রক্ত ও সঞ্চালন সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

রক্ত ও সঞ্চালন সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর এইচএসসি জীববিজ্ঞান ২য় পত্রের প্রস্তুতির জন্য দেওয়া হয়েছে। তাই অনুসরন করো।

রক্ত ও সঞ্চালন সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
রক্ত ও সঞ্চালন সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

ঢাকা বোর্ড ২০২১

শিক্ষক মানুষের রক্ত সংবহনতন্ত্র সম্পর্কে পাঠদানকালে বললেন, তিন ধরনের কোষীয় উপাদান পৃথক পৃথক কাজ সম্পাদন করে থাকে। প্রথমটি শ্বসন গ্যাস বিনিময়, দ্বিতীয়টি প্রতিরক্ষা ও তৃতীয়টি রক্ততঞনে সহায়তা করে।

ক. অ্যানজাইনা কী?
খ. পেরিস্টালসিস বলতে কী বােঝ?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত দ্বিতীয় কোষীয় উপাদানটির ভূমিকা লেখাে।
ঘ. উদ্দীপকের প্রথম ও তৃতীয় কোষীয় উপাদানের তুলনা করাে।

ক) হৃদপেশি যখন O2 সমৃদ্ধ পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ পায় না তখন বুক নিষ্পেষিত ও দম বন্ধ হয়ে আসছে এমন মারাত্মক অস্বস্তি অনুভূত হলে সে ধরনের বুক ব্যথাই হলো অ্যানজাইনা ।

পাকস্থলির ছন্দময় আন্দোলন বা ঢেউকে পেরিস্ট্যালসিস বলে। পেরিস্ট্যাল ক্রিয়ার ফলে মুখগহ্বর হতে গলাধঃকরণকৃত খাদ্য পাকস্থলিতে যায় এবং সেখান থেকে ক্ষুদ্রান্ত্রে প্রবেশ করে। এই ক্রিয়ার ফলে খাদ্যবস্তু বিভিন্ন এনজাইমের সাথে মিশ্রিত হয়ে পাকমণ্ডে পরিণত হয় ।

গ) উদ্দীপকে উল্লিখিত দ্বিতীয় উপাদানটির নাম শ্বেত রক্তকণিকা ।নিচে শ্বেত রক্তকণিকা অর্থাৎ দ্বিতীয় উপাদানটির ভূমিকা বর্ণনা করা হলো-

১. ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় জীবাণু ধ্বংস করে।
২. লিম্ফোসাইট অ্যান্টিবডি তৈরির মাধ্যমে জীবাণু ধ্বংস করে। একে দেহের ‘আণুবীক্ষণিক সৈনিক’ বলে।

৩.বেসোফিল হেপারিন তৈরির মাধ্যমে রক্তকে দেহের মধ্যে জমাট বাঁধতে দেয় না।
৪. হিস্টামিন তৈরি করে এলাজিক বিক্রিয়া ঘটায়।
৫. লিউকোসাইট হিস্টামিন সৃষ্টি করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও সৃষ্টি করে।

ঘ) উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রথম উপাদানটি হলো লোহিত রক্তকণিকা, যা । গ্যাস বিনিময় করে এবং তৃতীয় উপাদানটি হলো অণুচক্রিকা, যা রক্ত তঞ্জনে সহায়তা করে।

নিচে ছকের মাধ্যমে লোহিত রক্তকণিকা ও অণুচক্রিকার মধ্যে অর্থাৎ প্রথম ও তৃতীয় উপাদানের তুলনা উপস্থাপন করা হলো-

তুলনীয় বিষয়লোহিত রক্তকণিকাঅণুচক্রিকা
আকৃতিদ্বি-অবতল, চাকতির ন্যায়।অনিয়ত আকার।
আকার7.3 um ব্যাসযুক্ত। 1-4 um ব্যাসযুক্ত
নিউক্লিয়াসনিউক্লিয়াস বিহীননিউক্লিয়াস বিহীন
বর্ণদেখতে লাল বর্ণের।বর্ণহীন কণিকা ।
আয়ুষ্কাল১২০ দিন।৫-৯ দিন ।
কাজO2 পরিবহন করে ।রক্ত তঞ্চন করা।
রক্ত ও সঞ্চালন সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

Read More:

যশোর বোর্ড ২০২১

রক্ত ও সঞ্চালন সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
রক্ত ও সঞ্চালন সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

ক, লসিকা কী?
খ, বান্ডল অব হিজ বলতে কী বােঝ?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ‘A’ চিহ্নিত অংশের প্রকারভেদ লেখো।
ঘ. উদ্দীপক সংশ্লিষ্ট ‘B’ ও ‘C’ এর তুলনা করাে ।

ক লসিকা হচ্ছে দেহের টিস্যু রস। দেহের সমস্ত টিস্যু রক্তপূর্ণ কৈশিক জালিকায় বেষ্টিত থাকে। রক্তের কিছু উপাদান কৈশিক জালিকায় প্রাচীর ভেদ করে কোষের চারপাশে অবস্থান করে। এ উপাদান গুলোকে সম্মিলিতভাবে লসিকা বলে।

খ বান্ডল অব হিজ হচ্ছে হৃৎপিণ্ডের আন্তঃনিলয় প্রাচীরের দৈর্ঘ্য বরাবর অবস্থিত একটি বিশেষ ধরনের তন্তু, যা বাম ও ডান শাখায় বিভক্ত হয়ে পারকিনজি তন্তুর সাথে মিলিত হয়। সুইস কার্ডিওলজিস্ট উইলহেলম হিজ ১৮৯৩ সালে এটি আবিষ্কার করেন। AVN থেকে প্রেরিত উদ্দীপনা বান্ডল অব হিজ কলা কর্তৃক গৃহীত হয়।

গ) উদ্দীপকের ‘A’ চিহ্নিত অংশটি হলো শ্বেতকণিকা। নিচে শ্বেতকণিকার প্রকারভেদ উল্লেখ করা হলো-

শ্বেতকণিকা : রক্তরস এবং লসিকায় বিদ্যমান স্বচ্ছ, নিউক্লিয়াস যুক্ত,অ্যামিবয়েড, দানাদার বা অদানাদার গঠন বিশিষ্ট রক্তকণিকাকে শ্বেতকণিকা বলে ।

শ্বেতকণিকার প্রকারভেদ : কোষের আকৃতি, নিউক্লিয়াসের ওপর ভিত্তি করে ইহা প্রধানত দুই প্রকার।

১. দানাদার লিউকোসাইট
২. অদানাদার লিউকোসাইট ।

১. দানাদার লিউকোসাইট : বর্ণ ধারণক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে এরা তিন প্রকার ।

ক. নিউট্রোফিল
খ. বেসোফিল
গ. ইউসিনোফিল

২. অদানাদার লিউকোসাইট : এরা দুই প্রকার :

ক. মনোসাইট
খ. লিম্ফোসাইট ।

ঘ) উদ্দীপকে ‘B’ লোহিত কণিকা ও ‘C’ অণুচক্রিকা। নিম্নে এদের পার্থক্য বর্ণিত হলো-
লোহিত কণিকঅণুচক্রিকা
১. রক্তরসে বিদ্যমান লাল বর্ণের, বৃত্তাকার, দ্বি-অবতল ও চাকতির মতো গঠন বিশিষ্ট ।১. রক্তে বিদ্যমান বর্ণহীন, ক্ষুদ্র, ডিম্বাকার, দণ্ডাকার, রক্তকণিকা।
২. প্রতি ঘন মিলিমিটার রক্তে প্রায় 5.4 মিলিয়ন লোহিত কণিকা থাকে ।২. প্রতি ঘন মিলিমিটার রক্তে 2.5-5 লক্ষ অণুচক্রিকা থাকে।
৩. মানব ভ্রূণের প্রাথমিক পর্যায়ে কুসুম থলি, শেষ পর্যায়ে যকৃত এবং জন্মের পর থেকে অস্থিমজ্জাতে সৃষ্টি হয়।৩. অস্থিমজ্জায় মেগাক্যারিওসাইট কোষ থেকে সৃষ্টি হয় ও যকৃত এবং প্লীহায় শেষ হয় ।
৪. আয়ুষ্কাল ১২০ দিন।৪. আয়ুষ্কাল ৫–৯ দিন ।
৫. O2 ও CO2 বহন করা।৫. রক্ত তঞ্চনে সহায়তা করা।
রক্ত ও সঞ্চালন সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

কুমিল্লা বোর্ড ২০২১

রক্ত ও সঞ্চালন সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
রক্ত ও সঞ্চালন সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

ক, কার্ডিয়াক চক্র কী?
খ. রক্তনালির ভিতরে রক্ততন হয় না কেন?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ‘P’ এবং ‘Q’ এর মধ্যে পার্থক্য উল্লেখ করাে।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ‘R’ মানবদেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার সূচনা করে প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা করাে।

ক হৃদপিন্ডের প্রতি স্পন্দন সৃষ্টি করতে সিস্টোল ও ডায়াস্টোল এর যে চক্রাকার ঘটনাবলী অনুসৃত হয় তাই কার্ডিয়াক চক্র।

