বই পড়া প্রবন্ধের চরিত্র বিশ্লেষণ বা পাঠ পরিচিতি

বই পড়া প্রবন্ধের চরিত্র বিশ্লেষণ বা পাঠ পরিচিতি এর বিস্তারিত নিচে দেওয়া হল যা তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য সহায়ক হবে। তাই এই আর্টিকেলটি অনুসরণ করো এবং অনুশীলন অব্যাহত রাখো। তোমাদের জন্য শুভকামনা।

বই পড়া প্রবন্ধের চরিত্র বিশ্লেষণ বা পাঠ পরিচিতি

পাঠ বিশ্লেষণ (Text Analysis) 

আমরা সাহিত্যের রস উপভোগ করতে প্রস্তুত নই— সাহিত্যের রস হলো মানবজাতির মনন ও সৃজনের পরিশীলিত ও কল্যাণময় আস্বাদন। দুঃখ-দৈন্য জর্জরিত আমরা শারীরিক ক্ষুধা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছি বলে মননের চাহিদাকে শৌখিনতা জ্ঞান করে ছুড়ে ফেলছি। 

শিক্ষার ফল লাভের জন্য আমরা সকলে উদ্বাহু

‘শিক্ষার ফল’ বলতে প্রাবন্ধিক এখানে শিক্ষা লাভ করে বস্তুগত প্রয়োজন মেটানোর উপায়কে বুঝিয়েছেন। শিক্ষার ফলে মানুষের আত্মিক ও বস্তুগত উভয় চাহিদা পূরণের পথ প্রশস্ত হয়। তবে সমাজের বেশিরভাগ লোকই শিক্ষার বস্তুগত চাহিদা পূরণের দিকটির প্রতি লালায়িত । 

এ আশা সম্ভবত দুরাশা

শিক্ষা লাভ করার ফলে মানুষের বিষয়-আশয়ের চাহিদা নিমিষে পূরণ হবে বলে সাধারণ লোকদের যে বিশ্বাস, আশাবাদ প্রাবন্ধিক তাকে অসম্ভব ও দুরাশা বলে অভিহিত করেছেন। 

তার কোনো নগদ বাজার দর নেইসাহিত্যচর্চা মানুষের মানবিকতাকে ঋদ্ধ করে তোলে। কিন্তু এই জিনিস ধরা-ছোঁয়ার ঊর্ধ্বে বলে এটাকে বাজারে বিক্রি করা যায় না। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় যে জিনিস বাজারে তোলা যায় না সেটার কোনো মূল্যই নেই। 

পেশাদারদের মহাভ্রান্তি

বাজারি লোক যদি মনে করে, যে জিনিস বাজারে তোলা যায় না সেটি, মূল্যহীন; তার এ রকম সরলীকরণকে আমরা ভ্রান্তিযুক্ত বলব। ঠিক তেমনই কিছু পেশাদার মনে করে, পেশায় যা কাজে লাগে না, তা কোনো কাজের নয়। এই ধরনের ধ্যানধারণাকে প্রাবন্ধিক তাদের মহাভ্রান্তি বলে উল্লেখ করেছেন। 

মনগঙ্গার তোলা জল

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, গঙ্গার জল পরম পবিত্র। এই জলে স্নান করলে শরীর-মন পবিত্র হয়। দর্শন, বিজ্ঞান ইত্যাদি এমনই শাস্ত্র, যা মন-মানসের গঙ্গাজল, যার স্পর্শে আত্মা পবিত্রতা লাভ করে। তবে সেখানে স্রোত নেই, অর্থাৎ জীবনের অন্তহীন আনন্দ সেখানে নেই। সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত

সমাজের যেসব ব্যক্তি স্কুল-কলেজের শিক্ষাই শুধু নয়, স্বীয় 

অনুসন্ধিৎসা ও আগ্রহে জ্ঞানের নানা বিষয়ে অবগাহন করেছেন, তারা নিঃসন্দেহেসুশিক্ষিতজনে পরিণত হয়েছেন। 

প্রাবন্ধিক বলেছেন, ‘যে জাতি মনে বড় নয় সে জাতি জ্ঞানেও বড় নয়। কেননা ধনের সৃষ্টি যেমন জ্ঞান সাপেক্ষ তেমনি জ্ঞানের সৃষ্টি মন সাপেক্ষ। 

