ভাবসম্প্রসারণ ┃জেসএসসি , এসএসসি , এইচএসসি , ডিগ্রি, অনার্স, মাস্টার্স, বিসিএস

ভাবসম্প্রসারণ ┃জেসএসসি , এসএসসি , এইচএসসি , ডিগ্রি, অনার্স, মাস্টার্স, বিসিএস

জেসএসসি , এসএসসি , এইচএসসি , ডিগ্রি, অনার্স, মাস্টার্স, বিসিএস সহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নিন্মবর্ণিত গুরত্বপূর্ণ 40+ ভাবসম্প্রসারণ দেওয়া হয়েছে। এই ভাবসম্প্রসারণ গুলো অনুশীন করলেই পরীক্ষায় কমন আসবে।

Read More:

সৌজন্যেই সংস্কৃতির পরিচয়

মূলভাব: সৌজন্য একটি বিশেষ গুণ এবং মার্জিত ও শিষ্টাচারসম্পন্ন মানুষেরআচরণের প্রধান অনুষঙ্গ।

. সম্প্রসারিত ভাব: মানুষের মধ্যে সৌজন্যবোধ আপনা-আপনি তৈরি হয় না,জন্মসূত্রেও একে লাভ করা যায় না। শিক্ষা, বিচিত্র অভিজ্ঞতা, সহৃদয়পূর্ণ ও কোমল মানস-প্রকৃতি মানুষের সৌজন্যবোধের জাগরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। মানুষের জীবনের একটি দীর্ঘ সময় বিদ্যায়তনিক পরিবেশে বা জ্ঞানচর্চার কাজে অতিবাহিত হয়। সময়েই মানুষ শিষ্টাচারী হয়ে উঠে। শিক্ষার একটি অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে সৌজন্যতা বা শিষ্টাচার অর্জন। ফলে, শিক্ষিত মানুষের সৌজন্যবোধ না থাকলে সে শিক্ষা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে বাধ্য। অপরদিকে কালচার বা সংস্কৃতি হচ্ছে মানুষের সামগ্রিক জীবন-প্রণালী, আচার-আচরণ, নীতি-নৈতিকতা, মূল্যবোধ ইত্যাদির ধরণ বা সংস্কৃতিবান মানুষের জগৎ ও জীবনের প্রতি থাকে বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যায়ন।

সাধারণ মানুষ থেকে একজন সংস্কৃতিবান মানুষকে সহজেই চিহ্নিত ও পৃথক করা যায়। সর্বসাধারণের মধ্যে তার স্বাতন্ত্র্য সহজেই দৃষ্টিগোচর হয়। এদিক থেকে সৌজন্য হচ্ছে সংস্কৃতিবান মানুষের আচরণের একমাত্র অবলম্বন। ব্যক্তির আচরণে অসৌজন্যমূলক কিছু প্রকাশ পেলে তাকে আর যাই হোক সংস্কৃতিবান মনে করা হয় না। ভাবা হয়, তার উদ্ভব, বিকাশ ও পদচারণা অবশ্যই নিচু সংস্কৃতির মধ্যে। পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত ও সভ্য দেশের দিকে তাকালে দেখা যায়, সেখানকার মানুষের আচরণ মাধুর্যপূর্ণ এবং সৌজন্যে পরিপূর্ণ। যে জাতি যত বেশি উন্নত, সভ্য এবং অলোকপ্রাপ্ত তাদের মধ্যে শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধ ততো বেশি। এভাবে, সৌজন্য ব্যক্তি, জাতি ও দেশের সংস্কৃতির পরিচয় অন্য ব্যক্তি জাতি ও দেশের কাছে তুলে ধরে।

মন্তব্য: সৌজন্যহীনতা ব্যক্তির সম্পর্কে নেতিবাচক ও অপসংস্কৃতির ধারণার উদ্রেক করে। কাজেই সৌজন্যবোধ বিভিন্ন পর্যায় সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলের পরিচয় প্রদানে অশেষ গুরুত্ব বহন করে

ভাবসম্প্রসারণ ┃জেসএসসি , এসএসসি , এইচএসসি , ডিগ্রি, অনার্স, মাস্টার্স, বিসিএস

অর্থই অনর্থের মূল

মূলভাব: অর্থ মানুষের সকল কর্মের চালিকাশক্তি হলেও এ অর্থই আবার সব রকম অনর্থের সূত্রপাত ঘটায়। পৃথিবীর যাবতীয় অন্যায় ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড এই অর্থের কারণেই হয়ে থাকে।

সম্প্রসারিত ভাব: পার্থিব জগতের ভালো-মন্দ সকল কাজের পেছনে রয়েছে অর্থের গুরুত্বপূর্ণ অবদান। অর্থ ছাড়া পৃথিবীর ভালো-মন্দ কোনো কাজই সম্পাদন করা সম্ভব নয়। তাই পার্থিব জীবনে মানুষের অর্থ অর্জনের প্রয়াসের শেষ নেই। অর্থ বা সম্পদের মোহে মানুষ জীবনসংগ্রামে যুক্ত। মানুষ তার কাঙ্ক্ষিত অর্থ উপার্জনের জন্যে কঠোর পরিশ্রম করে এবং নানা প্রতিকূলতার সঙ্গে যুদ্ধ করে। আজকাল অর্থই মানুষের একান্ত কাম্য হয়ে উঠেছে। কেননা একমাত্র অর্থের মাপকাঠি দিয়েই সমাজে প্রতিপত্তি ও সম্মান নির্ণীত হয়। বিপদে-আপদে, উৎসবে, জন্ম-মৃত্যুতে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অর্থের প্রয়োজন।

আবার এ অর্থই পৃথিবীর সমস্ত অমঙ্গলের জন্য দায়ী। অর্থের লোভে নীতিবিবর্জিত হয়ে মানুষ অহরহ নানা দুষ্কর্মে লিপ্ত হয়। অর্থের লালসা মানুষের নৈতিক অধঃপতন ঘটায়। অর্থের লোভেই মানুষ চরিত্রহীন হয়ে সমাজবিরোধী ও সামাজিক অবক্ষয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পৃথিবীর সমস্ত দ্বন্দ্ব, অশান্তি আর সংঘাতের মূল কারণ অর্থ। অবৈধ ও অগাধ অর্থ-সম্পদ লাভের উদ্দেশ্যেই রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে যুদ্ধের উন্মাদনা জাগে, শ্রমিক-মালিকে বাধে বিরোধ এবং ভাইয়ে-ভাইয়ে শুরু হয় চরম শত্রুতা। অর্থের লোভেই মানুষ মানুষকে খুন করে। জগতের সকল অশান্তি আর অনর্থের উৎস হচ্ছে অর্থ। অর্থের মাঝে আমরা জগতের সুখ খুঁজি কিন্তু অর্থই অনর্থের মূল।

মন্তব্য: যে অর্থ মানুষের সামগ্রিক মঙ্গল সাধনে সমর্থ সে অর্থই আবার যাবতীয় অনর্থের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই অর্থ যেন অনর্থের কারণ হতে না পারে, সে ব্যাপারে আমাদের সচেতন হতে হবে।

ভাবসম্প্রসারণ ┃জেসএসসি , এসএসসি , এইচএসসি , ডিগ্রি, অনার্স, মাস্টার্স, বিসিএস

অর্থসম্পদের বিনাশ আছে, কিন্তু জ্ঞানসম্পদ কখনো বিনষ্ট হয় না।

মূলভাব: জ্ঞান অমূল্য সম্পদ। এটি ক্ষয়হীন চিরন্তন ও অবিনশ্বর। অর্থসম্পদ অতি প্রয়োজনীয় তবে এ সম্পদের বিনাশ বা ক্ষয় আছে। অর্থসম্পদের তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি হলেও জ্ঞানসম্পদের প্রয়োজনীয়তা অবিনাশী।

সম্প্রসারিত ভাব: পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য অর্থসম্পদের যে প্রয়োজন আছে এ কথা অনস্বীকার্য। এ অর্থসম্পদ আহরণের জন্য মানুষ নিরন্তর কঠোর পরিশ্রম করে চলেছে। এমনকি আজকের দুনিয়াও ছুটছে অর্থসম্পদের পেছনে। কিন্তু এ অর্থসম্পদ চিরস্থায়ী নয়, এর ক্ষয় বা বিনাশ আছে। যার কারণে বাস্তবে দেখা যায় বিত্তবান ব্যক্তি সময়ের ব্যবধানে অঢেল বিত্তের অধিকারী হয় আবার অনেক সময় সব হারিয়ে পথে দাঁড়ায়। কিন্তু জ্ঞানসম্পদ কখনো হারানোর ভয় থাকে না। বরং উত্তরোত্তর জ্ঞানের প্রসার ঘটে। মেধা-মনন, প্রতিভা তথা জ্ঞান এক ধরনের সম্পদ। এ সম্পদ মানুষের মনুষ্যত্বকে জাগ্রত করে। মানুষকে আলোর পথে সুন্দরের পথে এগিয়ে চলতে সাহায্য করে।

এ সম্পদ কেউ ছিনিয়ে নিতে পারে না। জীবন যত দিন থাকবে ততদিন এ সম্পদ ছায়ার মতো ব্যক্তির সকল বাধা-বিপত্তি দূর করতে সাহায্য করে। জ্ঞান মানুষকে অর্থের মোহ থেকে রক্ষা করে, অর্থের নেশায় যেন পশুর মতো অমানুষে পরিণত না হয় সেই দিকনিদের্শনা দেয়। শিক্ষার মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান মানুষের মধ্যে ভালো-মন্দের বোধ জাগ্রত করে। শিক্ষার ফলেই মানুষ বুঝতে পারে ‘লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু’। আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে জ্ঞানের ভূমিকা প্রধান, অর্থ সম্পদ সেখানে প্রয়োজন হিসেবে কাজ করেছে। জ্ঞানসম্পদ মানুষকে অমরত্নদান করে,মানুষের হৃদয়ে বিশেষ স্থান দখল করে। কিন্তু অর্থসম্পদের অধিকারী ব্যক্তি মৃত্যুর পর মন থেকে বিলীন হয়ে যায়। জ্ঞানই মানুষকে স্মরণীয়-বরণীয় করে তোলে, অর্থবিত্ত কখনো তা পারে না। অতএব, যেকোনো মূল্যে জ্ঞানসম্পদ অর্জন করতে হবে

মন্তব্য: জ্ঞান নামক অমূল্য সম্পদ যুগের পর যুগ পৃথিবীতে টিকে থাকবে। কিন্তু অর্থসম্পদ আজ আছে, কাল নেই। তাই সকলেরই লক্ষ্য হওয়া উচিত অঢেল অর্থ নয় বরং প্রচুর জ্ঞান আহরণ।

ভাবসম্প্রসারণ ┃জেসএসসি , এসএসসি , এইচএসসি , ডিগ্রি, অনার্স, মাস্টার্স, বিসিএস

সবলের পরিচয় আত্মপ্রসারে, আর দুর্বলের স্বস্তি আত্মগোপনে।

মূলভাব: শক্তিবোধ ব্যক্তি এবং তার পরিবেশকে প্রসারিত ও অগ্রগামী করে। ফলে শক্তিশালী ব্যক্তি নিজেকে প্রসারিত করতে পারে। পক্ষান্তরে, দুর্বল ব্যক্তি নিজেকে সর্বদা সংকুচিত করে রাখে।

সম্প্রসারিত ভাব: মানুষ সবল ও দুর্বল দু রকমই হতে পারে। সবল বা শক্তিশালী মানুষেরা সাধারণত সমাজ ও সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যায়। পাশাপাশি তার আপন ব্যক্তিত্বেরও অনুকরণীয় আত্মপ্রসার ঘটে। কেননা মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তির স্বরূপই হচ্ছে, তা সবসময় ব্যক্তি এবং তার পারিপার্শ্বিকতার ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। অন্য কথায়, নিজের এবং তাঁর চারপাশের পরিবেশের ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাতে পারার ক্ষমতাকেই আমরা মানুষের শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করতে পারি।

আর সেসব ব্যক্তিই প্রকৃত অর্থে সবল। মানবসভ্যতার ইতিহাসে যেকোনো ক্ষেত্রেই সবল মানুষদের কার্যক্রম সম্প্রসারণশীল। সক্রেটিস, প্লেটো, আইজ্যাক নিউটন, আইনস্টাইনসহ যুগে যুগে সকল শক্তিশালী ব্যক্তিই সভ্যতার প্রয়োজনে সম্প্রসারণশীল ভূমিকা পালন করেছেন। পক্ষান্তরে, দুর্বলচিত্তের আত্মবিশ্বাসহীন মানুষেরা স্বভাবগতভাবেই নিজেকে গুটিয়ে রাখার পক্ষপাতী। তারা নিজেদের দুর্বলতা পরিশ্রমের মাধ্যমে দূর করতে প্রয়াসী হয় না। বরং তাদের অক্ষমতাকে ঢাকতে এরা স্বেচ্ছায় বেছে নেয় আত্মগোপন। তারা নিজেকে সমাজ ও চারপাশের জিজ্ঞাসা থেকে আড়াল করে রেখেই আত্মপ্রসাদ লাভ করে। আমাদের চারপাশে এ রকম সংকীর্ণচিত্ত দুর্বল মানুষের অভাব নেই।

মন্তব্য: স্বভাবগতভাবে সব মানুষেরই অন্তর্নিহিত শক্তি বা ক্ষমতা রয়েছে।এ শক্তির পরিচর্যা করে ব্যক্তিত্বের সম্প্রসারণই সবল মানুষের বিশেষত্ব ·দুর্বলচিত্তের আচরণ আত্মকেন্দ্রিক এবং তা কারো কাছেই কাম্য নয়।

ভাবসম্প্রসারণ ┃জেসএসসি , এসএসসি , এইচএসসি , ডিগ্রি, অনার্স, মাস্টার্স, বিসিএস

কীর্তিমানের মৃত্যু নাই।

(দিবো, ১৬- য, বো, “১৫: ব. বো, ০৪: নিউ গভঃ ডিগ্রী কলেজ, রাজশাহী: পটুয়াখালী

সরকারি কলেজ, সরকারি তোলারাম কলেজ, নারায়ণগঞ্জ প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা ২২

বা, মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে, বয়সের মধ্যে নহে।

(ঢা.বে, ১৯, ১৭, ০৯, রা, বো, ১৭, ১৪, ০৯, কু, বো, ০৫:য, বো. ১৭, ১০:

নেত্রকোণা সরকারি কলেজ, রফিকুল ইসলাম মহিলা কলেজ, ভৈরব, ঢাকা কলেজ,

মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, ঢাকা: সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারী

মাইকেল মধুসূদন কলেজ, যশোর, প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা ২২/

মূলভাব: মানবজীবন সংক্ষিপ্ত হলেও পৃথিবীতে মানুষ স্মরণীয় ও বরণীয়

হয়ে থাকে তার কীর্তির মাঝে। আর সে কীর্তি মানুষের কর্মসাধনারই ফল।

| সম্প্রসারিত ভাব: মানুষ মাত্রই জন্মমৃত্যুর অধীন। পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ

| করলে অনিবার্যভাবে একদিন তাকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে। আর

