পল্লী সাহিত্য সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

পল্লী সাহিত্য সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর এর বিস্তারিত নিচে দেওয়া হল যা তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য সহায়ক হবে। তাই এই আর্টিকেলটি অনুসরণ করো এবং অনুশীলন অব্যাহত রাখো। তোমাদের জন্য শুভকামনা।

পল্লী সাহিত্য সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

ড. রশিদ হারুন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক। তিনি নাট্যরূপ দেয়ার জন্য বিভিন্ন লোককবির পালা গান ও কাহিনি সংগ্রহ করার চেষ্টা করেন। একবার তিনি মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার দুইজন লোককবির লোকগাথা সংগ্রহ করেন। পরে তিনি ওই গাথাগুলোর নাট্যরূপ দিয়ে তাঁর বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের দ্বারা অভিনয় করান। পরে রেকর্ডিং করে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ নিলেন । 

ক. ‘ভূয়োদর্শন’ অর্থ কী? 
খ. পল্লিসাহিত্যে হিন্দু-মুসলমান সকল সন্তানেরই সমান অধিকার’— বলতে কী বোঝানো হয়েছে? 
গ. উদ্দীপকের অধ্যাপক সাহেবের কাজের মধ্যে ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধের প্রতিফলিত দিকটি ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. “অধ্যাপক ড. রশিদ হারুন-এর পদক্ষেপ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র চাওয়াকেই তুলে ধরেছে।”- বক্তব্যটি ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধের আলোকে মূল্যায়ন কর। 

ক) ‘ভূয়োদর্শন’ মানে অনেক দেখা ও শোনার মাধ্যমে অর্জিত অভিজ্ঞতা। 

খ) অনুধাবন 

প্রশ্নোক্ত বাক্যের মাধ্যমে লেখক পল্লিসাহিত্যের অসাম্প্রদায়িক এবং সর্বজনীন আবেদনের দিকটি তুলে ধরেছেন। 

‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধে লেখক বলেছেন রূপকথা, পল্লিগাথা, পল্লিগান, ছড়া প্রভৃতি দেশের আলো-বাতাসের মতো সবারই সাধারণ সম্পত্তি। তাতে হিন্দু-মুসলমান কোনো ভেদ নেই। মায়ের দুধে যেমন ‘সন্তানমাত্রই অধিকার থাকে, সেরূপ পল্লিসাহিত্যে পল্লিজননীর হিন্দু-মুসলমান সব সন্তানেরই সমান অধিকার । 

সারকথা: আলোচ্য বাক্যের মাধ্যমে প্রাবন্ধিক পল্লিসাহিত্যের সর্বজনীন দিকটি তুলে ধরেছেন। 

গ প্রয়োগ 

উদ্দীপকের অধ্যাপক সাহেবের কাজের মধ্যে ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধের লোকগাথা ও উপকথার দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে। পল্লিসাহিত্যের মধ্যে উপকথা, রূপকথা বা পল্লিগাথা অন্যতম সম্পদ। এসব অমূল্য সম্পদের কোনো তুলনা হয় না। উপকথা, রূপকথা বা পল্লিগাথা পল্লির প্রাচীন সম্পদ। 

উদ্দীপকের অধ্যাপক ড. রশিদ হারুন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের একজন অধ্যাপক। তিনি মানিকগঞ্জে থেকে দুজন কবির লোকগাথা সংগ্রহ করেন। এছাড়াও বিভিন্ন লোককবির পালাগান ও কাহিনি সংগ্রহ করেন। তিনি ওই গাথাগুলোর নাট্যরূপ দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের দ্বারা অভিনয় করান এবং সেগুলো রেকর্ডিং করিয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেন। ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধেও বিভিন্ন উপকরণ সংগ্রহের কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে ড. দীনেশচন্দ্র সেনের নাম উল্লেখযোগ্য। তিনি ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’ সংগ্রহ করে দেখিয়েছেন, সাহিত্যের এক অফুরন্ত ভাণ্ডার পল্লির ঘাটে-মাঠে ছড়ানো আছে। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকের অধ্যাপক সাহেবের কাজের মধ্যে আলোচ্য প্রবন্ধের লোকগাথা ও উপকথা সংগ্রহের বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। 