খ রক্তনালির ভিতরে রক্ত তঞ্চন হয় না কারণ—

১. রক্ত প্রচণ্ড গতিতে অবিরাম প্রবাহমান থাকে।
২. রক্ত তঞ্জনকারী প্রভাবকসমূহ ২ ধরনের (১) প্রো-কোয়াগুলেন্ট এবং (২) অ্যান্টিকোয়াগুলেন্ট ফ্যাক্টর। রক্ত জমাট বাঁধা নির্ভর করে এদের ভারসাম্যের উপর। স্বাভাবিক অ্যান্টিকোয়াগুলেন্ট প্রো-য়াগুলেন্টের উপর প্রকট। ফলে রক্তনালির ভিতরে রক্ত তঞ্চন হয় না।

গ) উদ্দীপকে উল্লিখিত P হচ্ছে লোহিত রক্তকণিকা এবং Q হচ্ছে শ্বেত রক্তকণিকা। লোহিত রক্তকণিকা এবং শ্বেত রক্তকণিকার মধ্যে পার্থক্য নিচে ছকে প্রদান করা হলো-

পার্থক্যের বিষয়লোহিত রক্তকণিকাশ্বেত রক্তকণিকা
আকৃতিদ্বি-অবতল, চাকতির ন্যায়।গোলাকার, অনিয়ত।
নিউক্লিয়াস নিউক্লিয়াসবিহীননিউক্লিয়াস যুক্ত ।
আয়ুষ্কাল১২০ দিন।২-১৫ দিন।
বর্ণহিমোগ্লোবিন থাকায় লাল দেখায়।বর্ণহীন
প্রকারভেদএক প্রকারের মোট ৫ প্রকার ।
কাজO2 পরিবহন করা।রোগ প্রতিরোধ করা।
রক্ত ও সঞ্চালন সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

ঘ) উদ্দীপকে উল্লিখিত গুরুত্বপূর্ণ শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াটি হলো- রক্ত তঞ্চন প্রক্রিয়া । নিচে প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা করা হলো-

যে প্রক্রিয়ায় ক্ষতস্থান থেকে নির্গত হওয়া রক্তের প্লাজমা থেকে ফাইব্রিনোজেন আলাদা হয়ে ক্ষতস্থানে ফাইব্রিন জালক নির্মাণের মাধ্যমে রক্তপাত বন্ধ করে ফলে রক্তের অবশিষ্টাংশ থকথকে পিণ্ডে পরিণত হয় সে প্রক্রিয়ার নাম রক্ত তঞ্চন বা রক্তের জমাট বাঁধা। রক্ত বাহিকার অভ্যন্তরে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না, কারণ সেখানে হেপারিন নামক ‘একপ্রকার পদার্থ সংবহিত হয়। কিন্তু দেহের কোনো অংশে ক্ষত সৃষ্টি হলে রক্ত যখন দেহের ক্ষত অংশ থেকে বের হতে থাকে তখন ঐ অংশের অণুচক্রিকাগুলো বাতাসের সংস্পর্শে ভেঙে যায়। এবং থ্রম্বোপ্লাস্টিন নামক পদার্থের সৃষ্টি করে।

থ্রম্বোপ্লাস্টিন রক্তের হেপারিনকে অকেজো করে দেয় এবং রক্তরসে অবস্থিত ক্যালসিয়াম আয়নের উপস্থিতিতে প্রোথ্রম্বিন এর সাথে ক্রিয়া করে সক্রিয় থ্রম্বিন উৎপন্ন করে। থ্রম্বিন রক্তে অবস্থিত ফাইব্রিনোজেন নামক প্লাজমা প্রোটিনের সাথে মিলে ফাইব্রিন নামক সূত্রের সৃষ্টি করে। সূত্রগুলো পরস্পর মিলিত হয়ে জালকের আকার ধারণ করে। ফ্রাইব্রিনের জালকে লোহিত রক্ত কণিকাগুলো আটকে যায় ফলে রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয় এবং রক্ত জমাট বেঁধে যায়।

দিনাজপুর বোর্ড ২০২১

শ্রেণিশিক্ষক মানুষের রক্ত সংবহন পাঠদানকালে বললেন, তিন ধরনের কোষীয় উপাদান পৃথক পৃথক কাজে নিয়োজিত থাকে। এদের মধ্যে প্রথমটি শ্বসন গ্যাস পরিবহন, দ্বিতীয়টি প্রতিরক্ষা ও তৃতীয়টি রক্ত তজ্ঞনে সহায়তা করে।

ক. রক্তচাপ কী?
খ. করোনারি বাইপাস সার্জারি বলতে কী বুঝ?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত দ্বিতীয় কোষীয় উপাদানটির ভূমিকা লিখ ।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত তৃতীয় উপাদানটির কাজটি জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হয় বিশ্লেষণ কর।

ক রক্ত রক্তবাহিকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় রক্ত বাহিকার প্রাচীরে (প্রধানত ধমনির প্রাচীরে) যে পার্শ্বীয় চাপ প্রয়োগ করে তাই রক্তচাপ।

(খ) এক বা একাধিক করোনারি ধমনির ল্যুমেন রুদ্ধ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দেহের অন্য অংশ থেকে একটি সুস্থ রক্তবাহিকা কেটে এনে রুদ্ধ ধমনির পাশে স্থাপন করে রক্ত সরবরাহের যে বিকল্প পথ সৃষ্টি করা হয় তাই করোনারি বাইপাস।

(গ) উদ্দীপকের দ্বিতীয় কোষীয় উপাদানটি হলো শ্বেত রক্তকণিকা। নিম্নে শ্বেত রক্তকণিকার ভূমিকা বর্ণনা করা হলো-

B (শ্বেত রক্তকণিকা) এর ভূমিকা :

১. ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় এরা ক্ষণপদের সাহায্যে রোগ জীবাণুকে ভক্ষণ করে ধ্বংস করে।
২. লিম্ফোসাইট তৈরি করে রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। এজন্য এদেরকে দেহের ‘আণুবীক্ষণিক সৈনিক’ বলে।
৩. বেসোফিল নিঃসৃত হেপারিন দেহাভ্যন্তরে রক্তনালির ভেতরে রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করে দেহের মধ্যে রক্ত প্রবাহ অব্যাহত রাখে।
৪. এন্টিবডি তৈরি করে জীবাণু ধ্বংস করে।
৫. হিস্টামিনের মাধ্যমে এলার্জিক বিক্রিয়া হয়
৬. দানাদার লিউকোসাইট হিস্টামিন সৃষ্টি করে যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

ঘ) উদ্দীপকের তৃতীয় উপাদান হলো অণুচক্রিকা। অণুচক্রিকার রক্ত তঙ্কন কাজটি জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। রক্ত তঞ্চন বা রক্তপড়া বন্ধ হওয়ার প্রক্রিয়া ১৩টি ফ্যাক্টরের সমন্বয়ে কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়। রক্ত প্রবাহ বন্ধ হওয়ার প্রক্রিয়া সকলের ক্ষেত্রে একই। রক্ত জমাট বাঁধার জন্য যে উপাদানগুলো মূল ভূমিকা পালন করে সেগুলো হলো- প্রোথ্রম্বিন, ফাইব্রিনোজেন, ক্যালসিয়াম আয়ন (Ca2+) ও থ্রম্বোপ্লাস্টিন বা থ্রম্বোকাইনেজ।

প্রথমত রক্তে হেপারিন থাকায় রক্তপ্রবাহে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না। কিন্তু যখনই রক্তপাত হয়, তখন ঐ কাটা স্থান বা ভাঙা অণুচক্রিকা থেকে থ্রম্বোপ্লাস্টিন নামক এনজাইম বের হয়। অতঃপর থ্রম্বোপ্লাস্টিন রক্তের হেপারিনকে অকেজো করে দেয় এবং রক্ত রসে অবস্থিত ক্যালসিয়াম আয়নের উপস্থিতিতে প্রোথ্রম্বিন এর সাথে বিক্রিয়া করে সক্রিয় থ্রম্বিন উৎপন্ন করে। থ্রন্থিন রক্তে অবস্থিত ফাইব্রিনোজেন নামক প্লাজমা প্রোটিনের সাথে মিলে ফাইব্রিন নামক সূত্রের সৃষ্টি করে। সূত্রগুলো পরস্পরের সাথে মিলে জালকের আকার ধারণ করে। সবশেষে ফাইব্রিন জালকে লোহিত কণিকাগুলো আটকে যায়। ফলে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয় এবং রক্ত জমাট বেঁধে যায়।

রক্ত তঞ্চনের ধাপগুলো প্রবাহচিত্রের মাধ্যমে দেখানো হলো-

ক্ষতস্থান + ভাঙা থ্রম্বোসাইট → থ্রম্বোপ্লাস্টিন + Ca2+ + নিষ্ক্রিয় প্রোথ্ৰম্বিন

সক্রিয় প্রোথ্রম্বিন + ফাইব্রিনোজেন

রক্ত তঞ্জন ← ফাইব্রিন জালক ← ফাইব্রিন পলিমার ←← ফাইব্রিন মনোমার

রাজশাহী বোর্ড ২০২১

মানবদেহের 02 সমৃদ্ধ রক্ত অ্যাওটা দিয়ে সমগ্রদেহে এবং CO2 সমৃদ্ধ রক্ত পালমােনারি ধমনি দিয়ে ফুসফুসে পৌছায়। এক্ষেত্রে মধ্যমনি হিসেবে একটি অঙ্গ ভূমিকা পালন করে।

