দিনলিপি লেখার নিয়ম HSC SSC ১০টিসহ

দিনলিপি লেখার নিয়ম HSC SSC ১০টিসহ -ডায়েরি লেখার কানুন HSC | বাংলা দ্বিতীয় পত্র | এইচএসসি বাংলা দ্বিতীয় পত্র হতে গুরুত্বপূর্ণ সব দিনলিপি লিখন গুলো আমাদের এই পোস্টে পাবেন ।

Read More:

বন্ধুরা, সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ, সবকিছু সঠিক আছে। আপনি জেনে সন্তুষ্ট হবেন যে আমি তোমাদের সাথে বাংলা দ্বিতীয় পাতা সম্মন্ধে কিছু তাৎপর্যপূর্ণ লিখনি নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছি।

দিনলিপি লেখার নিয়ম HSC SSC

সুতরাং করুণা করে একটানা পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

নির্মিতি অংশ : দিনলিপি লিখন

ইংলিশ Diary এসেছেন ল্যাটিন কিওয়ার্ড Diarium থেকে। শব্দটির বাংলা আভিধানিক অর্থ ব্যক্তিগত দৈনিক জীবনযাত্রার কাহিনী বা দিনলিপি। এটির ফার্সি পরিভাষা রোজনামচা। অর্থাৎ দিনলিপি হচ্ছে তা-ই, যেখানে মানুষ তার প্রতিদিনের জীবনের ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো লিপিবদ্ধ করে। (A book in which one keeps a daily record of event and experience)|

মানুষ প্রতিদিন বিভিন্ন কিছুর মধ্য দিয়ে যায়, যার মধ্যে কিছু সুখী এবং কিছু দুঃখজনক। কিন্তু আমার কাছে জীবনের এই অংশটা সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে। মানুষ সেরা সাফল্যকে চিরকাল স্থায়ী করতে চায়, যে কারণে কেউ কেউ তাদের প্রিয় বইগুলিতে গান, কবিতা বা গদ্য লেখেন। লেখার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

যখন কেউ তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলি একটি বইয়ে লেখেন, তখন তার মানসিক অবস্থা, আকাঙ্ক্ষা, সামাজিক জীবন এবং বাইরের বিশ্বের বিষয়গুলি সম্পর্কে জানার আকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে একটি ভাল ধারণা পাওয়া সহজ। কিন্তু হঠাৎ করে যদি কিছু ঘটে যায়, তা হলে তা হবে না। ডায়েরিস্ট হওয়ার জন্য তাকে অন্যান্য কিছু প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে হয়।

দিনলিপি লেখার নিয়ম HSC SSC

দিনলিপি লেখার নিয়মাবলী:

১. দিনলিপির পৃষ্ঠার একেবারে ঊর্ধ্বের ডান বা বাম সাইডের তারিখ ও বারের নাম লিখতে হয়। কেননা এর সাহায্যে বোঝা যায় ঘটনাটি কত তারিখে এবং কি বারে ঘটেছিল।
২. দিনলিপিতে ঘটনার সময় ও স্থানের নাম লিখতে হবে এর সাহায্যে ঘটনাটির সময় ও ঠাঁই সম্মন্ধে ধারণা পাওয়া যাবে।

৩. দিনে ঘটে যাওয়া যাবতীয় ঘটনা এর ডিটেইলস বিবরণ নয়, বরং উল্লেখযোগ্য বিশেষ বিশেষ ঘটনা সংক্ষেপে লিপিবদ্ধ করার জন্য হবে।
৪. ডায়েরিতে সহজ, সরল, স্পষ্ট ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ভাষায় কোন ইম্পোর্টেন্ট তথ্য কোন বিশেষ ভাবা ধ্যান বা কৌতূহলজনক কতিপয় লিখে রাখা হয়।

৫. দিনলিপিতে নিজের বা উত্তম পুরুষ (আমি, আমরা) লিখনি হয়।
৬. ডায়েরিতে প্রধারনত কোন অনুষ্ঠান, কোন বিপর্যয়, কোন জরুরি তথ্য, কোন বিশেষ ভাবনাচিন্তা বা কৌতূহলজনক কয়েকটি লিখে রাখা হয়।
৭. দিনলিপির ঘটনাগুলোর সাথে জড়িত চরিত্রগুলোর পরিচয় সংক্ষেপে তুলে ধরতে হবে।