মৃত্যুর মধ্য দিয়েই সে জগৎ-সংসার থেকে নিঃশেষ হয়ে যায়। কিন্তু

কীর্তিমান ব্যক্তির দৈহিক মৃত্যু ঘটলেও

তার স্মৃতি পৃথিবীর বুকে চির অম্লান

হয়ে থাকে। পৃথিবীতে সে নিজস্ব কীর্তির মহিমায় লাভ করে অমরত্ব।

সাধারণ মানুষের মৃত্যু হলে পৃথিবীতে কেউ তাকে আর স্মরণ করে না।

অথচ কীর্তিমানের মৃত্যু হলে তার দেহের ধ্বংস সাধন হয় বটে কিন্তু তার সৎ

কাজ, অম্লান কীর্তি পৃথিবীর মানুষের কাছে তাকে বাঁচিয়ে রাখে। তার মৃত্যুর

শত শত বছর পরেও মানুষ তাকে স্মরণ করবেই। তাই একথা

সন্দেহাতীতভাবে বলা যায় যে, মানবজীবনের প্রকৃত সার্থকতা কর্মের

সাফল্যের ওপর নির্ভরশীল। একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মানুষ পৃথিবীতে

আসে এবং সে সময়সীমা পার হওয়ার সাথে সাথে সে পৃথিবী থেকে বিদায়

নেয়। এ নির্দিষ্ট সময়সীমায় সে যদি গৌরবজনক কীর্তির সাক্ষরে জীবনকে

মহিমান্বিত করে তুলতে সক্ষম হয়, মানবকল্যাণে কাজ করে তবে তার নম্বর

দেহের মৃত্যু হলেও তার স্বকীয় সত্তা থাকে মৃত্যুহীন; পৃথিবীর মানুষের কাছে

সে হয় অমর। তার অমর কীর্তির মাঝেই সে বেঁচে থাকে। যদি সে তাঁর

জীবনে কোনো মহৎ কীর্তি না করে তবে সে হারিয়ে যায় কালের গহ্বরে।

মন্তব্য: মানুষের দেহ নশ্বর কিন্তু তার কীর্তি অবিনশ্বর। মানুষের কল্যাণে

কেউ যদি অবিরাম কাজ করে প্রতিষ্ঠা করেন অমর কীর্তি তবে মৃত্যুর পরও

কীর্তির মধ্য দিয়েই তিনি বেঁচে থাকেন মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায়।

ভাবসম্প্রসারণ ┃জেসএসসি , এসএসসি , এইচএসসি , ডিগ্রি, অনার্স, মাস্টার্স, বিসিএস

গতিই জীবন, স্থিতিতে মৃত্যু।

ক. বো. ১৭: সরকারি হাজী মুহম্মদ মহসিন কলেজ, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট

পাবলিক কলেজ: প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা ২২/

মূলভাব: মানুষকে তার কর্মের মধ্য দিয়ে গতিচঞ্চল জীবনের অধিকারী

হয়ে জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে হয়। নিষ্কর্মা ও অথর্ব মানুষ মৃততুল্য ।

সম্প্রসারিত ভাব: মানুষকে তার নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, সমাজের

জন্য কাজ করে যেতে হয়। স্বাধীন চিন্তা ও কর্মের মধ্য দিয়ে মানুষকে

এগিয়ে যেতে হয় সামনের পানে। মানুষ যে সৃষ্টির সেরা জীব, তার যে

ক্ষমতা আছে, কর্মের মধ্য দিয়ে মানুষকে তা প্রমাণ করতে হয়। মানুষের

হাত কর্মীর হাত। মানুষ কেবল খেতে পরতে এবং বংশবৃদ্ধি করতে

পৃথিবীতে আসেনি। তার ওপর রয়েছে অনেক দায়-দায়িত্ব। এ দায়-

দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করতে না পারলে তাকে জীবনযুদ্ধে পরাজয়ের

গ্লানি গায়ে মেখে বিপন্ন জীবনযাপন করতে হয়। সাফল্যলাভের পথে

আলস্য এক বাধা। আলস্য যেন কোনোভাবেই মানুষকে পেয়ে না বসে।

কারণ এ আলস্য মানুষের জন্যে সমূহ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শ্রম ও

ত্যাগের মধ্য দিয়ে জীবনের জন্য সঞ্চয় করতে হবে মানুষকে। কর্মহীন

জীবন স্থবির, স্থবিরতা মৃত্যুর অন্য নাম। অকর্মণ্য জীবনযাপন আসলে

জীবন্বৃত থাকার নামান্তর। জীবনের লক্ষণ প্রকাশ পায় কর্মের মহোৎসবে

যোগদানের মধ্য দিয়ে। সফল কর্মময় জীবনের অধিকারী যে মানুষ,

মৃত্যুর পরও পৃথিবী তাকে মনে রাখে। কর্মের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকাই

হচ্ছে প্রকৃত বেঁচে থাকা। সবসময়ই মানুষকে মানবকল্যাণের কথা

ভাবতে হবে এবং সেজন্য তাকে কাজ করেও যেতে হবে। সংক্ষিপ্ত

জীবন পরিসরে আলস্যকে আমল দিয়ে বসে থাকার অর্থ জীবনযুদ্ধে

পরাজিত হওয়া। কাজ, কাজ আর কাজের মধ্য দিয়েই জীবনকে ফুলে-

ফলে বিকশিত করে তোলা

যায়।

মন্তব্য: কর্মের মধ্য দিয়ে মানুষের জীবনে যে গতি আসে, সে গতিই

জীবনের ধর্ম । অলস কিংবা অকর্মণ্য জীবনযাপন মৃত্যুরই নামান্তর।

ভাবসম্প্রসারণ ┃জেসএসসি , এসএসসি , এইচএসসি , ডিগ্রি, অনার্স, মাস্টার্স, বিসিএস

ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে।

মূলভাব: দেশ ও জাতির ভবিষ্যতের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্নের পথিকৃৎ

আজকের শিশু। প্রতিটি শিশুর অন্তরেই অপার সম্ভাবনায় অন্তর্নিহিত

রয়েছে জাতীয় নেতৃত্ব। তাই শিশুর যথোপযুক্ত বিকাশের ওপর নির্ভর

করে জাতির ভবিষ্যৎ।

সম্প্রসারিত ভাব: শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ। আজকের শিশু আগামী

দিনের কর্ণধার। শিশু একদিন বড় হয়ে জাতীয় জীবনে বৃহৎ দায়িত্ব

পালন করবে। আজকের শিশুই আগামী দিনের জাতির ভার বহন

করবে। প্রতিটি শিশুর ভেতরেই সেই স্পৃহা জাগিয়ে তোলার জন্য

সকলকে গুরুত্বের সাথে সচেতন হতে হবে। শিশুকে উপলব্ধি করাতে

হবে তার ভেতরকার সুপ্ত প্রতিভাই একদিন দেশের কল্যাণ বয়ে আনবে।

শিশু যদি অনুকূল আবহাওয়া ও পরিবেশ পায়, তবে সে সুশিক্ষিত ও

আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে। শিশু আদর্শ নাগরিক হয়ে জাতিকে

সঠিক দিকনির্দেশনা দেবে, বিশ্বের দরবারে দেশ ও জাতির মর্যাদা বৃদ্ধি

করবে। ইংরেজ কবি ওয়ার্ডসওয়ার্থ যথার্থই বলেছেন— ‘শিশুরাই জাতির

পিতা।’ কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশে উপযুক্ত

পরিবেশ, মানসম্মত শিক্ষা; সামাজিক সুবিধা ও নিরাপত্তার অভাবে

অনেক শিশুর ভবিষ্যৎ অঙ্কুরে বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে, যা জাতির অগ্রগতির

পথে মারাত্মক বাধাস্বরূপ। আমরা যদি বিশ্বসভায় নিজেদের সুপ্রতিষ্ঠিত

করতে চাই তবে আজকের শিশুকে আগামী দিনের জাতির পিতা হিসেবে

গড়ে তোলার দায়িত্ব নিতে হবে সচেতনভাবে। প্রত্যেক শিশুর অন্তরের

পিতাকে যথার্থই জাগিয়ে তুলতে হবে।

মন্তব্য: শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ পিতা। তাই বর্তমান শিশুর জীবন খুবই

গুরুত্বপূর্ণ এবং সে গুরুত্বের কথা চিন্তা করে শিশুদের যথাযোগ্য পরিচর্যা

করতে হবে।

ভাবসম্প্রসারণ ┃জেসএসসি , এসএসসি , এইচএসসি , ডিগ্রি, অনার্স, মাস্টার্স, বিসিএস

চরিত্র মানুষের অমূল্য সম্পদ।

বা, চরিত্র মানবজীবনের মুকুটস্বরূপ।

বা, চরিত্রহীন মানুষ পশুর সমান।

ক. বো: ১২/

মূলভাব: চরিত্র মানবজীবনের মুকুটস্বরূপ। চরিত্রহীন ব্যক্তি পশুর সমান।

যার চরিত্র নেই, পৃথিবীতে তার কোনো মান-মর্যাদাও নেই।

সম্প্রসারিত ভাব: চরিত্র মানবজীবনের সুষমাময় সম্পদ। চরিত্রবান ব্যক্তি

স্বকীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের গুণে সমাজজীবনে শ্রদ্ধাভাজন ও সমাদৃত হয়ে

থাকেন। চরিত্র মানুষকে সুশোভিত করে। মানুষ তার মৌলিক সৌন্দর্যকে

আরো আকর্ষণীয় ও মধুময় করতে যেমন সুন্দর সুন্দর পোশাক পরিধান

করে, তেমনই চরিত্র অলংকার হিসেবে মানুষের মধ্যে অনুপম সৌন্দর্যের

বিকাশসাধন করে। মানবজীবনের অপরিহার্য উপাদান হচ্ছে স্বাস্থ্য, অর্থ

এবং বিদ্যা। তবে জীবনে এগুলোর যতই অবদান থাকুক না কেন,

এককভাবে এগুলোর কোনোটিই মানুষকে সর্বোত্তম মানুষে পরিণত করতে

সক্ষম নয়। যার পরশে জীবন ঐশ্বর্যমণ্ডিত হয় এবং যার বদৌলতে মানুষ

সমাজজীবনে শ্রদ্ধা ও সম্মানের পাত্র হিসেবে আদৃত হয়ে থাকে তাই চরিত্র।

নামমাত্র নৈতিকতা বা ন্যায়নিষ্ঠাই চরিত্র নয়। চরিত্রের মাঝে সমন্বয় ঘটাতে

হবে মানুষের যাবতীয় মানবীয় গুণাবলি ও আদর্শের। চরিত্রবান ব্যক্তি

জাগতিক মায়া-মোহ ও লোভ-লালসার অবিচ্ছেদ্য বন্ধনকে ছিন্ন করে লাভ

করে থাকেন অপরিসীম শ্রদ্ধা ও অফুরন্ত সম্মান। বিখ্যাত ইংরেজ লেখক

স্যামুয়েল স্মাইলাম তাঁর ‘CHARACTER’ নিবন্ধে বলেছেন- ‘The M

crown and glory of life is character.’ তিনি উক্তিটির মাধ্যমে মূলত

সেই অমূল্য সম্পদের প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করেছেন।

মন্তব্য: চরিত্রের কাছে পার্থিব সম্পদ ও বিত্ত, অতি নগণ্য। অর্থনৈতিক

ভাবসম্প্রসারণ ┃জেসএসসি , এসএসসি , এইচএসসি , ডিগ্রি, অনার্স, মাস্টার্স, বিসিএস

প্রাচুর্যের বিনিময়ে চরিত্রকে কেনা যায় না। মানবজীবনে চরিত্রের মতো

• বড় অলংকার আর নেই। চরিত্র মানবজীবনের এক অমূল্য সম্পদ।

জাতীয় জীবনে সন্তোষ এবং আকাঙ্ক্ষা দুয়েরই মাত্রা বেড়ে গেলে

বিনাশের কারণ ঘটে।

(রা. বো, ১১,০৮/

মূলভাব: মানুষের জীবনে পরিপূর্ণ সন্তুষ্টি ও সীমাহীন আকাঙ্ক্ষা কোনোটিই

শুভ নয়। এ দুইয়ের মাত্রা বেড়ে গেলে জীবনে বিনাশ ও বিপর্যয় নেমে আসে।

সম্প্রসারিত ভাব: সীমাহীন অভাববোধ যেমন মানুষকে কখনো মানসিক

শান্তি দিতে পারে না তেমনই পরিপূর্ণ সন্তুষ্টিবোধও মানুষকে অধিকার

সচেতন করতে পারে না। একথাটি ব্যক্তিজীবনের ক্ষেত্রে যেমন প্রযোজ্য

তেমনই জাতীয় জীবনের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য। কেননা মানুষের

আকাঙ্ক্ষা বেড়ে গেলে অপ্রাপ্তি বেড়ে যায় আর অপ্রাপ্তি বেড়ে গেলে সমাজে

আবির্ভাব ঘটে দুর্নীতি অন্যায় নানা ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপের। এ

কারণে জাতীয় স্বার্থকে সবসময় ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে রাখতে হবে।

অনুরূপভাবে নিজেদের অবস্থান নিয়ে মানুষের মনে যদি সন্তোষবোধ বেড়ে

যায় তাহলে সে আর নিজের উন্নতির চিন্তা করে না। ধীরে ধীরে সে নিজের

অধিকার সম্পর্কে অসচেতন ও কর্মবিমুখ হয়ে পড়ে। আর জাতীয় ক্ষেত্রে এ

সন্তুষ্টিবোধ অভিশাপস্বরূপ। কোনো জাতি যদি নিজেদের অধিকার সম্পর্কে

অসচেতন হয়ে পড়ে, তবে সে জাতির উন্নতি সম্ভব নয় এবং অন্য কোনো

জাতিগোষ্ঠী তাদের সন্তুষ্টির সুযোগ নিতে কুণ্ঠাবোধ করবে না। এ কারণে

বৈশ্বিক অগ্রগতির প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে গেলে কোনো বিষয়ে

পরিপূর্ণ সন্তুষ্ট হলে চলবে না। নিজেদের অবস্থানকে আরো বেশি সুদৃঢ়

করার একটা প্রবণতা আমাদের থাকতে হবে। নিজের অধিকার, দেশের

অধিকার আদায়ে সদা সচেতন থাকতে হবে। একটি বিষয় খেয়াল রাখতে

হবে, আমাদের ব্যক্তিজীবনের উন্নতি মানে সমাজের উন্নতি। আর সমাজের

উন্নতি মানে দেশের উন্নতি। তাই পরিপূর্ণ সন্তুষ্ট হয়ে আমরা নিজেদের এবং

দেশের অগ্রগতিকে যেন বাধাগ্রস্ত না করি।

মন্তব্য: জীবনে অতিমাত্রায় আকাঙ্ক্ষা যেমন ভালো নয়, ‘তেমনই নিজের

অধিকার সম্পর্কে অতিমাত্রায় উদাসীনতাও কাম্য নয়। কারণ এ দুটি

জিনিস বেড়ে গেলে ব্যক্তিজীবনের ন্যায় জাতীয় জীবনেও বিনাশ অনিবার্য

হয়ে দাঁড়ায়।

ভাবসম্প্রসারণ ┃জেসএসসি , এসএসসি , এইচএসসি , ডিগ্রি, অনার্স, মাস্টার্স, বিসিএস

জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।

(রা. বো, ১৯, হলি ক্রস কলেজ, ঢাকা: বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, সিলেট

প্রস্তুতিমূলক 722/

মূলভাব: মানুষের নিজের ও সমাজের কল্যাণ এবং মুক্তিসাধনে জ্ঞানের

ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু জ্ঞানের স্বাভাবিক বিকাশ যেখানে রুদ্ধ হয়,