ক. ব্যারােরিসেপ্টর কাকে বলে?
খ. রক্ত কণিকাগুলাের মধ্যে বর্ণের ভিন্নতা দেখা যায় কেন?
গ, উল্লিখিত অঙ্গের লম্বচ্ছেদ এঁকে অভ্যন্তরীণ প্রবাহ চিত্র (→) দেখাও।
ঘ. উদ্দীপকের প্রাণীটির সংবহন পদ্ধতির সাথে Actinopterygii শ্রেণিভুক্ত কোনাে প্রাণীর সংবহন পদ্ধতির তুলনা করাে।

ক মানুষের রক্ত বাহিকার প্রাচীরে বিশেষ সংবেদী স্নায়ুপ্রান্ত থাকে। এ সংবেদী স্নায়ু প্রান্তকে ব্যারোরিসেপ্টর বলে ।

খ রক্তকণিকাগুলোর মধ্যে বর্ণের ভিন্নতার কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো-

১. লোহিত কণিকার মধ্যে হিমোগ্লোবিন উপস্থিত থাকার কারণে লোহিত কণিকা লাল বর্ণ দেখায়।
২. শ্বেত কণিকায় হিমোগ্লোবিন অনুপস্থিত থাকার ফলে শ্বেতকণিকা সাদা দেখায়। এখানে কিছু ক্ষারধর্মী শ্বেতকণিকা থাকে।
৩. অণুচক্রিকাতে হিমোগ্লোবিন অনুপস্থিত থাকে তাই অণুচক্রিকা বর্ণহীন দেখায়।

গ) উদ্দীপকের অঙ্গটি হলো হৃৎপিণ্ড। নিচে হূৎপিণ্ডের লম্বচ্ছেদ এঁকে চিহ্নিত করা হলো-

রক্ত ও সঞ্চালন সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
চিত্র : হৃৎপিণ্ডের লম্বচ্ছেদ

ঘ) উদ্দীপকের প্রাণীটি মানুষ ও Actinopterygii হলো রুই মাছ। রুই মাছের রক্ত সংবহনতন্ত্র লক্ষ করলে দেখা যায় যে, হৃৎপিণ্ড থেকে CO2 সমৃদ্ধ রক্ত প্রথমে ফুলকায় যায়। ফুলকায় CO2 ত্যাগের পর রক্ত O2 সমৃদ্ধ হয়। এই রক্ত সমগ্র দেহ পরিভ্রমণপূর্বক কোষে O2 সরবরাহ করে এবং কোষে উৎপন্ন CO2 গ্রহণপূর্বক পুনরায় হৃৎপিণ্ডে ফিরে আসে ।

দেখা যাচ্ছে, রক্ত রুই মাছের সমগ্র দেহ পরিভ্রমণ করতে একবার হৃৎপিণ্ড অতিক্রম করে। তাই এটাকে এক চক্রীয় সংবহনতন্ত্র বলা হয়। অন্যদিকে, মানুষের রক্ত সংবহনতন্ত্র লক্ষ করলে দেখা যায় যে, ক্রমাগত সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে মানুষের হৃৎপিণ্ড সারা দেহ থেকে রক্ত সংগ্রহ করে তা হূৎপিণ্ডের বিভিন্ন প্রকোষ্ঠ হয়ে অবশেষে আবার সমস্ত দেহে ছড়িয়ে পড়ে। হৃৎপিণ্ডে প্রসারণ বা ডায়াস্টোলের সময় দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত মহাশিরার মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডে প্রবেশ করে। আবার হূৎপিণ্ডের সংকোচন বা সিস্টোলের সময় হৃৎপিণ্ড থেকে রক্ত মহাধমনির মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডের বাইরে সঞ্চালিত হয়। এভাবে হৃৎপিণ্ডের সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে।

রক্ত মানুষের সমগ্র দেহ পরিভ্রমণ করতে দু’বার হৃৎপিণ্ড অতিক্রম করে। তাই এই তন্ত্রটিকে দ্বিচক্রীয় রক্ত সংবহনতন্ত্র বলা হয়। অর্থাৎ উপরোক্ত আলোচনা হতে প্রতীয়মান হয় যে, রুই মাছের রক্ত সংবহন পদ্ধতি মানুষের রক্ত সংবহন পদ্ধতি অপেক্ষা ভিন্নতর।

যশোর বোর্ড ২০২১

করিমের ষাটোর্ধ বয়সী বাবার প্রায়ই বুকে ব্যথা, ক্লান্তিভাব ও হঠাৎ মাথা ঝিমঝিম করে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ডাক্তার বললেন বক্ষ গহ্বরের মধ্যে অবস্থিত সংকোচন প্রসারণশীল অঙ্গটির দেহে রক্ত সরবরাহকারী নালীকার মধ্যে প্লাক সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরও বললেন- বড় আকারের অপারেশন ছাড়া বিশেষ পদ্ধতিতে এটি নিরাময় সম্ভব।

ক. দন্ত সংকেত কী?
খ. পালমোনারি সংবহন বলতে কী বুঝ?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত অঙ্গটির লম্বচ্ছেদের চিহ্নিত চিত্র অংকন কর।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ডাক্তারের শেষ উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।

ক স্তন্যপায়ী প্রাণিদের মধ্যে দাঁতের সংখ্যা ও ধরন যে সংকেতের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় তাই দন্ত সংকেত।

খ যে সংবহনে রক্ত হূৎপিণ্ডের ডান ভেন্ট্রিকল থেকে ফুসফুসে পৌঁছায় এবং ফুসফুস থেকে বাম অ্যাট্রিয়ামে ফিরে আসে তাকে পালমোনারি সংবহন বলে। পালমোনারি সংবহনের শুরু হয় পালমোনারি ধমনি থেকে, আর পালমোনারি ধমনির উদ্ভব ঘটে ডান ভেন্ট্রিকল থেকে। ডান ভেন্ট্রিকলের সংকোচনের ফলে কার্বন ডাইঅক্সাইড সমৃদ্ধ রক্ত পালমোনারি ধর্মনিতে প্রবেশ করে।

গ গ) উদ্দীপকের অঙ্গটি হলো হৃৎপিণ্ড। নিচে হূৎপিণ্ডের লম্বচ্ছেদ এঁকে চিহ্নিত করা হলো-

রক্ত ও সঞ্চালন সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর/ চিত্র : হৃৎপিণ্ডের লম্বচ্ছেদ
ঘ) উদ্দীপকে করিমের হৃৎপিণ্ডের রক্ত সরবরাহকারী ধর্মনির প্লাক বড় ধরনের অপারেশন ছাড়াই এক বিশেষ ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করে নিরাময় সম্ভব। পদ্ধতিটি হলো এনজিওপ্লাস্টি। পদ্ধতিটি নিম্নরূপ-

বড় ধরনের অস্ত্রোপচার না করে হৃৎপিণ্ডের সংকীর্ণ লুমেন (গহ্বর) যুক্ত বা রুদ্ধ হয়ে যাওয়া করোনারি ধমনি পুনরায় প্রশস্থ লুমেন মুক্ত বা উন্মুক্ত করার পদ্ধতিকে এনজিওপ্লাস্টি বলে। করোনারি হৃদরোগের অন্যতম প্রধান রোগ সৃষ্টি হয় করোনারি ধমনিতে। ধর্মনির ভেতর ব্লক সৃষ্টি হলে পর্যাপ্ত O, সমৃদ্ধ রক্ত হৃদপেশিতে সংবহিত হতে পারে না। ফলে হার্ট ফেইলিউর ও হার্ট অ্যাটাকের মতো মারাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এমন মারাত্মক অবস্থা মোকাবিলায় এনজিওপ্লাস্টি কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

এনজিওপ্লাস্টি ধরনের চিকিৎসা লুমেন থেকে ব্লক অপসারণ বা হ্রাস করতে পারে এবং শ্বাসকষ্ট ও বুকে ব্যথা উপশম হয়। হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমিয়ে জীবন রক্ষায় অবদান রাখে। যেহেতু বুক উন্মুক্ত করতে হয় না সেহেতু কষ্ট, সংক্রমণ ও দীর্ঘকালীন সতর্কতার প্রয়োজন পড়ে না। বেলুন ও স্টেন্ট পদ্ধতি একই সাথে ব্যবহার করলে প্লাক এর পুনরাবির্ভাবের সম্ভাবনা কমে যায়। মাত্র এক থেকে কয়েক ঘণ্টায় জীবন রক্ষাকারী এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে পারে এবং কয়েকদিন পর থেকেই হালকা কাজকর্ম করা সম্ভব।

সুস্থ হতে ৪ সপ্তাহের বেশি সময় লাগে না। যারা বুকের অসুখে ভুগছেন, কিংবা অ্যানজিওগ্রামের সময় রঞ্জকের প্রতি অ্যালার্জি দেখা যায় এবং যাদের বয়স ৭৫ বছরের বেশি তাদের ক্ষেত্রে এনজিওপ্লাস্টি কিছুটা অসুবিধাজনক হতে পারে। সুতরাং এনজিওপ্লাস্টি পদ্ধতির মাধ্যমে করিম সাহেবের রোগ নিরাময়ে অনেকটা সহায়ক হবে এবং এর ফলে তার বড় ধরনের অপারেশনে যেতে হবে না।

