অভাগীর স্বর্গ গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর

অভাগীর স্বর্গ গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর এর বিস্তারিত নিচে দেওয়া হল যা তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য সহায়ক হবে। তাই এই আর্টিকেলটি অনুসরণ করো এবং অনুশীলন অব্যাহত রাখো। তোমাদের জন্য শুভকামনা।

অভাগীর স্বর্গ গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর

অভাগীর স্বর্গ সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর

কোমলমতি কমলা, স্বামীর সংসারের যে শান্তি তার দেখা হয়নি কখনো। অবহেলায় ও অনাদরে বেড়ে উঠলেও স্বামীর সংসারে সুখ খোঁজার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। অকালে প্রাণ যায় তার। মৃত্যুর পরেও স্বামীর মুখাগ্নি থেকে বঞ্চিত হতে হয় তাকে। স্ত্রী মারা যাওয়ার অল্পদিনের মধ্যেই বিয়ে করে পরাণ। একমাত্র সন্তান প্রতুল সৎমায়ের অনাদর ও নির্যাতনের শিকার হতে থাকে। ফলে প্রতুল অল্পদিনের মধ্যে বাড়ি ছেড়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। 

ক. কাঙালীর মা কোন বংশের মেয়ে? 
খ. মুখুয্যে বিস্মিত ও বিরক্ত হয়েছিল কেন? 
গ. উদ্দীপকের প্রতুল চরিত্রের সাথে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের কাঙালীর সাদৃশ্য বা বৈসাদৃশ্য তুলে ধর।
ঘ. “উদ্দীপকের কমলা ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের অভাগীর প্রতিরূপ হয়ে উঠেছে।”- তোমার যুক্তি তুলে ধর। 

জ্ঞান 

কাঙালির মা দুলে বংশের মেয়ে। 

খ অনুধাবন 

কাঙালীর উপস্থিতি এবং প্রত্যাশায় মুখুয্যে বিস্মিত ও বিরক্ত হয়েছিল। 
সমাজে বসবাসকারী তথাকথিত উচ্চ বংশমর্যাদা এবং আর্থিকভাবে প্রভাবশালী মুখুয্যে মহাশয়ের কাছে নিম্নবর্ণের কাঙালী এবং তার মৃত মা নিতান্ত মর্যাদাহীন। মায়ের শেষ ইচ্ছে পূরণ করতে কাঙালী মুখুয্যে বাড়ির আঙিনায় দাঁড়িয়ে অনেক কাকুতি-মিনতি করছিল। মুখুয্যে মহাশয় কাঙালীর কান্নাভেজা কণ্ঠ শুনে বিরক্ত হয় এবং একই সঙ্গে বিস্মিত হয়। কারণ প্রথমত নিচু জাতের শবদাহ করার প্রচলন নেই এবং দ্বিতীয়ত তার মৃত স্ত্রীর শ্রাদ্ধাদির কাজে ব্যস্ততা। 

সারকথা : নিজে উচ্চ বংশের বলে নিচু জাতের কাঙালীকে দেখে এবং তার কান্নাভেজা কণ্ঠের কথা শুনে মুখুয্যে বিস্মিত ও বিরক্ত হয়েছিল । 

গ প্রয়োগ 

উদ্দীপকের প্রতুলের সঙ্গে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের কাঙালীর সাদৃশ্য এবং বৈসাদৃশ্য নিচে তুলে ধরা হলো

ধর্ম-জাতভেদ করে সমাজের উচ্চশ্রেণি নিম্নশ্রেণির লোকদের ওপর নানাভাবে অত্যাচার-নির্যাতন চালায়। তারা নিজেদের স্বার্থকেই বড় করে দেখে। অনেক সময় নিগৃহীতরা কষ্ট-যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। 

‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে কাঙালী নিতান্ত অসহায় ও মাতৃহারা এক কিশোর। মায়ের মৃত্যুর পর জগৎ-সংসারে তাকে প্রতিনিয়ত বিরূপ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়। কাঙালী নিম্নবর্ণের হওয়ার কারণে সমাজপতিদের দ্বারা নানাভাবে নিগৃহীত হয়। উদ্দীপকের প্রতুলও কাঙালীর মতো খুব অল্প বয়সেই তার মাকে হারায়। মায়ের মৃত্যু এবং বাবার দ্বিতীয় বিয়ে প্রতুলের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে।

