সুভা গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তর

সুভা গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তর এর বিস্তারিত নিচে দেওয়া হল যা তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য সহায়ক হবে। তাই এই আর্টিকেলটি অনুসরণ করো এবং অনুশীলন অব্যাহত রাখো। তোমাদের জন্য শুভকামনা।

প্রশ্ন ১। প্রকৃতি সুভার কিসের অভাব পূরণ করে দেয়?
উত্তর : প্রকৃতি সুভার ‘ভাষার অভাব পূরণ করে দেয়।

প্রশ্ন ২। সুভা জলকুমারী হলে কী করত? 
উত্তর : সুভা জলকুমারী হলে আস্তে আস্তে জল থেকে উঠে একটা সাপের মাথার মণি ঘাটে রেখে যেত।

প্রশ্ন ৩। ‘সুভা’ গল্পের গাভী দুটির নাম কী? 
উত্তর : ‘সুভা’ গল্পের গাভী দুটির নাম ‘সর্বশী’ ও ‘পাঙ্গুলি’।

প্রশ্ন ৪। “তাহার মর্ম তাহারা ভাষার অপেক্ষা সহজে বুঝিত”কথাটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর : “তাহার মর্ম তাহারা ভাষার অপেক্ষা সহজে বুঝিত”কথাটি দ্বারা সুভার পশুপ্রেম বোঝানো হয়েছে। 
সুভার অন্তরঙ্গ বন্ধুর দলের মাঝে দুটি গাভীও ছিল। তাদের নাম সর্বশী ও পাঙ্গুলি। সুভা কথা বলতে পারত না বলে কখনো তাদেরকে নাম ধরে ডাকতে পারেনি। সভার কথা শুনতে না পেলেও তারা সুভার পায়ের আওয়াজ চিনতে পারত। তার কথাহীনতার মধ্যেই একটা করুণ সুর ছিল। আর এই করুণ সুরের মর্ম তারা খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারত। তাই বলা যায়, প্রশ্নোত্ত উক্তিটি সুভার পশুপ্রেমের প্রসঙ্গেই করা হয়েছে। 

প্রশ্ন ৫। প্রতাপ সুভার মর্যাদা বুঝত কেন? ব্যাখ্যা কর। 
উত্তর : মাছ ধরার সময় বাক্যহীন সঙ্গীই সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠএজন্যই প্রতাপ সুভার মর্যাদা বুঝত। 

‘সুভা’ গল্পে প্রতাপ নিতান্ত অকর্মণ্য ছেলে। তার বাবা-মায়ের পক্ষে অনেক চেষ্টা করেও তাকে দিয়ে সংসারের কোনো কাজ করানো সম্ভব হয়নি। মা-বাবা প্রতাপকে নিয়ে সব প্রত্যাশা বাদ দিয়েছিল। প্রতাপ অবহেলায় সময় কাটানোর জন্য অপরাহে নদীতীরে ছিপ ফেলে মাছ ধরত। বড়শি দিয়ে মাছ ধরার সময় নীরব পরিবেশের প্রয়োজন। নইলে মনোযোগে বিঘ্ন ঘটে। এজন্য প্রতাপ চুপচাপ থাকে এমন কাউকে সঙ্গী হিসেবে পছন্দ করত। তাছাড়া মাছ, ধরার সময় একজন নীরব সঙ্গী থাকলে তার সময়টা ভালো কাটত। তাই বাক্যহীন সঙ্গী সুভার মর্যাদা সে বুঝত। 

প্রশ্ন ৬। “সে ভাষাবিশিষ্ট জীব”— কার সম্পর্কে কোন প্রসঙ্গে বলা হয়েছে?
উত্তর : ‘সে ভাষাবিশিষ্ট জীব’— কথাটি সুভার সঙ্গী প্রতাপ সম্পর্কে বলা হয়েছে। সুভার গুটিকয়েক সঙ্গীর মধ্যে প্রতাপই একমাত্র কথা বলতে পারে, সেই প্রসঙ্গে লেখক প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছেন। সুভা কথা বলতে পারে না। পরিবার ও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে সে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেয়। বাড়ির দুটি গাভী, বিড়াল, গাছপালা ও নদীর সঙ্গে সে গড়ে তোলে। এরাও সুভার মতো ভাষাহীন । এই ভাষাহীনদের বাইরে সুভার আরেকজন সঙ্গী আছে। লেখকের মতে সে উন্নত শ্রেণির জীব, সে ভাষাবিশিষ্ট প্রাণী। তার নাম প্রতাপ, গোঁসাইদের ছোট ছেলে। তার পরিচয় দিতে গিয়েই লেখক প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছেন। 

প্রশ্ন ৭। সুভার কালো চোখকে তর্জমা করতে হয় না কেন? 
উত্তর : সুভার মনের ভাব তার চোখে ফুটে ওঠে, তাই তার কালো চোখকে তর্জমা করতে হয় না। 