সিলেট বোর্ড ২০২১

প্রাণিজগতের হৃৎপিণ্ডের ধারাক্রম এক, দুই, তিন অসম্পূর্ণ চার ও চার প্রকোষ্ঠের।

ক. প্যারাপোডিয়া কী?
খ. লোহিত কণিকার কাজ ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের ধারাক্রমটি দেখা যায় কোন কোন প্রাণীতে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. শেষেরটি সঞ্চালনের ক্ষেত্রে অক্সিজেন ও কার্বন ডাইঅক্সাইডযুক্ত রক্তকে মিশ্রিত হতে দেয় না- বিশ্লেষণ কর।

ক Annelida পর্বের প্রাণীদের চলন অঙ্গকে প্যারাপোডিয়া বলে ।

খ লোহিত কণিকার কাজ নিম্নরূপ :

১. O2 এবং CO2 পরিবহন করে।
২. বাফার হিসেবে অম্ল ও ক্ষারের সমতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
৩. রক্তের সান্দ্রতা বজায় রাখে।
৪. রক্তের ধনাত্মক ও ঋণাত্মক আয়নের সাম্যাবস্থা বজায় রাখে।

গ) উদ্দীপকে হূৎপিণ্ডের ধারাক্রম এক, দুই, তিন, অসম্পূর্ণ চার ও চার প্রকোষ্ঠ ।

এক প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট হৃৎপিণ্ড সেফালোপোডদের ক্ষেত্রে দেখা যায়। সেফালোপোড এর Octopus এর ক্ষেত্রে এক প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট হৃৎপিণ্ড যা রক্ত পাম্প এর কাজ করে। দ্বিপ্রকোষ্ঠী হৃৎপিণ্ড দেখা না যায় মাছের ক্ষেত্রে যা ভেনাস হার্ট নামে পরিচিত। এতে একটি অলিন্দ ও একটি নিলয় থাকে। যা শুধুমাত্র CO2 যুক্ত রক্ত প্রবাহিত করে।

তিন প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট হৃৎপিণ্ড দেখা যায় Amphibia-র ক্ষেত্রে। Amphibia-র অন্তর্ভুক্ত যেমন— ব্যাঙ এর হৃৎপিণ্ড দুটি অলিন্দ ও একটি নিলয় নিয়ে গঠিত অসম্পূর্ণভাবে চার প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট হৃৎপিণ্ড দেখা যায় সকল Reptilia-র ক্ষেত্রে। [ব্যতিক্রম কুমির) যেমন— কচ্ছপ এর হূৎপিণ্ডে দুটি অলিন্দ এবং দুটি নিলয় তবে নিলয়টি অসম্পূর্ণভাবে দ্বিধা বিভক্ত।

চার প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট হৎপিণ্ড দেখা যায় Mammalia-র ক্ষেত্রে যেমন- মানুষ এর হূৎপিণ্ড দুটি অলিন্দ ও দুটি নিলয় সম্পূর্ণভাবে বিভক্ত হয়ে চার প্রকোষ্ঠ গঠন করে।

ঘ) উদ্দীপকের চার প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট হৃৎপিণ্ড রক্ত সঞ্চালনের ক্ষেত্রে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডযুক্ত রক্তকে মিশ্রিত হতে দেয় না যা মানবদেহে রক্ত সংবহনের ক্ষেত্রে দেখা যায়। নিচে হূৎপিণ্ডের মাধ্যমে

রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া দেখানো হলো-

১ মানুষের শরীরের ঊর্ধ্বভাগ থেকে CO2 সমৃদ্ধ রক্ত সুপিরিয়র ভেনাক্যাভা এবং নিম্নভাগ থেকে ইনফিরিয়র ভেনাক্যাভার মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডের ডান অ্যাট্রিয়ামে প্রবেশ করে ।

২. ফুসফুস থেকে O2 সমৃদ্ধ রক্ত দুটি পালমোনারি শিরার মাধ্যমে বাম অ্যাট্রিয়ামে পৌঁছায়।
৩. ডান অ্যাট্রিয়ামের সংকোচনের সময় ভেন্ট্রিকল প্রসারিত থাকে। তাই অ্যাট্রিয়ামের মধ্যে চাপ বেশি থাকে এবং ভেন্ট্রিকলের মধ্যে চাপ কম থাকে। এ চাপ পার্থক্যের জন্য ডান অ্যাট্রিও-ভেন্ট্রিকুলার ছিদ্রপথে অবস্থিত ট্রাইকাসপিড কপাটিকা খুলে যায় এবং CO2 সমৃদ্ধ রক্ত ডান ভেন্ট্রিকলে প্রবেশ করে। এ সময় ভেনাক্যাভা দুটির কপাটিকা বন্ধ থাকে।

৪. ডান অ্যাট্রিয়াম সংকোচনের সময়ই বাম অ্যাট্রিয়ামেরও সংকোচন ঘটে এবং একইভাবে বাম অ্যাট্রিও-ভেন্ট্রিকুলার ছিদ্রপথে অবস্থিত বাইকাসপিড কপাটিকা খুলে O2 সমৃদ্ধ রক্ত বাম ভেন্ট্রিকলে প্রবেশ করে। এ সময় পালমোনারি শিরা দুটির কপাটিকা বন্ধ থাকে।

৫. অ্যাট্রিয়াম খালি হয়ে গেলে এর সংকোচন শেষ হয়ে প্রসারণ শুরু হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে রক্তে পূর্ণ ভেন্ট্রিকলের সংকোচন ঘটে, ফলে ডেন্ট্রিকলের মধ্যে চাপ বাড়ে এবং বাইকাসপিড ও ট্রাইকাসপিড কপাটিকাগুলো বন্ধ হয়ে যায় কিন্তু অ্যাওটা ও পালমোনারি ধমনিতে অবস্থিত সেমিলুনার (অর্ধচন্দ্রাকার) কপাটিকা খুলে যায়।

৬. ডান ভেন্ট্রিকল থেকে CO2 সমৃদ্ধ রক্ত পরিশোধনের জন্য পালমোনারি ধমনির মাধ্যমে ফুসফুসে প্রেরিত হয়।

৭, বাম ভেন্ট্রিকল থেকে O, সমৃদ্ধ রক্ত অ্যাওর্টায় প্রেরিত হয় ।

৮. অ্যাওটা থেকে ধমনি, শাখা-ধমনি ও কৈশিক জালিকার মাধ্যমে রক্ত সারা দেহে সংবহিত হয়।

এভাবে মানুষের হৃৎপিণ্ডের ভেতর দিয়ে পর্যায়ক্রমে রক্তসংবহন অব্যাহত থাকে এবং প্রত্যেক স্পন্দনের সময় চক্রাকারে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে।

বরিশাল বোর্ড ২০২১

নিচের চিত্রটি লক্ষ কর-

রক্ত ও সঞ্চালন সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

ক. রক্ত কী?
খ. শিরা ও ধর্মনির মধ্যে পার্থক্য দেখাও।
গ. ধারাবাহিকভাবে তীরচিহ্নিত গতিপথগুলো ব্যাখ্যা কর।
ঘ. মানবদেহে ‘G’ অকেজো হয়ে পড়লে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের
মাধ্যমে উহার চিকিৎসা সম্ভব – বিশ্লেষণ কর।

ক রক্ত হলো এক ধরনের লাল বর্ণের সামান্য ক্ষারীয় তরল যোজক কলা।

খ শিরা ও ধমনির মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-

ধমনিশিরা
১/ হৃৎপিণ্ডে উৎপন্ন হয়ে দেহের কৈশিক জালিকায় সমাপ্ত হয়।১/ কৈশিক জালিকায় উৎপন্ন হয়ে হৃৎপিণ্ডে গিয়ে শেষ হয়।
২. পালমোনারি ধমনি ছাড়া অন্য সকল ধমনি , O2 যুক্ত রক্ত পরিবহন করে।২. পালমোনারি শিরা ছাড়া অন্য সকল শিরা , CO2 যুক্ত রক্ত পরিবহন করে।

গ) উদ্দীপকে চিহ্নিত চিত্রটি / হৃৎপিণ্ড। এর তীর চিহ্নিত গতিপথগুলো নিচে ধারাবাহিকভাবে ব্যাখ্যা করা হলো-

P-এর গতিপথ : এই গতিপথটি হলো নিম্ন মহাশিরার গতিপথ। এটি হৃৎপিণ্ডের বাম অলিন্দের নিম্ন প্রান্তে যুক্ত থাকে। এই শিরার মাধ্যমে দেহের নিম্নভাগ থেকে CO2 যুক্ত রক্ত ডান অলিন্দে আসে।

Q-এর গতিপথ : এই গতিপথটি হলো ঊর্ধ্ব মহাশিরার গতিপথ। এটি হৃৎপিণ্ডের ডান অলিন্দের ঊর্ধ্বপ্রান্তে যুক্ত থাকে। এই শিরার মাধ্যমে দেহের ঊর্ধ্বভাগ থেকে CO2 যুক্ত রক্ত ডান অলিন্দে আসে।