৮. ডায়েরিতে লেখক এর বর্ণনা বা বিবরণ গোছালো ও পরিচ্ছন্ন লিখনি হওয়া উচিত।
৯. ডায়েরি অতি পার্সোনাল রচনাবলী। এতে নিজস্ব অভিমত দৃষ্টিভঙ্গি ও এক্সপেরিন্সের ইত্যাদি খোলাখুলিভাবে প্রকাশ করা চলে।
১০. ডায়েরিতে সব সময় যথার্থ ও প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরতে হবে।

দিনলিপি লেখার নিয়ম HSC SSC

উচ্চ মাধ্যমিক উপযোগি দিনলিপি
১. একজন শিক্ষাবিদের দিনলিপি
এপ্রিল, ২০৩০

ভোর ৬টায় নিদ্রা হতে উঠলাম। পত্রিকা পড়া তার সাথে চা খাওয়া সমাপ্ত করে যথারীতি ৭টায় পড়তে বসলাম। ‘বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার দু’শো বছর’ বই হতে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘শিক্ষার লক্ষ্য’, বঙ্কিমচন্দ্রের ‘লোক শিক্ষা’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপ’, প্রমথ চৌধুরীর ‘আমাদের শিক্ষা ও সাম্প্রতিক জীবন সমস্যা’ চারটি প্রবন্ধ পড়লাম। আমার এ পড়া নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করেন, কেন পড়ি? মনে মনে বলি, না পড়ে লিখব কী করে? বই পড়ে যেমন নিজেকে জানতে পারি, তেমনি জানতে পারি অন্যকে, জানতে পারি চারপাশের পরিবেশ আর প্রকৃতিকে। এ জানা চাক্ষুষ জানা নয়— মন দিয়ে, হৃদয় দিয়ে জানা।

আত্মার পরিব্রজনে বই আমার সেইম সাথে পথ ও পাথেয়। আজও সকাল বেলা ১০টায় কলেজে গেলাম। পর পর তিনটি নিয়ে বাসায় ফিরলাম। দুপুরের খাদ্য খেয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম। ‘কর্মমুখী শিক্ষার গুরুত্ব’ বিষয়ক প্রবন্ধ লেখার জন্য কিছু বিষয় নোট করলাম। আমার মনে হচ্ছে কাজের প্রতি আমাদের দৃষ্টি কোনোকালেই অতিশয় স্বচ্ছ ছিল না; ফলে কর্মমুখী শিক্ষার প্রতিও আমাদের দৃষ্টি অনেক স্বচ্ছ নয়।

দেশে কৃষি ব্যতীত যদি শিল্পেরও বিশাল ধরনের কোনো প্রচারণা ঘটত, বিশেষ করে সেগুলো যদি দেশজ কাঁচামাল, শ্রম, প্রজ্ঞা ব্যবহারের উপর জোর দিত, কিন্তু এই কর্মমুখী শিক্ষার দরকার সর্বত্র অনুভূত হতো। ফলে রাষ্ট্রের অর্থনীতিতে একটি সুফল বয়ে আনত। কর্মমুখী ব্যক্তি হাতাশায় ভোগে না; সমাজের উন্নতিকল্পে এদের বিকল্প নেই। শিক্ষার সাথে জীবন ও পরিবেশের যোগাযোগ রক্ষা করা দরকার। না হলে শিক্ষা অর্থবহ হয়ে উঠবে না।

আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের ‘প্রবন্ধ সংগ্রহ’ হতে ‘ডিগ্রির অভিশাপ’ পড়লাম। ‘বাংলাদেশে বিজ্ঞান ও কর্মমুখী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা’ প্রবন্ধ লিখলাম। রাত্রিতে আহার খেয়ে পরের দিনের কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় নোট লিখলাম। আমার কলেজের অধ্যক্ষ মহোদয়ের দেহের খোঁজখবর নিলাম। রাত ১১টায় ঘুমাতে গেলাম।

২. একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার দিনলিপি
৮ মার্চ, ২০৩০