সারকথা : উদ্দীপকের অধ্যাপক ড. রশিদ হারুন বিভিন্ন লোককবির পালাগান ও কাহিনি সংগ্রহ করেন। ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধেও পল্লিসাহিত্যের বাত্তির উপকরণের কথা বলা হয়েছে। এগুলোই উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে। 

উচ্চতর দক্ষতা 

“অধ্যাপক ড. রশিদ হারুন-এর পদক্ষেপ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র চাওয়াকেই তুলে ধরেছে।”- মন্তব্যটি যথার্থ। 

পল্লিসাহিত্য বাংলা সাহিত্যের প্রাণস্বরূপ। নানা কারণে পল্লিসাহিত্য আজ বিলুপ্তির পথে। আমাদের উন্নত সমাজভাবনা ও সাহিত্যের ব্যাপকতার জন্য পল্লিসাহিত্য একান্ত জরুরি। 

উদ্দীপকের ড. রশিদ হারুন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক। তিনি নাট্যরূপ দেওয়ার জন্য বিভিন্ন লোককবির পালাগান ও কাহিনি সংগ্রহ করার চেষ্টা করেন। পরে তিনি এগুলোর নাট্যরূপ দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের দ্বারা অভিনয় করান। ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধেও লেখক বলেছেন, বিভিন্ন রূপকথা, পল্লিগাথা, ছড়া প্রভৃতি দেশের আলো-বাতাসের মতো সবার সাধারণ সম্পত্তি । এজন্য সবারই উচিত এগুলো সংরক্ষণ করা। এগুলো সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের জন্য তিনি সবাইকে সচেতন করতে চেয়েছন এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রয়োজন অনুভব করেছেন। 

উদ্দীপকের অধ্যাপক ড. রশিদ হারুন লোকগাথা, কাহিনি, পালাগান সংগ্রহ করে সেগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছেন। নাট্যরূপ দিয়ে সেগুলোকে সময়োপযোগী করেছেন। আলোচ্য প্রবন্ধেও লেখক বাংলার লোকসংস্কৃতি সংরক্ষণ ও প্রসারের জন্য পল্লিসাহিত্যের বিচিত্র সম্পদ আহরণের কথা বলেছেন। এসব বিচারে বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ। 

সারকথা : উদ্দীপকের অধ্যাপক ড. রশিদ হারুন লোকসাহিত্যের বিভিন্ন উপাদান সংগহ করে সেগুলো বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন। আলোচ্য প্রবন্ধেও প্রাবন্ধিক একই প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। সুতরাং বলা যায়, মন্তব্যটি যথার্থ। 

পল্লী সাহিত্য সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

সিয়াম অবসরে হিন্দি ও ইংরেজি গান শোনে। তার বাবা আলমাস সাহেব তাকে জারি, সারি, ভাটিয়ালি ইত্যাদি বাংলা গান শোনার জন্য উৎসাহিত করেন এবং বলেন এ গানগুলো আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে লালন করে। কিন্তু আজ বিদেশি সংস্কৃতির প্রভাবে আমাদের এসব গান হারিয়ে যাচ্ছে। এতকিছু বলার পরও সিয়ামের মানসিকতার পরিবর্তন হয়নি। 

ক. আজকাল বাংলা সাহিত্যের কত আনা শহুরে সাহিত্য? 
খ. “নচেৎ এ সকল কেবলি ভুয়া, কেবলি ফক্কিকার।” বলতে লেখক কী বুঝিয়েছেন? 
গ. উদ্দীপকের আলমাস সাহেবের মানসিকতা ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধের কোন দিক নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. “উদ্দীপকের সিয়ামের ধ্যান-ধারণা ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধের লেখকের ভাবনার পরিপন্থী।”- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