R-এর গতিপথ : এই গতিপথটি হলো অ্যাওটা বা মহাধমনি। এটি হৃৎপিণ্ডের বাম নিলয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকে। বাম ভেন্ট্রিকল থেকে , সমৃদ্ধ রক্ত মহাধমনির মাধ্যমে সমগ্রদেহে প্রবাহিত হয়।

T-এর গতিপথ : এই গতিপথটি হলো পালমোনারি শিরার গতিপথ। ফুসফুস থেকে O2 যুক্ত রক্ত পালমোনারি শিরার মাধ্যমে বাম অ্যাট্রিয়ামে প্রবেশ করে।

S-এর গতিপথ : এই গতিপথটি হলো পালমোনারি ধমনির গতিপথ। ডান নিলয় থেকে CO2 সমৃদ্ধ রক্ত পালমোনারি ধমনির মাধ্যমে ফুসফুসে যায়।

ঘ) উদ্দীপকের ‘G’ চিহ্নিত অংশ হলো সাইনো অ্যাট্রিয়াল নোড (SAN). এটি ডান অ্যাট্রিয়ামের প্রাচীরে, ডান অ্যাট্রিয়াম ও সুপিরিয়র ভেনাক্যাডার ছিদ্রের সংযোগস্থলে অবস্থিত। স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র থেকে কিছু স্নায়ুপ্রান্তসহ অল্প সংখ্যক ঈদপেশি তন্ত্র নিয়ে এটি গঠিত। SAN থেকে সৃষ্ট একটি অ্যাকশন পটেনশিয়াল ইলেকট্রিক্যাল সিগন্যালের মাধ্যমে হার্টবিট শুরু হয়। এই অ্যাকশন পটেনসিয়াল ছড়িয়ে সাথে সাথে স্নায়ু উদ্দীপনার অনুরূপ উত্তেজনার একটি ছোট ছোট ঢেউ হৃদপেশির দিকে অতিক্রান্ত হয়। এটি অ্যাট্রিয়ামের প্রাচীরে ছড়িয়ে অ্যাট্রিয়ামের সংকোচন ঘটায়। প্রতিটি উত্তেজনার ঢেউ এখানেই সৃষ্টি হয় এবং পরবর্তী উত্তেজনার ঢেউ সৃষ্টির উদ্দীপক হিসেবেও এটি কাজ করায় SAN কে পেসমেকার বলা হয়।

মানবদেহে এই পেসমেকার অকেজো হয়ে পড়লে অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন দেখা দেয়, যাকে অ্যারিথমিয়া বলা হয়। প্রচণ্ড অ্যারিথমিয়ায় হূৎপিণ্ডের ক্ষতি হয় এবং মানুষ অজ্ঞান হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এই অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে দেহে যান্ত্রিক পেসমেকার স্থাপন করতে হয়। অসুস্থ ও দুর্বল হৃৎপিণ্ড বিদ্যুৎ তরঙ্গ সৃষ্টি করে স্বাভাবিক চামড়ার নিচে পেসমেকার নামক একটি ছোট যন্ত্রকে স্থাপন করতে হয়। এটি অসুস্থ প্রাকৃতিক পেসমেকারকে নজরদারির মধ্যে রাখে এবং মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করে। সুতরাং বলা যায়, SAN অকেজো হয়ে পড়লে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অভাবে মৃত্যু ঘটতে পারে।

দিনাজপুর বোর্ড ২০২১

ক মানুষের হৃৎপিণ্ডে অবস্থিত। সাইনোঅ্যাট্রিয়াল নোড বিশেষ ধরনের কার্ডিয়াক পেশিগুচ্ছ দ্বারা গঠিত এবং স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, যা বৈদ্যুতিক তরঙ্গ প্রবাহ ছড়িয়ে দিয়ে হৃদস্পন্দন সৃষ্টি করে। সেটি হলো পেসমেকার।

খ যে প্রক্রিয়ায় ক্ষতস্থান থেকে নির্গত হওয়া রক্তের প্লাজমা থেকে ফাইব্রিনোজেন আলাদা হয়ে ফাইব্রিনজালক গঠনপূর্বক রক্তপাত, বন্ধ করে এবং রক্তের অবশিষ্টাংশকে জেলির ন্যায় থকথকে পিণ্ডে পরিণত করে তাকে রক্ত তঞ্চন বা রক্তের জমাট বাঁধা বলে। সমগ্র রক্ত তঞ্চন প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া। এটি কমপক্ষে ১৩টি ভিন্ন ভিন্ন ফ্যাক্টরের সমন্বিত কার্যের দ্বারা সংঘটিত হয়।

উদ্দীপকে উল্লিখিত অঙ্গটি হলো হৃৎপিণ্ড। নিম্নে হৃৎপিণ্ডের লম্বচ্ছেদের চিহ্নিত চিত্র অংকন করা হলো-

চিত্র : হৃৎপিণ্ডের লম্বচ্ছেদ

ঘ) উদ্দীপকে উল্লিখিত হৃৎপিণ্ড নামক অঙ্গটি সম্পূর্ণ দেহে চক্রাকারে রক্ত প্রবাহিত করে এর কার্যাবলি সম্পন্ন করে। ফুসফুস থেকে বাম অ্যাট্রিয়ামে ফিরে আসে তাকে পালমোনারি বা ফুসফুসীয় সংবহন বলে। অলিন্দদ্বয়ের প্রসারণের সময় প্রথমে সমস্ত দেহ থেকে CO2 যুক্ত রক্ত ডান অলিন্দ, পরবর্তীতে সংকোচনের সময় ডান অলিন্দ থেকে ডান নিলয়ে আসে। নিলয়ের সংকোচনের সাথে সাথে ডান নিলয় থেকে CO, সমৃদ্ধ রক্ত পালমোনারি ধমনি দ্বারা বাহিত হয়ে দুটি ফুসফুসে পৌঁছে।

পালমোনারি ধমনি ক্রমাগত বিভক্ত হয়ে ফুসফুসের অ্যালভিওলাসের প্রাচীরে কৈশিকজালিকায় রূপান্তরিত হয়। অ্যালভিওলাস ও কৈশিকজালিকার মধ্যে গ্যাসীয় আদান প্রদান হয়। ফলে রক্তে O2 যুক্ত হয়। কৈশিকজালিকা ও পরবর্তী রক্তনালিকাগুলোর ক্রমাগত সংযুক্তির মাধ্যমে পালমোনারি শিরার উৎপন্ন হয়। পালমোনারি শিরার মাধ্যমে রক্ত বাম অলিন্দে প্রবেশ করে। বাম অলিন্দ থেকে রক্ত বাইকাসপিড কপাটিকার মাধ্যমে বাম নিলয়ে প্রবেশ করে।

রাজশাহী বোর্ড ২০২১

ক. লসিকা কী?
খ. প্রাকৃতিক পেসমেকার কীভাবে কাজ করে?
গ. উদ্দীপকের ‘P’ উপাদান কীভাবে ফাইব্রিন তন্তু তৈরি করে? ব্যাখ্যা করাে।
ঘ. উল্লিখিত চিত্র (১, ২ ও ৩)-এর সার্বিক অবস্থা ও প্রতিরােধ পদ্ধতি বর্ণনা করাে।

ক লসিকা হচ্ছে দেহের টিস্যু রস। দেহের সমস্ত টিস্যু রক্তপূর্ণ কৈশিক জালিকায় বেষ্টিত থাকে। রক্তের কিছু উপাদান কৈশিক জালিকায় প্রাচীর ভেদ করে কোষের চারপাশে অবস্থান করে। এ উপাদানগুলোকে সম্মিলিতভাবে লসিকা বলে।

খ Sino-Atrial Node বা SAN কে পেসমেকার বলে। দেহের পেসমেকার বা SAN কাজ না করলে হৃৎপিণ্ডের সাথে কৃত্রিম পেসমেকার স্থাপন করে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে হার্টবিট স্বাভাবিক করা যায়। পেসমেকার মন্থর হৃদস্পন্দনকে গতিশীল করে এবং দ্রুতশীল হৃদস্পন্দনকে স্বাভাবিক করে। এটি হৃৎপিণ্ডের উপরের ও নিচের প্রকোষ্ঠের মধ্যে বৈদ্যুতিক সংকেতের সমন্বয় ঘটায়। এটি অলিন্দদ্বয়ের মধ্যে বৈদ্যুতিক সংকেতের সমন্বয় ঘটায়। এটি বিপদজনক হার্টবিট নিয়ন্ত্রণ করে। এসব কারণে পেসমেকার ব্যবহার করা হয়।

গ উদ্দীপকে ‘P’ হলো রক্ত। রক্ত তঞ্চন প্রক্রিয়ায় ফাইব্রিন জালকে পরিণত হয়। রক্ত জমাট বাঁধার জন্য যে উপাদানগুলো মূল ভূমিকা পালন করে সেগুলো হলো— প্রোথ্রম্বিন, ফাইব্রিনোজেন, ক্যালসিয়াম আয়ন (Ca2+) ও থ্রম্বোপ্লাস্টিন বা থ্রম্বোকাইনেজ। প্রথমত রক্তে হেপারিন থাকায় রক্তবাহে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না।