ভোর ৬টায় নিদ্রা হতে উঠলাম। সকাল ৭টা ৩০-এর মধ্যেই কম্পিউটারের মেইল চেক করে আপডেট করলাম। ব্যবসায় উদ্যোগ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা ব্যপারে ২টি আর্টিকেল পড়লাম। মুনাফা বৃদ্ধি ও খরচ বৃথাব্যয় বিষয়ে কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিলাম। আমার প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত কর্মচারীদের পারফরম্যান্স বৃদ্ধি এবং উৎপাদনের নানারকম বিভাগ-উপবিভাগের মধ্যে সমন্বয় সাধনের কয়েকটি সূত্র লিখলাম।

পরিমিত ঝুঁকি নিয়ে কীভাবে কমিউনিটি ও জাতিকে নিউ পণ্য পুরস্কার দেওয়া যায়, এ বিষয়ে পরামর্শের জন্য কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি ও ইন্সটিটিউটের লিস্ট করলাম। আমার প্রতিষ্ঠানের জনবল বাড়ানো কর্তব্য কিনা— এ বিষয়ে সমমানের প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সাথে পরামর্শ করলাম। আমার ইন্সটিটিউটের নিউ শাখার জন্য স্থান নির্ধারণ, বাজার ও চাহিদা সিলেক্ট করলাম। ঠিক তথ্য কালেক্ট তার সাথে সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে ভোক্তার চাহিদা সম্মন্ধে গবেষণার একটি ছক করলাম। পণ্যের উৎপাদন ও মাননিয়ন্ত্রণ ক্ষেত্রে যথার্থ ধারা ফলো বিষয়ে কোনো সমস্যা, জটিলতা রয়েছে কিনা তা যাচাই করলাম।

দিনলিপি লেখার নিয়ম HSC SSC
৩. কক্সবাজার জেলার দর্শনীয় জায়গা নজরদারির দিনলিপি
৩০ জানুয়ারি, ২০৩০

কক্সবাজার ভ্রমণে আজ দ্বিতীয় দিন। প্রাকৃতিক শোভায় সুশোভিত কক্সবাজার জেলায় বিদ্যমান অধিক দৃষ্টিনন্দন স্থান। দু’দিনে এখানকার সব দর্শনীয় জায়গা লক্ষ্য পসিবল নয়। কক্সবাজারের স্থানীয় পোলা আমার ফ্রেন্ড রিয়াদ সাথে ছিল বলে নগণ্য টাইমে এখানকার প্রধান সর্বশ্রেষ্ঠ দর্শনীয় স্থান দেখা সম্ভব হলো। গতকাল প্রভাতে গেলাম সমুদ্রগর্ভে অধিষ্ঠিত তাজ্জব আই-ল্যান্ড সেন্টমার্টিন এ। এর পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম দিক জুড়ে ১০-১৫ কি.মি. প্রবাল প্রাচীর।

প্রায় ১৬ বর্গ কি.মি. জুড়ে প্রবাল পাথরের মেলা দেখে আকৃষ্ট অক্ষি নিয়ে গেলাম ছেড়া দ্বীপ। এটা বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে অধিষ্ঠিত ভূখন্ড। হেতু আই-ল্যান্ড সেন্টমার্টিন থেকে এটা বিচ্ছিন্ন বা ছিঁড়ে যায় বলে এর নাম ছেড়া দ্বীপ। এ দ্বীপের চারদিকের জল বৃহৎ স্বচ্ছ। ফলে জলের অনেক গভীরে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, প্রবাল ও সামুদ্রিক শৈবাল খালি নয়নে দেখতে পেলাম।

আরও দেখছি কক্সবাজার নগর হতে ৯কি.মি. দক্ষিণে অধিষ্ঠিত হিমছড়ি ঝরনা। আজ দেখলাম মহেশখালীর ‘সোনাদিয়া’ দ্বীপ। দ্বীপটি সোনার মতো মূল্যবান সম্পদে পুষ্ট ছিল বলে এর নাম সোনাদিয়া বা স্বর্ণবসতি। সর্বাপেক্ষা বেশ ভালো লাগল চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক দেখে। ৯০০ হেক্টর এলাকাজুড়ে সংরক্ষিত বনভূমি ও বন্য জীবজন্তুর অভয়ারণ্য এটি। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ফিরে ইনানী সি বিচে এলাম।

