অভাগী গল্পের চরিত্র বিশ্লেষণ বা পরিচিত

অভাগী গল্পের চরিত্র বিশ্লেষণ বা পরিচিত এর বিস্তারিত নিচে দেওয়া হল যা তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য সহায়ক হবে। তাই এই আর্টিকেলটি অনুসরণ করো এবং অনুশীলন অব্যাহত রাখো। তোমাদের জন্য শুভকামনা।

অভাগী গল্পের চরিত্র বিশ্লেষণ বা পরিচিত

চরিত্র পরিচিতি (Character) 

অভাগী : ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র অভাগী। জন্মের পর মায়ের মৃত্যু হলে বাবা বিরক্ত হয়ে তার এমন নাম রাখেন। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত অভাগ্য অভাগীর নিত্যসঙ্গী। অনেক দুঃখ-কষ্টের মধ্য দিয়ে অভাগী বড় হয়। তার বিয়ে হয় পালকি বহনকারী হিন্দু সম্প্রদায়ের নিচু জাতের মানুষ রসিক দুলের সঙ্গে। এক সন্তান হওয়ার পর স্বামী তাকে ছেড়ে আরেকটি বিয়ে করে অন্য গ্রামে চলে যায়। তখন বুকের মানিক পুত্র কাঙালীকে নিয়েই নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখে। অনেক সাধাসাধি সত্ত্বেও সে দ্বিতীয় বিয়ে করেনি।

সে স্নেহময়ী মা, পতিপরায়ণা স্ত্রী এবং হিন্দু ধর্মের আচার-সংস্কারে বিশ্বাসী সরল প্রকৃতির নারী। উঁচু জাতের ধনী বাড়ির গৃহকর্ত্রীর শবযাত্রায় আড়ম্বরতা এবং সৎকারের ব্যাপকতা দেখে অভাগী। চন্দন, সিঁদুর, আলতা, মালা, ঘি, মধু, ধূপ, ধুনা, আর অগ্নির ধোঁয়ায় মুখুয্যে বাড়ির গিন্নি স্বর্গে গমন করেছেন। অভাগী ভাবে স্বামীর পায়ে ধূলি নিয়ে মৃত্যু শেষে পুত্র মুখাগ্নি করলে সেও স্বর্গে যাবে। তখন আর নিচু জাত বলে কেউ তাকে ভর্ৎসনা করতে পারবে না। কারণ নিচু জাত বলে অভাগী বামুন মায়ের শবযাত্রা দূরে দাঁড়িয়ে দেখেছে। বাগদি দুলের ঘরে কেউ ওষুধ খেয়ে বাঁচে না বলে উনুনে বড়ি ফেলে দিয়ে অভাগী নিচু জাতের যন্ত্রণা প্রকাশ করেছে।

অভাগ্যের হাত থেকে নিজেকে মুক্তি দিতে লড়াই করলেও অভাগী হিন্দু ধর্মের নানা রীতি, আচার, সংস্কার মেনে চলেছে । সে হিন্দু সমাজে নিচু জাতের অধিকারবঞ্চিত নারীর প্রতিনিধি । কাঙালী : ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের অন্যতম প্রধান চরিত্র কাঙালী।

সে গরিব-দুঃখী নিচু জাতের ছেলে। তার মা অভাগী এবং বাবা রসিক দুলে। বাবা তাদেরকে ফেলে অন্যত্র চলে গেলে মা-ই তাকে বড় করে তুলেছে। তার বয়স পনেরো বছর। সে বেতের কাজ শিখেছে। মায়ের প্রতি তার অগাধ বিশ্বাস এবং গভীর ভালোবাসা। চরিত্রে মাতৃভক্তি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, দায়িত্ববোধসম্পন্ন মানসিকতার প্রতিফলন ঘটেছে। ছোট থেকেই কাঙালী বেশ রুগ্ণ ছিল।