বুদ্ধির বিকাশও সেখানে অসম্ভব হয়ে পড়ে। ফলে সেখানে মুক্তির পথও

রুদ্ধ হয়ে যায়।

সম্প্রসারিত ডাব: মানবসভ্যতার অভাবনীয় উন্নতির পেছনে রয়েছে,

-মানুষের জ্ঞান-জিজ্ঞাসা। জগৎ ও জীবনের রহস্য অনুসন্ধান করতে

গিয়েই মানুষ উত্তরোত্তর আবিষ্কার করে চলেছে নতুন নতুন জিনিস,

উৎপাদন করছে নতুন নতুন কৃষিজাত ও শিল্পজাত পণ্য । আর এসবের

নতুন নতুন উপযোগিতা সৃষ্টির মধ্য দিয়ে নিজের ও সমাজের প্রভূত

কল্যাণ সাধন করে যাচ্ছে। অন্যদিকে, জ্ঞানকে পুঁজি করে দেশে দেশে,

কালে কালে মানুষ শিল্প-সংস্কৃতির চর্চা করে যাচ্ছে। আর শিল্প-

সংস্কৃতির চর্চার মধ্য দিয়ে মানুষ মানুষের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ ও

ভালো লাগা, ভালোবাসার রহস্য উদ্ঘাটনে নিয়োজিত থাকছে। এতে

করে মানুষের দুঃখ-কষ্ট প্রশমনের মধ্য দিয়ে আত্মিক কল্যাণ সাধিত

হচ্ছে। মানুষ জীবন-বাস্তবতাকে সহজে মেনে নিতে পারছে। অন্যদিকে,

পৃথিবীতে বিভিন্ন দৈশে বিভিন্ন কালে নানারকম অশিক্ষা, কুশিক্ষা,

অন্ধবিশ্বাস এবং নানারকম ধর্মীয় ও সামাজিক কুসংস্কার জ্ঞানের

স্বাভাবিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করছে। আর যে সমাজে জ্ঞান সীমাবদ্ধ

অর্থাৎ জ্ঞান বিকাশের সুযোগ নেই, সেখানে বুদ্ধিও আড়ষ্ট হয়ে পড়ে।

ফলে সে সমাজের মানুষগুলোকে অন্ধকারেই দিনাতিপাত করতে হয়;

মুক্তির স্বাদ লাভ করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। এই একবিংশ

শতাব্দীতে অনেক সমাজের মানুষ বিশ্বাস করে যে, ডায়রিয়া-আমাশয়

হলো ওলাবিবি নামক দৈত্যের কুদৃষ্টির ফল; অনেক সমাজের মানুষ মনে

করে যে শুভ দিন-ক্ষণ না দেখে কোনো কাজে নামলে শত চেষ্টার পরও

সে কাজে সফলতা লাভ করা যায় না। আবার অনেক রক্ষণশীল

পরিবারের লোকেরা মনে করে যে, মেয়েদের স্কুল-কলেজে গিয়ে

শিক্ষালাভ করা ধর্মীয় অনুশাসনের পরিপন্থী। কিন্তু এগুলো বুদ্ধির দ্বারা

সমর্থিত কি না তা মানুষ যাচাই করে দেখে না।

মন্তব্য: প্রত্যক্ষণ ও যাচাই ছাড়া কোনো কিছুকে গ্রহণ বা বর্জন করা

উচিত নয়। যে সমাজের মানুষ জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়ে যাচাই না করে কেবল

অন্ধবিশ্বাস ও অযৌক্তিক ধারণার ভিত্তিতে গ্রহণ কিংবা বর্জন করে, সে

সমাজের মানুষের পক্ষে বুদ্ধির বিকাশসাধন কিংবা মুক্তির স্বাদ গ্রহণ-

কোনোটিই সম্ভব নয়।

ভাবসম্প্রসারণ ┃জেসএসসি , এসএসসি , এইচএসসি , ডিগ্রি, অনার্স, মাস্টার্স, বিসিএস

তুমি অধম, তাই বলিয়া আমি উত্তম না হইব কেন?

(ঢা.বো, ১০. সি. বো, ১০, ০৮, য, বো, ০৬ ব. বো. ১০; ভিকারুননিসা নূন স্কুল

এন্ড কলেজ, ঢাকা: প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা ২২/

মূলভাব: কোনো মানুষের মহৎ, উদার ও চরিত্রবান হওয়া অন্যের ভালো

বা মন্দ হওয়ার ওপর নির্ভর করে না। উত্তম স্বভাবের মানুষ কখনো

অধম ও হীন স্বভাবের মানুষের ন্যায় আচরণ করেন না।

সম্প্রসারিত ভাব; সমাজের সব মানুষ এক রকমের হয় না। কেউ ভালো,

কেউ মন্দ। কিছু মানুষ আছে যারা সমাজ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে

অন্যায়-অপকর্ম এবং অন্যের ক্ষতিসাধন করা থেকে বিরত থাকে। এ

শ্রেণির মানুষ সমাজে উত্তম মানুষ হিসেবে গণ্য। আবার মানুষের মধ্যে

যেমন রয়েছে সুপ্রবৃত্তি বা বিবেকবুদ্ধি ও ঔচিত্যবোধের তাড়না, তেমনি

রয়েছে কুপ্রবৃত্তির প্ররোচনা। আর আছে ব্যক্তিস্বার্থের আকর্ষণ। এসব

কারণে মানুষ পারস্পরিক স্নেহ-প্রীতি ও প্রেম-ভালোবাসার কথা ভুলে

গিয়ে হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা এবং নানা অন্যায় অপকর্মে জড়িয়ে

পড়ে। এ শ্রেণির মানুষ সমাজে অধম মানুষ হিসেবে পরিগণিত। সমাজে

এদের প্রভাবও কম নয়। অনেকেই এ শ্রেণির লোকদের অনুকরণ-

অনুসরণ করে থাকে। কারণ তাদের ধারণা যে, পৃথিবীর অধিকাংশ

মানুষই অসৎ। তাই তাদের সৎ হওয়ার চেষ্টা করা একেবারেই অর্থহীন।

কিন্তু এ ধরনের ভাবনা একেবারেই অর্থহীন ও বোকামিপূর্ণ। কারণ মানুষ

হিসেবে আমাদের ভালো-মন্দ, কল্যাণ-অকল্যাণ, ন্যায়-অন্যায় ও

উচিত-অনুি পার্থক্য উপলব্ধি করার ক্ষমতা রয়েছে। তাই আমাদের

ভালোটাকেই গ্রহণ করতে হবে এবং মন্দটাকে বর্জন করতে হবে।

অর্থাৎ অন্যরা অধম বলে আমাদেরও অধম হলে চলবে না। বিবেকের

তাড়নায় তাড়িত হয়ে আমাদের উত্তম হওয়ার সাধনা করতে হবে।

আমাদের স্মরণ রাখতে হবে যে, সমাজে অধম লোকের কোনো স্থান

নেই। সমাজ তাদের নিন্দা ও অবহেলার চোখে দেখে। অন্যদিকে, উত্তম

লোক মানুষের শ্রদ্ধা, সম্মান ও ভালোবাসার পাত্র। এছাড়া সমাজে উত্তম

মানুষরূপে বেঁচে থাকার মধ্যে একটা গৌরব ও আত্মতৃপ্তি রয়েছে।

মন্তব্য: মন্দ স্বভাবের মানুষ ব্যক্তির ও সমাজের অনিষ্ট চিন্তায় বিভোর

থাকে। কিন্তু উত্তম স্বভাবের ব্যক্তির পক্ষে অনুরূপ আচরণ এবং চিন্তার

প্রকাশ অপ্রার্থিত ও অনুচিত।

১২

তাই আজ প্রকৃতির ওপর আধিপত্য নয়, মানুষ গড়ে তুলতে

চাইছে প্রকৃতির সঙ্গে মৈত্রীর সম্বন্ধ।

বা, প্রকৃতির ওপর আধিপত্য নয়, চাই প্রকৃতির সঙ্গে মৈত্রীর

সম্বন্ধ। [সকল বোর্ড ২০১৮; ঢা. বো, ০৩/

মূলভাব: আধিপত্য বিস্তার নয় বরং মানুষের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে

প্রকৃতির সঙ্গে মৈত্রীর সম্বন্ধই বেশি বাঞ্ছনীয়। মানুষকে প্রকৃতির সাথে

সখ্য গড়ে তুলতে হবে।

সম্প্রসারিত ভাব: জীব জগতের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ প্রাণী হচ্ছে মানুষ।

সর্বশ্রেষ্ঠ বলেই প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে মানুষ প্রকৃতির ওপর নির্ভর

করেছে এবং প্রকৃতির ওপর আধিপত্য বিস্তারে প্রয়াসী হয়েছে। মানুষ

প্রথম দিকে একান্তই প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল হলেও যখন সে সভ্য হতে

শুরু করল তখন থেকেই পৃথিবীকে নিজেদের উপযোগী করে তোলার

সর্বাঙ্গীণ প্রচেষ্টা চালিয়েছে। দেশ ও জনপদ গড়ে তোলার জন্য বন

উজাড় করেছে, বন্যপ্রাণী ধ্বংস করেছে এবং প্রাকৃতিক সম্পদের যথেচ্ছ

ব্যবহার করেছে। প্রথমদিকে এর প্রভাব ব্যাপকভাবে লক্ষণীয় না হলেও

শিল্পযুগের আবির্ভাবের পর থেকে তা পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিগত

শতাব্দীতে বিজ্ঞানের প্রভূত উন্নয়নের ফলে মানুষ প্রকৃতির ওপর

আধিপত্য বিস্তারেই মনোযোগী হয়েছে বেশি। ফলে বন উজাড়, সাগর-

নদ-নদী ভরাট, অত্যধিক কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ, পানিদূষণ,

বায়ুদূষণ নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রকৃতির ওপর মানুষের এ

সর্বগ্রাসী আধিপত্যের বিরূপ প্রতিক্রিয়া যে প্রকৃতি দেয়নি এমনটি নয়।

বিশ্বে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে— ফলে বন্যা,

জলোচ্ছ্বাসে ডুবে যাচ্ছে জনপথ। আবার অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, সাইক্লোন,

টর্নেডো প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেমে আসছে মানুষের ওপর। এভাবে

চলতে থাকলে হয়ত সমগ্র পৃথিবী একদিন মরুভূমিতে পরিণত হবে,

নয়তো সমুদ্রের অতল জলে ডুবে যাবে। তবে এসব থেকে পৃথিবীকে

টিকিয়ে রাখার একটিই উপায়, প্রকৃতির ওপর আধিপত্যের পরিবর্তে

প্রকৃতির প্রতি যত্নশীল হওয়া। পরিবেশের জন্য যা কিছু হুমকিস্বরূপ তার

ব্যবহার সীমিত করে পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ করার চেষ্টা করা।

পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, বন সংরক্ষণ, বনায়ন ইত্যাদি কার্যক্রম

শুরু করে মানুষ চাইছে প্রকৃতির সঙ্গে মৈত্রীর সম্বন্ধ গড়ে তুলতে।

মন্তব্য: প্রকৃতি তার অপার উপকরণ দিয়ে পৃথিবীকে মানুষের বসবাসের

উপযোগী করে তুলেছে তাই নিজের স্বার্থেই মানুষকে প্রকৃতির ওপর

আধিপত্য বিস্তারের পরিবর্তে মৈত্রীর সম্বন্ধ স্থাপন করতে হবে।

ভাবসম্প্রসারণ ┃জেসএসসি , এসএসসি , এইচএসসি , ডিগ্রি, অনার্স, মাস্টার্স, বিসিএস

দাও ফিরিয়ে সে অরণ্য, লও এ নগর।

ঢিা. বো, ১২ দিবো. ১৫, সরকারি আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা ২২/

মূলভাব: অরণ্যের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। এটি সুখে-

দুঃখে মানুষকে স্নেহের পরশ বুলিয়ে দেয়। অন্যদিকে, অরণ্যহীন নগর

রোমান্টিক ও সৃষ্টিশীল মানুষের কাছে এক যন্ত্রণাদায়ক স্থান

সম্প্রসারিত ভাব: সৃষ্টিলগ্ন থেকেই মানুষ অরণ্যের সান্নিধ্যে জীবনযাপন

করে। তখন থেকেই অরণ্য যেন মানুষকে সস্নেহে লালন-পালন করার ভার

নিজের হাতে নিয়ে নেয়। অরণ্য নানারক ফুল-ফল বিভিন্ন খাবার-

দাবার মানুষকে সরবরাহ করত। মানুষের জীবনধারণের জন্য সবচেয়ে

প্রয়োজনীয় যে অক্সিজেন তা মানুষ অরণ্যের কাছ থেকেই পেয়ে থাকে।

অন্যদিকে, বৃষ্টিপাত সংঘটনসহ মানুষের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়

অরণ্যের রয়েছে বিরাট ভূমিকা। কিন্তু অরণ্যের মহাসমারোেহ এখন আর লক্ষ

করা যায় না। সভ্যতার ক্রমবিকাশের ফলে মানুষ অরণ্যকে ধ্বংস করে

সেখানে নগর পত্তন করছে। আবার মানুষ তার গৃহ-নির্মাণ, প্রয়োজনীয়

আসবাবপত্ৰ-নিৰ্মাণ, জ্বালানি সমস্যা সমাধানসহ নানা প্রয়োজনে অরণ্যের

প্রধান সম্পদ বৃক্ষকে অকাতরে নিধন করছে। ফলে মানুষের জীবন-

প্রক্রিয়াও আজ বিপন্ন হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে, অরণ্য-প্রকৃতিকে ধ্বংস করে

মানুষ যে নগরের পত্তন করেছে সে নগর মানুষকে সুখ দিতে পারছে না।

প্রয়োজনীয় সুযোগের অভাবে এখানে অনেক মানুষের সুপ্ত বাসনা ও

সৃষ্টিশীলতার অকালমৃত্যু ঘটে। এখানে অন্যের দুঃখের কথা শোনার কারো

সময় নেই। পারস্পরিক স্নেহ-মমতা, সহমর্মিতা, সংবেদনশীলতা,

আন্তরিকতা—এসব যেন এখানে একেবারেই অনুপস্থিত; যেটুকু আছে তাও

যেন কৃত্রিমতার আবরণে আচ্ছাদিত। এখানকার মানুষগুলোও কেমন যেন

যান্ত্রিক স্বভাবের। এ কারণেই বোধ হয় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের

উপলব্ধি— ‘ইটের পরে ইট মাঝে মানুষ কীট।’

মন্তব্য: মানুষের জীবনে অরণ্যের প্রয়োজনীয়তা বহুমাত্রিক। তাই ‘দাও

ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর’- এ আহ্বান আজ আর কেবল কোনো

রোমান্টিক বা সৃষ্টিশীল মানুষের নয়; এটি আজ সব সচেতন মানুষেরই

প্রাণের দাবি।

ভাবসম্প্রসারণ ┃জেসএসসি , এসএসসি , এইচএসসি , ডিগ্রি, অনার্স, মাস্টার্স, বিসিএস

দুর্জন বিদ্বান হইলেও পরিত্যাজ্য।

(ঢা. বো: ১৫,০৭: রা. বো. ১৫, ১৩, ০৪, দি, বো. ১৩: কু. বো, ০৯, সি. বো. ১৩;

ব, বো. ১৯, ০৬ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজ,

শরীয়তপুর, দিনাজপুর সরকারি কলেজ, প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা ২২/