এখানে সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখে আমি কী যে খুশি পেলাম,তা ভাষায় পাবলিশ করার নয়। সময় স্বল্পতার জন্য পাতাবাড়ী বৌদ্ধবিহার, রাখাইন পাড়া,চিংড়ি রপ্তানি জোন, রামকোর্ট বৌদ্ধবিহার প্রভৃতি অনেক ভালো জায়গা দেখা হলো না।

৪. অসুস্থ বন্ধুকে/সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ফ্রেন্ডকে দেখতে যাওয়ার দিনলিপি
১৮মার্চ, ২০৩০

আজ সকালে অয়ন ও রূপমকে সাথে নিয়ে সুজিতকে দেখতে গেলাম। সুজিত আমাদের ক্লাসমেট বন্ধু। সড়ক দুর্ঘটনায় আঘাতগ্রস্থ হয়ে সুজিত পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি। আমাদের কলেজের সর্বাপেক্ষা মেধাবী,সুদর্শন,নম্র,ভদ্র পোলা সুজিত। ক্রীড়াবিদ হিসেবে স্কুলজীবন থেকেই তার সুনাম। ঘাতক সেই সুজিতের ১টি পা কেড়ে নিয়েছে। সবসময় হাস্যোজ্জ্বল সুজিতের মুখটি বিবর্ণ, ফেকাসে, প্রচন্ড ¤øান হয়ে গেছে।

দেখলে বন্ধু বলে নয়, যেকোনো হৃদয়বান মানুষের আখিতে পানি আসবে। অয়ন সহ্য করতে পারল না,মুখ লুকিয়ে ক্রন্দন করতে লাগল। আমি আর রূপম নির্বাক প্রস্তুর ফলকের মতো নিস্পন্দ হয়ে আছি। সুজিতে নিদ্রা ভাঙল। চক্ষু মেলে আমাদের দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে বিছানা ছেড়ে আচমকা উঠতে গিয়ে নিজের অসহায়ত্বের নিকট হার মানল। আমরা তাকে উঠতে বসতে হেল্প করলাম। সুজিত আমার নোটবুকটি হাতে নিয়ে কলম চাইল। কলম নিয়ে নোটবুকের এক জায়গায় লিখল- সহসা দুর্ঘটনা হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমাদের সবসয় সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে। সুজিতের এ মবোবলকে এইরকম বাড়িয়ে দিল।

৫. বৈশাখী মেলা’ শিরোনামে দিনলিপি
১০এপ্রিল,২০৩০
ঘিউর, মানিকগঞ্জ।

বৈশাখ মেলা আমাকে অত্যন্ত কাছে টানে। এর ভিতরে আমি যেন শেকড়ের খোজ পাই। আবহমান বাঙালি ঐতিহ্যের প্রকাশ ঘটে মেলার মধ্য দিয়ে। একারণে আমি প্রতিবছরই ছুটে যাই আমার গ্রামে। আর মেলার জন্য মাটির ব্যাংকে টাকা জমাই। যা দিয়ে চাচাত ভাইয়া বোনদের নিয়ে বেশ মজাতে কাটানো যায়। এই যাত্রায় মেলার পূর্বের দিন চলে এসেছি। আমাকে পেয়ে ওদের মনে খুশির বান এলো। কে কী করবে, কে কী কিনবে এজন্য নিয়ে হৈচৈ আর জল্পনা কল্পনা। গল্পে গল্পে পর্যাপ্ত রাত হয়ে গেল। ঘুম হতে উঠে সবাইকে ডেকে তুললাম। হুড়মুড় করে উঠে সকলেই সৃষ্টি হয়ে নিল।

এক টেম্পোএ উঠে সবাই একত্রে নামলাম মেলাস্থলে। শুরুতেই বাঁশিওয়ালার আসক্তিহীন করা সুর। সৈকত বাজিয়ে দেখে একটা বাঁশি কিনল লাইক করে। এরপর নাগরদোলা,কেউ উঠল না। রিজন গত বছর কিসলু পড়ে গিয়েছিল। সামনেই মিষ্টির দোকান। গরম জিলাপি আর রসগোল্লা খেল সবাই। ঐশী আর বাবলি চুড়ি কিনল হরেক রকম। মিন্টু আর রিন্টু কিনল মাটির ঘোড়া, হাতি, গৃহিণী আর মাটির ব্যাংক। তাপস পছন্দ করল মাটির ভালো একটা ফুলদানি। ডানপাশে বাঁশ আর বেতের সৃষ্টি নানা তৈজসপত্র সাজানো। বামপাশে লোহার তৈরি দা, কুড়াল, কোদাল, খুন্তি, কাঁচি ইত্যাদি ব্যবহারিক জিনিসপত্র বেচাকেনা হচ্ছে।