কিন্তু যখনই রক্তপাত হয়, তখন ঐ কাটা স্থান বা ভাঙা অণুচক্রিকা থেকে থ্রম্বোপ্লাস্টিন নামক এনজাইম বের হয়। অতঃপর থ্রম্বোপ্লাস্টিন রক্তের হেপারিনকে অকেজো করে দেয় এবং রক্ত রসে অবস্থিত ক্যালসিয়াম আয়নের উপস্থিতিতে প্রোথ্রম্বিন এর সাথে বিক্রিয়া করে সক্রিয় থ্রম্বিন উৎপন্ন করে। থ্রম্বিন রক্তে অবস্থিত ফাইব্রিনোজেন নামক প্লাজমা প্রোটিনের সাথে মিলে ফাইব্রিন নামক সূত্রের সৃষ্টি করে। সূত্রগুলো পরস্পরের সাথে মিলে জালকের আকার ধারণ করে। সবশেষে ফাইব্রিন জালকে লোহিত কণিকাগুলো আটকে যায়। ফলে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয় এবং রক্ত জমাট বেঁধে যায়। রক্ত তঞ্চনের ধাপগুলো প্রবাহচিত্রের মাধ্যমে দেখানো হলো-

ক্ষতস্থান + ভাঙা থ্রম্বোসাইট → থ্রম্বোপ্লাস্টিন + Ca2+ + নিষ্ক্রিয় প্রোথ্ৰম্বিন

সক্রিয় প্রোথ্রম্বিন + ফাইব্রিনোজেন

রক্ত তঞ্জন ← ফাইব্রিন জালক ← ফাইব্রিন পলিমার ←← ফাইব্রিন মনোমার

ঘ) উদ্দীপকের চিত্র (১, ২ ও ৩) এর সার্বিক অবস্থাটি হলো হার্ট অ্যাটাক। MI হলো মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন যা হার্ট অ্যাটাক নামে পরিচিত। মায়োকার্ডিয়াল অর্থ হৃদপেশি, আর ইনফার্কশন অর্থ অক্সিজেনের অভাবে দম বন্ধ হওয়া। দীর্ঘ সময় ব্যাপী হৃৎপিণ্ডের কোনো অংশে blood সরবরাহ বন্ধ থাকলে ঐ অংশের পেশিগুলো অকার্যকর হয়ে কিংবা মরে গিয়ে যে সমস্যা সৃষ্টি করে তাকেই সাধারণ ভাষায় হার্ট ম্যাটাক বা মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন বলে।

হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ :

১. বুকের ঠিক মাঝখানে অস্বস্তি হওয়া যা কয়েক মিনিট থাকে, চলে যায় আবার ফিরে আসে। বুকে অসহ্য চাপ বা ব্যথা অনুভূত হয়।

২. এক বা উভয় বাহু, পিঠ, গলা, চোয়াল বা পাকস্থলির উপরের অংশে অস্বস্তি বা ব্যথা অনুভব ।

৩. বুকে অস্বস্তির সময় ঘন ঘন নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস ঘটে।

৪. পাকস্থলিতে অস্বস্তির সঙ্গে বমি-বমি ভাব, বমি হওয়া, হঠাৎ মাথা ঝিমঝিম করা অথবা ঠাণ্ডা ঘাম বেরিয়ে যাওয়া।

৫. ঘুমে ব্যাঘাত ঘটা, নিজেকে শক্তিহীন বা শ্রান্ত বোধ করা।

হার্ট অ্যাটাকের কারণ : হৃৎপিণ্ড থেকে সমগ্র দেহের বিভিন্ন অঙ্গে রক্ত সরবরাহিত হয়। হৃৎপিণ্ড নিজেই একটি অঙ্গ হওয়ায় এরও রক্ত সরবরাহের প্রয়োজন হয়। যে রক্তনালি দ্বারা হৃৎপিণ্ড নিজে রক্তের সরবরাহ পেয়ে থাকে তাকে করোনারি ধমনি বলে। করোনারি ধমনি দ্বারা হৃৎপিণ্ডের প্রাচীরের পেশিতে রক্ত সরবরাহ কমে গেলে পেশির কোষগুলো অক্সিজেন ও শর্করা (গ্লুকোজ) স্বল্পতায় পড়ে এবং শক্তি উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়। কিন্তু দেহে অবিরাম রক্ত সরবরাহের জন্য হৃৎপেশিগুলোকে সর্বদা কর্মক্ষম থাকতে হয়। পরিমিত অক্সিজেনের অভাবে হৃৎপেশির কোষগুলো অবাত শ্বসন প্রক্রিয়ায় বিকল্প উৎস পাইরুভিক এসিড থেকে শক্তি উৎপাদন করে। এ সময় উপজাত হিসেবে ল্যাকটিক এসিড তৈরি হয়। অধিক পরিমাণ ল্যাকটিক এসিড তৈরি হলে তা পেশিতে জমা হয়, ফলে ব্যথা অনুভূত হয়। হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের উপায় হলো এনজিওপ্লাস্ট যা উদ্দীপকের চিত্রের আলোকে দেখা যাচ্ছে।

নজিওপ্লাস্ট

নজিওপ্লাস্ট : বড় ধরনের অস্ত্রোপচার না করে হৃৎপিণ্ডের সংকীর্ণ লুমেন (গহ্বর) যুক্ত বা রুদ্ধ হয়ে যাওয়া করোনারি ধমনি পুনরায় প্রশস্থ লুমেন মুক্ত বা উন্মুক্ত করার পদ্ধতিকে এনজিওপ্লাস্টি বলে।করোনারি হৃদরোগের অন্যতম প্রধান রোগ সৃষ্টি হয় করোনারি ধর্মনিতে। ধমনির ভেতর ব্লক সৃষ্টি হলে পর্যাপ্ত O2 সমৃদ্ধ রক্ত হৃদপেশিতে সংবহিত হতে পারে না। ফলে হার্ট ফেইলিউর ও হার্ট অ্যাটাকের মতো মারাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এমন মারাত্মক অবস্থা মোকাবিলায় এনজিওপ্লাস্টি কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

এনজিওপ্লাস্টি ধরনের চিকিৎসা লুমেন থেকে ব্লক অপসারণ বা হ্রাস করতে পারে এবং শ্বাসকষ্ট ও বুকে ব্যথা উপশম হয়। হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমিয়ে জীবন রক্ষায় অবদান রাখে। যেহেতু বুক উন্মুক্ত করতে হয় না সেহেতু কষ্ট, সংক্রমণ ও দীর্ঘকালীন সতর্কতার প্রয়োজন পড়ে না। বেলুন ও স্টেন্ট পদ্ধতি একই সাথে ব্যবহার করলে প্ল্যাক এর পুনরাবির্ভাবের সম্ভাবনা কমে যায়। মাত্র এক থেকে কয়েক ঘণ্টায় জীবন রক্ষাকারী এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে পারে এবং কয়েকদিন পর থেকেই হালকা কাজকর্ম করা সম্ভব।

সুস্থ হতে ৪ সপ্তাহের বেশি সময় লাগে না। যারা বুকের অসুখে ভুগছেন, কিংবা অ্যানজিওগ্রামের সময় রঞ্জকের প্রতি অ্যালার্জি দেখা যায় এবং যাদের বয়স ৭৫ বছরের বেশি তাদের ক্ষেত্রে এনজিওপ্লাস্টি কিছুটা অসুবিধাজনক হতে পারে। সুতরাং এনজিওপ্লাস্টি পদ্ধতির মাধ্যমে রোগ নিরাময়ে অনেকটা সহায়ক হবে এবং এর ফলে তার বড় ধরনের অপারেশনে যেতে হবে না।

কুমিল্লা বোর্ড ২০২১

অ্যানজাইনা, হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইলিউর হলাে করােনারি হৃদরােগ। অসুস্থ হৃৎপিণ্ডে স্বাভাবিক স্পন্দন হার ফিরিয়ে আনার জন্য দেহে কম্পিউটারাইজড বৈদ্যুতিক যন্ত্র স্থাপন করা হয়।

ক, করােনারি সংবহন কাকে বলে?
খ. লিঙ্গ জড়িত জটিলতা বলতে কী বােঝ?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত রােগগুলাের লক্ষণ বর্ণনা করাে।
ঘ. উল্লিখিত বৈদ্যুতিক যন্ত্র উক্ত অসুস্থ অঙ্গকে নজরদারির মধ্যে রাখে। বিশ্লেষণ করাে।

ক যে সংবহনে রক্ত ‘হৃৎপিণ্ডের নিজস্ব পেশিতে অর্থাৎ হৃৎপিণ্ডের প্রাচীরে সংবাহিত হয় তাকে করোনারি সংবহন বলে।

খ মানুষের যেসব জিন নিয়ন্ত্রিত বংশগতীয় রোগ সেক্স ক্রোমোসোমের মাধ্যমে সঞ্চারিত হয় তাদেরকে লিঙ্গ জড়িত জটিলতা বলা হয়। মানুষের সেক্স ক্রোমোসোম হলো X ও Y । X ক্রোমোসোমের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত কতকগুলো লিঙ্গ জড়িত জটিলতা হলো- বর্ণান্ধতা, হিমোফিলিয়া, DMD।