মূলভাব: চরিত্রহীন ব্যক্তি মাত্রই দুর্জন। এ শ্রেণির মানুষ মহাবিদ্বান হলেও

তাদের সঙ্গ অবশ্যই পরিত্যাজ্য। তাদের বিদ্যা লোকসমাজে উপকারের

চেয়ে অপকারই করে বেশি। এ বিদ্বান-দুর্জনের সাহচর্যে নিষ্কলুষ

চরিত্রও হতে পারে কলুষিত।

সম্প্রসারিত ভাব: বিদ্যা মানবজীবনের অমূল্য সম্পদ। বিদ্যার হিরণ্ময়

দীপ্তিতে মানুষ হয়ে ওঠে মহীয়ান। বিদ্বান ব্যক্তি সর্বত্র মর্যাদাবান ও

মহাসম্মানের পাত্র। কিন্তু বিদ্বান ব্যক্তি যদি চরিত্রবান না হন, তাহলে তাঁর

পরিণতি মঙ্গলজনক হয় না। বস্তুত চরিত্র বিদ্যার চেয়ে বেশি মূল্যবান।

বিদ্বান ও চরিত্রবান ব্যক্তি দেশ ও জাতির অনন্য সম্পদ। সচ্চরিত্র ব্যক্তি

মূর্খ হলেও অসচ্চরিত্র বিদ্বানের চেয়ে অধিকতর মান্য ও গ্রহণযোগ্য।

কাজেই চরিত্রহীন দুর্জন সুপণ্ডিত হলেও তার সাহচর্য পরিত্যাগ করাই

শ্রেয়। বিদ্যা অমূল্য সম্পদ হলেও তা অর্জনের জন্যে চরিত্রহীন ব্যক্তির

সংস্পর্শে যাওয়া কোনোক্রমেই উচিত নয়। কারণ দুর্জনের সাহচর্যে

নিষ্কলুষ চরিত্রও কলুষিত হতে পারে। দুর্জন ব্যক্তি বিদ্যা-বুদ্ধিতে

মহাপণ্ডিত বলে খ্যাতিমান হলেও সবার উচিত তার সঙ্গ পরিহার করা।

কারণ চরিত্রহীনের বিদ্যা-বুদ্ধি জ্ঞানবান বা চরিত্রবান ব্যক্তির কোনো

কাজে লাগে না। বরং তাদের কলুষ স্পর্শে জীবনের অমূল্য সম্পদ চরিত্র

চিরতরে কলুষিত হয়ে যেতে পারে। সুতরাং, জীবনের সর্বক্ষেত্রেই

অসচ্চরিত্র ব্যক্তির সাহচর্য পরিত্যাগ করা বাঞ্ছনীয়।

মন্তব্য: চরিত্র মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। চরিত্র নষ্ট হলে মানুষ আর

মানুষ থাকে না, পশুতে পরিণত হয়। তাই চরিত্রহীন দুর্জন বিদ্বান ব্যক্তির

সাহচর্য পরিহার করাই শ্রেয়।

ভাবসম্প্রসারণ ┃জেসএসসি , এসএসসি , এইচএসসি , ডিগ্রি, অনার্স, মাস্টার্স, বিসিএস

দুর্নীতি জাতীয় জীবনে অভিশাপস্বরূপ।

সি. বো ০৬, ০৪, ব, বো, ০৫/

মূলভাব: নীতি ও নৈতিকতাবিরোধী কাজই হচ্ছে দুর্নীতি। এর প্রভাবে

একটি জাতির স্বপ্ন ও সম্ভাবনা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যায়। তাই দুর্নীতি

জাতির জীবনে চরম অভিশাপের সঙ্গে তুলনীয়।

F

সম্প্রসারিত ভাব: শিক্ষা ও মূল্যবোধের যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমে সৃষ্ট

মনুষ্যত্ববোধ মানুষকে সৃষ্টিজগতে দান করেছে মহিমান্বিত মর্যাদা। অথচ

দুঃখজনক হলেও সত্য, মানুষের এ শ্রেষ্ঠত্ব আজ প্রশ্নের সম্মুখীন। সততা

ও সুনীতির প্রশ্নে মনুষ্য সমাজ আজ ভাবিত। আজ এটা প্রতীয়মান

হয়েছে যে, কোনো জাতির সামগ্রিক জীবনাচরণে সততা ও মূল্যবোধের

অবক্ষয় ঘটলে জাতীয় জীবনে নেমে আসে বিপর্যয়ের অশনিসংকেত।

ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র আক্রান্ত হয় দুর্নীতির রাহুগ্রাসে। সংকটাপন্ন হয়ে স

ওঠে জাতীয় অস্তিত্ব। সম্প্রতি আমাদের দেশে মহামারি আকারে দেখা হ

দিয়েছে ‘দুর্নীতি’ নামক ব্যাধিটি। দুর্নীতি একটি জাতীয় অভিশাপ।

মুষ্টিমেয় মানুষ ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে থাকে।

কালক্রমে একটা অনিবার্য পথ ধরে সমাজকে গ্রাস করে প্রসারিত হতে

শুরু করে রাষ্ট্রীয় বৃহৎ আঙিনা পর্যন্ত। সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স

কর্মকর্তা-কর্মচারী সকলেই অসদুপায় অবলম্বন করতে থাকে। ক্ষতিগ্রস্ত থা

হয় দেশের অর্থনীতি, ব্যাহত হয় জাতীয় উৎপাদন। এগুলো দুর্নীতির ব্য

প্রত্যক্ষ ফল। সচেতনভাবে লক্ষ করলে দেখা যায়, দুর্নীতির স

রাষ্ট্রীয়করণের সুদূরপ্রসারি ফলাফল খুবই ভয়াবহ। কেননা এটা মানুষের বি

কোমল প্রবৃত্তিসমূহকে সমূলে বিনাশ করে দেয়। জাতি হয়ে পড়ে

হতাশাগ্রস্ত— যা তাদের মধ্যে পাশবিকতার জন্ম দিয়ে থাকে। দুর্নীতির মত্ত

এ নেতিবাচক দিকটির সবচেয়ে বড় শিকার হয় যুবসম্প্রদায়

পরিশীলিত চিন্তাবোধের অভাবে সাফল্যলাভের জন্য তারা সহজেই অশুভ

of

মান

পনে

২১১

ও ধ্বংসের পথ বেছে নেয়। নষ্ট হয়ে যায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মানবীয়

উন্মেষের সম্ভাবনা। এভাবে জাতীয় জীবনে সৃষ্টি হয় অস্তিত্বের সংকট।

মন্তব্য: দুর্নীতিগ্রস্ত জাতি কখনো কাঙ্ক্ষিত সাফল্য লাভ করতে পারে না।

আমাদের— বিশেষত দেশের শিক্ষিত সমাজকে এটা উপলব্ধি করতে

হবে। সমৃদ্ধ ও কল্যাণকর ভবিষ্যৎ সমাজ গড়তে হলে জাতীয় জীবন

থেকে দুর্নীতির অপসারণ করা খুবই জরুরি।

ভাবসম্প্রসারণ ┃জেসএসসি , এসএসসি , এইচএসসি , ডিগ্রি, অনার্স, মাস্টার্স, বিসিএস

দুঃখের মতো এত বড় পরশপাথর আর নাই।

(রা. বো. ১০:দি: বো, ১১/

মূলভাব: দুঃখের স্পর্শে মানুষের স্বীয়সত্তা ও অন্তর্গত শক্তি জাগ্রত হয়।

দুঃখের মধ্য দিয়েই মানুষ সত্যিকার মনুষ্যত্ব লাভ করে। দুঃখের পরশেই

মানুষের বিবেক মহান হয়।

সম্প্রসারিত ভাব: দুঃখ-কষ্টের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েই মানুষের মধ্যে

জন্ম নেয় প্রজ্ঞা ও মহত্ত্বের। দুঃখের করুণ দহন শেষে যে সুখ আবির্ভূত

হয়, তা অনাবিল ও অতুলনীয়। দুঃখের আগুনই মানুষের মনুষ্যত্ব ও

বিবেককে খাঁটি সোনায় পরিণত করে। পৃথিবীর সব মূল্যবান সম্পদ

দুঃখের বিনিময়েই অর্জিত হয়েছে। দুঃখ ছাড়া প্রকৃত সুখ অর্জন সম্ভব

নয়। সুখের অনুভূতি বুঝতে হলে আমাদের দুঃখকে আপন করে নিতে

হবে। দুঃখ না পেলে সুখের উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। মনীষীরা দুঃখকে

পরশপাথরের সাথে তুলনা করেছেন। পরশপাথরের ছোঁয়ায় লোহা যেমন

সোনায় পরিণত হয়, তেমনই দুঃখরূপ পরশ-পাথরের ছোঁয়ায় মানুষের

সব গ্লানি দূর হয়ে যায়। ফলে মানুষ লাভ করে জীবনের সার্থকতা।

জগতের সব সাফল্যের সাথে জড়িয়ে আছে সীমাহীন দুঃখের মর্মান্তিক

ইতিহাস। বাংলা প্রবাদে আছে— ‘কষ্ট ছাড়া কেষ্ট মেলে না।’ দুঃখ-কষ্ট,

ত্যাগ-তিতিক্ষা ও অধ্যবসায় ছাড়া জীবনে সাফল্যের স্বর্ণশিখরে আরোহণ

কষ্ট আছে বলেই আমাদের সুখী হরার এত আকুলতা। আর

এই সুখী হবার জন্যই আমরা নানা দুঃসাধ্য সাধন করি, জীবনকে করি

মহিমান্বিত। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন— ‘দুঃখই জগতে একমাত্র সকল

পদার্থের মূল্য। মাতৃস্নেহের মূল্য দুঃখে, পতিব্রতের মূল্য দুঃখে, বীর্যের মূল্য

দুঃখে, পুণ্যের মূল্য দুঃখে। সুতরাং, দুঃখকে বর্জন করা অসম্ভব।

অসম্ভব

মন্তব্য: দুঃখ মানুষের সকল জড়তা ও দৈন্য দূর করে তাকে করে সুন্দর।

দুঃখের ভেতর দিয়েই মানুষ জীবনসাধনায় সিদ্ধি লাভ করে। সুতরাং,

জাগতিক সকল প্রাপ্তির পূর্বশর্ত দুঃখের পরশ।

www

ভাবসম্প্রসারণ ┃জেসএসসি , এসএসসি , এইচএসসি , ডিগ্রি, অনার্স, মাস্টার্স, বিসিএস

ধনের মানুষ মানুষ নয়, মনের মানুষই মানুষ।

সি. বো, ০৪; বাংলাদেশ মহিলা সমিতি স্কুল ও কলেজ, চট্টগ্রাম প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা ২২/

মূলভাব: সকলের ভালোবাসা নিয়ে বেঁচে থাকে যে মানুষ সে-ই প্রকৃত

মানুষ; ধনসম্পদে গড়া মানুষ প্রকৃত অর্থে মানুষ নয়। বরং যার একটি

উদার মন আছে সেই মানবসমাজের আদর্শ হিসেবে বিবেচ্য।

সম্প্রসারিত ভাব: ধনসম্পদ থাকলেই মানুষ হওয়া যায় না। মানুষ হতে

হলে পরোপকারী মন থাকতে হবে। পরোপকারী মন না থাকলে বিত্তবান

মানুষ, সাধারণ মানুষের কোনো কল্যাণে আসে না। তাই সাধারণ মানুষের

ভালোবাসা থেকে সে হয় বঞ্চিত। মৃত্যুর সাথে সাথে তার ঐশ্বর্যের

পরিসমাপ্তি ঘটে। কেউ তাকে মনে রাখে না। কিন্তু ধনসম্পদহীন মানুষ

সবার কাছে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা পেতে পারে, যদি তার পরোপকারী মন

থাকে। বিপুল ঐশ্বর্যের অধিকারী ব্যক্তির যদি সংকীর্ণ মন থাকে তবে ওই

ব্যক্তির ঐশ্বর্যের কোনো মূল্যই নেই জনসাধারণের কাছে। কারণ তার দ্বারা

সমাজের কোনো কল্যাণ সাধিত হয় না। মৃত্যুর সাথে সাথে এ ব্যক্তিও

বিলীন হয়ে যায়। কিন্তু পরোপকারী মানুষ বেঁচে থাকে মানুষের হৃদয়ের

শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা নিয়ে।

| মন্তব্য: ঐশ্বর্যশালী ব্যক্তিরা মানুষের ওপর দৃশ্যত প্রভাব ফেললেও তারা

মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান করে নিতে পারে না, যদি তাদের

পরোপকারী মন না থাকে। পরোপকারী মন যাদের আছে তারাই প্রকৃত মানুষ।

ভাবসম্প্রসারণ ┃জেসএসসি , এসএসসি , এইচএসসি , ডিগ্রি, অনার্স, মাস্টার্স, বিসিএস

পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি।

রাবো. ১৩, ০৬: কু, বো. ১২, য, বো, ০৭/

মূলভাব: সৌভাগ্য সকলেরই কাম্য। কিন্তু এ সৌভাগ্য অনায়াসলব্ধ নয়।

একে অর্জন করতে হয় নিরলস পরিশ্রম ও একনিষ্ঠ সাধনায়। তবেই

সৌভাগ্যের দ্বর্ণশিখরে আরোহণ করা যায়।

সম্প্রসারিত ভাব: সংস্কৃতে একটি কথা আছে– দৈবলব্ধ অর্থের কল্পকাহিনি

দুর্বল কাপুরুষের স্বপ্নবিলাস মাত্র। পৃথিবীতে সকল নির্মাণ ও সৃষ্টির পেছনে

রয়েছে প্রচুর পরিশ্রম। বিশ্বসভ্যতা আপনা-আপনি গড়ে ওঠেনি। তা গড়ে

উঠেছে যুগে যুগে কালে কালে বহু মানুষের অপরিসীম পরিশ্রমের মাধ্যমে

জীবনে সফলতা অর্জনের জন্য পরিশ্রম অপরিহার্য। শ্রমকে উন্নতির চাবিকাঠি

বলা হয়। প্রতিষ্ঠা, খ্যাতি, প্রতিপত্তি, সুনাম, মর্যাদা ইত্যাদি অর্জনের জন্য

পরিশ্রম করা প্রয়োজন। নয়তো ব্যর্থতা এসে চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলে।

শ্রমবিমুখতা ও অলসতা জীবনে বয়ে আনে নিদারুণ অভিশাপ। নিরন্তর ও

নিরলস শ্রম সাধনায় জীবনাকাশ থেকে দারিদ্র্যের ঘনঘটা হয় অপসারিত

এবং জীবনের আঁধার গগন সফলতার নবীন সূর্যালোকে হয়ে ওঠে উদ্ভাসিত।

আধুনিক বিশ্বের প্রত্যেকটি উন্নত জাতির উন্নয়নের ইতিহাস পর্যালোচনা

করলে দেখা যায় সেসব জাতির প্রত্যেকেই নিরন্তর প্রচেষ্টা ও শ্রম সাধনার

বিনিময়ে উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করতে সক্ষম হয়েছে। একমাত্র

শ্রমের মাধ্যমেই ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনে অর্জিত হয় কাঙ্ক্ষিত সাফল্য।

নিরলস শ্রম সাধনায় সাফল্য অর্জনের ফলেই জীবজগতে মানুষ আজ শ্রেষ্ঠত্ব

লাভে ধন্য হয়েছে। বস্তুত জগতে মানুষের প্রতিটি সাফল্যের মূলে রয়েছে

মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রম ও অধ্যবসায়। পরিশ্রমের সোপান বেয়েই মানুষ