আরও সম্মুখে কাচের নানা রকম জিনিস সাজানো। পাশেই কাঠের তৈরি নানা সামগ্রী। এরপরে রয়েছে শরবত আর ফলের দোকান। বেলুনের দোকানগুলো হতে একগাদা নানা রঙের বেলুন কিনল মিন্টু রিন্টু। ক্ষুধা পেয়েছে। কিন্তু পরোটা মিষ্টি ব্যতীত অন্য কতিপয় খাওয়ার উপায় নেই। একারণে খেলাম সবাই। বেরিয়ে এসে লাঠিখেলা দেখলাম এক পর্ব। লটারি ধরলাম, তবুও পেলাম না। মন খারাপ হলো। দেখলাম বানরের নাচ। অতঃপর টেম্পোতে করে বাসা ফিরে এলাম।

৬. বনভোজনের এক্সপেরিন্সের আলোকে দিনলিপি
১০মার্চ, ২০৩০
গাজীপুর।

সকাল সাতটার ভিতরে মহাবিদ্যালয় গেটে উপস্থিত থাকতে হবে। একারণে ছয়টার মধ্যেই বিছানা ছাড়তে হলো। চল্লিশ মিনিটের মধ্যে সৃষ্টি হয়ে গেলাম। সাতটার ভিতরে পৌঁছে দেখি দুইটি বাসই প্রায় ভর্তি হয়ে গেছে। সকালের নাশতা ছাড়া অন্যান্য মুল্যবান সবকিছু তোলা হলো। দায়িত্বপ্রাপ্ত স্যার ম্যাডামরা চলে এলেন। গাড়ি ছাড়ল সাড়ে সাতটায়। নয়টার ভিতরে পিকনিকের জায়গায় পৌঁছে গেলাম। তার পূর্বেই নাশতার প্যাকেট ও পানির বোতল দেয়া হয়েছে। আমরা সবুজ ঘাসের উপর বসে কম্ফোর্টেবল করে নাশতা খেলাম।

তারপর স্যারদের সঙ্গে আশেপাশের বন এলাকায় ঘুরতে বের হলাম। বরই আর পেয়ারা বাগান দেখে ঢুকে পড়লাম। বরই পেরে খাচ্ছি আর হৈচৈ করছি। বাগানের ব্যক্তি আমাদের কাছ থেকে কয়েকটি মূল্য নিয়ে নিল। চলে আসলাম মাঠে। ওই জায়গা মজার কিছু খেলা হবে। আমি ব্যাঙ দৌড় আর বস্তা দৌড়ে অংশ নিলাম। তিথি পড়ে গিয়ে নাক ফাটিয়ে ফেলল। তাকে দ্রুত ডাক্তারখানায় নেয়া হলো। খাসির রেজালা, মুরগির রোস্ট আর পোলাও রান্না চলছে। দুপুরের আহার করা সেরে কিছুটা অবসর।

তারপর আরম্ভ হলো লটারি। যার ভাগ্যে সেটা উঠবে সেটাই করে দেখাতে হবে। আমি তোতলার অভিনয় করার জন্য গিয়ে তোতলা হয়ে গেলাম। খুব মজা হচ্ছে এ আসরে। এরপর পুরষ্কার বিতরণ করলেন অধ্যক্ষ মহোদয়। সন্ধ্যায় হয়ে আসছে। যাওয়ার সময় হলো। বাস ত্যাগ দিল। সংগীত গাইতে গাইতে চলে এলাম কলেজ গেটে, তারপর বাসায়।

