পরিপাক ও শোষণ সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর | মানব শারীরতত্ত্ব | পরিপাক ও শোষণ বোর্ড প্রশ্ন ও উত্তর | HSC | ৩য় অধ্যায় সাজেশন

পরিপাক ও শোষণ সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর | মানব শারীরতত্ত্ব | পরিপাক ও শোষণ বোর্ড প্রশ্ন ও উত্তর | HSC | ৩য় অধ্যায় সাজেশন থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য সর্বশেষ বোর্ডে আশা গুরুত্বপূর্ণ ও কমন উপযোগী সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি।

রাজশাহী বোর্ড ২০২১

উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির ছাত্র রনি মানবদেহের পরিপাকতন্ত্র সম্পর্কে পড়ে জানতে পারল যে, ডায়াফ্রামের নিচে একটি বাঁকানাে থলি আছে। থলিটির ডান পাশে রয়েছে একটি বড় গ্রন্থি যা পরিপাকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ক, এপিগ্নটিস কী?
খ. কাইলােমাইক্রন কীভাবে শােষিত হয়?
গ. দেহকে সতেজ রাখতে থলিটির কার্যক্রম ব্যাখ্যা করাে।
ঘ, অভ্যন্তরীণ স্থিতি রক্ষায় উক্ত গ্রন্থিটির প্রয়ােজনীয়তা আলােচনা করাে।

ক) জিহবার গোড়ার দিকে শ্বাসনালির অংশে ছোট উদগত অংশ যা অন্ননালির উপর এমন এক ঊর্ধ্বগামী বলপ্রয়োগ করে যাতে চিবানো খাদ্য শ্বাসনালির ভিতর প্রবেশ না করে অন্ননালিতে প্রবেশ করে তাকে এপিগ্লটিস বলে।

খ) সক্রিয় ফ্যাটি অ্যাসিড, ফসফোলিপিড, কোলেস্টেরল ও প্রোটিন একত্রে যুক্ত হয়ে কাইলোমাইক্রন কণার সৃষ্টি করে যা ভিলাইয়ের কোষ পর্দা অতিক্রম করে লসিকাবাহে প্রবশে করে। কাইলোমাইক্রন নামক অপেক্ষাকৃত বড় বড় স্নেহকণা এক্সোসাইটোসিস (প্লাজমামেমব্রেনের মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় পদার্থসমূহ) প্রক্রিয়ায় শোষণকারী কোষ থেকে বেরিয়ে ভিলাসের কেন্দ্রীয় লসিকানালী তথা ল্যাকটিয়েলে প্রবেশ করে এবং সেখান থেকে লসিকাতন্ত্রের মাধ্যমে শিরাতন্ত্রের রক্তপ্রবাহে ছড়িয়ে পড়ে ।

গ নং প্রশ্নের উত্তর

(গ) উদ্দীপকের থলিটি হলো পাকস্থলি। অন্ননালি ও ক্ষুদ্রান্ত্রের মধ্যবর্তী স্থানে পাকস্থলির অবস্থান। এর আকৃতি থলের মত। এর প্রাচীর বেশ পুরু ও পেশিবহুল, গলবিল ও অন্ননালির ক্রমসংকোচনের ফলে পিচ্ছিল খাদ্যবস্তু এখানে এসে জমা হয়। পাকস্থলি নিম্নরূপ কাজগুলো করে থাকে—

১. পাকস্থলিতে সাময়িকভাবে খাদ্যবস্তু জমা থাকে।
২. গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থির হাইড্রোক্লোরিক এসিড দ্বারা খাদ্য জীবাণুমুক্ত হয়।
৩. পাকস্থলি গৃহীত খাদ্যবস্তুর সাথে গ্যাস্ট্রিক রসের মিশ্রণ ঘটিয়ে খাদ্যকে কাইমে পরিণত করে।
৪. গ্যাস্ট্রিক রসের সাহায্যে কিছু খাদ্যের আংশিক পরিপাক সম্পন্ন হয়।

ঘ নং প্রশ্নের উত্তর

(ঘ) উদ্দীপকের গ্রন্থিটি হলো যকৃত। অভ্যন্তরীণ স্থিতি রক্ষায় যকৃতের ভূমিকা নিম্নে প্রদান করা হলো-

১. শর্করা বিপাক : যকৃত গ্লাইকোজেনেসিস প্রক্রিয়ায় গ্লাইকোজেন এবং ইনসুলিন নিঃসরণের মাধ্যমে শর্করা বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে।
২. প্রোটিন বিপাক : যকৃত ডিঅ্যামিনেশন এবং প্লাজমা প্রোটিন উৎপাদনের মাধ্যমে প্রোটিন বিপাকে অংশগ্রহণ করে।
৩. ফ্যাট বিপাক : যকৃত অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেটকে ফ্যাটে রূপান্তর করে এবং রক্ত থেকে ক্লোলেস্টেরল সরিয়ে ফ্যাট বিপাকে অংশগ্রহণ করে।

৪. তাপ উৎপাদন : যকৃতের অভ্যন্তরে নানা ধরনের বিক্রিয়া সংঘটিত হওয়ায় এখানে প্রচুর তাপ উৎপাদিত হয়। এই তাপ দেহের সমগ্র সঞ্চালিত হয়ে তাপমাত্রার স্থিতিশীলতা বজায় রাখে।
৫. টক্সিন বা বিষ অপসারণ : যকৃত কোষের অভ্যন্তরে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় এই বিষ প্রশমিত করে ।
৬. হরমোন ভাঙ্গন: যকৃত বিভিন্ন হরমোনের কর্মকাণ্ডে স্থায়ী অভ্যন্তরীণ পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে হরমোন ভাঙ্গন নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া যকৃত লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদন ও ভাঙ্গন, হিমোগ্লোবিনের ভাঙ্গন, কোলেস্টেরল উৎপাদন, পিত্ত উৎপাদন এর মাধ্যমে বিভিন্ন বিপাকীয় ভূমিকায় অংশগ্রহণ করে।

পরিপাক ও শোষণ সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর | মানব শারীরতত্ত্ব | পরিপাক ও শোষণ বোর্ড প্রশ্ন ও উত্তর | HSC | ৩য় অধ্যায় সাজেশন

চট্টগ্রাম বোর্ড ২০২১

ক Obesity কী
খ, পরিপাকে দাঁতের ভূমিকা উল্লেখ করাে।
গ. উদ্দীপকের ‘A’ চিহ্নিত অঙ্গের যান্ত্রিক ও রাসায়নিক পরিপাক ব্যাখ্যা করাে।
ঘ. উদ্দীপকের ‘B’ চিহ্নিত অঙ্গের শর্করা পরিপাক ও বিপাকীয় ভূমিকা বিশ্লেষণ করাে ।

ক) হরমোনজনিত কারণে বা অন্য কোনো কারণে অস্বাভাবিকভাবে শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়াই হলো Obesity বা স্থূলতা।