ওঠে সাফল্যের চূড়ায়।

মন্তব্য: পরিশ্রমই গড়ে দেয় মানুষের সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ। যে জাতি পৃথিবীতে

যত পরিশ্রমী, সে জাতি তত উন্নত। ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত পরিশ্রম এবং

সাধনাই জাতির সৌভাগ্যের নিয়ামক।

ভাবসম্প্রসারণ ┃জেসএসসি , এসএসসি , এইচএসসি , ডিগ্রি, অনার্স, মাস্টার্স, বিসিএস

প্রাণ থাকলেই প্রাণী হয়, কিন্তু মন না থাকলে মানুষ হয় না।

(ঢা. বো: ০৬: দিবো. ১০,কু বো. ১৪, ০৬ ব. বো. ১৯; আহম্মদ উদ্দিন শাহ্

শিশু নিকেতন স্কুল ও কলেজ, গাইবান্ধা, প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা ২২/

মূলভাব: প্রাণীর শুধু প্রাণ আছে বলেই তারা প্রাণী। মানুষের মন বা

বিবেক আছে কিন্তু পশুদের তা নেই। কিন্তু মন এমন এক

যার প্রভাবে মানুষ প্রাণী হয়েও মানুষ নামে পরিচিত। মনই মানুষকে

অন্যান্য প্রাণী থেকে পৃথক করেছে।

সম্পদ

সম্প্রসারিত ভাব: পৃথিবীতে যত প্রকার জীব রয়েছে তার প্রতিটিরই প্রাণ

আছে। এ বিচারে মানুষও অন্য দশটা প্রাণীর মতো একটা প্রাণী। শুধু

মনই মানুষকে অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা করেছে। পৃথিবীতে নিজেকে

আত্মপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য মানুষকে মহৎ গুণাবলির অধিকারী হতে হয়।

মানুষের মধ্যে দুটি সত্তা বিরাজমান— একটি প্রাণীসত্তা, অন্যটি মানবসত্তা।

শুধু প্রাণকে ধারণ করেই মানুষ নামের যোগ্য হওয়া যায় না। জগতের

অন্যান্য প্রাণীর প্রাণ আছে, অনুরূপ মানুষেরও প্রাণ আছে। কিন্তু মানুষের

মাঝে এমন কতগুলো মানবীয় বৈশিষ্ট্য আছে, যা অন্য প্রাণীর নেই।

এখানেই মানুষের সঙ্গে অন্যান্য প্রাণীর পার্থক্য। মানুষের মন আছে বলেই

মানুষ তার হৃদয়বৃত্তির বিকাশের সুযোগ পেয়েছে। তাই অন্যান্য প্রাণী

থেকে আলাদা হয়ে দৈনন্দিন জীবনের দ্বন্দ্ব-সংঘাত, হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-

লালসা স্বার্থচিন্তা, কুমন্ত্রণা ইত্যাদির ক্লেদাক্ত স্পর্শ থেকে নিজেকে মুক্ত

রাখতে পারে। পৃথিবীতে যে প্রাণী মানবদেহের আকৃতি নিয়ে জন্মগ্রহণ

করেও তার হৃদয়বৃত্তির বিকাশ ঘটাতে পারেনি এবং তার মনের অস্তিত্ব

প্রমাণ করতে পারেনি— সে মূলত প্রাণীর সমতুল্য । যে মানুষ ভালো-মন্দ,

ন্যায়-অন্যায় বিবেচনা করতে পারে এবং মনের মধ্যে মহৎ গুণাবলি অর্জন

করে, সে যথার্থ মনুষ্যত্বের অধিকারী হতে পারে। মনের বিকাশের মাধ্যমে

মানুষ মহৎ গুণাবলি অর্জন করতে পারে এবং যথার্থ মানুষের মর্যাদা পায়।

তাই শুধু প্রাণ নয়, মনই মানুষকে মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

মন্তব্য: মানুষ এবং পশুর মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে মানুষের বিচার-বুদ্ধির

ক্ষমতা, মহানুভবতা, ন্যায়পরায়ণতা ইত্যাদি গুণ রয়েছে, কিন্তু পশুর

নেই। শুধু প্রাণই নয়, মন বা বিবেকই মানুষকে মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে

আত্মপরিচয়ের মর্যাদা দিয়েছে।

ভাবসম্প্রসারণ ┃জেসএসসি , এসএসসি , এইচএসসি , ডিগ্রি, অনার্স, মাস্টার্স, বিসিএস

পথ পথিকের সৃষ্টি করে না, পথিকই পথের সৃষ্টি করে।

বুদি, বো, ১৯ কু বো, ১১ য, বো, ১৯; ব, বো. ১১, ০৮; ঠাকুরগাঁও সরকারি মহিলা

কলেজ নোয়াখালী সরকারী কলেজ, হাজেরা তজু ডিগ্রি কলেজ, চট্টগ্রাম, বগুড়া

ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ, প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা ২২/

মূলভাব: অনুসন্ধানী ও সৃষ্টিশীল মানুষ নিজের পথ নিজেই সৃষ্টি করে।

পথের নিজস্ব কোনো সৃষ্টির ক্ষমতা নেই। মানুষ পথিক হয়ে নিজের

প্রয়োজনে নিত্যনতুন পথের সৃষ্টি করে সভ্যতার উৎকর্ষ সাধন করে থাকে।

সম্প্রসারিত ভাব: পথিক পৃথিবীর পথে পথে ভ্রমণকারী জীবনের রথের

মতো। সে গতির প্রতীক। পথিকের পদচিহ্নে অঙ্কিত হয় পথরেখা। যে

মানুষ প্রথম পথ সৃষ্টি করে মানুষকে মানুষের সাথে মিলিয়ে দেন– সেই

তো যথার্থ পথিক। সে পথ বিস্তৃত হচ্ছে, আরো হবে, মানবসমাজকে

আরো বৃহৎ করবে। পথ কখনো কোনো পথিকের সৃষ্টি করতে পারেনি,

পারবেও না। মানুষের মুক্তির জন্য যে সব মহাপুরুষের পৃথিবীতে আগমন

ঘটেছে, তাঁরাই যথার্থভাবে ‘রসতীর্থ পথের পথিক’। তাঁদের পথনির্দেশ

প্রতিটি মানুষের আত্মমুক্তির ক্রমিক পরিণাম। তাঁদের প্রদর্শিত পথে চলে

প্রত্যেক মানুষ স্বমহিমায় ভাস্বর হয়ে উঠতে পারে। বিশ্বের নানা ধর্মের

নানা সম্প্রদায়ের মহাজ্ঞানী মহাজনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমরা যদি

তাঁদের প্রদর্শিত পথে চলতে পারি তাহলে আমরাও বরণীয় ও স্মরণীয়

হয়ে থাকতে পারব। শুধু তা-ই নয় ভবিষ্যতে আরও অনেক যুগস্রষ্টা

আসবেন যাঁরা মানবকল্যাণের প্রয়োজনে আরো নতুন নতুন পথ সৃষ্টি

করবেন । উক্তিটি এ রূপক তাৎপর্যে অনুপম।

মন্তব্য: মহাজ্ঞানী মহাজনেরা যে পথ সৃষ্টি করে অমর হয়ে আছেন, সে পথ

মানুষের সামাজিক কল্যাণের আলোকবর্তিকা। মানুষকে নিজের প্রয়োজনে

পথ সৃষ্টি করে নিতে হয়— এ সত্য মহাজ্ঞানী মহাজনরা প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

ভাবসম্প্রসারণ ┃জেসএসসি , এসএসসি , এইচএসসি , ডিগ্রি, অনার্স, মাস্টার্স, বিসিএস

প্রয়োজনে যে মরিতে প্রস্তুত, বাঁচিবার অধিকার তাহারই।

[রা. বো, ০৭, কুবো ০৭:চবো ০৪; সি. বো ০৩, চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ,

প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা ২২/

ন্যায়ে

মূলভাব: দেশ, দেশের মানুষ

প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে যারা প্রয়োজনে

হাসিমুখে প্রাণ উৎসর্গ করে, অমরত্ব একমাত্র তাদেরই প্রাপ্য।

সম্প্রসারিত ভাব: প্রবাদ আছে- “মৃত্যুর শীতল হস্ত, রাজার ওপরও

পতিত।’ অর্থাৎ মৃত্যু অনিবার্য, এর করালগ্রাস থেকে কারো নিষ্কৃতি নেই।

তবে মৃত্যুর শ্রেণিভেদ আছে। মৃত্যু কখনো কাপুরুষোচিত, কখনো

স্বাভাবিক, কখনও বীরের। বীরোচিত মৃত্যুই মানুষকে অমরত্ব দান করে।

মানুষমাত্রেরই অমরত্ব লাভের তীব্র ইচ্ছা। কিন্তু শতচেষ্টায়ও মানুষ মৃত্যুকে

এড়াতে পারে না। আবার মৃত্যুর মধ্য দিয়েই মানুষ নতুন করে বাঁচে

অনন্তকাল। যেমনিভাবে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের বুকে আজও বেঁচে

আছেন শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ। এ বেঁচে থাকা আর স্মরণীয়-বরণীয়

হয়ে থাকার পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়। এর জন্য প্রয়োজন সাহসী সৈনিকের

প্রত্যয়দীপ্ত মৃত্যু। কাপুরুষদের কাছে বেঁচে থাকা হলো প্রতিনিয়ত মৃত্যুর

দুয়ারে কড়া নাড়ার শামিল। অন্যদিকে, সাহসীরা মৃত্যুকে সঙ্গী করে

জীবনকে উপভোগ করে বীরের মতো। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব

রক্ষার্থে গৌরবদীপ্ত অমর জীবন লাভের প্রয়োজনে মৃত্যু একান্তই তুচ্ছ। এ

রকম অনন্ত বাঁচার জন্য মৃত্যুকে হাসিমুখে আলিঙ্গন করতে হয়। দেশের

সূর্যতরুণ বীর সৈনিক এমন মৃত্যুকে মহান ও গৌরবজনক মনে করে।

কারণ জীবনের জন্য অনিবার্য মৃত্যুকে বরণ করার মধ্য দিয়েই সে

পৃথিবীতে অমরত্বের জয়মাল্য ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হয়। তাই বলা হয়েছে,

প্রয়োজনে যে মরতে জানে, বাঁচার অধিকার একমাত্র তারই।

মন্তব্য: মহান মৃত্যুই মানুষকে অমরত্ব দান করে। কাপুরুষোচিত মৃত্যু

মানুষকে চিরদিনের জন্য ধ্বংস করে। মহান মৃত্যুকে দেশ ও জাতির

প্রয়োজনে আলিঙ্গন করলে গৌরব ও অমরত্ব লাভ করা যায়।

ভাবসম্প্রসারণ ┃জেসএসসি , এসএসসি , এইচএসসি , ডিগ্রি, অনার্স, মাস্টার্স, বিসিএস

পুষ্প আপনার জন্যে ফোটে না।

পরের জন্যে তোমার হৃদয় কুসুমকে প্রস্ফুটিত করিও।

বা, পুষ্প আপনার জন্যে ফোটে না।

(দি. বো, ১২/

মূলভাব: পৃথিবীতে প্রতিটি বস্তুই নিজ ঐশ্বর্য অন্যের কল্যাণার্থে উৎসর্গ

করে চলেছে। প্রকৃতির অন্যতম সৃষ্টি হলো মানুষ। সংগত কারণেই

মানুষও এ নিয়মরীতির ব্যতিক্রম নয়।

সম্প্রসারিত ভাব: এ সৃষ্টিজগতে প্রতিটি প্রাণী ও বস্তু একে অন্যের

পরিপূরক হিসেবে সৃষ্ট। সৃষ্টিতত্ত্বের ধারাবাহিকতায় পৃথিবীতে কারও

আপন স্বার্থসিদ্ধির জন্য জন্ম হয়নি। পরের মঙ্গল ও উপকার করার সং

উদ্দেশ্যেই সকলের জন্ম। সুতরাং, পরের মঙ্গল ও উপকার করার মধ্যেই

জন্মলাভের সার্থকতা নিহিত। পুষ্প যেন আদর্শ মানবজীবনেরই প্রতিচ্ছবি।

পরিস্ফুট ফুলের পরিপূর্ণ সৌন্দর্য সার্থক হয়ে ওঠে তখনই যখন অন্যের

তন্ময় দৃষ্টিকে তার রূপ-সুধা-রসে ভরে তোলে। ফুল তার সৌন্দর্য,

পবিত্রতা ও সৌরভের জন্য মানুষের কাছে পরম আকাঙ্ক্ষিত এবং

আদরণীয়। প্রস্ফুটিত পুষ্প তার সৌন্দর্য ও সুরভিতে সবাইকে বিমুগ্ধ

করে। পুষ্প কখনোই তার সৌন্দর্য, সুরভি ও মাধুর্যকে স্বীয় স্বার্থে ব্যয়

করে না বরং অন্যের হৃদয়বৃত্তিতে আনন্দ ও ভালো লাগার প্লাবন ঘটিয়ে

সে সার্থক হয়। পৃথিবীর সাধু ও জ্ঞানী ব্যক্তিরাও অন্যের মঙ্গলার্থে নিজের

জীবন অবলীলায় উৎসর্গ করতে ব্যাকুল। তাঁরা পুষ্পের মতোই নিজের

সর্বস্ব মানবকল্যাণে বিলিয়ে দিয়ে তৃপ্তি লাভ করেন, পরের কল্যাণে

আত্মোৎসর্গ করতে দ্বিধাবোধ করেন না। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব।

মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিপন্নের জন্য মানুষের অন্তর্নিহিত মানবীয় গুণাবলিকে

জাগ্রত করতে হবে। পরের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করে জীবনের পরম

সার্থকতা অর্জন করতে হবে। যে ব্যক্তি আত্মকেন্দ্রিক ও স্বার্থ লাভের

নেশায় আসক্ত, সে দেশ ও জাতির জন্য অভিশাপস্বরূপ।

মন্তব্য: মানুষের জন্মলাভের মূল উদ্দেশ্য নিজেকে পুষ্পের মতো বিকশিত

করা এবং নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী কল্যাণমূলক কাজের মাধ্যমে

বিশ্বমানবের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করা। আর এখানেই মানবজীবনের

সার্থকতা নিহিত।

ভাবসম্প্রসারণ ┃জেসএসসি , এসএসসি , এইচএসসি , ডিগ্রি, অনার্স, মাস্টার্স, বিসিএস

বিদ্যার সাধনা শিষ্যকে নিজে অর্জন করতে হয়।গুরু উত্তরসাধক মাত্র

চি, বো. ১৯; ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, চট্টগ্রাম, প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা ২২/

মূলভাব: জ্ঞান অর্জনের দুরূহ পথে শিক্ষকরা আলোকবর্তিকার ভূমিকা

পালন করেন। তাঁরা পদপ্রদর্শক। জ্ঞান অর্জন করতে হয় নিজেকেই।

ব্যক্তির নিজস্ব আগ্রহ ও নিরলস পরিশ্রম দিয়েই বিদ্যা-সাধনায় সিদ্ধি

লাভ করা যায়।

সম্প্রসারিত ভাব: বিদ্যা সাধনা তথা শিক্ষা লাভের জন্য আমরা স্কুল,

কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে থাকি। শিক্ষার এই ধরন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা

নামে পরিচিত। প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষায় গুরু তথা শিক্ষককের ভূমিকা