৭. ঘূর্ণিঝড় উপদ্রæত এলাকা পরিদর্শনের দিনলিপি
১৬ আগস্ট, ২০৩০
বাগেরহাট।

গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। টেলিভিশনে ব্রেকিং নিউজ চলছে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রস্থল ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। সন্ধ্যার দিকেই হচ্ছে জলোচ্ছ¡াস। বাড়ি ও বৃক্ষ চাপা পড়ে মারা গেল দুজন। অনেকেই আহত। খাদ্যসামগ্রী, হাঁড়ি পাতিল, ছাগল ভেসে গেল। চারদিকে ঘরহারা ক্ষুধার্ত মানুষের হাহাকার। রাতের বেলায় ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ করে সবাই রওয়ানা হলাম বাগেরহাটের উদ্দেশ্যে। চিত্রা নদীর দুই পাড়ের বিস্তীর্ণ এরিয়ায় কেবল ধবংসচিহ্ন। অসহায় মানুষ নিজেদের হারানো জিনিস খুঁজতে ব্যস্ত। অনেকেই ত্রাণসামগ্রীর আশায় বসে আছে। একজন বৃদ্ধাকে দেখা গেল লাঠি ভর করে ধীর পায়ে প্রবল বৃষ্টিপাত ট্রাই করছেন।

আমি নিজেই তার নিকট গিয়ে তার নিঃস্ব অবস্থার কথা জানলাম। তার হাতে খাবারের প্যাকেট তুলে দিলাম। আর আমার গায়ের শালটা তার গায়ে জড়িয়ে দিলাম। ফোকলা মুখে আজব হাসি ফুটে উঠল। আমি তৃপ্ত ও ধন্য। মনে হলো আমার ত্রাণ বিতরণ করার জন্য আসা সার্থক হলো। কখনও হেঁটে, কোনো সময়েই গাড়িতে যতদূর সম্ভব এলাকার কাবু অবস্থা ঘুরে ঘুরে দেখলাম এবং একাকী মানুষের ভিতরে খাদ্য ও কাপড় বিতরণ করলাম। অতঃপর ফিরে এলাম বাসায়।

৮. নির্বাচনি পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার দিনের দিনলিপি
০৭ জানুয়ারি, ২০৩০
দনিয়া, ঢাকা।

নির্বাচনি পরীক্ষার আগে আমার জ্বর হয়েছিল। স্বভাবতই আমার দেহ ছিল দুর্বল। মা-বাবার উৎসাহেই আমি নির্বাচনি এক্সামে অংশ নিয়েছিলাম। প্রতিটি এক্সামের দিনেই আমার মনে হয়েছে আমি বোধহয় কয়েকটি লিখতে পারবো না। তা সত্ত্বেও প্রশ্ন হাতে পেয়ে লিখতে আরম্ভ করলে আর তা মনে হয় নি। ১ম থেকে প্রত্যেকটি পরীক্ষা আমার ভালোই হয়েছে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর আমার মনে হয়ে গিয়েছে আমি জিপিএ-৫ পাবো।

কিন্তু ফল প্রকাশ করার পূর্বের দিন হতে আমার বুকের ভেতর দুরু দুরু করতে থাকে। কিরকম একটা ভয়! আমি জিপিএ-৫ পাব তো! প্রার্থনা হতাশার দোলায় রাতটা কেটে যায়। সকাল বেলায় আমাকে ডাকতে এসে আমাকে ভরসা দেন, তুই উদাহরণসরূপ আশা করেছিস তোর ফলাফল তেমনই হবে। সম্প্রতি উঠে প্রস্তুত হয়ে নে। ন’টা বেজে গেছে। তাড়াতাড়ি সৃষ্টি হলাম। নাশতা খেলাম। তারপর বেড়িয়ে পরলাম।

কলেজ গেটে আসতেই রাজিব ফোন করে খবরটা দিল। আমি আস্থা করার জন্য পারছিলাম না। ভেতরে ঢুকতেই আশরাফ, শামসু, মহির, সুভাষ, নাজির আমাকে জড়য়ে ধরে অভিনন্দন জানাল। আমি এগিয়ে গেলাম ফলাফল বোর্ডের দিকে। দেখে আমার চক্ষু ছানাবড়া। সত্যিই দেখছি তো! রসায়সেন স্যার এসে বললেন, হ্যাঁ, সত্যিই তুমি তিন গ্রুপ মিলিয়ে ১ম হয়েছ। এক অনাস্বাদিত খুশি নিয়ে স্যারদের আদাব করে থাকার জায়গা চলে এলাম। স্রষ্টার নিকট কৃতজ্ঞতা জানালাম অনেকবার।