যার ফলে সে বাড়ি ছেড়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। মাকে হারানো এবং পরবর্তী সময়ে জীবনের বিরূপ অভিজ্ঞতায় কাঙালীর সঙ্গে প্রতুলের সাদৃশ্য বিদ্যমান। এ ক্ষেত্রে কাঙালী সামাজিক নিগ্রহের শিকার হলেও তার চরিত্রে কোনো নৈতিক বিপর্যয় ঘটেনি। অন্যদিকে প্রতুল জীবনের বিরূপ পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা করতে না পেরে অপরাধে জড়িত হয়। এখানেই কাঙালীর সঙ্গে প্রতুলের বৈসাদৃশ্য লক্ষণীয় । 

উচ্চতর দক্ষতা 

“উদ্দীপকের কমলা ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের অভাগীর প্রতিরূপ হয়ে উঠেছে।”— মন্তব্যটি আংশিক সত্য। 

সারকথা : মাকে হারানো এবং সামাজিক নিগ্রহের শিকার হওয়ার দিক দিয়ে উদ্দীপকের প্রতুলের সঙ্গে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের কাঙালীর সাদৃশ্য রয়েছে। অন্যদিকে অপরাধমূলক কর্মে জড়িয়ে পড়ার দিক থেকে তারা বৈসাদৃশ্যপূর্ণ। 

মানুষ জীবনব্যাপী স্বপ্ন দেখে। জীবনে নানাকিছু প্রত্যাশা করে। সেই প্রত্যাশায় আপনজনদের স্নেহ-মমতা, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা মুখ্য হয়ে ওঠে। জীবনের শেষ ইচ্ছা কারও পূরণ হয়, আবার কারও হয় না। 

‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে অভাগী স্বামী পরিত্যক্তা। একমাত্র সন্তান কাঙালীকে নিয়ে তার অভাব-অনটনের সংসার। তার মনে কেবল এক ক্ষুদ্র সুপ্ত বাসনা ছিল। শেষ বিদায়বেলায় সে স্বামীর পায়ের ধুলো এবং ছেলের হাতের আগুন নিয়ে স্বর্গে যেতে চেয়েছিল। অভাগীর স্বামী রসিক অভাগীর শেষ ইচ্ছেটুকু পূরণ করেছিল। উদ্দীপকের কমলা অভাগীর মতোই হতভাগী। স্বামী-সংসার থাকলেও সেই সংসারে সে সুখ-শান্তির মুখ দেখতে পায়নি। এমনকি মৃত্যুকালে তার সামান্য ইচ্ছেও স্বামীর কাছে গুরুত্ব পায়নি। এক্ষেত্রে অভাগীর স্বামী স্ত্রীর শেষ ইচ্ছেকে গুরুত্ব দিয়েছে । 

উদ্দীপকের কমলা এবং ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের অভাগী দুজনই স্বামীর ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত, উভয়ই সংসারে নিগৃহীত। কমলার জীবন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কোনো ইচ্ছাকেই তার স্বামী গুরুত্ব দেয়নি। তবে অভাগীর ক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম। জীবন সায়াহ্নে সে স্বামীর পায়ের ধুলোর স্পর্শ পেয়েছে। তাই কমলার সঙ্গে অভাগীর একটি নির্দিষ্ট দিক থেকে মিল থাকলেও সার্বিক দিক বিবেচনায় কমলাকে অভাগীর সম্পূর্ণ প্রতিরূপ বলা যায় না। 

সারকথা : স্বামীর পদধূলি পাওয়ার মধ্য দিয়ে অভাগীর ইচ্ছা পূরণ হলেও উদ্দীপকের কমলার তা হয়নি। এ দিক থেকে প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ। 

অভাগীর স্বর্গ সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর

চেয়ারম্যান সাহেবের বাবার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিরাট আয়োজন। এলাকার ধনী গরিব সবাইকে নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। দরিদ্র কৃষক খয়ের আলী, ছেলে রনি ও মেয়ে রেণুকে নিয়ে সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বসার স্থানে ভুল করে খেতে বসেছেন। চেয়ারম্যানের স্ত্রী চিৎকার করে বললেন, ‘এসব অসভ্য ছোট লোকদের দাওয়াত দেওয়াই ভুল হয়েছে।’ চেয়ারম্যানে সাহেব স্ত্রীকে বুঝিয়ে বললেন, ‘এরা সকলেই আমার মেহমান।’ তিনি রনি ও রেণুকে আদর করলেন এবং স্ত্রীর আচরণের জন্য খয়ের আলীর নিকট দুঃখ প্রকাশ করলেন।