অনস্বীকার্য ও প্রশ্নাতীত। প্রকৃত অর্থে, শিক্ষকরাই আমাদের জীবন বিনির্মাণ

ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকেন।

গুরুজন তথা শিক্ষকদের প্রদর্শিত পথেই আমরা জ্ঞানরাজ্যে অবাধ

প্রবেশাধিকার লাভ করি। বিদ্যার রাজ্যে আমাদের স্বচ্ছন্দ বিচরণের

পেছনে শিক্ষকদের ভূমিকাই মুখ্য। বলা হয়ে থাকে মা-বাবার পরেই শিশুর

ভবিষ্যৎ জীবন বিনির্মাণে শিক্ষকের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি।

তবে বিদ্যা সাধনা বিদ্যার্থীর একান্তই নিজস্ব বিষয়। শিক্ষকদের ভূমিকার

কথা স্বীকার করেও এ কথা বললে অত্যুক্তি কিংবা অতিরঞ্জন হবে না যে,

নিজ চেষ্টা ও পরিশ্রম ছাড়া বিদ্যা অর্জন অসম্ভব। ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি

এবং শ্রেষ্ঠ গুরুর আশীর্বাদ ধন্য হলেই বিদ্যা অর্জন কখনো সম্ভবপর হয়ে

ওঠে না। এ জন্য চাই বিদ্যার্থীর নিজস্ব একাগ্রতা ও আগ্রহ থাকা চাই।

পরিশ্রম করার মানসিকতা প্রকৃত অর্থে, নিজস্ব চেষ্টা ছাড়া কখনই বিদ্যা

অর্জন করা যায় না। এমনও অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, ভালো প্রতিষ্ঠানে

ভর্তি হয়েও কিংবা দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠে পড়েও অনেকেই বিদ্যার

রাজ্যে সিদ্ধি লাভ করতে পারে না। এক্ষেত্রে ওই শিক্ষার্থীর বিদ্যা

অর্জনে অনীহা ও ঔদাসীন্যই দায়ী থাকে।

আমরা যদি পৃথিবীর জ্ঞানী-গুণী ও মহাজনদের জীবন ইতিহাসের দিকে

তাকাই, তবে দেখতে পাবো, তারা নিজস্ব চেষ্টা ও সাধনার মধ্য দিয়েই

বিদ্যা অর্জন করেছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে মহামানব হিসেবে তারা নিজের

স্থান পাকা করে নিয়েছেন। আলবার্ট আইনস্টাইন কখনোই নিজেকে ভালো

ছাত্র হিসেবে তুলে ধরতে পারেননি। নিজ সাধনা ও ঐকান্তিক চেষ্টার বলে

তিনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিত। সক্রেটিস, প্লেটো এবং

এরিস্টটল— এই গ্রিক দার্শনিকত্রয়ের জীবনের দিকে তাকালেও এই সত্য

উন্মোচিত হয়। গুরু-শিষ্য পরম্পরায় প্লেটো যেমন সক্রেটিসকে অত্রিম করে।

গেছেন, তেমনি আরিস্টটলও প্লেটোকে অতিক্রম করে গেছেন। সক্রেটিস

তো তাঁর শিষ্য প্লেটোর লেখনীর মধ্য দিয়ে আমাদের স্মৃতিতে অমর হয়ে

আছেন। ইতিহাসের দিকে তাকালে এ রকম ভূরি ভূরি দৃষ্টান্ত লক্ষ্য করা

যাবে। নিজস্ব সাধনা ও প্রচেষ্টা না থাকলে শ্রেষ্ঠ গুরুর সান্নিধ্যও কোনো

কাজে আসে না। প্রকৃত বিদ্যা অর্জন অধরাই থেকে যায়।

মন্তব্য: গুরুজন তথা শিক্ষক আমাদের জীবনে পথ প্রদর্শকের ভূমিকা

পালন করে থাকেন। শিক্ষকদের এই ঋণ স্বীকার করেই আমরা বিদ্যা

অর্জনের দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে থাকি। এক্ষেত্রে আমাদের কর্তব্য নিজস্ব

মেধাকে কাজে লাগানো ও পরিশ্রম করা নিজস্ব মেধা ও মননের চর্চার

মধ্য দিয়ে আমরা প্রকৃত বিদ্যা অর্জন করতে পারব। নচেৎ শ্রেষ্ঠ গুরুর

সান্নিধ্য অসার ও নিষ্ফল থেকে যাবে।

ভাবসম্প্রসারণ ┃জেসএসসি , এসএসসি , এইচএসসি , ডিগ্রি, অনার্স, মাস্টার্স, বিসিএস

ভোগে সুখ নাই, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ ৷

ঢো বো, 08:চবো, ০৭/

মূলভাব: দেশ ও মানবকল্যাণে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাওয়ার মধ্যে

রয়েছে ত্যাগের অনন্ত মহিমা। আর এ ত্যাগের মধ্যেই নিহিত রয়েছে প্রকৃত

সুখ। ভোগলিপ্সা মানুষকে শুধু লোভী করে তোলে, সুখী করতে পারে না।

সম্প্রসারিত ভাব: মানুষ স্বভাবতই প্রবৃত্তির দাস। প্রবৃত্তির শৃঙ্খল মোচনের

মাধ্যমেই মানুষের মুক্তি ঘটে। আর এ মুক্তির মাধ্যমেই পাওয়া যায় জীবনের

আস্বাদ। ভোগে আসক্তি জন্ম নেয়, আসক্তির দ্বারা ভোগের আকাঙ্ক্ষা বাড়ে।

মানুষ তার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়, সীমাহীন দুঃখ-দুর্দশায় পতিত

হয়ে সে যন্ত্রণাময় জীবনযাপন করে। প্রচুর ধনসম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও মনের

দিক দিয়ে সে হয় দরিদ্রের চেয়েও দরিদ্র। ভোগের বশবর্তী লোক নিজেদের

স্বার্থ চরিতার্থেই মশগুল থাকে। তার দ্বারা পৃথিবীর মানুষের জন্য কোনো

মহৎ কাজ করা সম্ভব হয় না। মৃত্যুর সাথে সাথে তার স্মৃতি মানুষের কাছে

ম্লান হয়ে যায়। অপর পক্ষে, ত্যাগের মাধ্যমে মানুষ খুব সহজেই স্বীয়

মহিমায় সমুজ্জ্বল হতে পারে। ত্যাগের মাধ্যমেই মানুষ পৃথিবীতে অমরত্ব

লাভ করে, পৃথিবীর মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসা পায়। ত্যাগেই

মানবজীবনের সার্থকতা প্রতিপন্ন হয়, মানুষ প্রকৃত সুখ লাভে সক্ষম হয়।

তাই ত্যাগই আমাদের চরিত্রের সর্বোচ্চ আদর্শ হওয়া উচিত। ত্যাগই

মহাশক্তি। কেবল ত্যাগের দ্বারাই মানবজীবন সার্থক করা সম্ভব। মানুষ যদি

অপরের কল্যাণে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে উৎসর্গ করে তাতে তার চরিত্রে

মহত্ত্বেরই প্রকাশ ঘটে। এখানেই জীবনের যথার্থ গৌরব, প্রকৃত সুখ।

মন্তব্য: জীবনের সুন্দর বিকাশের জন্যে স্বার্থত্যাগ বাঞ্ছনীয়। ভোগে

জীবনের কোনো সার্থকতা নেই, নেই ন্যূনতম সুখ পরার্থে জীবন উৎসর্গ

করার মাঝেই রয়েছে প্রকৃত সুখ।

ভাবসম্প্রসারণ ┃জেসএসসি , এসএসসি , এইচএসসি , ডিগ্রি, অনার্স, মাস্টার্স, বিসিএস

মঙ্গল করিবার শক্তিই ধন, বিলাস ধন নহে।

তো, বো, ০৯; কু. বো, ১৩, চ. বো. ১৩, ০৩: সরকারি সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম,

প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা ২২/

মূলভাব: মানুষের কল্যাণ ও মঙ্গল সাধন কর্ম-ঐশ্বর্য দ্বারা সম্ভব। যে

ঐশ্বর্য মানুষের মঙ্গল সাধনে সমর্থ তা-ই প্রকৃতপক্ষে ধন, বিলাসিতায়

ব্যয়িত অর্থ প্রকৃত ধন নয়। বরং পরোপকারে নিয়োজিত করলে তার

অর্জন ও ব্যয়ের সার্থকতা প্রমাণিত হয়।

সম্প্রসারিত ভাব: জগতের যাবতীয় মঙ্গল কাজের নেপথ্যে রয়েছে অর্থ।

অর্থ ছাড়া কোনো কাজই সম্পন্ন করা যায় না। আবার উপার্জিত অর্থ

বিলাসের বন্যায় ভাসিয়ে দিয়ে সমাজ বা জগতের যেমন কোনো কল্যাণ

সাধিত হয় না, ঠিক তেমনই বিপুল অর্থের পাহাড় শুধু ধনভাণ্ডারে জমা

রাখলেও সে অর্থ মূল্যহীন হয়ে পড়ে। কাজেই বিবেচনা করে উপার্জিত

অর্থ ব্যয় করা উচিত। সঞ্চয় বা কৃপণতা কোনোটার মাঝেই অর্থ বা

ধনসম্পদের সার্থকতা নেই। সদ্ব্যবহারের মাঝেই রয়েছে এর পূর্ণ

সার্থকতা। কৃপণতা বা বিলাসিতা দিয়ে অর্থের সদ্ব্যবহার হয় না। যে

ধনসম্পদ দিয়ে সমাজের সাধারণ মানুষের কোনো উপকার হয় না,

কিংবা যে ধন-সম্পদ দিয়ে বিলাসের বন্যায় গা ভাসিয়ে শুধু খেয়াল

চরিতার্থ করা হয়, সে ধনসম্পদ নিতান্তই মূল্যহীন। মানবকল্যাণ ও

সামাজিক মঙ্গল সাধনের উদ্দেশ্যেই ধনসম্পদ বা অর্থের জন্ম। কাজেই

মানুষ ও সমাজের কল্যাণসাধনের উদ্দেশ্যে অর্জিত অর্থই সম্পদ।

বিলাসিতা বা অপব্যয়ের উদ্দেশ্যে সঞ্চিত অর্থ প্রকৃতপক্ষে ধন হিসেবে

বিবেচ্য নয়। সমাজের চারদিকে যত দরিদ্র অসহায় মানুষ আছে তাদের

মঙ্গলার্থে অর্থ ব্যয় করা উচিত। নিজের বিলাসিতায় সকল অর্থ ব্যয়

করে দরিদ্র মানুষকে বঞ্চিত করার মাঝে কোন সার্থকতা নেই।

মন্তব্য: যে অর্থ মানুষের কল্যাণকর্মে ব্যয় হয় না, সেই অর্থের কোনো

সার্থকতা নেই। মানবকল্যাণে ব্যয় করা সম্পদই ধন। তাই অর্জিত অর্থকে

মানবকল্যাণে ব্যয় করা উচিত।

ভাবসম্প্রসারণ ┃জেসএসসি , এসএসসি , এইচএসসি , ডিগ্রি, অনার্স, মাস্টার্স, বিসিএস

যে সহে, সে রহে।

(রা. বো ০৬, ০৩: চ.বো. ১৫, ১৩. ব. বো, ০৬ ০৩, নানুপুর লায়লা কবির কলেজ,

ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম: নোয়াখালী সরকারী মহিলা কলেজ, প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা ২২/

বা সবুরে মেওয়া ফলে।

যি. বো. ১৪/

মূলভাব: জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে সহনশীলতার কোনো বিকল্প নেই।

প্রত্যেক মানুষের জীবনে জয়-পরাজয় আছে। যে মানুষ পরাজয়কে

স্বীকার করে নিয়ে পরবর্তী বিজয়ের জন্যে ব্রতী হয়, সে-ই যথার্থ বিজয়

অর্জন করতে পারে

· সম্প্রসারিত ভাব: জীবন পুষ্প শয্যা নয়। পৃথিবীতে জীবনের চলার পথ

কণ্টকাকীর্ণ। এখানে প্রতি পদেই রয়েছে বাধা-বিপত্তি ও সংঘাত। ধৈর্য ও

সহনশীলতা মানবজীবনের বৈশিষ্ট্য। ধৈর্যশীল হতে পারলেই এ সংঘাতময়

পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা লাভ করা সম্ভব, নতুবা পতন অনিবার্য। সোনা পুড়ে যেমন

খাঁটি হয়— দুঃখ, দুর্দশার আঘাতে আমাদের মনও স্বচ্ছ এবং দৃঢ় হয়।

পৃথিবীতে যারা প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে তার মূলে ছিল ধৈর্য আর সহিষ্ণুতা।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর দারিদ্র্যের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন, কিন্তু তিনি ধৈর্য

হারাননি এবং লক্ষ্যভ্রষ্ট হননি। কাজী নজরুল ইসলামের সহনশীলতার বহু

উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যায়। এ কারণেই ঈশ্বরচন্দ্র পেয়েছেন বিদ্যাসাগর

অভিধা এবং কাজী নজরুল ইসলাম পেয়েছেন বিদ্রোহী কবির অভিধা।

সহনশীলতার ঐশ্বর্যমণ্ডিত গুণেই পৃথিবীতে বিখ্যাত মনীষীগণ প্রতিষ্ঠা লাভ

করেছেন। “বিশ্বনন্দিত বৈজ্ঞানিক ডারউইন প্রাণিজগতের মধ্যে প্রত্যক্ষ

করেন যে, এই সংগ্রাময় পৃথিবীতে যোগ্যতম জীবেরাই শেষ পর্যন্ত টিকে

থাকে। মানুষের জীবনযাত্রা এক নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রামের ইতিহাস। এ পার্থিব

জীবন প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র। যারা ধৈর্যশীল তারাই প্রতিযোগিতায় বিজয়ী

এবং জীবন পথের অগ্রসেনা। জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য তারা সব

প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করে অপেক্ষায় থাকে বিজয়ের। অবশেষে

বিজয়ের মালা সে-ই অর্জন করে। অপরদিকে, যে ব্যক্তি এসব প্রতিকূলতাকে রা

সহ্য করতে পারে না তাদের পক্ষে বিজয় অর্জনও সম্ভব হয় না।

মন্তব্য: জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভের পূর্বশর্ত ধৈর্য এবং সহিষ্ণুতা। সহিষ্ণুতাই ম

মানুষকে সাফল্যের স্বর্ণচূড়ায় পৌছে দেয়। সহিষ্ণুতা ছাড়া জীবনের সোনালি

রোদ্দুর কল্পনাতীত ।

ধা

ভাবসম্প্রসারণ ┃জেসএসসি , এসএসসি , এইচএসসি , ডিগ্রি, অনার্স, মাস্টার্স, বিসিএস

যে একা সেই সামান্য, যার ঐ নাই সে তুচ্ছ।

চি. বো, ০৫/

মূলভাব: পৃথিবীতে যে ব্যক্তি একা সে নিঃসন্দেহে অসহায়। ঐক্যবদ্ধ

জীবনপ্রবাহ থেকে বিচ্ছিন্ন বলে সে শক্তিতে সামান্য এবং সামাজিকভাবে

তুচ্ছ।

সম্প্রসারিত ভাব: পৃথিবীর আদি পূর্বে মানুষ ছিল ভীষণ অসহায়। কারণ

তখন সে ছিল একা, ঐক্যবদ্ধহীন। সভ্যতার ঊষালগ্নে মানুষ উপলব্ধি

করল, ঐক্যবদ্ধ জীবন ছাড়া পৃথিবীর সমস্ত প্রতিকূলতার কাছে সে

তুচ্ছ। তাই মানুষ স্বীয় প্রয়োজনে নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য গড়ে তোলে