ক) আজকাল বাংলা সাহিত্যের পনেরো আনা শহুরে সাহিত্য। 

খ) পল্লিসাহিত্যের প্রতি মনোযোগী না হয়ে শুধু সভা-সমাবেশ সর্বস্বতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে লেখক এ কথা বলেছেন। পল্লিসাহিত্য আমাদের দেশের ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। একসময় এ দেশের পল্লিসাহিত্য যথেষ্ট সমৃদ্ধ ছিল। বর্তমানে মানুষের রুচির পরিবর্তনে এগুলো লুপ্ত হতে চলেছে। ফলে পল্লিসাহিত্যের উপাদানগুলো এখন ধ্বংসের মুখে। অথচ অতীতে সর্বস্তরের মানুষ এই পল্লিসাহিত্য সম্পর্কে জানত এবং চর্চা করত। আর এখন সেগুলো অনাদৃত হয়ে পড়ে আছে। যদি চর্চার অভাবে এগুলো এভাবেই পড়ে থাকে তাহলে ভবিষ্যতে এগুলোর আর কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। তাই পল্লিজননীর সন্তানদের উচিত এগুলোর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া, চর্চা করা। তা না করে শুধু সভা সমাবেশের আয়োজন কোনো সুফল বয়ে আনবে না। এই বিষয়টি বোঝাতেই প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি করা হয়েছে। 

সারকথা : পল্লিসাহিত্যের যত্ন না নিলে সেগুলো একসময় কালের গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। তখন আর এগুলোর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। 

গ প্রয়োগ 

উদ্দীপকের আলমাস সাহেবের মানসিকতা ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধের বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রসারের দিক নির্দেশ করে। সাহিত্যের ভাণ্ডারে দান করার মতো পল্লির ভাণ্ডারে সম্পদের অভাব নেই। পল্লির ঘাটে, মাঠে, পল্লির আলো-বাতাসে, পল্লির প্রত্যেক পরতে পরতে সাহিত্য ছড়িয়ে আছে। আমাদের উচিত এই সম্পদকে সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও প্রসার ঘটানো। 

উদ্দীপকের আলমাস সাহেব তার ছেলের সিয়ামকে পল্লিসাহিত্যের অন্যতম উপাদান পল্লিগানের গুরুত্ব বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। তার ছেলে সিয়াম হিন্দি ও ইংরেজি গান শুনতে পছন্দ করে। আলমাস সাহেব তাকে বোঝান যে পল্লিগান যেমন- জারি, সারি, ভাটিয়ালি ইত্যাদি আমাদের দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে লালন করে। অথচ আজ বিদেশি সংস্কৃতির প্রভাবে এসব গান হারিয়ে যাচ্ছে। আলমাস সাহেবের এই ভাবনার প্রকাশ ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধে লেখকের মধ্যে দেখা যায়। লেখক এখানে পল্লিসাহিত্যের পল্লিগানগুলোকে অমূল্য রত্নবিশেষ হিসেবে অবিহিত করেছেন। এই গানের সাথে শহুরে তুলনা হতে পারে না। সময় ও রুচির পরিবর্তনে এসব মাজ ধ্বংসের মুখে। তাই পল্লির সন্তানদের উচিত এদিকে মনোযোগ দেওয়া। প্রবন্ধের এই দিকটিই উদ্দীপকের আলমাস সাহেবের মানসিকতায় প্রকাশ পেয়েছে। 

সারকথা : উদ্দীপকের আলমাস সাহেব পল্লিগানের গুরুত্ব ও আবেদন তুলে ধরে একে বাঁচিয়ে রাখরা প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধের লেখক এই ভাবনা প্রকাশ করে এর সংরক্ষণ ও প্রসারের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। 

ঘ উচ্চতর দক্ষতা 

“উদ্দীপকের সিয়ামের ধ্যান-ধারণা ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধের লেখকের ভাবনার পরিপন্থী।”- মন্তব্যটি যথার্থ। 

পল্লিসাহিত্য আমাদের অমূল্য সম্পদ। বাংলাদেশের পল্লির আনাচে-কানাচে এই সম্পদ ছড়িয়ে আছে। অথচ আমরা সেদিকে নজর না দিয়ে বিদেশি সাহিত্য-সংস্কৃতির দিকে ঝুঁকে পড়ছি। যার ফলে পল্লিসাহিত্যের এসব সম্পদ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আমাদের উচিত এর সংরক্ষণ ও প্রসারণ নিশ্চিত করা। 