ক. অভাগীকে নদীর চড়ায় মাটি দিতে বলেছিল কে? 
খ. মাকে বিশ্বাস করাই কাঙালীর অভ্যাস কেন? 
গ. উদ্দীপকের চেয়ারম্যানের স্ত্রীর আচরণে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. “সমাজের ধনী ব্যক্তিরা যদি উদ্দীপকের চেয়ারম্যানের মতো হতো তাহলে অভাগীকে বৈষম্যের শিকার হতে হতো না।”- উক্তিটি বিশ্লেষণ কর। 

ক জ্ঞান 

অভাগীকে নদীর চড়ায় মাটি দিতে বলেছিল ভট্টাচার্য মহাশয়। 

খ অনুধাবন 

মাকে বিশ্বাস করাই কাঙালীর অভ্যাস, কারণ মা ছাড়া সে অন্য কারও সাহচর্য লাভ করেনি। 

‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে জাতপ্রথার ঘৃণ্য দিক এবং মায়ের প্রতি সন্তানের গভীর বিশ্বাসের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে। অভাগীর একমাত্র সন্তান কাঙালী। জন্মের পর সে বাবার আদর পায়নি। বাবা তার অন্য গ্রামে তাদের ছেড়ে বসতি গড়েছে। শিশুকাল থেকেই রুগণ কাঙালী মায়ের কোল ছেড়ে অন্য কারও সঙ্গে মেশার সুযোগ পায়নি। মা-ই তার সব। মায়ের কাছেই সে পৃথিবীকে জেনেছে, শিখেছে। কাঙালী ছোটবেলা থেকে শুধু মায়ের সাহচর্যে বড় হয়েছে। মায়ের কথাই তার কাছে সত্য। তাই সে স্বাভাবিক নিয়মে মায়ের কথাই বিশ্বাস করে। কারণ মাকে বিশ্বাস করা তার অভ্যাস। 

গ) উদ্দীপকের চেয়ারম্যানের স্ত্রীর আচরণে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের শ্রেণিবৈষম্যের দিকটি ফুটে উঠেছে। 

পৃথিবীতে নানা ধর্ম, বর্ণ ও শ্রেণির মানুষ রয়েছে। কিছু মানুষ তাদের মধ্যে ভেদাভেদের দেয়াল তুলে রাখে। ফলে মানবতা বিপন্ন হয়, মানুষ শোষণ ও বঞ্চনার শিকার হয়। 

উদ্দীপকে চেয়ারম্যান সাহেবের বাবার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এলাকার সবাইকে নিমন্ত্রণ করা হয়। নিমন্ত্রণে দরিদ্র কৃষক খয়ের আলী ছেলেমেয়েদের নিয়ে ভুল করে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বসার স্থানে খেতে বসে। এতে চেয়ারম্যানের স্ত্রী রেগে যান। খয়ের আলীকে অসভ্য, ছোটলোক বলে অপমান করেন। তার এই আচরণ ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের শ্রেণিবৈষম্যের কথা মনে করিয়ে দেয়। আলোচ্য ‘গল্পে নিম্নবর্ণের হওয়ায় কাঙালী মায়ের সৎকারের জন্য কাঠ চাইতে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছে। নিচু জাতের বলে জমিদারের নির্দেশে তার কর্মচারীরা তাকে গলাধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। এইভাবে উদ্দীপকের চেয়ারম্যানের স্ত্রীর আচরণে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের শ্রেণিবৈষম্যের দিকটি ফুটে উঠেছে। 

ঘ) উচ্চতর দক্ষতা 

“সমাজের ধনী ব্যক্তিরা যদি উদ্দীপকের চেয়ারম্যানের মতো হতো তাহলে অভাগীকে বৈষম্যের শিকার হতে হতো না।”- উক্তিটি যথার্থ। তৎকালীন হিন্দু সমাজে জাত-পাতের ঘৃণ্য রূপ প্রবলভাবে বিস্তার লাভ করে। শ্রেণিবৈষম্য মানুষকে মানবিকতা থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। আর মানবিকবোধ সম্পন্ন ব্যক্তিরা মানুষকে মানুষ হিসেবে মর্যাদা দেয়, সম্মান করেন, ভালোবাসেন। 