খ) পরিপাকে দাঁতের ভূমিকা নিম্নরূপ-
মানব মুখব্বিরের মধ্যে উভয় চোয়ালে চারটি কর্তন, দুটি ছেদন, চারটি অগ্রপেষক ও ছয়টি পেষক দন্ত আছে। কর্তন দন্ত খাদ্যবস্তুকে কাটতে, ছেদন দাঁত ছিঁড়তে এবং অগ্রপেষক ও পেষক, দাঁত খাদ্যবস্তু চর্বণে কাজ করে পরিপাকে সাহায্য করে।

গ নং প্রশ্নের উত্তর

গ) উদ্দীপকের “A” অঙ্গটি হলো পাকস্থলি। নিম্নে পাকস্থলিতে যান্ত্রিক ও রাসায়নিক পরিপাক ব্যাখ্যা করা হলো-

১. যান্ত্রিক পরিপাক : মুখ থেকে চর্বিত খাদ্য অন্ননালি পথে পাকস্থলিতে এসে ২-৬ ঘণ্টা কাল অবস্থান করে। এ সময় HCI ক্ষরিত হয়ে খাদ্যবাহিত অধিকাংশ ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে দেয়। মসৃণ পেশির ৩টি স্তর নিয়ে পাকস্থলি গঠিত। পেশিস্তর বিভিন্ন দিকমুখি হওয়ায় পাকস্থলি প্রাচীর নানাদিকে সঞ্চালিত হয়ে (মোচাড় দিয়ে, সংকুচিত হয়ে কিংবা চাপা হয়ে) মুখগহ্বর থেকে আসা অর্ধচূর্ণ খাদ্য পিষে পেস্ট এ পরিণত করে। এ সময় গ্যাস্ট্রিক জুস ক্ষরিত হয়ে পাকস্থলির যান্ত্রিক চাপে পিষ্ট খাদ্যের সঙ্গে মিশে ঘন স্যুপের মতো মিশ্রণে পরিণত হয়। খাদ্যের এ অবস্থা কাইম বা মণ্ড নামে পরিচিত। এর উপর গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি নিঃসৃত বিভিন্ন এনজাইমের পরিপাক কাজ শুরু হয়ে যায়।

২. রাসায়নিক পরিপাক : পাকস্থলির প্রাচীর পেশিবহুল এবং গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি সমৃদ্ধ । গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি এক ধরনের নলাকার গ্রন্থি এবং চার ধরনের কোষে গঠিত। প্রত্যেক ধরনের কোষের ক্ষরণ আলাদা। সম্মিলিতভাবে গ্যাস্ট্রিক, গ্রন্থির ক্ষরণকে “গ্যাস্ট্রিক জুস” বলে। এর ৯৯.৪৫%ই পানি। গ্যাস্ট্রিন নামক হরমোন এই জুস্ ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে। নিম্নলিখিত তিনটি উপয়ে পাকস্থলিতে রাসায়নিক পরিপাক সংঘটিত হয়।

শর্করা পরিপাক : পাকস্থলি থেকে শর্করাবিশ্লেষী কোনো এনজাইম নিঃসৃত হয় না। ফলে শর্করা জাতীয় খাদ্যের কোনো পরিবর্তন ঘটে না।

আমিষ পরিপাক : গ্যাস্ট্রিক জুসে পেপসিনোজেন ও প্রোরেনিন নামক নিষ্ক্রিয় প্রোটিওলাইটিক (আমিষ বিশ্লেষী) এনজাইম থাকে। এ দুটি নিষ্ক্রিয় এনজাইম গ্যাস্ট্রিক জুসের HCI-এর সাথে বিক্রিয়া করে যথাক্রমে পেপসিন ও রেনিন নামক সক্রিয় এনজাইমে পরিণত হয়। পেপসিন অম্লীয় মাধ্যমে জটিল আমিষের আর্দ্র বিশ্লেষণ ঘটিয়ে প্রোটিওজ ও পেপটোন-এ পরিণত করে। রেনিন দুগ্ধ আমিষ কেসিনকে প্যারাকেসিনে পরিণত করে।

১. আমিষ + পানি (পেপসিন) → প্রোটিওজ + পেপটোন
২. কেসিন (দুগ্ধ আমিষ) + পানি( রেনিন ) → প্যারাকেসিন
৩. প্যারাকেসিন (পেপসিন )→ পেপটোন

স্নেহ পরিপাক : পাকস্থলির প্রাচীর থেকে গ্যাস্ট্রিক লাইপেজ নামক এনজাইম নিঃসৃত হয়। এটি প্রশমিত স্নেহদ্রব্যকে ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারল-এ পরিণত করে।

স্নেহদ্ৰব্য(গ্যাস্ট্রিক লাইপেজ)→ ফ্যাটি এসিড + গ্লিসারল

অর্ধপাচিত এ খাদ্য ধীরে ধীরে ক্ষুদ্রান্ত্রে প্রবেশ করে। পাকস্থলির পাইলোরিক প্রান্তে অবস্থিত স্ফিংক্টার পাকস্থলি থেকে ডিওডেনামে খাদ্যের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করে।

ঘ নং প্রশ্নের উত্তর

ঘ) উদ্দীপকের “B” চিহ্নিত অঙ্গটি হলো অগ্ন্যাশয় । অগ্ন্যাশয় পাকস্থলির নিচে অবস্থিত এবং উদর গহ্বরের ডিওডেনামের অর্ধবৃত্তাকার কুন্ডলীর ফাঁক থেকে প্লীহা পর্যন্ত বিস্তৃত। অগ্ন্যাশয়ের বহিঃক্ষরা অংশের মধ্যে কিছু কোষ একত্রিত হয়ে বিক্ষিপ্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপের মতো একেকটি অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি সৃষ্টি করে। এদের আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্স বলে। প্রতিটি দ্বীপ গ্রন্থি থেকে ইনসুলিন, গ্লুকাগন, সোমাটোস্ট্যানিন প্রভৃতি হরমোন নিঃসৃত হয়। ইনসুলিন রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমায়।

অপরদিকে গ্লুকাগন রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়ায়। রক্তে যখন গ্লুকোজের পরিমাণ কমে যায় তখন গ্লুকাগন নিঃসৃত হয়। গ্লুকাগনের প্রভাবে যকৃতের গ্লাইকোজেন গ্লুকোজে পরিবর্তিত হয়। ফলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। অপরদিকে, ইনসুলিন গ্লুকাগনের বিপরীত কাজ করে। খাবারের পর রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে গেলে ল্যাঙ্গারহ্যান্সের দ্বীপপুঞ্জ থেকে ইনসুলিন নিঃসৃত হয়। আর এভাবেই গ্লুকাগন ও ইনসুলিনের পারস্পরিক ক্রিয়ার ফলে রক্তে গ্লুকোজের একটি নির্দিষ্ট মাত্রা বজায় থাকে।

পরিপাক ও শোষণ সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর | মানব শারীরতত্ত্ব | পরিপাক ও শোষণ বোর্ড প্রশ্ন ও উত্তর | HSC | ৩য় অধ্যায় সাজেশন