গ) উদ্দীপকে উল্লিখিত রোগগুলো হচ্ছে- অ্যানজাইনা, হার্ট অ্যাটাক ও হার্ট ফেইলিউর। নিচে এই রোগগুলোর লক্ষণসমূহ বর্ণনা করা হলো-

অ্যানজাইনা :

১. স্টার্নামের পিছনে বুকে ব্যথা হওয়া।
২. ব্যায়াম বা অন্য শারীরিক কাজে, মানসিক চাপে, শৈত্য বা আতংকে বুকে ব্যথা হতে পারে। ব্যথা ৫-৩০ মিনিট স্থায়ী থাকে।
৩. অ্যানজাইনা গলা, কাঁধ, চোয়াল, বাহু, পিঠ ও দাঁতেও ব্যথা ছড়িয়ে পরে।
৪. বুকে জ্বালাপোড়া, নিষ্পেষণ বা আড়ষ্টভাব সৃষ্টি হয় ।

হার্ট অ্যাটাক :

১. বুকের ঠিক মাঝখানে অস্বস্তি হওয়া যা কয়েক মিনিট ধরে থাকে, চলে যায় আবার ফিরে আসে।
২. বুকে অসহ্য চাপ, মোচড়ানো, আছড়ানো বা ব্যথা অনুভূত হয়।
৩. এক বা উভয় বাহু, চোয়াল, পিঠ ও গলায় ব্যথা অনুভূত হয়।
৪. বমি বমি ভাব ও ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস দেখা দেয় এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।

হার্ট ফেইলিউর :

১. সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় অবস্থায় শ্বাসকষ্ট হওয়া
২. গোলাপী বর্ণের মিউকাসসহ কাঁশি হওয়া।
৩. শরীরের বিভিন্ন অংশে পানি জমে ফুলে ওঠা।
৪. সবসময় ক্লান্তি ভাব, হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়, স্মৃতিহীনতা দেখা দেয়।

ঘ) উদ্দীপকে যে বৈদ্যুতিক যন্ত্রটির কথা বলা হয়েছে তা হলো কৃত্রিম পেসমেকার। কৃত্রিম পেসমেকার অসুস্থ হৃৎপিণ্ডকে নিম্নোক্ত প্রক্রিয়ায় নজরদারির মধ্যে রাখে—

কৃত্রিম পেসমেকারে জেনারেটরের কম্পিউটার-চিপ এবং হৃৎপিণ্ডে যুক্ত সেন্সরবাহী তার থাকে যা ব্যক্তির চলন, রক্তের তাপমাত্রা, শ্বসন ও বিভিন্ন শারীরিক কর্মকাণ্ড মনিটর করে। প্রয়োজনে কর্মকাণ্ডের ধারা অনুযায়ী হৃৎপিণ্ডকে তাল মিলিয়ে চলতে সাহায্য করে। এসব তথ্য কাজে লাগিয়ে পেসমেকার ঠিক করে দেয় কোন ধরনের বিদ্যুৎ তরঙ্গ লাগবে এবং কখন লাগবে। যেমন- পেসমেকার ব্যক্তির ব্যায়াম করার বিষয়টি বুঝতে পেরে হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দেয়। এসব উপাত্ত পেসমেকারে রক্ষিত থাকে যা দেখে চিকিৎসকেরা প্রেসমেকারে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে পারেন। ঠিক এভাবেই কৃত্রিম পেসমেকার ব্যক্তির হৃৎপিণ্ডকে পূর্ণ নজরদারির মধ্যে রেখে ব্যক্তিকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করে।

চট্রগ্রাম বোর্ড ২০২১

ক. পেসমেকার কী?
খ. ক্ষতস্থানে রক্ত জমাট বাধে কেন?
গ. উদ্দীপকের ‘B’ ও ‘C’ এর মধ্যে পার্থক্য ব্যাখ্যা করাে।
ঘ. ‘B’ ও ‘C’ এর কবল থেকে ‘A’ কে রক্ষা করার ক্ষেত্রে তােমার পরামর্শ প্রদান করাে।

ক মানুষের হৃৎপিণ্ডে অবস্থিত সাইনোঅ্যাট্রিয়াল নোড বিশেষ ধরনের কার্ডিয়াক পেশিগুচ্ছ দ্বারা গঠিত এবং স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, যা বৈদ্যুতিক তরঙ্গ প্রবাহ ছড়িয়ে দিয়ে হৃদস্পন্দন সৃষ্টি করে। সেটি হলো পেসমেকার।

যে প্রক্রিয়ায় ক্ষতস্থান থেকে নির্গত হওয়া রক্তের প্লাজমা থেকে ফাইব্রিনোজেন আলাদা হয়ে ফাইব্রিনজালক গঠনপূর্বক রক্তপাত বন্ধ করে এবং রক্তের অবশিষ্টাংশকে জেলির ন্যায় থকথকে পিণ্ডে পরিণত করে তাকে রক্ত তঞ্চন বা রক্তের জমাট বাঁধা বলে। সমগ্র রক্ত তঞ্চন প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া। এটি কমপক্ষে ১৩টি ভিন্ন ভিন্ন ফ্যাক্টরের সমন্বিত কার্যের দ্বারা সংঘটিত হয়।

গ উদ্দীপকের “B” হলো হার্ট অ্যাটাক ও “C” হলো হার্ট ফেইলিউর। হার্ট অ্যাটাক ও হার্ট ফেইলিউর এর মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-

হার্ট অ্যাটাকহার্ট ফেইলিউর
১. হৃৎপিণ্ডের করোনারি ধর্মনির ভিতর তঞ্চন পিণ্ড বা ব্লকেজ সৃষ্টির ফলে রক্ত সরবরাহ না পেয়ে হৃৎপেশি মরে যাওয়ায় যে দূর্ঘটনা ঘটে তাকে হার্ট অ্যাটাক বলে।১. হৃৎপিণ্ড যখন চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত রক্তের যোগান দিতে পারে না তখন এ অবস্থাকে হার্ট ফেইলিউর বলে ।
২. হৃৎপিণ্ডের কোনো ধমনীতে ব্লকেজ হলে হার্ট অ্যাটাক হয়।২. হৃৎপিণ্ডের কপাটিকার রোগ বা ধমনিতে ব্লক হলে হার্ট ফেইলিউর।
৩. হার্ট অ্যাটাকের ফলে বুকের মাঝখানে অসহ্য চাপ, প্রচণ্ড ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, শীতল ঘাম এমনকি মৃত্যু হতে পারে।৩. ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্ট, ফোঁস ফোঁস শব্দ করে শ্বাস-প্রশ্বাস, ক্লান্তিভাব, বমি বমি ভাব, হৃৎস্পন্দন অনেক দ্রুত হওয়া ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে তরল জমে ফুলে যাওয়া।
ঘ উদ্দীপকে “B” হলো হার্ট অ্যাটাক ও “C” হলো হার্ট ফেইলিউর। হার্ট অ্যাটাক ও হার্ট ফেইলিউর এর হাত থেকে “A” হৃৎপিণ্ডকে রক্ষার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে—

১. ধূমপান ত্যাগ করতে হবে।
২. ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
৩. রক্তের কোলেস্টেরল মাত্রা সর্বদা সঠিক রাখতে হবে।
৪. দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকতে হবে।
৫ চর্বি জাতীয় খাবার ত্যাগ করতে হবে।
৬. নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করতে হবে।
৭. দেহের স্থূলতা দূর করতে হবে।
৮. অ্যালকোহল ও মদ্যপান বর্জন করতে হবে।
৯. মানসিক প্রশান্তিতে থাকতে হবে।
১০. বছরে কমপক্ষে একবার সম্পূর্ণ শরীরের চেকআপ করাতে হবে।

উপরিউল্লিখিত বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে মেনে চললে হূৎপিণ্ডকে সুস্থ্য রাখা যাবে।

ময়মনসিংহ বোর্ড ২০২১

হৃদপেশিতে অক্সিজেন (O2) সরবরাহ না হলে বুকে তীব্র ব্যথা, শ্বাসকষ্ট এবং ঘাম হয়।

ক. BMI কী?
খ. লসিকাতন্ত্র বলতে কী বুঝ?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত লক্ষণগুলো যে রোগের উহার কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সমস্যা কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়? বিশ্লেষণ কর।

ক In BMI অর্থাৎ Body Mass Index হলো দেহের উচ্চতা ও ওজনের আনুপাতিক হার ।

খ লসিকা নালি ও লসিকা গ্রন্থির সমন্বয়ে গঠিত যে তন্ত্রের মাধ্যমে সমগ্র দেহে লসিকা রস প্রবাহিত হয় তাকে লসিকাতন্ত্র বলে। ডেনিস বিজ্ঞানী Olaus Rudbeck এবং Thomas Bartholin, ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে,সর্বপ্রথম মানুষের লসিকাতন্ত্রের বিবরণ দেন। রক্ত সংবহনতন্ত্র এবং লসিকাতন্ত্র উভয়েই সমগ্র দেহে ফ্লুইড সংবহন করে বলে লসিকাতন্ত্রকে কখনো কখনোঁ দ্বিতীয় সংবহনতন্ত্র বলেও অভিহিত করা হয়। লসিকাতন্ত্র প্রধান দুটি উপাদান নিয়ে গঠিত, যথা- লসিকানালি ও লসিকাগ্রন্থি।

