আম আঁটির ভেঁপু গল্পের চরিত্র পরিচিতি বা বিশ্লেষণ

আম আঁটির ভেঁপু গল্পের চরিত্র পরিচিতি বা বিশ্লেষণ এর বিস্তারিত নিচে দেওয়া হল যা তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য সহায়ক হবে। তাই এই আর্টিকেলটি অনুসরণ করো এবং অনুশীলন অব্যাহত রাখো। তোমাদের জন্য শুভকামনা।

আম আঁটির ভেঁপু গল্পের চরিত্র পরিচিতি বা বিশ্লেষণ
চরিত্র পরিচিতি (Character) 

হরিহর : ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের অন্যতম প্রধান চরিত্র হরিহর। সে গরিব ব্রাহ্মণ, তার উপাধি রায়। সে নিজ গ্রামের জমিদার অন্নদা রায়ের বাড়িতে মাসিক আট টাকা বেতনে গোমস্তার কাজ করে। এই আয় দিয়ে স্ত্রী সর্বজয়া এবং দুই ছেলে-মেয়ে অপু-দুর্গাকে নিয়ে জীবনযাপন করে। অর্থের অভাবে সে ভাঙা ঘর মেরামত করতে পারে না। হরিহর আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি। দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত হলেও আত্মমর্যাদা ক্ষুণ্ন হয় এমন কাজ সে করতে চায় না।

এই কারণে দশঘরার সদগোপরা তাকে মন্ত্র দিতে বললে তখনই সে রাজি হয় না। ধার-দেনা করে সংসার চালাতে গিয়ে সে নানা কথা সহ্য করে। তবুও সে অধৈর্য হয় না। এদিক থেকে হরিহর ধীরস্থির। সর্বজয়া : ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের অন্যতম প্রধান চরিত্র সর্বজয়া। সে ব্রাহ্মণ হরিহরের স্ত্রী, অপু-দুর্গার স্নেহময়ী মা। ছেলেমেয়ে দুটি কথা না শুনলেও তাদের প্রতি বিরক্ত নয়।

সে সংসারের নানা কাজে সবসময় ব্যস্ত থাকে। সে অভাবের কারণে ঋঋণ করে, যথাসময়ে পরিশোধ করতে না পারায় পাওনাদারদের কথা শোনে। অভাবে জর্জরিত হয়েও সে ধৈর্য হারায় না। দশঘরার সদগোপদের মন্ত্র দিয়ে সংসারের আয় বাড়াতে সে হরিহরকে তাড়া দেয়। ছেলেমেয়ের কথা ভেবে সে আবেগে আপ্লুত হয়। তার চরিত্রে গ্রামীণ পরিবেশে নিম্নবিত্ত অভাবী মানুষের জীবনের প্রতিফলন ঘটেছে। সে একজন ধৈর্যশীল নারী, স্নেহময়ী মা। বাস্তব জীবনের নানা সমস্যাসংকটে সে ধৈর্যশীল ও আত্মসচেতন। 

দুর্গা : দুর্গা ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের হরিহর ও সর্বজয়ার বড় সন্তান। দুর্গা দশ-এগারো বছরের কিশোরী। স্বভাব অতি চঞ্চল বলে সে সারা পাড়ার বাগান, আমতলা, জামতলা প্রভৃতি স্থানে ঘুরে বেড়ায়। ছোট ভাই অপু তার খেলার সঙ্গী। ছোট ভাইকে সে যেমন, আদর করে, তেমনই আবার মারে, ভয় দেখায়, শাসায়। সংসারের কাজে উপযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও সে মা সর্বজয়াকে কোনো কাজে সাহায্য করে না। কৈশোরের দুরন্তপনায় সংসারের অভাব তাকে ব্যথিত করে না। সে ময়লা জামা পরে কাচের চুড়ি হাতে দিয়ে রুক্ষ চুল উড়িয়ে 
আম আঁটির ভেঁপু গল্পের চরিত্র পরিচিতি বা বিশ্লেষণ

আনন্দে ছুটে বেড়ায়। ছোট ভাই অপুর সঙ্গে খুনসুটি করে, পুতুল খেলে, রড়া ফলের বিচি কুড়ায়। এককথায় দুর্গা স্বভাবে চঞ্চল, প্রাণোচ্ছল এবং প্রকৃতির রাজ্যে ছুটে বেড়ানো এক স্বাধীন কিশোরী, যাকে সংসারের অভাবের বিষাদ স্পর্শ করতে পারে না। অপু : অপু ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের হরিহর ও সর্বজয়ার ছোট সন্তান। অপু দুর্গার ছোট ভাই। দুর্গাকে সে দিদি বলে ডাকে। দুর্গা তাকে দিয়ে ছোটখাটো কাজ করায়।

সে আপন মনে খেলা করে। তার একটি টিনের বাক্স আছে; সেটিতে রাখা সে রং ওঠা কাঠের ঘোড়া, চার পয়সা দামের টোল-খাওয়া টিনের ভেঁপু-বাঁশি, কয়েকটি কড়ি, দুপয়সা দামের পিস্তল, কতগুলো শুকনো নাটা ফল, কয়েকটি খাপড়া কুচি তার খেলার সামগ্রী। সে খাপড়া দিয়ে গঙ্গাযমুনা খেলে। অপু তার দিদি দুর্গার খেলার সঙ্গী। বয়সে ছোট বলে দুর্গার মতো বুদ্ধি তার নেই।

মায়ের চোখ ফাঁকি দেওয়ার মতো সে চালাকি করতে পারে না। এ কারণে দুর্গা তাকে ‘হাবা একটা কোথাকার’ বলে শাসালেও সে চুপ থাকে। সে স্বভাবে দুর্গার মতো চঞ্চল নয়। দুর্গা আম কুড়িয়ে এনে তেল-লবণ দিয়ে মাখালে তাকে খানিকটা খেতে দেয়। আরেকটু মাখানো আম দেওয়ার জন্য দিদির কাছে আকুতি জানায়। অপু তার মা সর্বজয়াকে ভয় পায়। অপুর চরিত্রে দরিদ্র পরিবারের শিশুর স্বভাব-বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেয়েছে। স্বর্ণ গোয়ালিনী : ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের বিকাশহীন নারী চরিত্র। সে অপুদের গাভীর দুধ দোহায়। সর্বজয়া তাকে ‘সন্ন’ বলে ডাকে। অন্যান্য বিকাশহীন চরিত্র 

হরিহর রায়ের জ্ঞাতি ভাই নীলমণি রায় ও তার স্ত্রী-পুত্র-কন্যা। দশঘরার সদগোপ সম্প্রদায়ের পয়সাওয়ালা একজন লোক। সেজ় ঠাকরুণ এবং রাধা বোষ্টমের বউ। 

আরো পড়ুনঃ

Leave a Comment

You cannot copy content of this page