ময়মনসিংহ বোর্ড ২০২১

ক, পরিপাক কী?
খ. মিশ্রগ্রন্থি বলতে কী বােঝ?
গ. উদ্দীপকের ‘B’ অঙ্গটি থেকে যে অ্যাসিড নিঃসৃত হয় উহার কাজ বর্ণনা করাে।
ঘ. উদ্দীপকের ‘A’ অজগটিকে “জৈব রসায়নাগার” বলা হয়-বিশ্লেষণ করাে।

ক) যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় জটিল খাদ্যবস্তু বিভিন্ন এনজাইমের সহায়তায় ভেঙে জীবদেহের বিপাক ক্রিয়ায় ব্যবহারযোগ্য সরল দ্রবণীয় ও শোষণযোগ্য অবস্থায় পরিবর্তিত হয় তাই পরিপাক ।

খ) যে গ্রন্থি একই সাথে বহিঃক্ষরা ও অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি হিসেবে কাজ করে তাকে মিশ্রগ্রন্থি বলে। যেমন : অগ্ন্যাশয়, এটা অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি হিসেবে আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যানস নামক কোষগুচ্ছ থেকে বিভিন্ন হরমোন যেমন— ইনসুলিন, গ্লুকাগন ক্ষরণ করে। আবার বহিঃক্ষরা গ্রন্থি হিসেবে বিভিন্ন পরিপাককারী এনজাইম যেমন : ট্রিপসিন, লাইপেজ ইত্যাদি ক্ষরণ করে।

গ নং প্রশ্নের উত্তর

গ) উদ্দীপকের “B” অঙ্গটি হলো পাকস্থলি। পাকস্থলি হতে HCI এসিড নিঃসৃত হয় যা নিম্নলিখিত কাজ সম্পন্ন করে।
১. পাকস্থলির অন্তর্গাত্র থেকে নিঃসৃত পুরু মিউকাস স্তর HCI এর আক্রমণ রোধকারী ভৌত প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে। পাকস্থলির অন্তর্গাত্র থেকে ক্ষরিত বাইকার্বনেট প্রকৃতপক্ষে একটি বেস এবং এটি HCI কে প্রশমিত করে।
৩. এনজাইম পেপসিন প্রথমে পেপসিনোজেন নামক প্রোএনজাইম হিসেবে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় ক্ষরিত হয়। HCI এর সংস্পর্শে এলে এটি সক্রিয় পেপসিনে পরিণত হয়।
৪. পাকস্থলির অন্তঃস্থ এপেথেলিয়ামের কোষগুলো ঘন সংলগ্ন থাকায় ও দৃঢ় সংবদ্ধ থাকায় HCI কিছুতেই এপিথেলিয়ামের ক্ষতি করতে পারে না।

ঘ নং প্রশ্নের উত্তর

ঘ) উদ্দীপকের “A” অঙ্গটি হলো যকৃত। যকৃতকে জৈব রসায়নাগার,বলার কারণ-

মানবদেহের সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থি হলো যকৃত । যকৃত থেকে পিত্তরস নিঃসৃত হয় যা খাদ্য পরিপাকের একটি অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। যকৃতে নানা ধরনের গুরুত্বপূর্ণ জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটিত হয়। যা দেহের বিপাক ক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এজন্য যকৃতকে জৈব রসায়ানাগার বলা হয়। যকৃত প্রায় ৫০০ ধরনের জৈবনিক কাজ সম্পন্ন করে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা।

পরিপাক ও শোষণ সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর | মানব শারীরতত্ত্ব | পরিপাক ও শোষণ বোর্ড প্রশ্ন ও উত্তর | HSC | ৩য় অধ্যায় সাজেশন

যশোর বোর্ড ২০২১

শিক্ষাদানকালে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বললেন খাদ্য পরিপাকে এনজাইম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিনি আরও বললেন, “খাদ্য পরিপাকে শুধু এনজাইম নয় হরমােন এর ভূমিকা অপরিহার্য।”

ক, পৌষ্টিক গ্রন্থি কী?
খ. স্থূলতা বলতে কী বােঝ?
গ. প্রােটিন খাদ্য পরিপাকে উদ্দীপকের প্রথমােক্ত জৈব রাসায়নিক উপাদানের ভূমিকা লেখাে।
ঘ. উদ্দীপকে শিক্ষকের শেষােক্ত উক্তিটি বিশ্লেষণ করাে।

ক) পৌষ্টিকতন্ত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট যেসব গ্রন্থি থেকে বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক রস নিঃসৃত হয়ে খাদ্য পরিপাকে অংশগ্রহণ করে তাদের পৌষ্টিক গ্রন্থি বলে ।

খ) আদর্শ দৈহিক ওজনের ২০% বা তারও বেশি পরিমাণ মেদ দেহে সঞ্চিত হলে তাকে স্থূলতা বলে। ব্যক্তি পর্যায়ে অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ, কিন্তু পর্যাপ্ত কায়িক পরিশ্রম না করাকে স্থূলতার প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।

গ নং প্রশ্নের উত্তর

গ) উদ্দীপকে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য পরিপাকে এনজাইমের ভূমিকা নিম্নরূপ-

আমিষ পরিপাক : গ্যাস্ট্রিক জুসে পেপসিনোজেন ও প্রোরেনিন নামক নিষ্ক্রিয় প্রোটিওলাইটিক (আমিষ বিশ্লেষী) এনজাইম থাকে। এ দুটি নিষ্ক্রিয় এনজাইম গ্যাস্ট্রিক জুসের HCI-এর সাথে বিক্রিয়া করে যথাক্রমে পেপসিন ও রেনিন নামক সক্রিয় এনজাইমে পরিণত হয়। পেপসিন অম্লীয় মাধ্যমে জটিল আমিষের আর্দ্র বিশ্লেষণ ঘটিয়ে প্রোটিওজ ও পেপটোন-এ পরিণত করে। রেনিন দুগ্ধ আমিষ কেসিনকে প্যারাকেসিনে পরিণত করে।

১. আমিষ + পানি (পেপসিন) → প্রোটিওজ + পেপটোন
২. কেসিন (দুগ্ধ আমিষ) + পানি( রেনিন ) → প্যারাকেসিন
৩. প্যারাকেসিন (পেপসিন )→ পেপটোন

ক্ষুদ্রান্ত্রে পরিপাক : অগ্ন্যাশয় রসে আমিষ পরিপাককারী এনজাইম ট্রিপসিন, কাইমোট্রিপসিন, কার্বোক্সিপেপটাইডেজ, ট্রাইপেপটাইজে, ডাইপেপটাইডেজ, কোলাজিনেজ ইত্যাদি বিদ্যমান থাকে। এরা আমিষ খাদ্যের উপর নিম্নরূপ ক্রিয়া করে আমিষ পরিপাক সম্পন্ন করে-

প্রোটিওজ ও পেপটোন ( ট্রিপসিন / কাইমোট্রিপসিন) → পলিপেপটাইড
পলিপেপটাইড(কার্বোক্সিপেপ্টাইডেজ) → অ্যামিনো এসিড
ট্রাইপেপ্টাইড(ট্রাইপেপ্টাইডেজ) → অ্যামিনো এসিড
ডাইপেপটাইড (ডাইপেপ্টাইডেজ) অ্যামিনো এসিড
কোলাজেন(কোলাজিনেজ) → অ্যামিনো এসিড