মা আমাকে জড়িয়ে ধরে কপাল্ব চুমু খেলেন। আর বাপ মাথায় হাত বুলিয়ে এ রেজাল্ট ধরে রাখার জন্য আশীর্বাদ করলেন। মনে মনে আমিও অঙ্গীকার করলাম আমাকে এইরকম বেশ ভালো করার জন্য হবে।

৯. কলেজে বার্ষিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের ব্যাখা দিয়ে দিনলিপি
০৩ মার্চ, ২০৩০
কুমিল্লা।

সকাল থেকেই কেমন একটা মজা উত্তেজনা অনুভব করছিলাম। আমার এ সিচুয়েশন দেখে মা সতর্ক করে দিলেন। রওয়ানা হলাম কলেজের উদ্দেশ্যে। মহাবিদ্যালয়ে আজ সংঘটিত হবে বার্ষিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ২০২২। সাহিত্য প্রতিযোগিতার বিচারকমন্ডলীতে ছিলেন সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, বিশ্বজিৎ ঘোষ ও হুমায়ুন কবীর ঢালী। আর সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার বিচারকমÐলী ছিলেন ফেরদৌসী রহমান, লায়লা হাসান ও আতাউর রহমান। সাহিত্যে ছিল নির্বাচিত বিষয়ে পদ্য বলা, সংলাপ লিখন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি।

আর সাংস্কৃতিক বিষয় ছিল রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি, নাচ ও অভিনয়। আমি অংশ নিয়েছিলাম সংলাপ লিখন, স্বরচিত কবিতা ও অভিনয়ে। যারা অংশ নিয়েছিল তারা সকলেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে অনেক ভালো করেছিল। বিচারমন্ডলীকে হিমশিম খেতে হয়েছিল প্রথম, ২য় ও ৩য় নির্বাচন করতে। আমি সংলাপ লিখন ও অভিনয়ে প্রথম ও ছড়ায় ২য় হয়েছি। ডরে সংলাপ আর গানের কলি ভুলে গিয়েছিল তুহিন ও স্বাগতা। হাততালিতে মুখর ছিল পুরো অডিটোরিয়াম। পুরষ্কার নিয়ে বাসায় ফিরতেই মা-বাবা অভিনন্দন জানিয়ে খাতির করেছেন। এ দিনটায় কথা আমি কখনই ভুলব না।

১০. ঈদের দিনের ডায়েরি লেখ।
২৬ জুন, ২০৩০
দিনাজপুর।

ঈদ মানে আনন্দ। রোজা শেষের ‘ঈদ’ সত্যিই স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দের এ আনন্দ আখিতে নোটিশ যায়, এ মজা বুকে অনুভব করা যায়। আমি সবকটি রোজা রাখার জন্য পারিনি। তবে বেশ কিছু রেখেছি। সেজন্য আনন্দটা ভাগ করে নিতে পারছি সবার সাথে। অনেক রাতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। সকাল বেলা ৬টায় মা ডেকে তুললেন। হাত-মুখ ধুয়ে, গোসল করে, নিউ জামা কাপড় পরে প্রস্তুত হয়ে নিলাম। মা ডাকলেন খাদ্য টেবিলে।

আব্বা, বৃহৎ ভাইয়া নিউ পাঞ্জাবি পায়জামা পরে বসে আছেন আমার জন্য। তিন রকম সেমাই, পিঠা, ফিরনি পায়েস টেবিল সাজানো। খুশি করে খেয়ে ঈদগায় উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম। নামাজ পরার পর কোলাকুলির পালা। এ মজা যেন আল্লাহর পবিত্র রহমত। ঈদগায় এসে মন প্রাণ পবিত্র, স্বচ্ছ ও উদার হয়ে গেছে। কী অভিনব অনুভূতি! সারা জীবন এ পবিত্র অনুভুতি যদি আমরা ধরে রাখতে পারতাম! তাহলে এ বিশ্বে নেমে আসত বেহেস্তের সুখ! রাস্তায় বের হতেই তিন বন্ধুর সাথে লক্ষ্য হয়ে গেল। এক এক করে ওদের বাড়িতে চলল ছোট-গল্প গুজব, আহার করা দাওয়া। সবশেষে আমাদের বাড়িতে গানের আড্ডা আর ভোজন করা দাওয়া। ঘুমানোর আগ পর্যন্ত চলল ঈদের অপার মজা উৎসব।

Leave a Comment

You cannot copy content of this page