সমাজবদ্ধ জীবন, হয়ে ওঠে সামাজিক বলে বলীয়ান। আজকের

সমাজবদ্ধ মানুষের পৃথিবীতে যে একা, সেই অসহায়। আর যে অসহায়

তার সামর্থ্য নেই বললেই চলে। শক্তি বা সামর্থ্যের ক্ষুদ্রতার কারণে

একক মানুষ সকলের নিকট উপেক্ষিত ও অবাঞ্ছিত। যারা ঐক্যবদ্ধ

তাদের শক্তি অসীম। ঐক্যই প্রকৃত শক্তি। বিন্দু বিন্দু জলের সমন্বয়ে

সৃষ্টি হয় বিশাল জলধি, আর বিন্দু বিন্দু শক্তির সমন্বয়ে সৃষ্টি হয় অসীম

শক্তি । ঠিক এমনইভাবে অনেক ব্যক্তিসত্তা যখন একতাবদ্ধ হয়ে সমষ্টির

সৃষ্টি করে তখন তাদের সমবেত শক্তি জাতীয় জীবনে বিরাট অবদান

রাখতে সক্ষম। একতার শক্তি অসম্ভবকে সম্ভবে পরিণত করে। আমাদের

জাতীয়, সামাজিক ও পারিবারিক জীবনে একতার প্রয়োজন সর্বাধিক।

মন্তব্য: প্রবাদ আছে- ‘একতাই বল।’ মানুষ এককভাবে সামান্য আর তুচ্ছ

বলেই সভ্যতার উন্নতির বিকাশে চাই মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস। যে জাতি

দ্বিধাবিভক্ত সে জাতি দুর্বল ও নিরাপত্তাহীন। তাই ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক

উন্নয়নের জন্যে একতাবদ্ধ হওয়া অপরিহার্য।

ভাবসম্প্রসারণ ┃জেসএসসি , এসএসসি , এইচএসসি , ডিগ্রি, অনার্স, মাস্টার্স, বিসিএস

রাত যত গভীর হয়, প্রভাত তত নিকটে আসে।

ক. বো. ১০: সি. বো. ১৯, ১১: ব বো, ১২; আযম খান সরকারি কমার্স কলেজ, খুলনা:

মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, ঢাকা,

চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ, প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা ২২/

মূলভাব: সুখ ও দুঃখ মানবজীবনে পালা করে আসে। রাতের গভীরতা

যেমন প্রভাতের বার্তাবাহী তেমনই গভীর ও দীর্ঘ দুঃখও ভবিষ্যৎ সুখের

বার্তা নিয়ে আসে মানুষের জীবনে।

সম্প্রসারিত ভাব: মানুষকে নিরন্তর সংগ্রাম করতে হয় জীবনে। অস্তিত্বের

লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েই তাকে এ সংগ্রামে লিপ্ত হতে হয়। জীবন চলার পথে

মানুষের জীবনে আসে পদে পদে বাধা। এ বাধা-বিঘ্নকে অতিক্রম করে

মানুষকে পথ চলতে হয়। দুঃখ মানবজীবনের এক অনিবার্য নিয়তি। দুঃখকে

জয় করেই মানবজীবনের অভিযাত্রা। একই ধারায় জীবন প্রবাহিত হবে

এমনটি প্রত্যাশা করা কোনোভাবেই ঠিক নয়। জীবন কুসুমাস্তীর্ণ নয়।

জীবনপথের সকল কাঁটা নিজ হাতে উপড়ে ফেলে সাফল্যের দিকে,

অগ্রগতির দিকে মানুষকে এগিয়ে যেতে হয়। তবে একথাও সত্য যে, রাতের

পর যেমন আসে উজ্জ্বল সোনালি প্রভাত তেমনই দুঃখের পরও আসে সুখ।

কারো জীবনই শুধু দুঃখ দিয়ে গড়া নয়। আবার কারো জীবনেই নিরন্তর সুখ

থাকে না। সুখ ও দুঃখের পালাবদল ঘটে। প্রতিবন্ধকতা ডিঙিয়ে এগিয়ে

যাওয়ার সাহস যার নেই, জীবনযুদ্ধে সে পরাজিত হয়। প্রতিকূল

পরিস্থিতিতে যোগ্যতা, সহিঞ্চুতা, ধৈর্য ও মনোবল দিয়ে পরিস্থিতির

মোকাবিলা করাই শ্রেয়। কোনোভাবেই হতোদ্যম হলে চলবে না। জীবনের

জন্য চাই বলিষ্ঠ উদ্যম। উজ্জীবিত মানুষই জীবনে সফল হতে পারে। রাত

‘যত গভীর হয়, প্রভাত তত নিকটে আসে – সত্যটি মনে রেখে মানুষকে

প্রয়োজনে দুঃখের নদীতে ঝাঁপ দিতে হয়। দুঃখকে জয় করেই সুখকে লাভ

করতে হয়। বিপদে দিশেহারা হলে চলে না। ঠাণ্ডা মাথায় বিপদকে

মোকাবিলা করে নিজের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হয়। বিশ্বাস

রাখতে হয় যে, দুঃখের তিমির রাত্রি পেরিয়ে সুখ ও আনন্দময় উজ্জ্বল দিন

একদিন আসবেই।

মন্তব্য: সুখ-দুঃখ নিয়েই মানুষের জীবন। দুঃখকে জয় করেই সুখ লাভ

সম্ভব হয়। তাই জীবনে দুঃখ-কষ্ট নেমে আসলে হতাশ না হয়ে, ধৈর্য

ধারণ করতে হবে এবং সুখের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

ভাবসম্প্রসারণ ┃জেসএসসি , এসএসসি , এইচএসসি , ডিগ্রি, অনার্স, মাস্টার্স, বিসিএস

শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড।

বা শিক্ষাই জাতির উন্নতির পূর্বশর্ত।

যি. বো, ০৩/

মূলভাব: জাতীয় জীবনে অগ্রগতির মূল চালিকাশক্তি শিক্ষা। শিক্ষা ছাড়া

কোনো জাতি জ্ঞানবিজ্ঞানে উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করতে পারে

না। শিক্ষার প্রভাবেই মানুষ কুসংস্কার, জড়তা ও হীনতা থেকে মুক্ত হয়ে

জাতিকে শক্তিশালী ও সুসংগঠিত করতে পারে।

সম্প্রসারিত ভাব: মেরুদণ্ডহীন মানুষ জড় পদার্থের মতো স্থবির, অচল

জীবনূতের মতো সে এ সংসারে জীবনযাপন করে থাকে। তার দ্বারা

সমাজ তথা দেশের কোনো মঙ্গল আশা করা অসম্ভব ব্যাপার

জীবনসংগ্রামে পরাজিত হয়ে সে বরং সমাজ ও রাষ্ট্রের বোঝায় পরিণত

হয়। তাই মানুষকে সচল ও দণ্ডায়মান রাখতে যেমন মেরুদণ্ড প্রয়োজন,

তেমনই কোনো জাতির অস্তিত্ব রক্ষার্থে মেরুদণ্ডসম শিক্ষার গুরুত্বও

অপরিসীম। সাম্প্রতিক বিশ্বে যে জাতি যত শিক্ষিত, সে জাতি পৃথিবীকে

করেছে তত প্রভাবিত। শিক্ষা ও জ্ঞানবিজ্ঞানের সাধনা ছাড়া কোনো জাতি

বড় হতে পারে না। শিক্ষা-দীক্ষাহীন জাতি পক্ষাঘাতগ্রস্ত মানুষের ন্যায়

অচল। তাই শিক্ষাকে মেরুদণ্ডের সাথে তুলনা করা হয়েছে। মেরুদণ্ডহীন

মানুষ যেমন জগৎ-সংসারে অথর্ব, মূল্যহীন তেমনই শিক্ষাহীন জাতি অচল,

অসার। প্রায় এক যুগ আগে ফিলিপাইনের মিন্দানাও দ্বীপে প্রাগৈতিহাসিক

একটি জনগোষ্ঠীর সন্ধান পাওয়া গেছে। তাদের শিক্ষা বা সংস্কৃতি বলে

কিছু নেই। ফলে তারা প্রকৃতির খেয়ালের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় প্রায়

বিলুপ্ত হতে যাচ্ছিল। পরবর্তী সময়ে তারা শিক্ষিত মানবসমাজের সংস্পর্শ

পেয়ে অনিবার্য ধ্বংস থেকে আত্মরক্ষা করার সুযোগ লাভ করেছে। শিক্ষার

প্রভাবেই মানুষ নানা কুসংস্কার ও সংকীর্ণতার বেড়াজাল ডিঙিয়ে জাতিকে

নিয়ে যেতে পারে উন্নতির চরম শিখরে। তাই শিক্ষাকে জাতির

মেরুদণ্ডরূপে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

মন্তব্য: শিক্ষাই জাতির আত্মপরিচয়ের বাহন। জাতিকে বিশ্বদরবারে উন্নত

মর্যাদাশীল হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে শিক্ষার বিকল্প নেই।

ভাবসম্প্রসারণ ┃জেসএসসি , এসএসসি , এইচএসসি , ডিগ্রি, অনার্স, মাস্টার্স, বিসিএস

স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন।

ঢিা. বো. ১১ রা. বো. ১৫, ১৪, ১২,০৫: দি বো, ০৯, চ. বো. ১০, ০৮: সি. বো

১৩,০৭,০৫, য, বো. ১২: ব. বো. ১৭, ০৭: কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ময়মনসিংহ

সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজ, রংপুর সরকারি ব্রজমোহন কলেজ, বরিশাল,

প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা 22/

বা স্বাধীনতা অর্জন করা কঠিন, স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিনতর।

মূলভাব: পরাধীন জাতির পক্ষে স্বাধীনতা অর্জন অত্যন্ত কঠিন কাজ।

স্বাধীনতা অর্জিত হলেই তা চিরস্থায়ী হয় না। অর্জিত স্বাধীনতাকে রক্ষা

করা আরো কঠিন কাজ। তাই স্বাধীনতা রক্ষায় জাতিকে থাকতে হবে

সদাজাগ্রত।

সম্প্রসারিত ভাব: স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার। আর মানুষ মাত্রই

স্বাধীনতাপ্রিয়। তার জীবনের প্রধান আকাঙ্ক্ষা স্বাধীনতা। স্বাধীনতা কথাটি

যতই মধুর হোক না কেন এটা অর্জন করা বড়ই কঠিন। এটাকে পাওয়ার

জন্যেই মানুষ যুগ যুগ ধরে সংগ্রাম করে আসছে। নিপীড়িত, অত্যাচারিত

জাতি স্বীয় মর্যাদাকে অক্ষুণ্ণ রাখার জন্যে সংগ্রামের মাধ্যমে মুক্তিলাভ করে

থাকে। কিন্তু এ মুক্তি অর্জনই মুখ্য উদ্দেশ্য নয়। একে সমুন্নত রাখাই মুখ্য

উদ্দেশ্য। স্বাধীনতা অর্জনের পর দেশের পুনর্গঠন, উন্নয়ন ও বহিঃশত্রুর

হাত থেকে একে রক্ষা করার জন্যে সদাপ্রস্তুত থাকা একান্ত প্রয়োজন।

স্বাধীনতা লাভের পর পরাধীনের মতো জীবনযাপন না করে বলিষ্ঠ ও

আত্মপ্রত্যয়ী জাতি হিসেবে স্বাধীনতাকে অম্লান রাখতে সচেষ্ট হতে হবে।

তবেই অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষা করা সম্ভব। অপরপক্ষে, স্বাধীনতা লাভ

করেই কোনো জাতি যদি আত্মতুষ্টি অনুভব করতে শুরু করে, জাতি গঠনে

সর্বস্ব নিয়োগ না করে স্বার্থপরতায় মগ্ন থাকে, অভ্যন্তরীণ ও বহিঃশত্রুর

ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সচেতন না থাকে তবে অর্জিত ঈপ্সিত স্বাধীনতা ভূলুণ্ঠিত

হয়ে পড়বে। তাই স্বাধীনতা পরবর্তী মানুষের যাবতীয় কার্যকলাপের মূল | দে

উদ্দেশ্য হওয়া উচিত স্বাধীনতাপূর্ণ গৌরবোজ্জ্বল জীবনের বিকাশ, অর্জিত

স্বাধীনতা সুরক্ষা করেই তা করতে হবে।

মন্তব্য: একটি জাতিকে কঠিন ত্যাগ, কঠোর পরিশ্রম, অবিচল সাধনার

মাধ্যমে স্বাধীনতার সূর্যকে অর্জন করতে হয়। তাই স্বাধীনতার ব্যাপকতা

ও গুরুত্ব উপলব্ধি করে একে রক্ষা করা সকলের জাতীয় কর্তব্য।

ভাবসম্প্রসারণ ┃জেসএসসি , এসএসসি , এইচএসসি , ডিগ্রি, অনার্স, মাস্টার্স, বিসিএস

সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত।

দিবো. ১৭:চ বো. ১৭, ১১, য, বো. ১৬, ১৩, ১১, ব বো, ১৬, ১৫: পুলিশ লাইন্স

স্কুল এন্ড কলেজ, রংপুর, ঢাকা সিটি কলেজ আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, ঢাকা;

সরকারি কমার্স কলেজ, চট্টগ্রাম, অধ্যাপক আবদুল মজিদ কলেজ, কুমিল্লা।

মূলভাব: শিক্ষক শিক্ষার্থীকে শিক্ষার দিকনির্দেশনা দেন। সেই দিকনির্দেশনা

গ্রহণ করে শিক্ষার্থীর সফল হয়ে ওঠাই হলো সুশিক্ষিত হয়ে ওঠার নামান্তর।

তবে প্রতিটি সুশিক্ষিত মানুষই স্বশিক্ষিত।

সম্প্রসারিত ভাব: জন্মের পর থেকেই মানুষ তার পরিবার, পরিবেশ,

আত্মীয়-পরিজন থেকে শিক্ষাগ্রহণ শুরু করে এবং একটা পর্যায়ে

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগ্রহণ করে সনদপত্র লাভ করে। কিন্তু এ স্বীকৃতি কিংবা

পরীক্ষায় পাস করাই প্রকৃত শিক্ষা নয়। প্রকৃত শিক্ষা কেউ কাউকে দিতে

পারে না। উন্নত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়া কিংবা ভালো ফলাফল করলেই

প্রকৃত শিক্ষিত হওয়া যায় না। এসব অনেক সময় শিক্ষার্থীর প্রকৃত শিক্ষার,

সীমাবদ্ধতাকে আড়াল করে শিক্ষার্থীর কৃতিত্ব প্রদর্শন সম্ভব করে তুললেও

এটাকে সুশিক্ষা বলা যায় না। স্ব-অর্জিত শিক্ষাই মানুষকে সুশিক্ষিত করে

তোলে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জ্ঞানচর্চা এবং জ্ঞান আহরণের পথকে অনেক

সময় সুগম করে তুললেও জ্ঞানের পূর্ণতা আসে না। নিজ চেষ্টায় যে তার

বুদ্ধিবৃত্তিকে পরিচালিত করে অসাধারণ পর্যায়ে নিয়ে যায়, তার মধ্যে

মৌলিকতার উন্মেষ ঘটে। এজন্যে দরকার একাগ্রতা ও প্রচুর পরিশ্রম।

এর ফলেই জ্ঞানের গভীরতম প্রদেশে প্রবেশ করা সম্ভব। স্বীয় চেষ্টা দ্বারাই

মানুষ তার বুদ্ধিবৃত্তিকে পরিচালিত করে, স্বকীয়তা ও মৌলিকতার উন্মেষ

ঘটিয়ে শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তরে সে বিচরণ করতে পারে। এভাবে মানুষ হয়ে