এছাড়া আন্ত্রিক রসে আমিষ পরিপাককারী এনজাইম ইরেপসিন থাকে। এটি ডাইপেপটাইডকে অ্যামিনো এসিডে পরিণত করে।
ডাইপেপটাইড(ইরেপসিন) → অ্যামিনো এসিড

ঘ নং প্রশ্নের উত্তর

উদ্দীপকে খাদ্য পরিপাকে এনজাইম নয় হরমোন এর ভূমিকাও অপরিহার্য। খাদ্য পরিপাকে নানা ধরনের এনজাইম যেমন— টায়ালিন, মল্টেজ, পেপসিন রেনিন, ট্রিপসিন ইত্যাদি এনজাইম ভূমিকা রাখলেও এসব এনজাইমকে নিঃসৃত হতে উদ্দীপনা যোগায় এবং নিঃসরণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। বিভিন্ন ধরনের হরমোন। খাদ্য পরিপাক নিয়ন্ত্রণকারী হরমোনগুলো হলো-

১. গ্যাস্ট্রিন : পাকস্থলির প্রাচীর হতে গ্যাস্ট্রিন নামক হরমোন ক্ষরিত হয়। এর প্রভাবে পাকস্থলির প্রাচীরে বিদ্যমান গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি হতে গ্যাস্ট্রিক রস এবং পাকস্থলির প্রাচীর হতে হাইড্রোক্লোরিক এসিড নিঃসৃত হয়।

২. সিক্রেটিন : অন্ত্রের প্রাচীর থেকে সিক্রেটিন হরমোন ক্ষরিত হয়। এর প্রভাবে অগ্ন্যাশয় থেকে অগ্ন্যাশয় রস নিঃসৃত হয়। এছাড়া এটি পাকস্থলির প্রাচীরকে পেপসিন এনজাইম এবং যকৃতকে পিত্ত ক্ষরণে উদ্দীপিত করে।

৩. কোলেসিস্টোকাইনিন : ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রাচীর থেকে কোলেসিস্টোকাইনিন নামক হরমোন ক্ষরিত হয়। এটি অগ্ন্যাশয়ের বৃদ্ধি ও বিকাশ এবং অগ্ন্যাশয় রস ক্ষরণকে উদ্দীপিত করে। এছাড়া এটি পিত্তথলি থেকে পিত্তরস বের হতে উদ্দীপনা প্রদান করে।

৪. এন্টেরোকাইনিন : ইলিয়ামের প্রাচীর থেকে এন্টেরোকাইনিন হরমোন ক্ষরিত হয়। এ হরমোনের প্রভাবে ইলিয়ামের প্রাচীরে বিদ্যমান আন্ত্রিক গ্রন্থি থেকে মল্টেজ, সুক্রেজ, ইনভারটেজ ও ল্যাকটেজ এনজাইম নিঃসৃত হয়।
৫. পেপটাইড YY : ইলিয়ামের প্রাচীর থেকে এ হরমোন ক্ষরিত হয়। এর প্রভাবে অন্ত্রের ভেতর দিয়ে ধীর গতিতে খাদ্য প্রবাহিত হয় যাতে দক্ষতার সাথে খাদ্যের পরিপাক শোষণ সম্পন্ন হয়।

৬. গ্যাস্ট্রিক ইনহ্যাবিটরি পেপটাইড : ডিওডেনামের প্রাচীর থেকে এ হরমোন ক্ষরিত হয়। এটি পাকস্থলি থেকে খাদ্য অন্ত্রে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করে।

সুতরাং উপরোক্ত আলোচনার পরিপেক্ষিতে এটাই প্রতিয়মান হয় যে, পরিপাকে শুধুমাত্র এনজাইম নয় বরং হরমোনও বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

পরিপাক ও শোষণ সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর | মানব শারীরতত্ত্ব | পরিপাক ও শোষণ বোর্ড প্রশ্ন ও উত্তর | HSC | ৩য় অধ্যায় সাজেশন

কুমিল্লা বোর্ড ২০২১

পরিপাকতন্ত্রের প্রধান কাজ খাদ্যদ্রব্য পরিপাক করা। পরিপাকনালির বিভিন্ন অংশে খাদ্যের পরিপাক এবং শোষণ ঘটে। শোষিত খাদ্যসার অতিরিক্ত হলে তা যকৃতে সঞ্চিত হয়।

ক. ইমালসিফিকেশন কী?
খ. পরিপাকতন্ত্রে বৃহদন্ত্র কেন গুরুত্বপূর্ণ?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রধান কাজ সম্পাদনে হরমোনের ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
ঘ.উদ্দীপকের শেষ লাইনটির গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর।

ক) পিত্তরস স্নেহজাতীয় খাদ্যকে ভেঙে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণায় পরিণত করে। এই প্রক্রিয়াকে ইমালসিফিকেশন বলে।

খ মানুষের পরিপাকতন্ত্রের বৃহদন্ত্রের গুরুত্ব অনেক বেশি। কারণ এখানে ৫০০ প্রকার মিথোজীবী ব্যাকটেরিয়া বাস করে যা অপাচ্য অংশের গাঁজন ও পাচন ঘটায়। এছাড়াও ৭০%-৮০% পানি এখানে শোষিত হয়। বৃহদন্ত্র ব্যতীত মানব পরিপাকতন্ত্র অসম্পূর্ণ। তাই বৃহদন্ত্র এতো গুরুত্বপূর্ণ।

গ নং প্রশ্নের উত্তর

গ) উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রধান কাজটি হলো খাদ্য পরিপাক। খাদ্য পরিপাকে বিভিন্ন হরমোন বিভিন্ন ভূমিকা পালন করে। নিচে খাদ্য পরিপাক সম্পাদনে হরমোনের ভূমিকা ব্যাখ্যা করা হলো-
১. গ্যাস্ট্রিন : পাকস্থলি হতে গ্যাস্ট্রিক জুস ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
২. সিক্রেটিন : এই হরমোনটি পরিপাকের সময় অগ্ন্যাশয় রস ও পিত্তরস ক্ষরণে উদ্দীপনা জোগায়।

৩. কোলেসিস্টোকাইনিন : পাকস্থলি ও অগ্ন্যাশয় হতে রস ক্ষরণে উদ্দীপ্ত করে।
৪, সোমাটোস্ট্যাটিন : পাকস্থলি ও অগ্ন্যাশয় হতে রস ক্ষরণ হ্রাস করে।
৫. এন্টেরোকাইনিন : এর প্রভাবে পরিপাকের সময় মন্টেজ, ল্যাকটেজ, ইনভারটেজ, সুক্রেজ এনজাইম ক্ষরিত হয় ।
৬ ভিল্লিকাইনিন : ভিলাইয়ের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।