শিক্ষা কেউ কাউকে দিতে পারে না। সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত, যিনি যথার্থ গুরু তিনি শিষ্যের আত্মাকে উদ্বোধিত করেন এবং তার অন্তর্নিহিত সকল প্রচ্ছন্ন শক্তিকে ব্যক্ত করে তোলেন। আমরা ভাবি দেশে যত ছেলে পাস করছে তত শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে। কিন্তু পাস করা আর শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয়। লাইব্রেরির স্থান স্কুল-কলেজের ওপরে, কারণ সেখানে গেলে লোকে স্বশিক্ষিত হওয়ার সুযোগ পায়, যা স্কুল-কলেজের ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থায় আদৌ সম্ভব নয়। 

জটিল ও দুরূহ পাঠ সহজীকরণ 

আমাদের স্কুল-কলেজের শিক্ষার পদ্ধতি ঠিক উলটোশিক্ষা বিষয়টি মানুষের পরিপূর্ণ মানুষরূপে গড়ে ওঠার এক পদ্ধতি বিশেষ। এর সাথে কৌতূহল, অনুসন্ধিৎসা ও আনন্দের সম্পর্ক। অথচ শিক্ষা দ্বারা কায়িক অস্তিত্ব রক্ষার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে আমাদের স্কুল-কলেজের শিক্ষার পদ্ধতি চলছে একেবারে উলটো- জবরদস্তি ও নিরানন্দের পথে। দেহের মৃত্যুর রেজিস্টারি রাখা হয়, আত্মার হয় নাদেহ ও আত্মার সমন্বয়ে মানবজীবন। মানুষ মারা গেলে শ্মশান, গোরস্তান ও চার্চে সৎকারকৃত ব্যক্তির নাম-ঠিকানা রেজিস্টার খাতায় লিখে রাখা হয়। কিন্তু মানুষের অন্য সত্তা যে আত্মা, মানবিকতা বোধের অভাবে আত্মার যে মৃত্যু সেই মৃত্যু নিরূপণ করা বা লিখে রাখা হয় না কোথাও। 

লাইব্রেরি হচ্ছে এক রকম মনের হাসপাতাল

শরীর অসুস্থ হলে তা নিরাময়ে হাসপাতাল আদর্শ স্থান। কিন্তু মানবজীবনের অপর সত্তা আত্মা অসুস্থ হলে তার নিরাময়ে আপাতদৃষ্টিতে কোনো ব্যবস্থা নেই। প্রাবন্ধিক এক্ষেত্রে বলেন, মনের বা আত্মার নিরাময়ে এবং তার উন্নতি সাধনে লাইব্রেরি হচ্ছে আদর্শ স্থান, এক রকম হাসপাতাল। 

আমাদের শিক্ষাই আমাদের নির্জীব করেছেশরীর ও মনের সমন্বয়ে মানুষ। আমাদের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় শরীর টিকিয়ে রাখতে, তার চাহিদা পূরণে নানা পথ বাতলে দেওয়া হয়। কিন্তু মনের চাহিদা পূরণে, তার বিকাশে কিছুই করা হয় না। এতে করে শরীরের প্রণোদনাশক্তি হ্রাস পায়, হারিয়ে যায়। ফলে আমরা একসময় অসাড়, নির্জীব হয়ে পড়ি। পাস করা ও শিক্ষিত হওয়া এক নয়পরীক্ষায় পাস করা হলো নির্দিষ্ট কিছু পাঠ আত্মস্থ করে পরীক্ষার খাতায় তা সুন্দরভাবে উগরে দেওয়া। আর শিক্ষিত হওয়া এক বিশেষ ইতিবাচক রূপান্তর প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে মানুষ জগতের নানা জ্ঞান-বিজ্ঞান, মূল্যবোধ ও অনুশাসনে নিজেকে একজন পরিশীলিত, পরিপূর্ণ মানুষরূপে গড়ে তোলার নিরন্তর চেষ্টা চালায়। 

এক্ষেত্রে দাতাকর্ণের অভাব নেই

দাতাকর্ণ মহাভারতের বিশিষ্ট চরিত্র, দানের জন্য প্রবাদতুল্য ব্যক্তি। দানে তিনি এতখানি উদার ও মুক্তহস্ত ছিলেন যে, যুদ্ধকালীন নিজের রক্ষাকবচও চরম শত্রুপক্ষীয়কে দানে ইতস্তত করেননি। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় শিক্ষার বাজারে এক একজন শিক্ষক যেন এক একজন দাতাকর্ণ; যদিও অর্থের বিনিময়ে তারা বিদ্যাদানের কাজটি করে থাকেন। মূলত লেখক কটাক্ষরূপে উদাহরণটি ব্যবহার করেছেন। 

Read More:

Leave a Comment

You cannot copy content of this page