উদ্দীপকের সিয়াম হিন্দি ও ইংরেজি গান পছন্দ করে। অবসর পেলেই সে ঐসব গান শোনে। তার বাবা পল্লিগানের সম্পর্কে গুরুত্ব সম্পর্কে জানানোর পরও তার মানসিকতার কোনো পরিবর্তন হয় না। সিয়ামের এ ধরনের মানসিকতা পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধের লেখকের ভাবনার পরিপন্থী। কারণ লেখক এ প্রবন্ধে পল্লিসাহিত্যের গুরুত্ব তুলে ধরে এর সংরক্ষণ ও প্রসারের জন্য সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন। 

‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধে লেখক বলেছেন আমাদের পল্লির আনাচে-কানাচে পল্লিসাহিত্য ছড়িয়ে আছে। সাহিত্যের ভাণ্ডারে দান করার মতো পল্লির নতুন সম্পদের অভাব নেই। অথচ রুচির ও সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের অবহেলায় আজ তা ধ্বংসের পথে দাঁড়িয়েছে। এজন্য তিনি পল্লিজননীর সন্তানদের এদিকে মনোযোগ দেওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এর সংরক্ষণ ও প্রসারের জন্য। লেখকের এই ভাবনার সাথে উদ্দীপকের সিয়ামের ভাবনা সম্পূর্ণ বিপরীত। তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ। 

অনুরাগী। তিনি এর সংরক্ষণের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তাই বলা যায়, মন্তব্যটি যথার্থ। 

সারকথা : উদ্দীপকের সিয়াম পল্লিগান অপেক্ষা বিদেশি গান শুনতে ভালোবাসে। অন্যদিকে প্রবন্ধের লেখক পল্লিগান তথা পল্লিসাহিত্যের প্রতি 

পল্লী সাহিত্য সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

কে যাও তুমি ভাটির দেশে ও বিদেশি নাইয়া কইও আমার দুঃখের খবর ভাইয়ের কাছে গিয়া কইও কইও কইও নাইয়া আমার ভাইয়ের তরে 

অভাগিনী বোনের পরান রয় না যে আর ঘরে। 

ক. আজকাল বাংলা সাহিত্যে কত আনা শহুরে সাহিত্য বিদ্যমান? 
খ. ‘আজ দুঃখ দৈন্যে প্রাণে সুখ নেই।’ – কেন? বুঝিয়ে লেখ। 
গ. উদ্দীপকে ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধের কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. “উদ্দীপকে প্রতিফলিত দিকটিই ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধের একমাত্র আলোচিত বিষয় নয়।”- মন্তব্যটির সত্যতা প্রমাণ কর। 

ক) আজকাল বাংলা সাহিত্যে পনেরো আনা শহুরে সাহিত্য বিদ্যমান। 

খ অনুধাবন 

‘আজ দুঃখ দৈন্যে প্রাণে সুখ নেই।’— উক্তিটি দ্বারা আমাদের পল্লিগ্রামের বর্তমান দীন দশার কথা প্রকাশ করা হয়েছে। 

বাংলার পল্লির প্রত্যেক পরতে পরতে সাহিত্য ছড়িয়ে আছে। এগুলো যারা লালন ও চর্চা করেছেন, তারা তা করতেন মনের আনন্দে ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে। আগে পল্লিগ্রামে মানুষের গোলা ভরা ধান ছিল, গোয়াল ভরা গরু ছিল, মনে আনন্দ ছিল। কিন্তু এখন নাগরিক ছোঁয়ায় সেই রঙিন দিনগুলো হারিয়ে গেছে। তারা আজ দুঃখ-দৈন্যে আক্রান্ত। তাদের মনে সুখের পরশ নেই। প্রশ্নোক্ত উক্তিটিতে আমাদের দৈন্য ও পারিপার্শ্বিকতার দুরাচারে পল্লিসাহিত্য আজ যে বিপন্ন তা-ই বোঝানো হয়েছে। 

” সারকথা : নাগরিকতার সংস্পর্শে পল্লিগ্রামেরর দীন দশা বোঝাতে প্রশ্নোক্ত কথাটি বলা হয়েছে। 

গ প্রয়োগ 

উদ্দীপকে ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধের পল্লিগানের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে। 