ঘ নং প্রশ্নের উত্তর

ঘ) উদ্দীপকে যকৃতের সঞ্চয়ী ভূমিকার কথা বলা হয়েছে। যকৃত সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ একটি গ্রন্থি। এর মধ্যে অতিরিক্ত খাদ্যসার সঞ্চিত থাকে। যকৃতের খাদ্যসার সঞ্চয় প্রক্রিয়া বর্ণনা করা হলো-১.গ্লাইকোজেন সঞ্জয় ক্ষুদ্রান্ত থেকে হেপাটিক পোর্টাল শিরার মাধ্যমে গ্লুকোজ যকৃতে প্রবেশ করে। রক্তের অতিরিক্ত গ্লুকোজ গ্লাইকোজেনেসিস প্রক্রিয়ায় গ্লাইকোজেনে রূপান্তরিত হয়ে যকৃতের সঞ্চয়ী কোষে জমা থাকে।

২. চর্বি ও অ্যামিনো এসিড সঞ্চয় : অতিরিক্ত যে শর্করা দেহে ব্যবহৃত হতে পারে না বা গ্লাইকোজেন হিসেবে জমা থাকে না তা চর্বিতে পরিণত করে যকৃত জমা করে রাখে। যকৃত অতিরিক্ত অ্যামিনো এসিড যা প্রোটিন জাতীয় খাদ্য পরিপাকের পর তৈরি হয় তা জমা রাখে। এবং প্রয়োজনে গ্লুকোজে পরিণত করে দেহের কাজে লাগায়।

পরিপাক ও শোষণ সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর | মানব শারীরতত্ত্ব | পরিপাক ও শোষণ বোর্ড প্রশ্ন ও উত্তর | HSC | ৩য় অধ্যায় সাজেশন

সিলেট বোর্ড ২০২১

ক, কাইলােমাইক্রোন কী?
খ. পরিপাকে পিত্তরসের ভূমিকা লেখাে।
গ. উদ্দীপকের A চিহ্নিত অঙ্গের কার্যকারিতা স্নায়ুতন্ত্রের উপর নির্ভরশীল ব্যাখ্যা করাে।
ঘ. উদ্দীপকের B চিহ্নিত অঙ্গের বিপাকীয় ভূমিকা বিশ্লেষণ করাে।

ক) সক্রিয় ফ্যাটি অ্যাসিড, ফসফোলিপিড, কোলেস্টেরল ও প্রোটিন একত্রে যুক্ত হয়ে কাইলোমাইক্রন কণার সৃষ্টি করে যা ভিলাইয়ের কোষ পর্দা অতিক্রম করে লসিকাবাহে প্রবশে করে।

খ) পরিপাকে পিত্তরসের ভূমিকা :
১. এটি অন্ধ্রে ক্ষারীয় মাধ্যম সৃষ্টি করে যা বিভিন্ন খাদ্য পরিপাকের জন্য অত্যাবশ্যক।
২. পিত্তলবণ ফ্যাট জাতীয় খাদ্যকে ইমালসিফিকেশনের মাধ্যমে ক্ষুদ্র কণায় পরিণত করে।
৩. পিত্তলবণ চর্বি, লৌহ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ইত্যাদি শোষণে সাহায্য করে।
৪. ডিওডেনামের pH ভারসাম্য রক্ষা করে বিভিন্ন এনজাইম ক্রিয়ায় সহায়তা করে।

গ নং প্রশ্নের উত্তর

(গ) উদ্দীপকের ‘A’ চিহ্নিত অংশটি হলো পাকস্থলি। পাকস্থলির কার্যকারিতায় স্নায়ুতন্ত্রের গুরুত্ব নিচে আলোচনা করা হলো-
লালারস ক্ষরণ : মুখ গহ্বরে অবস্থিত লালাগ্রন্থি থেকে লালারস ক্ষরণ দু’ধরনের প্রতিবর্তী ক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়-
১. সহজাত প্রতিবর্তী : খাদ্য দ্রব্য মুখগহ্বরে প্রবেশের সাথে সাথে সহজাত প্রতিবর্তী ক্রিয়া শুরু হয়। জিহ্বার স্বাদকুড়ির স্নায়ুগ্রন্থিগুলো বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যের স্বাদের সংস্পর্শে আসে উদ্দীপ্ত হয় এবং সংবেদী স্নায়ু এ উদ্দীপনাকে মস্তিষ্কে প্রেরণ করে। মস্তিষ্কে উদ্দীপনা পৌছানোমাত্র লালরস নিঃসৃত হয়। প্রতিবর্তী ক্রিয়াটি মস্তিষ্ক হয়ে অতিক্রম করে বলে একে ক্রেনিয়াল প্রতিবর্তী ক্রিয়া বলে।

২. অর্জিত প্রতিবর্তী : খাদ্য দেখে ঘ্রাণ নিয়ে বা মুখে পুরে নেয়ার চিন্তা করলে লালাগ্রন্থি থেকে রস নিঃসৃত হয়। এটি অর্জিত প্রতিবর্তী ক্রিয়া। বিজ্ঞানী প্যাভলভ এটি প্রমাণ করেন ।গ্যাস্ট্রিক রস ক্ষরণ : এটি তিনটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়।

১. স্নায়ু পর্যায় এর স্থায়ীকাল এক ঘণ্টা। মুখগহ্বরে খাদ্যবস্তুর উপস্থিতি, ঘ্রাণ, স্বাদ, দর্শন এবং গলাধঃকরণ এক প্রকার স্নায়ু . উদ্দীপনা সৃষ্টি করে যা মস্তিষ্কের ভেগাস স্নায়ু হতে পাকস্থলিতে পৌঁছে এবং গ্যাস্ট্রিক রস নিঃসৃত হয়।

২. গ্যাস্ট্রিন পর্যায় : এটি পাকস্থলিতে সম্পন্ন হয়। এ সময় স্নায়ু ও হরমোন উভয়ে সম্পৃক্ত হয়। উভয়বিধ ক্রিয়ার ফলে HCI সমৃদ্ধ গ্যাস্ট্রিক রস নিঃসরণ প্রায় চার ঘণ্টা যাবৎ চলতে থাকে।

৩. আন্তিক পর্যায় : খাদ্যকণা বা কাইম ডিওডেনামে প্রবেশ করে এর প্রাচীরের সংস্পর্শে আসে তখন হরমোনাল ও স্নায়ুবিক উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। এই উদ্দীপনা মস্তিষ্কে পৌছালে গ্যাস্ট্রিক রস ক্ষরণ বন্ধ হয় এবং কাইমের প্রবেশ ধীরগতি হয় এবং খাদ্য পাকস্থলি থেকে ডিওডেনামে আসা শুরু করে।

ঘ নং প্রশ্নের উত্তর

ঘ) উদ্দীপকের ‘B’ চিহ্নিত অঙ্গটির নাম হলো যকৃত। নিচে যকৃতের বিপাকীয় ভূমিকা প্রদান করা হলো-

১. শর্করা বিপাক : যকৃত গ্লাইকোজেনেসিস প্রক্রিয়ায় গ্লাইকোজেন এবং ইনসুলিন নিঃসরণের মাধ্যমে শর্করা বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে।

২। প্রোটিন বিপাক : যকৃত ডিঅ্যামিনেশন এবং প্লাজমা প্রোটিন, উৎপাদনের মাধ্যমে প্রোটিন বিপাকে অংশগ্রহণ করে।