ওঠে সুশিক্ষিত। যোগ্যতার দ্বারাই সে প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করে। তাই দেখা

যায়, প্রকৃত শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা মুখ্য নয়।

কেননা পৃথিবীতে অনেক সুশিক্ষিত ব্যক্তি আছেন যারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার

গণ্ডি অতিক্রম করেননি। শিক্ষার মাধ্যমে আত্মার বিকাশ ঘটে। আর এ

শিক্ষা অর্জনের জন্যে চাই সাধনা ।

মন্তব্য: সুশিক্ষিত ব্যক্তি তিনিই যাঁর মন কুসংস্কারমুক্ত ও মুক্তবুদ্ধির

আলোকে উদ্ভাসিত। যিনি পরিশীলিত রুচিবোধে নম্র ও উদার তাঁকেই

সুশিক্ষিত বলা চলে। এ সুশিক্ষা তাঁর স্বীয় সাধনা দ্বারা অর্জিত। এ শ্রেণির

মানুষই আলোকিত মানুষ।

ভাবসম্প্রসারণ ┃জেসএসসি , এসএসসি , এইচএসসি , ডিগ্রি, অনার্স, মাস্টার্স, বিসিএস

স্পষ্টভাষী শত্রু নির্বাক মিত্র অপেক্ষা ভালো।

(দি, বো. ১৪; রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, ঢাকা: নওগাঁ সরকারি কলেজ।

মূলভাব: স্পষ্টভাষী শত্রু প্রতিপক্ষের দোষত্রুটি উন্মোচন করে প্রতিপক্ষকে

শোধরানোর সুযোগ করে দেয়। অন্যদিকে, নির্বাক মিত্র বন্ধুর ভুল না

ধরিয়ে দিয়ে তার জীবনের পতনকে পরোক্ষভাবে সহায়তা করে। নির্বাক

মিত্র সুবিধাভোগী চরিত্রের হয় বলে বন্ধুর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা

থেকে যায়। অন্যদিকে, স্পষ্টভাষী শত্রুর দ্বারা প্রতিপক্ষ উপকৃত হয়

চূড়ান্ত বিচারে।

সম্প্রসারিত ভাব: মানুষের জীবন চলার পথে নির্ভরযোগ্য বন্ধুর প্রয়োজন ।

জীবনে চলার পথে না চাইলেও মানুষের শত্রু সৃষ্টি হয়। বন্ধু এবং শত্রুর

বৃত্তের ভেতরেই মানুষকে তার জীবন পরিচালিত করতে হয়। তবে কে যে

আসল বন্ধু, কে যে শত্রু সে সম্পর্কে নিঃসন্দেহ করে মানুষকে পথ চলতে

হয়। শত্রু-মিত্র সম্পর্কে মূল্যায়ন যদি সঠিক না হয় তাহলে মানুষকে

ভোগান্তিতে পড়তে হয়। সাধারণ বিচারে মানুষের কাছে শত্রু কাম্য নয়

বরং বন্ধু পরম আকাঙ্ক্ষার ধন। কিন্তু শত্রু যদি স্পষ্টভাষী হয় তাহলে

দেখা যায়, সে শত্রু নির্বাক বন্ধুর চেয়ে ভালো। কেননা নির্বাক বন্ধু

মানুষের দোষত্রুটি সম্পর্কে মন্তব্য না করে, বন্ধুর হ্যাঁতে হ্যাঁ মিলিয়ে সে

মূলত সুবিধাভোগী চরিত্রের ভূমিকা পালন করে প্রকৃতপক্ষে মানুষকে

বিভ্রান্তির মধ্যেই রাখে । অন্যদিকে, স্পষ্টভাষী শত্রু মানুষের দোষত্রুটিগুলো

তুলে ধরে প্রকৃতপক্ষে তাঁর উপকার করে। স্পষ্টভাষী শত্রুর এ ধরনের

ভূমিকার কারণে মানুষ নিজেকে শুধরিয়ে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার

সুযোগ লাভ করতে পারে।

মন্তব্য: জীবনের প্রয়োজনে উপকারে না এলে কোনো সম্পর্কেরই যথার্থ

মূল্যায়ন হয় না। স্পষ্টভাষী শত্রুর দ্বারা মানুষের উপকার হয় বলে এ কথা

নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, স্পষ্টভাষী শত্রু নির্বাক মিত্র অপেক্ষা ভালো।

ভাবসম্প্রসারণ ┃জেসএসসি , এসএসসি , এইচএসসি , ডিগ্রি, অনার্স, মাস্টার্স, বিসিএস

সাহিত্য জাতির দর্পণস্বরূপ।

ঢৈা. বো, ১৬ং সি.বো, ১৬ জয়পুরহাট সরকারি মহিলা কলেজ, প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা 22/

মূলভাব: সাহিত্যের মাধ্যমে একটি জাতির সামগ্রিক পরিচয় বিধৃত হয়।

তাই কোনো জাতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করতে হলে, সে জাতির

সাহিত্য পাঠ অত্যাবশ্যক।

সম্প্রসারিত ভাব: একটি জাতির চিন্তাচেতনা-ধ্যানধারণা সাহিত্যের মধ্যে

বিধৃত হয়। কবি, সাহিত্যিকরা প্রতিনিধি হিসেবে জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা

তাঁদের লেখনীর মাধ্যমে বহিঃপ্রকাশ করে থাকেন। তাঁরা চারপাশের

জীবনাচরণকে তাঁদের লেখার প্রধান উপজীব্য হিসেবে গ্রহণ করায় সাহিত্য

আয়নার কাজ করে। আর তাতে জাতির সঠিক প্রতিবিম্ব দেখা যায়।

সাহিত্যের প্রথম ও প্রধান উদ্দেশ্য সমাজের বৃহত্তর কল্যাণ ও গণমানুষের

উন্নতি সাধন করা। জাতীয় ঐতিহ্য সাহিত্যের প্রধান উপকরণ হিসেবে

বিবেচিত হয়। জাতির সমৃদ্ধির মূল্যায়ন সাহিত্যের সমৃদ্ধির ওপর

অনেকাংশে নির্ভরশীল। কেননা প্রত্যেক জাতির সাহিত্য পাঠ করে সে

জাতির রীতি-নীতি আচার-অনুষ্ঠান প্রভৃতি সম্পর্কে ভালোভাবে জানা যায়।

সাহিত্য কেবলই কোনো জাতির পরিচায়ক নয় বরং এর মাধ্যমে মানুষের

মন কুসংস্কারমুক্ত হয়ে সৌন্দর্যবোধে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। জাতীয় জীবনে

এত বেশি অবদানের জন্যই সাহিত্যকে আয়নার সাথে তুলনা করা হয়েছে।

কালের গর্ভে কোনো জাতি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে, তার চিহ্ন নিশ্চিহ্ন হয়ে

যেতে পারে। কিন্তু তার সাহিত্য থাকে চির অম্লান। কালের ধুলোয় সাহিত্য

মলিন হয়ে যায় না বরং জাতির কার্যমহিমা ও ইতিহাস যুগে যুগে আমাদের

সামনে মূর্ত করে তোলে।

মন্তব্য: সাহিত্যে জাতীয় চিন্তাধারা ও বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়। মানুষের

ভেতরের সৌন্দর্যকে প্রকাশ ও সুস্থ চিন্তার উন্মেষ ঘটানোই সাহিত্যের

উদ্দেশ্য। তাই সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে যত্নশীল হওয়া আবশ্যক। এ কারণেই

সাহিত্য হচ্ছে জাতির মননের আয়না।

ভাবসম্প্রসারণ ┃জেসএসসি , এসএসসি , এইচএসসি , ডিগ্রি, অনার্স, মাস্টার্স, বিসিএস

হাস্যমুখে অদৃষ্টেরে করব মোরা পরিহাস।

ক. বো, ০৪/

মূলভাব: মানুষের নিরন্তর পরিশ্রম করার মানসিকতা ও জানার আগ্রহ

মানুষকে সভ্যতার অগ্রযাত্রায় এগিয়ে দিয়েছে। সে এখন আর অদৃষ্টের

হাতে সমর্পিত নয়। মানুষ নিজেই নিজের ভাগ্যনিয়ন্তা।

সম্প্রসারিত ভাব: একটা সময় ছিল মানুষ অদৃষ্টের ওপর পুরোপুরি নির্ভর

করত। সে বিশ্বাস করত পূর্বজন্মের কর্মফলই এ জন্মের কর্মের নিয়ন্ত্রক ও

নিয়ামক। কিন্তু এ বিশ্বাস এখন নেই। মানুষের নিরন্তর প্রচেষ্টায় বিজ্ঞান

খুলে দিয়েছে অতীতের অনেক অজানা রহস্যের দ্বার। মানুষ চাঁদে গেছে,

আবিষ্কার করেছে গ্রহ, তারা, নক্ষত্রপুঞ্জ। জেনে গেছে এঁদের প্রকৃত

রহস্য। আয়ত্ত করেছে অজানা শক্তিকে। প্রকৃতির সাথে খাপ খাইয়ে

নিয়েছে নিজেকে। একথা সত্য, যে বিষয়গুলোর রহস্য আবিষ্কার সম্ভব

হয়নি সেগুলোর ক্ষেত্রে অদৃষ্ট কথাটি থেকে যাচ্ছে। তবে হাজার হাজার

বছরের দীর্ঘ ইতিহাস পরিক্রমায় সময় ও সভ্যতার অনেক অগ্রগতি

হয়েছে। আজকের দিনে মানুষ আর ভাগ্যের লিখন বা কপালের দোহাই

দিয়ে বসে থাকতে রাজি নয়। জানার দুর্বার আকাঙ্ক্ষা আর নিরন্তর প্রচেষ্টা

অনেক অজানা রহস্যকে মানুষের দৃষ্টিসীমার আয়ত্তে এনে দিচ্ছে। নিয়তি

নির্ভরতা মানুষকে অকর্মণ্য ও অলস করে তোলে। অসম্ভব কাজকে

নিয়তির খেলা আখ্যা দিয়ে বর্জনের কোনো সুযোগ নেই। বরং আপন

অভিজ্ঞতা দিয়ে মানুষ উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছে যে, কর্ম দ্বারা সকল

অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়। তার অসাধ্য কিছুই নেই। অদৃষ্টকে অলীক

প্রমাণিত করে কর্মের মন্ত্র দিয়েই সে জগৎ জয় করেছে। এতে সে হয়েছে

ব্যর্থ কিংবা সফল। কিন্তু ব্যর্থতার গ্লানিও তাকে থামিয়ে দেয়নি বরং তা

থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে সে হয়ে উঠেছে আরো বেশি অধ্যবসায়ী ।

মন্তব্য: আত্মবিশ্বাসী মানুষ অদৃষ্টের কাছে নিজেকে সমর্পণ করে না বরং

জানার নিরন্তর প্রচেষ্টায় অদৃষ্টকে পরিহাস করে সংগ্রামী হয়ে ওঠে। অদৃষ্টের

প্রতি আস্থাশীলতা মানুষের জীবনের স্বাভাবিক গতিকে ব্যাহত করে।

ভাবসম্প্রসারণ ┃জেসএসসি , এসএসসি , এইচএসসি , ডিগ্রি, অনার্স, মাস্টার্স, বিসিএস

জ্ঞানশক্তি অর্জনই শিক্ষার উদ্দেশ্য।

ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, জাহানাবাদ সেনানিবাস, খুলনা, প্রস্তুতিমূলক

পরীক্ষা ২২/

মূলভাব: শিক্ষার উদ্দেশ্য কেবল পার্থিব ভোগ-লালসা চরিতার্থ করা কিংবা

চাকরি পাওয়া নয়। জ্ঞানার্জনের ভেতর দিয়ে মানুষের মধ্যে যে শক্তি

অর্জিত হয় সে শক্তি অর্জনই শিক্ষার উদ্দেশ্য।

সম্প্রসারিত ভাব: জ্ঞানশক্তি অর্জনই মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। এ

জ্ঞানশক্তি একজন মানুষকে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলে, তাকে বাঁচার

মতো বাঁচতে শেখায়। এ শক্তি অর্জনের মধ্য দিয়ে মানুষ তার নিজের,

পরিবারের, সমাজের, রাষ্ট্রের উন্নতি করতে পারে। জ্ঞানশক্তি অর্জনের

মাধ্যমে মানুষের জীবন অর্থবহ হয়ে ওঠে। মানব ও মানবজীবন সম্পর্কিত

যাবতীয় কর্মকাণ্ডে মহৎ গুণাবলি, শক্তি সঞ্চারিত হয়। জ্ঞান ছাড়া জীবনে

চলার পথ খুঁজে পাওয়া যায় না। জ্ঞানই জীবনে আলো ছড়ায়। আমরা যদি

আলোকিত জীবনের সন্ধান পেতে চাই তাহলে আমাদের জ্ঞানের কাছে

বারবার ফিরে আসতে হবে। তা না হলে জীবনে দুর্ভাগ্য এবং দুর্ভোগ নেমে

আসতে বাধ্য। জ্ঞানই হচ্ছে মানুষের জীবনের পরশপাথর। পরশপাথরের

মতো স্পর্শ দিয়ে জীবনকে ফুলে-ফলে বিকশিত করে তোলে জ্ঞানশক্তি।

জ্ঞান তার সমস্ত শক্তি দিয়ে জীবনের প্রতিকূলতাকে জয় করতে এবং

আত্মাকে বিনির্মাণ করতে সহায়তা করে। জ্ঞানই আত্মিক, জাগতিক সকল

কিছুর সফল বিকাশ ঘটায়। এ জ্ঞানশক্তিই মানুষকে আত্মশক্তিতে বলীয়ান

করে শিক্ষার উদ্দেশ্যকে সফল বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় মানুষের জানা, বোঝা,

শেখার কৌশলের সাথে সমন্বয় সাধন করে। আমাদের জীবনকে সৃষ্টি সুখের

উল্লাসে উল্লসিত করার ক্ষেত্রে জ্ঞানশক্তির কোনো বিকল্প নেই। জ্ঞানী ব্যক্তি

জ্ঞানার্জনের মধ্য দিয়ে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে শিক্ষার উদ্দেশ্যকে সুস্থ,

সুন্দর ও সফল খাতে প্রবাহিত করে। এজন্যই ‘শিখা’ পত্রিকার আদর্শবাণী

ছিল ‘জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।

জ্ঞানের নিরলস সাধনা জীবনকে উন্নত করে, শিক্ষার উদ্দেশ্যকে

সাফল্যমণ্ডিত করে তোলে।

মন্তব্য: শিক্ষার উদ্দেশ্যই হলো জ্ঞানশক্তি অর্জন। শিক্ষা ছাড়া জ্ঞানের কথা

ভাবাই যায় না। জীবনের বহুমাত্রিক প্রায়োগিক উপযোগিতা শিক্ষাকে

কেন্দ্র করেই জ্ঞানের মাধ্যমে বিকশিত হয়।

ভাবসম্প্রসারণ ┃জেসএসসি , এসএসসি , এইচএসসি , ডিগ্রি, অনার্স, মাস্টার্স, বিসিএস ছাড়াও আরো জানুন

You cannot copy content of this page