সাহিত্যে মানুষের জীবনের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা প্রকাশ পায়। পল্লিসাহিত্যে পল্লির মানুষের জীবনের নানা সমস্যা-সংকট, আনন্দবেদনার ঘটনাপ্রবাহ স্থান পায়। পল্লিসাহিত্যে একটি দেশের ভাবমূর্তি প্রকাশ পায়। 

উদ্দীপকে বাংলা লোকসাহিত্যের একটি শাখা পল্লিগানের উল্লেখ করা হয়েছে। এক অভাগী নারী অচেনা এক মাঝিকে বলছে সে যেন তার ভাইয়ের কাছে তার বোনের সংবাদ দেয়। ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধেও লেখক পল্লিগানের বর্ণনা দিয়েছেন। পল্লির জারি, সারি, ভাটিয়ালি, রাখালি ও মারফতি গানের অফুরন্ত সমাহার রয়েছে। উদ্দীপকে উল্লিখিত বিষয়টি পল্লির ভাটিয়ালি গানের উদাহরণ। আলোচ্য প্রবন্ধে লেখক ‘মনমাঝি তোর বৈঠা নে রে’ এমন একটি গানের উল্লেখ করেছেন। এজন্য বলা যায়, উদ্দীপকে ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধের পল্লিগানের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে। পল্লিসাহিত্যের প্রতি মানুষের ভালোবাসা, মমতা ও অনুরাগ প্রকাশ একটি স্বাভাবিক ঘটনা। 

সারকথা : যে দেশে পল্লিসাহিত্যের প্রতি মানুষ বেশি অনুরাগী সেই দেশের সাহিত্য তত সমৃদ্ধ ও উন্নত। তাই পল্লিসাহিত্য সংরক্ষণের 5 প্রয়োজনীয়তা এত বেশি। 

ঘ উচ্চতর দক্ষতা 

“উদ্দীপকে প্রতিফলিত দিকটিই ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধের একমাত্র আলোচিত বিষয় নয়।”- মন্তব্যটি সত্য। 

মানুষের জীবনের নানা অভিজ্ঞতা ও কল্পনার সমন্বয়ে পল্লিসাহিত্য সৃষ্টি হয়েছে। জীবন ও কাজের সঙ্গে সংগতি বিধান করে মানুষ প্রতিনিয়ত এই সাহিত্য চর্চা করে থাকে। প্রাণের আবেগের জোয়ারে সৃষ্ট এই সাহিত্য আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক। ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধে লেখক পল্লিসাহিত্য সংরক্ষণের প্রয়োজীয়তা তুলে ধরেছেন। লেখক এখানে গভীর মনোযোগের সঙ্গে পল্লিসাহিত্যের প্রতিটি বিষয় উপস্থাপন করেছেন। বাংলার লোকসাহিত্যের অন্তর্গত ছড়া, কবিতা, পাঁচালি, পল্লিগান, ডাক ও খনার বচন ইত্যাদি বিষয় লেখক তাঁর ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন। লেখক বাংলার লোকসাহিত্য সংগ্রহ করে সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। অন্যদিকে উদ্দীপকে বাংলা সাহিত্যের লোকসাহিত্যের একটি ধারা পল্লিগানের উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে লোকসাহিত্যের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। 

উদ্দীপকে লোকসাহিত্যের একটি ধারা পল্লিগানের উল্লেখ করা হয়েছে। এই বিষয়টি ছাড়া পল্লিসাহিত্যের গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা এবং এটি সংগ্রহ ও সংরক্ষণের বিষয় সম্পর্কে উল্লেখ নেই। অথচ ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধে এগুলো সম্পর্কে লেখক বিশদ আলোচনা করেছেন। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে প্রতিফলিত দিকটিই ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধের একমাত্র আলোচিত বিষয় নয়। 

সারকথা : পল্লিসাহিত্য পল্লির প্রাণ। এই সাহিত্যের সঙ্গে একটি দেশের জাতীয় ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধি জড়িত থাকে। এই বিষয়টি ‘পল্লিসাহিত্যে প্রবন্ধে যেভাবে প্রতিফলিত হয়েছে সেভাবে উদ্দীপকে প্রকাশ পায়নি। তাই প্রশ্নোত্ত মন্তব্যটি যথার্থ। 

আরো পড়ুনঃ

Leave a Comment

You cannot copy content of this page