৩. ফ্যাট বিপাক : যকৃত অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেটকে ফ্যাটে রূপান্তর করে এবং রক্ত থেকে ক্লোলেস্টেরল সরিয়ে ফ্ল্যাট বিপাকে অংশগ্রহণ করে।
৪. তাপ উৎপাদন : যকৃতের অভ্যন্তরে নানা ধরনের বিক্রিয়া সংঘটিত হওয়ায় এখানে প্রচুর তাপ উৎপাদতি হয়। এই তাপ দেহের সমগ্র সঞ্চালিত হয়ে তাপমাত্রার স্থিতিশীলতা বজায় রাখে।
৫. টক্সিন বা বিষ অপসারণ : যকৃত কোষের অভ্যন্তরে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় এই বিষ প্রশমিত করে।
৬. হরমোন ভাঙ্গন : যকৃত বিভিন্ন হরমোনের কর্মকান্ডে স্থায়ী অভ্যন্তরীণ পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে হরমোন ভাঙ্গন নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া যকৃত লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদন ও ভাঙ্গন, হিমোগ্লোবিনের ভাঙ্গন, কোলেস্টেরল উৎপাদন, পিত্ত উৎপাদন এর মাধ্যমে বিভিন্ন বিপাকীয় ভূমিকায় করে।

পরিপাক ও শোষণ সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর | মানব শারীরতত্ত্ব | পরিপাক ও শোষণ বোর্ড প্রশ্ন ও উত্তর | HSC | ৩য় অধ্যায় সাজেশন

বরিশাল বোর্ড ২০২১

মানবদেহের উদর গহ্বরে কিছু পরিপাক গ্রন্থি রয়েছে, যাদের মধ্যে একটি গ্রন্থিকে দেহের বৃহত্তম বহিঃক্ষরা গ্রন্থি হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। অপরটি মিশ্র গ্রন্থি যা বিভিন্নভাবে খাদ্য পরিপাকে সহায়তা করে থাকে।

ক. কাইম কী?
খ. দন্ত সংকেত বলতে কী বুঝায়?
গ. উদ্দীপকের প্রথম গ্রন্থিটির সঞ্চয়ী ভূমিকা বর্ণনা কর।
ঘ. উদ্দীপকের শেষোক্ত উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।

ক) গ্যাস্ট্রিক জুস ক্ষরিত হয়ে পাকস্থলির যান্ত্রিক চাপে পিষ্ট খাদ্যের সঙ্গে মিশে ঘন সুপের মতো মিশ্রণে পরিণত হয়। খাদ্যের এ অবস্থাকে কাইম বলে।

খ) স্তন্যপায়ী প্রাণিদের মধ্যে দাঁতের সংখ্যা ও ধরন যে সংকেতের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় তাকে দত্ত সংকেত বা ডেন্টাল ফর্মুলা বলে। মানুষের চোয়ালে চার ধরনের দাঁত থাকে। একটি সরল রেখার উপর ও নিচে বিভিন্ন প্রকার দাঁতের ইংরেজি নামের প্রথম অক্ষর লিখে ঐ ধরনের দাঁত প্রতি চোয়ালের অর্ধাংশে কয়টি আছে তা লেখা হয়। মানুষের দত্ত সংকেত হচ্ছে-

I2C1P2M3/I2C1P2M3 = 8 x 2/ 8 x 2= 16+16= 32

গ নং প্রশ্নের উত্তর

গ) উদ্দীপকের প্রথম গ্রন্থটি যকৃত। নিম্নে যকৃতের সঞ্চয়ী ভূমিকা প্রদান করা হলো-
১. যকৃত থেকে পিত্তরস নিঃসৃত হয়ে পিত্তথলিতে জমা থাকে যা খাদ্য পরিপাকে বিরতিহীনভাবে সরবরাহ করে।
২. রক্তের অতিরিক্ত গ্লুকোজ যকৃতে গ্লাইকোজেনরূপে সঞ্চিত হয় এবং প্রয়োজনে ভেঙে রক্তের গ্লুকোজ মাত্রা সঠিক রাখে।
৩. যকৃত ডিঅ্যামিনেশন প্রক্রিয়ায় অব্যবহৃত ও অতিরিক্ত অ্যামিনো এসিড ভেঙে অ্যামিনো গ্রুপ (– NH2) পৃথক করে এবং অরনিথিন চক্রের মাধ্যমে ইউরিয়া সৃষ্টি করে।

৪. যকৃতে ভিটামিন (A, D, E, K, B ও B12) সঞ্জিত হয় ।
৫. রক্তের প্লাজমা প্রোটিন যকৃতে সংশ্লেষিত হয়।
৬. যকৃত নতুন লোহিত কণিকা গঠনের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সরবরাহ করে।
৭.যকৃতে RBC-র হিমোগ্লোবিন ভেঙে বিলিরুবিন ও বিলিভার্ডিন সৃষ্টি করে।
৮. যকৃত বিষাক্ত পদার্থ, ব্যাকটেরিয়া ও ক্ষতিকর পদার্থ রক্ত থেকে অপসারণ করে।

ঘ নং প্রশ্নের উত্তর

ঘ) উদ্দীপকের মিশ্র গ্রন্থিটি হলো অগ্ন্যাশয়। অগ্ন্যাশয় বিভিন্নভাবে খাদ্য পরিপাকে সহায়তা করে। অগ্ন্যাশয় একটি মিশ্র গ্রন্থি। এটি একদিকে বহিঃক্ষরা গ্রন্থি অপরদিকে অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি হিসেবে কাজ করে। অগ্ন্যাশয় থেকে অগ্ন্যাশয় রস ক্ষরিত হয়। অগ্ন্যাশয় রসে প্রোটিন, শর্করা ও লিপিড পরিপাককারী নানাবিধ এনজাইম থাকে।

বহিঃক্ষরা গ্রন্থি হিসেবে অগ্ন্যাশয়ের কার্যক্রম বলতে মূলত পরিপাকীয় কাজকেই বোঝায়। অগ্ন্যাশয় রসে বিদ্যমান অ্যামাইলেজ, মল্টেজ, সুক্রেজ, ল্যাক্টেজ এনজাইম শর্করা জাতীয় খাদ্যকে পরিপাক করে। ট্রিপসিন, কাইমোট্রিপসিন, নিউক্লিয়েজ এনজাইম আমিষ জাতীয় খাদ্যকে পরিপাক করে। লাইপেজ এনজাইম স্নেহজাতীয় খাদ্যকে পরিপাক করে।

পরিপাক ও শোষণ সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর | মানব শারীরতত্ত্ব | পরিপাক ও শোষণ বোর্ড প্রশ্ন ও উত্তর | HSC | ৩য় অধ্যায় সাজেশন

ঢাকা বোর্ড ২০২১

উদ্দীপকটি লক্ষ্য কর প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ

ক. স্থূলতা কী?
খ, অগ্ন্যাশয়কে মিশ্রগ্রন্থি বলা হয় কেন?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ‘B’ চিহ্নিত অংশে আমিষজাতীয় খাদ্য পরিপাক বর্ণনা করাে।
ঘ. উদ্দীপকে ‘A’ চিহ্নিত অঙ্গটি বিপাকীয় কাজের পাশাপাশি সঞয়ী কাজেও ভূমিকা রাখে— বিশ্লেষণ করাে ।