সে ছেলেবেলা থেকেই মায়ের কথা বিশ্বাস করে আসছে। তাই মায়ের মুখে শোনা মৃত্যুর পর বামুন মায়ের রথে চড়ে স্বর্গে যাওয়ার কথা সে মেনে নেয়। মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে মায়ের শব দাহ করার কাঠের জন্য জমিদারের গোমস্তা অধর রায়, ঠাকুরদাস মহাশয় প্রমুখের কাছে গিয়েছে। তারা কেউ তাকে সাহায্য করেনি। বরং তাকে গলাধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে। দুঘণ্টা ছোটাছুটি করে অবশেষে কাঙালী নদীর চরে গর্ত খুঁড়ে তার মা অভাগীর মৃতদেহ মাটিচাপা দেয়। এখানে মায়ের প্রতি এক কিশোর সন্তানের দায়িত্ববোধের পরিচয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে । এ চরিত্রের মধ্য দিয়ে নিচু শ্রেণির হতদরিদ্র মানুষের দুঃখকষ্ট, জীবনযন্ত্রণার প্রতিফলন ঘটেছে। 

অধর রায় : ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের অন্যতম পুরুষ চরিত্র অধর রায়। তিনি গ্রামের কাছারির কর্তা, জমিদারের গোমস্তা। খাজনা আদায় করতে তিনি প্রজাপীড়ন করেন। দরিদ্র নিচু জাতের মানুষকে তিনি সহ্য করতে পারেন না।

তার আঙিনায় নিচু জাতের কেউ গেলে গোবর-জল ছিটিয়ে দিতে বলেন। কাঙালী তার মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে সৎকারের কাঠ চাইলে তিনি তাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। কাঠের জন্য পাঁচ টাকা আনতে বলে কাঙালীর সঙ্গে অমানবিক আচরণ করেছেন। তার চরিত্রের মধ্য দিয়ে সামন্তবাদের নির্মম রূপটি ফুটে উঠেছে। 

রসিক দুলে : রসিক দুলে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের অভাগীর স্বামী এবং কাঙালীর পিতা। জীবনে স্ত্রী-সন্তানকে ভরণপোষণ, স্নেহভালোবাসা না দিলেও কাঙালীর ডাকে সে মৃত্যুপথযাত্রী স্ত্রী অভাগীকে পায়ের ধুলো দিতে গিয়েছে। অভাগীর পতিভক্তি দেখে সে অনুশোচনায় কেঁদেছে। তার শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে কুড়াল নিয়ে বেলগাছ কাটতে গিয়েছে। এ কাজ করতে গিয়ে সে জমিদারের দারোয়ানের হাতে মার খেয়েছে। 

দারোয়ান : জমিদারের দারোয়ান। সে হিন্দুস্থানি, বদমেজাজি লোক। নীচ জাতের লোকদের সে ঘৃণা করে। মৃতদেহ স্পর্শকারীর গায়ে সে হাত দিতে চায় না অশৌচের ভয়ে। 

ঈশ্বর নাপিত : ঈশ্বর নাপিত ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের অভাগীর গ্রামের লোক। সে মানুষের নাড়ি দেখতে জানত। তাই কেউ অসুস্থ হলে সে নাড়ি পরীক্ষা করে দেখত। নাড়ি না চললে তার মুখ গম্ভীর হয়ে যেত এবং সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে সবাইকে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করত। 

বিন্দির পিসি : ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের একটি অপ্রধান চরিত্র বিন্দির পিসি। এই চরিত্রের উল্লেখ আছে বিকাশ নেই। এই চরিত্র উল্লেখ করে নিচু শ্রেণির মানুষের দারিদ্র্যের পরিচয় দেওয়া হয়েছে। কাঙালী বিন্দির পিসির কাছে উত্তরীয় কেনার মূল্যস্বরূপ ভাত খাওয়ার পিতলের কাঁসিটি বাঁধা দিতে গিয়েছে। 

Read More: অভাগী গল্পের চরিত্র বিশ্লেষণ বা পরিচিত

Leave a Comment

You cannot copy content of this page