আমরা কথার মধ্য দিয়ে যে ভাব প্রকাশ করি তা আমাদের নিজের চেষ্টায় গড়ে নিতে হয়। ঠিক কোনোকিছু তর্জমা করার মতো, যা সবসময় ঠিক হয় না। সুভার বড় বড় কালো চোখের যে ভাষা, যে উজ্জ্বলতা তাতে অবর্ণনীয় ভাবের প্রকাশ রয়েছে। যার দিকে তাকালে আর কোনো তর্জমা করার দরকার হয় না। তার চোখ দুটোই কথা বলে। সুভার মনের ভাব তার চোখের উপরে কখনো উজ্জ্বল হয়ে জ্বলে উঠত, আবার কখনো স্নানভাবে নিভে আসত। কখনো চঞ্চল বিদ্যুতের মতো, আবার কখনো ডুবে যাওয়া চাঁদের মতো হয়ে তার মনের ভাব প্রকাশ করত। সুভার মুখের ভাষা না থাকলেও দৃষ্টির গভীরতা স্পর্শ করা যায়। তাই সুভার কালো চোখকে তর্জমা করতে হয় না।

প্রশ্ন ৮। “দস্তুরমতো অনুসন্ধান ও অর্থব্যয়ে বড়ো দুটি মেয়ের বিবাহ হইয়া গেছে”- এখানে ‘অর্থব্যয়’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? উত্তর : “দস্তুরমতো অনুসন্ধান ও অর্থব্যয়ে বড়ো দুটি মেয়ের বিবাহ হইয়া গেছে”- এখানে ‘অর্থব্যয়’ বলতে পণের টাকার পরিমাণকে বোঝানো হয়েছে। 

সেকালে হিন্দু সমাজে পণপ্রথা প্রচলিত ছিল। কন্যাকে পাত্রস্থ করতে হলে পণ দিতে হতো। এ পণের অঙ্ক সামাজিক অবস্থানের ওপর নির্ভর করত। সামাজিক অবস্থানের তারতম্যে কন্যাপক্ষের সঙ্গে বরপক্ষের দূরত্ব যত বেশি হতো, পণের পরিমাণ তত বেশি হতো। আর দূরত্ব যত কম হতো, পণের অঙ্কও তত কম হতো। এ ছাড়া বর আর কনের সৌন্দর্য বিচারের ওপরও বিষয়টি নির্ভর করত। কনে যদি বেঁটে বা খাটো হতো, তবে পণ বেশি দিতে হতো। আর মেয়ে বরের তুলনায় সুন্দরী হলে পণের পরিমাণ কম হলেও চলত। আলোচ্য লাইনে ‘অর্থব্যয়’ দ্বারা এই বিষয়টিই বোঝানো হয়েছে। 

প্রশ্ন ৯। “তখন কে জানিত সে বোবা হইবে”- ব্যাখ্যা কর। উত্তর : সুভার বোবা হওয়া সম্পর্কে এ কথা বলা হয়েছে। 

‘সুভা’ গল্পের সুভা একটি বোবা মেয়ে। তিন বোনের মধ্যে সে ছোট। তার বড় দুই বোন সুকেশিনী ও সুহাসিনী কথা বলতে পারে। তাই দুই বোনের নামের সাথে মিল রেখে তার নাম রাখা হয় সুভাষিণী। সুভাষিণী অর্থ ‘যার কথা সুন্দর’। সুভাষিণীর যখন জন্ম হয় তখন কেউ জানত না যে সে কথা বলতে পারবে না। আর যে কথা বলতে পারে না, তার নাম সুভাষিণী এই বিষয়টি অনেকটা দুঃখজনক। তাই এখানে লেখক মেয়েটির প্রতিবন্ধিতার সাথে তার নামের বৈপরীত্য প্রকাশ করতে এমন কথা বলেছেন। 

প্রশ্ন ১০। সুভা কেন বাবা-মায়ের হৃদয়ভারের কারণ হয়েছিল?
উত্তর : সুভা বোবা হওয়ার কারণে বাবা-মায়ের হৃদয়ভারের কারণ হয়েছিল । সুভার বড় দুই বোন সুস্থ ও স্বাভাবিক। তাই তাদেরকে বিয়ে দিতে তার বাবা-মাকে কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। অনেক টাকাপয়সা খরচ করে এবং ধুমধাম করে তিনি তাদের বিয়ে দেন। আর সুভা বোবা হওয়ার কারণে তার বাবা দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। কারণ বোবা মেয়েকে বিয়ে দেওয়াটা অন্য দুই মেয়ের বিয়ে দেওয়ার মতো সহজ কাজ নয়। তাই সুভার বাবা-মা প্রতিনিয়ত এই বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তা করেন এবং সুভার অস্তিত্ব যেন তাদের নীরব হৃদয়ভারের মতো হয়ে অবস্থান করে। 

প্রশ্ন ১১। সুভা শিশুকাল থেকেই কী বুঝে নিয়েছিল? 

উত্তর : সুভা যে বিধাতার অভিশাপস্বরূপ পিতার ঘরে জন্ম নিয়েছে সে তা শিশুকাল থেকেই বুঝে নিয়েছিল। 

সুভা জন্ম থেকেই বোবা। মুখে কথা বলতে না পারলেও তার মাঝে অনুভূতি ছিল। সে তার চারপাশের সবকিছুই অনুভব করত এবং বুঝতে পারত। ছোটবেলা থেকেই তার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে যেসব কথাবার্তা হতো সেগুলো থেকেই সে বুঝে নিয়েছিল যে, সে বিধাতার কাছ থেকে আশীর্বাদ নিয়ে জন্মায়নি। পরিবারের লোকজনের আলোচনার মধ্য থেকেই বুঝে নিয়েছিল যে, সে তার বাবার ঘরে বিধাতার অভিশাপম্বরূপ জন্ম নিয়েছে। 

Read More:

Leave a Comment

You cannot copy content of this page