ক) আদর্শ দৈহিক ওজনের ২০% বা তারও বেশি পরিমাণ মেদ দেহে সঞ্চিত হয়ে অস্বাভাবিকভাবে মুটিয়ে যাওয়াই হলো স্থূলতা ।

খ) অগ্ন্যাশয়কে মিশ্রগ্রন্থি বলা হয় কারণ অগ্ন্যাশয় একাধারে বহিঃক্ষরা ও অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি হিসেবে কাজ করে। বহিঃক্ষরা গ্রন্থিরূপে এটি অগ্ন্যাশয় রস ক্ষরণ করে, তাতে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাট জাতীয় খাদ্যের পরিপাকের জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম থাকে। অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি হিসেবে আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্স থেকে ইনসুলিন,গ্লুকাগন, গ্যাসট্রিন ও সোমাটোস্ট্যাটিন হরমোন ক্ষরণ করে। দেহের শারীরবৃত্তীয় কাজ নিয়ন্ত্রণে এসব হরমোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

গ নং প্রশ্নের উত্তর

গ) উদ্দীপকে উল্লিখিত B চিহ্নিত অংশটি হলো ক্ষুদ্রান্ত্র। নিচে ক্ষুদ্রান্তে আমিষ জাতীয় খাদ্য পরিপাক বর্ণনা করা হলো-
যান্ত্রিক পরিমাপ : মিউসিন খাদ্যকে পিচ্ছিল করে, পিত্তরস জীবাণুর কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। পিত্তলবণগুলো ক্ষুদ্রান্ত্রের পেশি সংকোচন বাড়িয়ে খাদ্যের গতিকে বৃদ্ধি করে।

রাসায়নিক পরিপাক : ক্ষুদ্রান্তে অগ্ন্যাশয় রস ক্ষুদ্রান্ত্রে অগ্ন্যাশয় রস থেকে নিঃসৃত এনজাইমগুলো হলো- ট্রিপসিন, কাইমোট্রিপসিন, কার্বোক্সিপেপটাইডেজ, অ্যামিনোপেপটাইডেজ, ডাইপেপটাইডেজ, ইলাস্টেজ। এরা আমিষ জাতীয় খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে।

১. ট্রিপসিন : প্রোটিওজ ও পেপটোন(ট্রিপসিন) → পলিপেপটাইড।
২. কাইমোট্রিপসিন : প্রোটিওজ ও পেটোন (কাইমোট্রিপসিন) → পলিপেপটাইড ।
৩ অ্যামিনোপেপটাইডেজঃপলিপেপটাইড( অ্যামিনোপেপটাইডেজ )→ অ্যামিনো এসিড।
৪. ডাইপেপটাইডেজ : ডাইপেপটাইড (ডাইপেপটাইডেজ) → অ্যামিনো এসিড।
৫. ইলাস্টেজ: ইলাস্টিন( ইলাস্টেজ) → পেপটাইড।

আন্ত্রিক রসের অ্যামিনোপেপটাইডেজ পলিপেপটাইডকে অ্যামিনো এসিডে পরিণত করে আমিষ জাতীয় খাদ্যের চূড়ান্ত পরিপাক সম্পন্ন কর।

ঘ নং প্রশ্নের উত্তর

ঘ) উদ্দীপকে ‘A’ চিহ্নিত অংশটি হলো যকৃত। যা মানবদেহের সর্ববৃহৎ গ্রন্থি। যকৃতকে মানবদেহের জৈব রসায়নাগার বলা হয়। এর বিপাকীয় ভূমিকাগুলো হলো- শর্করা বিপাক, প্রোটিন বিপাক ও ফ্যাট বিপাক। এই বিপ্লকীয় ভূমিকার পাশাপাশি যকৃত সঞ্জয়ী, কাজেও ভূমিকা রাখে। এর সঞ্চয়ী ভূমিকাগুলো হচ্ছে-
১. গ্লাইকোজেন সঞ্জয় গ্লুকোজ যকৃতে গ্লাইকোজেন হিসেবে সঞ্চিত থাকে।
2. রক্তসঞ্জয় : যকৃত রক্তের ভাণ্ডার হিসাবে কাজ করে। ১৫০০ সি.সি. রক্ত এতে জমা থাকে। প্রয়োজনে রক্তের অভাব পূরণ করে।

৩. ভিটামিন সঞ্চয় : যকৃত স্নেহে দ্রবণীয় ভিটামিনসমূহ (A, D, E, K), পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন ( B ও C), নিকোটিনিক এসিড (B12) এবং ফলিক এসিড সঞ্চয় করে।
৪. চর্বি ও অ্যামিনো এসিড সঞ্চয় : শর্করাকে চর্বিতে পরিণত করে এবং অ্যামিনো এসিড ও চর্বি সঞ্চয় করে যকৃত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৫. মিনারেল সঞ্চয় : যকৃত লৌহ ও পটাসিয়াম সঞ্চয় করে। লোহিত রক্তকণিকার ভাঙনে হিমোগ্লোবিন যকৃতের কাপফার কোষের মাধ্যমে হিম ও গ্লোবিন-এ পরিণত হয়। হিমের লৌহ অংশ ফেরিটিন হিসেবে যকৃতে জমা থাকে। এছাড়াও কপার, জিঙ্ক,কোবাল্ট ইত্যাদি মিনারেল স্বল্পমাত্রায় যকৃতে সঞ্চিত থাকে।

পরিপাক ও শোষণ সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর | মানব শারীরতত্ত্ব | পরিপাক ও শোষণ বোর্ড প্রশ্ন ও উত্তর | HSC | ৩য় অধ্যায় সাজেশন

দিনাজপুর বোর্ড ২০২১

মুখবিবর→ গলবিল→অন্ননালী →P→Q→ বৃহদন্ত্র

ক. বেরিয়াট্রিকস কী?
খ. যকৃতকে জৈব রসায়নাগার বলা হয় কেন?
গ. উদ্দীপকের ‘P’ চিহ্নিত অংশে নিঃসৃত এনজাইমের কার্যাবলি লেখাে।
ঘ. উদ্দীপকের ‘Q’ অংশ বিভিন্ন খাদ্যসার পরিশােষণের জন্য অপরিহার্য বিশ্লেষণ করাে।

ক) চিকিৎসা বিজ্ঞানের যে শাখায় স্থূলতার কারণ, প্রতিরোধ,চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচার সম্বন্ধে আলোচনা করা হয় তাকে বেরিয়াট্রিকস বলে।

খ) যকৃতকে জৈব রসায়নাগার বলার কারণ-
মানবদেহের সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থি হলো যকৃত। যকৃত থেকে পিত্তরস নিঃসৃত হয় যা খাদ্য পরিপাকের একটি অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। যকৃতে নানা ধরনের গুরুত্বপূর্ণ জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটিত হয় । যা দেহের বিপাক ক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এজন্য যকৃতকে জৈব রসায়ানাগার বলা হয়। যকৃত প্রায় ৫০০ ধরনের জৈবনিক কাজ সম্পন্ন করে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা।