উদ্দীপকের চেয়ারম্যান একজন মহৎ ও উদার প্রকৃতির মানুষ। তিনি মিথ্যা আভিজাত্যের গৌরবে মোহাবিষ্ট না থেকে সাধারণ দরিদ্র চাষিকে -আদর-যত্ন করেছেন। তিনি স্ত্রীকে বোঝান যে সবাই তার মেহমান। তিনি স্ত্রীর আচরণের জন্য খয়ের আলীর কাছে দুঃখও প্রকাশ করেন। এখানে তার চেতনায় ভ্রাতৃত্ব, সাম্য ও মানবিকতার নিদর্শন ফুটে উঠেছে। অন্যদিকে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে সামন্তপ্রভু ঠাকুরদাস মুখুয্যে ও অধর রায়ের নিষ্ঠুরতায় কাঙালী তার মায়ের সৎকার পর্যন্ত করতে পারেনি। কাঙালীকে তারা নিচু জাতের বলে ঘাড় ধরে বের করে দিয়েছে। কিন্তু ঠাকুরদাস ও অধর রায় যদি চেয়ারম্যান সাহেবের চেতনাকে ধারণ করত তবে অভাগীকে বৈষম্যের শিকার হতে হতো না। ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ধনীরা বৈষম্যপূর্ণ মানসিকতার কারণে কাঙালীকে মায়ের সৎকারে সাহায্য করেনি। তারা যদি উদ্দীপকের চেয়ারম্যান সাহেবের মতো মানবিক হতো তাহলে অভাগীকে শ্রেণিবৈষম্যের শিকার হতে হতো না। তার শেষ ইচ্ছা পূরণ হতো। তাই বলা যায় যে, প্রশ্নোক্ত উক্তিটি যথার্থ। 

অভাগীর স্বর্গ সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর 

রহিম চৌধুরী কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েও সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত। কিছুদিন পূর্বে তাঁর বড় মেয়ের বিয়েতে এলাকার সকলকে দাওয়াত দেন। তিনি ধনী-গরিবের মধ্যে কোনো পার্থক্য করেননি। তাঁর এ আচরণে এলাকার দরিদ্র জনগণ খুবই সন্তুষ্ট। 

ক জ্ঞান 

ঠাকুরদাস মুখুয্যের স্ত্রী সাত দিনের অসুখে মারা গেলেন। 

ক. ঠাকুরদাস মুখুয্যের স্ত্রী কয়দিনের অসুখে মারা গেলেন? 

খ. রসিক দুলে তার পায়ের ধুলো দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলল কেন? 

গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের বৈসাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর। 

ঘ. “অভাগীর আশা পূর্ণতা পাওয়ার জন্য রহিম চৌধুরীদের মতো মানুষ প্রয়োজন”- বক্তব্যটির যথার্থতা বিচার কর। 

খ অনুধাবন 

• 

স্ত্রীর প্রতি কর্তব্য পালন না করা এবং স্ত্রীর কাছে তার নিজের গুরুত্ব উপলব্ধি করে রসিক দুলে তার পায়ের ধুলো দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলল। 

গ প্রয়োগ 

মানবিক ও শ্রেণিবৈষম্যহীন চেতনার দিক থেকে উদ্দীপকের সঙ্গে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের বৈসাদৃশ্য রয়েছে। 

মানুষ মানুষেরই জন্য, জীবন জীবনেরই জন্য। কিন্তু মানবিকতার এই মূলমন্ত্র বর্তমান সমাজ সভ্যতায় খুব একটা পরিলক্ষিত হয় না। অনেকে হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে রাখে, আবার অনেকে কোনো ভেদাভেদ স্বীকার করেন না। উদ্দীপকে মানবিকতার উজ্জ্বল নিদর্শন দেখা যায় রহিম চৌধুরীর মাঝে। তিনি অনেক ধন-সম্পদের মালিক হয়েও সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত। নিজের মেয়ের বিয়েতে তিনি এলাকার আপামর জনসাধারণকে নিমন্ত্রণ করেন। সেখানে জাতভেদ বা শ্রেণিভেদ কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি। এই চেতনাটি ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের উপস্থাপিত জাত-পাতের ভেদাভেদের সঙ্গে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ। আলোচ্য গল্পে বর্ণিত হয়েছে তৎকালীন হিন্দু সমাজে বর্ণ-বৈষম্য, তথাকথিত নীচ বর্ণের মানুষদের উপর জুলুম, নির্যাতন, অত্যাচার ইত্যাদি। এই জাতপ্রথার বলি হয়েই কাঙালীর মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণ হয়নি। নীচ জাতের ছেলে বলে কাঙালীকে অবহেলা, অপমান সহ্য করতে হয়েছে। মায়ের মুখাগ্নি করার জন্য নিজের বাড়ির আঙ্গিনার গাছ কাটারও অনুমতি পায়নি ব্রাহ্মণ জমিদারের কাছ থেকে। সমাজের এই বর্ণভেদ, শ্রেণিভেদ চেতনার সঙ্গে উদ্দীপকটি বৈসাদৃশ্যপূর্ণ। 