গ উদ্দীপকে উল্লিখিত লক্ষণগুলি হলো “অ্যানজাইনা” রোগের। অ্যানজাইনা রোগের কারণ নিম্নরূপ-

করোনারি ধমনি দ্বারা হৃৎপিণ্ডের প্রাচীরের পেশিতে রক্ত সরবরাহ কমে গেলে পেশির কোষগুলো অক্সিজেন ও শর্করা স্বল্পতায় পড়ে এবং শক্তি উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়। কিন্তু দেহে অবিরাম রক্ত সরবরাহের জন্য হৃৎপেশিগুলোকে সর্বদা কার্যক্ষম থাকতে হয়। পরিমিত অক্সিজেনের অভাবে হৃদপেশির কোষগুলো অবাত শ্বসন প্রক্রিয়ায় বিকল্প উৎস পাইরুভিক এসিড থেকে শক্তি উৎপাদন করে। এ সময় উপজাত হিসেবে ল্যাকটিক এসিড তৈরি হয়।

অধিক পরিমাণ ল্যাকটিক এসিড তৈরি হলে তা পেশিতে জমা হয়, ফলে ব্যথা অনুভূত হয়। করোনারি ধমনির সমস্যা ছাড়াও অ্যানজাইনা হতে পারে। অ্যানজাইনা আক্রান্ত মাত্র ৩০% মানুষের হৃৎপিণ্ডের কপাটিকা সমস্যার কারণে করোনারি আর্টারিতে রক্ত প্রবাহ বিঘ্নিত হয়। এছাড়া অ্যানিমিয়া আক্রান্ত রোগীরও অ্যানজাইনা দেখা দেয় কেননা তাদের রক্তে পরিমিত অক্সিজেন থাকে না। আবার যেসব মানুষের হূৎপিণ্ডের প্রাচীর অতিমাত্রায় পুরু থাকে তাদেরও অ্যানজাইনা দেখা দেয়। কারণ তাদের হৃদপ্রাচীর চাহিদার তুলনায় কম পরিমাণ অক্সিজেন পেয়ে থাকে। এক কথায় হৃদপেশি যখন O2 সমৃদ্ধ রক্ত পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ পায় না তখন অ্যানজাইনা ব্যথার সৃষ্টি হয়।

ঘ) উদ্দীপকের অ্যানজাইনা রোগ প্রতিরোধের উপায় নিচে বর্ণিত হলো-

অ্যানজাইনা রোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া এবং তা ধরে রাখাই হচ্ছে অ্যানজাইনা প্রতিরোধের প্রধান উপায়। এজন্য কিছু বিষয় গুরুত্বের সাথে পালন করা উচিত। তবে কিছু বিষয় আছে যার নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতে নেই, যেমন- বয়স, লিঙ্গভেদ, হৃদরোগ ও অ্যানজাইনার পারিবারিক ইতিহাস। যেসব বিষয় আমাদের নাগালের মধ্যে আছে সেগুলো মেনে চলতে হবে। এ বিষয়গুলো নিচে উল্লেখ করা হলো-

১. ধূমপান ত্যাগ করতে হবে।
২: ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
৩. রক্তের কোলেস্টেরল মাত্রা সর্বদা সঠিক রাখতে হবে।
৪. দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকতে হবে।
৫. চর্বি জাতীয় খাবার ত্যাগ করতে হবে।
৬. নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করতে হবে।
৭. দেহের স্থূলতা দূর করতে হবে।
৮. অ্যালকোহল ও মদ্যপান বর্জন করতে হবে।
৯. মানসিক প্রশান্তিতে থাকতে হবে ।
১০. বছরে কমপক্ষে একবার সম্পূর্ণ শরীরের চেকআপ করাতে হবে।

উপরিউল্লিখিত বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে মেনে চললে অ্যানজাইনা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে ।

রক্ত ও সঞ্চালন সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্র

বিয়ের তিন বছর পর আদনান ও শারমিন দম্পতির প্রথম সন্তান অন্তু জন্ম নেয়। অন্তুর বয়স যখন ২ বছর তখন তারা লক্ষ করে তাদের সন্তান মাঝে মাঝে অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে এবং খুব দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়। তখন তারা চিকিৎসকের কাছে যায়। চিকিৎসক অস্ত্রোপাচার করে অন্তর দেহে একটি যন্ত্র স্থাপন করেন, যা একটি লিথিয়াম ব্যাটারি, কম্পিউটারাইজড জেনারেটর ও শীর্ষ সেন্সরযুক্ত কতকগুলো তার নিয়ে গঠিত।

ক. রক্তরস কী?
খ. ইটিটি ও করোনারি এনজিওগ্রাম কেন করা হয়?
গ. অন্তুর সুস্থতায় উক্ত যন্ত্রটি কীভাবে ভূমিকা রাখবে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ভবিষ্যতে অন্তর জন্য সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি – বিশ্লেষণ কর।

ক রক্তরস হচ্ছে রক্তের হালকা হলুদ বর্ণের তরল অংশ।

খ হৃৎপিণ্ডজনিত বুক ব্যথা বা অন্য যেকোনো ধরনের বুক ব্যথা নির্ণয় করার জন্য হৃৎপিণ্ডের অবস্থা বা কার্যক্ষমতা ভালোভাবে জানার জন্য ইটিটি করা হয়। অপরদিকে করোনারি এনজিওগ্রামের সাহায্যে হৃৎপিণ্ডের রক্তনালিতে কোনো ব্লক আছে কি-না তা পরীক্ষা করা হয়।রোগ চিকিৎসক অন্তুর দেহে যে যন্ত্রটি স্থাপন করেন তা হলো পেসমেকার।

গ অন্তুর সুস্থতায় পেসমেকারের ভূমিকা নিচে ব্যাখ্যা করা হলো-

অন্তুর হৃৎপিণ্ডের Sino Atrial Node বা SAN অকেজো হয়ে পড়ায় তার উক্ত সমস্যার সৃষ্টি হয়। হূৎপিণ্ডের হচক্র সম্পন্ন করতে SAN ভূমিকা রাখে। এই SAN যখন ত্রুটিযুক্ত বৈদ্যুতিক সৃষ্টি করে তখন হৃৎস্পন্দনের ছন্দপতন ঘটে। ফলে শ্বাসকষ্ট ও ক্লান্তি অনুভূত হয় যা অন্তুর ক্ষেত্রে হয়েছে। তাই চিকিৎসক হৃৎপিণ্ডের স্বাভাবিক ছন্দ ফিরিয়ে আনতে অন্তর হৎপিন্ডে যান্ত্রিক পেসমেকার স্থাপন করেন। এই যান্ত্রিক পেসমেকার কৃত্রিমভাবে বৈদ্যুতিক সংকেত সৃষ্টির মাধ্যমে স্বাভাবিক হৃৎস্পন্দন ফিরিয়ে আনে। এই যান্ত্রিক পেসমেকারটি একটি জেনারেটরের কম্পিউটার চিপ এবং হৃৎপিণ্ডে যুক্ত সেন্সরবাহী তার দ্বারা ব্যক্তির চলন, রক্তের তাপমাত্রা, শ্বসন ও বিভিন্ন শারীরিক কর্মকাণ্ডকে নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে একজন অসুস্থ ব্যক্তি আবার পূর্বের ন্যায় সুস্থ জীবন যাপন করতে পারে।

ঘ অন্তুর দেহে পেসমেকার স্থাপনের পর অবশ্যই কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া যেহেতু পেসমেকার ব্যবহার করা যায় না। তাই এটি দেহে স্থাপনের পর পেসমেকারজনিত অস্বস্তি বা সংক্রমণ ইত্যাদি জটিলতা মুক্ত হতে হাসপাতালে প্রয়োজনে কয়েকদিন বা কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে হতে পারে। নিয়মিত রুটিন চেকআপ অবশ্যই গুরুত্বের সাথে করাতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রোগ্রামিং হালনাগাত করাতে হবে।

পেসমেকারের ব্যাটারি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ তাই সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে। পেসমেকারধারীদের সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকতে হয় কঠোর নিরাপত্তাধীন স্থাপনায় (যেমন- বিমান বন্দর, হাসপাতাল, শপিং কমপ্লেক্স, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়) প্রবেশের সময়। নিরাপত্তা গেইটের ভিতর দিয়ে প্রবেশ না করে পাশে দাঁড়ানো কর্মীকে মেটাল ডিটেক্টর বুকের পাশে না ধরে অন্য উপায়ে দেহ পরীক্ষার অনুরোধ করতে হবে।

কারণ হাতে ধরা মেটাল ডিটেক্টর ১ সেকেন্ডের বেশি পেসমেকারের পাশে রাখা যায় না । সুতরাং উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় একজন পেসমেকারধারী ব্যক্তিকে অবশ্যই উক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং নিয়মিত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে। অতএব অন্তুর ক্ষেত্রেও উক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা একান্ত জরুরি।

এই রক্ত ও সঞ্চালন সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর ছাড়াও আরো পড়ুন রুই মাছ

Leave a Comment

You cannot copy content of this page