – শ্রীমতী – সন্ন্যাস – স্বতঃস্ফূর্ত – হৃৎপি-
শিষ্য – শ্যেন – সন্ন্যাসী – স্বত্ব – হৃদযন্ত্র
– শ্লেষ্মা – সম্মিলন – স্বাচ্ছন্দ্য –

সমাস-ঘটিত অশুদ্ধি সম্পর্কে সতর্কতা

সংস্কৃত ইন-প্রত্যয়ান্ত শব্দের প্রথমার একবচনের রূপ হিসেবে বাংলায় ধনী, পাপী, গুণী ইত্যাদি শব্দ এসেছে। কিন্তু নিঃ (র্নি)-উপসর্গযোগে সমাসবদ্ধ হলে এগুলোর অন্তে ঈ-কার হওয়ার কথা নয়। কারণ, এসব ক্ষেত্রে ধনী, পাপী ইত্যাদি শব্দের সঙ্গে সমাস হয় না, সমাস হয় ধন, পাপ ইত্যাদি শব্দের সঙ্গে। যেমন: নেই ধর যার = নির্ধন, নেই পাপ যার = নিষ্পাপ। এই নিয়মে নির্ধনী, নিষ্পাপী ইত্যাদি শব্দ অশুদ্ধ। এ রকম:

[অশুদ্ধ] – [শুদ্ধ] – [অশুদ্ধ] – [শুদ্ধ]
নিরপরাধী – নিরপরাধ – নির্জ্ঞানী – নির্জ্ঞান
নিরভিমানী – নিরভিমান নির্দোষী – নির্দোষ
নিরহঙ্কারী – নিরহঙ্কার – নির্ধনী – নির্ধন
নির্গুণী – নির্গুণ – নীরোগী – নীরোগ

সমাস-ঘটিত অন্যান্য অশুদ্ধি
অতলস্পর্শ (অতলস্পর্শী নয়) – মহিমম-িত (মহিমাম-িত নয়)
অর্ধরাত্র (অর্ধরাত্রি নয়) – মাতৃজাতি (মাতাজাতি নয়)
অহর্নিশ (অহর্নিশি নয়) – যুবরাজ (যুবরাজা নয়)
অহোরাত্র (অহোরাত্রি নয়) – রাজগণ (রাজাগণ নয়)
গরিমম-িত (গরিমাম-িত নয়) – সক্ষম (সক্ষমিত নয়)
গরিমময় (গরিমাময় নয়) – সলজ্জ (সলজ্জা নয়)
দিবারাত্র (দিবারাত্রি নয়) – সশঙ্ক (সশঙ্কা নয়)
পিতৃহারা (পিতাহারা নয়) – সুবুদ্ধি (সুবুদ্ধিমান নয়)
ভ্রাতৃবৃন্দ (ভ্রাতাবৃন্দ নয়)

প্রত্যয়-ঘটিত বিভিন্ন অশুদ্ধি সম্পর্কে সতর্কতা

আর্থনীতিক (অর্থনৈতিক নয়) – বন্দ্য (বন্দ্যনীয় নয়)
ঐকতান (ঐক্যতান নয়) – মথিত (মন্থিত নয়)
ঐকমত্য (ঐক্যমত নয়) – মধুরিমা (মাধুরিমা নয়)
গণ্য (গণ্যনীয় নয়) – মান্য (মান্যনীয় নয়)
গণনীয় (গণ্যনীয় নয়) – মোহ্যমান (মুহ্যমান নয়)
গ্রাহ্য (গ্রাহ্যনীয় নয়) – রমণীয় (রম্যণীয় নয়)

অশুদ্ধ : পৃথিবী সর্বদা সূর্যের চারদিকে ঘূর্ণীয়মান।
শুদ্ধ : পৃথিবী সর্বদা সূর্যের চারদিকে ঘূর্ণায়মান (বা ঘূর্ণ্যমান)।
অশুদ্ধ : ডালিম ফুলের রক্তিমতা চোখে পড়ার মতো।
শুদ্ধ : ডালিম ফুলের রক্তিমা চোখে পড়ার মতো।
অশুদ্ধ : শিক্ষকরা চাইছেন শিক্ষা ব্যবস্থাকে রাষ্ট্রকরণ করতে।
শুদ্ধ : শিক্ষকরা চাইছেন শিক্ষা ব্যবস্থাকে রাষ্ট্রীয়করণ (বা রাষ্ট্রায়ত্তকরণ) করতে।
অশুদ্ধ : এটা হচ্ছে ষষ্ঠদশ বার্ষিক সাধারণ সভা।
শুদ্ধ : এটা হচ্ছে ষোড়শ বার্ষিক সাধারণ সভা।
অশুদ্ধ : এত পরিশ্রম আমার সাধ্যায়ত্ত নয়।
শুদ্ধ : এত পরিশ্রম আমার সাধ্য নয়।

এই জটিল শব্দের বানান ছাড়াও আরো পড়ুন

You cannot copy content of this page