সারকথা : উদ্দীপকে মানবতার কথা, সাম্যের কথা বলা হয়েছে। ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে জাত-পাতের দোহাই দিয়ে দরিদ্রের প্রতি শোষণের 5 দিকটি ফুটে উঠেছে। এখানেই উদ্দীপকের সঙ্গে আলোচ্য গল্পের বৈসাদৃশ্য রয়েছে। 

রসিক দুলে অভাগীর স্বামী। কিন্তু স্ত্রী অভাগীর প্রতি কোনো কর্তব্যই সে পালন করেনি। তাদের একমাত্র ছেলে কাঙালী। রসিক আরও একটা বিয়ে করে অন্য গ্রামে চলে যায়। এদিকে অভাগী অভাব-অনটনের মধ্যে ছেলেকে বুকে নিয়ে দিন কাটায়। প্রায় বিনা চিকিৎসায় আজ সে মৃত্যুপথযাত্রী। অভাগী মৃত্যুর আগে স্বামীর পায়ের ধুলো নিতে চাইলে কাঙালী গিয়ে তাকে ডেকে আনে। তখন রসিক দুলে অভাগীকে পায়ের ধুলো দিতে গিয়ে নিজের কৃতকর্ম এবং তার প্রতি স্ত্রীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ দেখে কেঁদে ফেলল। 

5″ সারকথা : মীর প্রতি কর্তব্য পালনে অবহেলা সত্ত্বেও তার কাছে নিজের অবস্থান উপলব্ধি করতে পেরে রসিক দুলে তাকে পায়ের ধূলো দিতে 

উচ্চতর দক্ষতা 

“অভাগীর আশা পূর্ণতা পাওয়ার জন্য রহিম চৌধুরীদের মতো মানুষ প্রয়োজন”- মন্তব্যটি যথার্থ। 

অনেকে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে। জাত-পাতের দোহাই দিয়ে অপেক্ষাকৃত দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সমাজের ধনিকশ্রেণি দাবিয়ে রাখে, যা মানবিকতার পরিপন্থী। তবে অনেকে এই জাত-পাতের অসারতা উপলব্ধি করে মানবিকতার জয়গানে নির্যাতিত মানুষকে মুক্তির পথ দেখান। 

উদ্দীপকের রহিম চৌধুরী মানবতাবাদী মানুষ। তিনি অঢেল অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েও সাধারণ জীবনযাপন করতে পছন্দ করেন। নিজের মেয়ের বিয়েতে আপামর গ্রামবাসীকে নিমন্ত্রণ করে সাম্যবাদী চেতনার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। কিন্তু ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে অসাম্য সমাজব্যবস্থা প্রতিভাত হয়েছে। জাতভেদ ও ধনী-দরিদ্রভেদ সেই সমাজকে কলুষিত করেছে। 

‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের অভাগী সমাজে তথাকথিত নীচ জাতের স্বামী-পরিত্যক্তা এক নারী। একমাত্র সন্তান কাঙালীকে নিয়ে সে কোনোক্রমে জীবন চালায়। কিন্তু দারিদ্র্যের কশাঘাতে সে বিনা চিকিৎসায়ই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। তার ইচ্ছা ছিল ছেলে কাঙালীর হাতের মুখাগ্নি নিয়ে স্বর্গবাসী হওয়া। কিন্তু শোষক জমিদার জাত-পাতের বিভেদ-বৈষম্য করে কাঙালীকে তার মায়ের শেষ ইচ্ছে পূরণ করতে দেয় না। এক্ষেত্রে উদ্দীপকের রহিম চৌধুরীর মতো মানবতাবাদী মানুষ থাকলে হয়তো অভাগীর আশা পূর্ণতা পেত। তাই বলা যায়, মন্তব্যটি যথার্থ। 

সারকথা : উদ্দীপকে মানবতাবাদী রহিম চৌধুরীর মাঝে সাম্যবাদী চেতনার প্রকাশ ঘটেছে। ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে সমাজের শোষকশ্রেণির বৈষম্যপূর্ণ মানসিকতার প্রকাশ ঘটেছে। অভাগীর শেষ আশা রহিম চৌধুরীর মতো মানবতাবাদী মানুষ সমাজে থাকলে পূর্ণতা পেত। 

Read More:

Leave a Comment

You cannot copy content of this page