গ নং প্রশ্নের উত্তর

গ) উদ্দীপকের “p” চিহ্নিত অংশটি হলো পাকস্থলি। পকস্থলি হতে নিঃসৃত এনজাইমের নাম ও কার্যাবলি নিম্নরূপ-
পাকস্থলির গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি নিঃসৃত প্রোটিন পরিপাককারী এনজাইম-
১: পেপসিন

১. আমিষ + পানি (পেপসিন) → প্রোটিওজ + পেপটোন
২ জিলেটিন ( জিলেটিনেজ) → পেপটোন ও পলিপেপটাইড
৩. কেসিন (দুগ্ধ আমিষ) + পানি( রেনিন ) → প্যারাকেসিন
৪. প্যারাকেসিন (পেপসিন )→ পেপটোন

ঘ নং প্রশ্নের উত্তর

ঘ) উদ্দীপকের “Q” অংশটি হলো ক্ষুদ্রান্ত। ইহা বিভিন্ন খাদ্যসার শোষণের জন্য অত্যন্ত অপরিহার্য।ক্ষুদ্রান্ত্রে সব ধরনের খাদ্যই সম্পূর্ণভাবে নির্দিষ্ট এনজাইমের ক্রিয়ায় পরিপাক হয়ে সরল, শোষণযোগ্য খাদ্য উপাদানে পরিবর্তিত হয়। ক্ষুদ্রান্ত্রের অন্তঃপ্রাচীরে অবস্থিত রক্তজালকসমৃদ্ধ আঙুলের মতো প্রক্ষেপিত ভিলাই। প্রতিটি ভিলাসের মধ্যস্থলে ল্যাকটিয়্যেল নামক লসিকা জালক রক্তের কৈশিক নালি দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে। ভিলাই ভাঁজে ভাঁজে থাকায় ইলিয়ামের প্রাচীরগাত্রের আয়তন বৃদ্ধি পায় এবং পরিপাককার্য ব্যাপকভাবে চলে। এসব রক্তনালি যুক্ত হয়ে হেপাটিক শিরা গঠন করে। এ শিরা দিয়ে শোষিত রক্ত যকৃতে আসে। স্নেহ পদার্থের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা ভিলাসের ল্যাকটিয়োলে শোষিত হয়ে প্রথমে লসিকা দ্বারা বাহিত হয়ে রক্তস্রোতে প্রবেশ করে। কোষে অণু প্রবেশের পর পিত্তলবণ ফ্যাটি এসিড থেকে পুনরায় পৃথক হয়ে যায়।

কৈশিক নালির মধ্য দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হওয়ার সময় নালির প্রাচীর ছুঁয়ে জলীয় পদার্থ বের হয়। এ জলীয় পদার্থকে লসিকা বলে। লসিকা খাদ্য উপাদান সরবরাহ করে কোষে পৌঁছে দেয় এবং দূষিত পদার্থ সংগ্রহ করে রক্তস্রোতে ফিরে আসে। শোষণের পর পাকমণ্ডের অবশিষ্টাংশ কোলনে পৌঁছে। কোলনে পাকমণ্ডের কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া বা পরিপাক ঘটে না। তবে খাদ্যের অসার অংশের সাথে যে পানি থাকে তা এখানে শোষিত হয়।
তাছাড়া থাকে কিছু আমিষ, লিপিড, লবণ এবং উদ্বৃত্ত এনজাইম। এসব বস্তু থেকে বৃহদন্ত্র লবণ ও পানি শোষণ করে রক্তে স্থানান্তরিত করে। ফলে উচ্ছিষ্ট খাদ্য ঘনীভূত হয়ে মলে পরিণত হয় ।
অতএব উপরোক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, সব ধরনের খাদ্যের চূড়ান্ত পরিপাক ক্ষুদ্রান্তে সংঘটিত হয়।

পরিপাক ও শোষণ সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর | মানব শারীরতত্ত্ব | পরিপাক ও শোষণ বোর্ড প্রশ্ন ও উত্তর | HSC | ৩য় অধ্যায় সাজেশন

রাজশাহী বোর্ড ২০২১

শান্তনু সীমিত পরিমাণে ভাত, মাছ ও মাংস খেয়ে থাকে,তবুও তার BMI-এর মান ৩২ কি.গ্রা./মি

ক সিকাম কী?
খ. যকৃতে কীভাবে R.B.C ধ্বংস হয়?
গ. উদ্দীপকের স্বাস্থ্য জটিলতার কারণ ও প্রতিকার উল্লেখ করাে।
ঘ. উদ্দীপকের খাদ্যগুলাে পরিপাকে প্রধান শােষণকারী অঙ্গ কী ভূমিকা পালন করে? বিশ্লেষণ করাে।

ক) বৃহদন্ত্রের সম্মুখের জেজুনাম সংলগ্ন স্ফীত গোল অংশটিকে সিকাম বলে।

খ) যকৃতের ম্যাক্রোফেজ কোষ (কুফার কোষ ) RBC কে নিজের দিকে টেনে নিয়ে ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় ধ্বংস করে ফেলে। এতে R-B-C ভেঙে যায় এবং হিমোগ্লোবিন ভেঙে হিমোগ্লোবিন আলাদা হয়ে যায়।

গ নং প্রশ্নের উত্তর

গ) উদ্দীপকের স্বাস্থ্য জটিলতাটি হলো স্থূলতা। নিম্নে স্থূলতার কারণ ও প্রতিকার উল্লেখ করা হলো-
কারণ : দৈহিক ওজনের ২০% বা তারও বেশি পরিমাণ মেদ দেহে সঞ্চিত হলে তাকে obesity (স্থূলতা) বলা হয়। ব্যক্তি পর্যায়ে অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ; কিন্তু পর্যাপ্ত কায়িক পরিশ্রম না করাকে স্থূলতার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। সহজভাবে বলতে গেলে, যতখানি ক্যালরি ব্যবহার করতে পারে তার চেয়ে বেশি ক্যালরির আহার গ্রহণ করাই হচ্ছে স্থূলতার মূল কারণ।

প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাদ্যের উপাদান শরীরে মেদ হিসেবে জমতে থাকে খাদ্যাভাসজনিত নানা কারণে ক্যালরি ও খাদ্যগ্রহণ বিষয়টি যেমন সবার ক্ষেত্রে এক নয়, তেমনি স্থূলতার কারণও সবার ক্ষেত্রে এক নয়। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা যেসব কারণকে স্থূলতার জন্য বিশেষভাবে দায়ী করেছেন সেসবের মধ্যে পরিবারের জীবনযাত্রার উপর স্থূলতা প্রকাশ অনেকখানি নির্ভর করে। তাছাড়া চর্বিযুক্ত ফাস্টফুড (বার্গার, পিজা ইত্যাদি) ও চিকেন গ্রিল খাওয়ার ফলে ওজন দিন দিন বেড়ে যায় এবং শরীর মেদবহুল ও মোটা হয়।

প্রতিকার : স্থূলতা রোগের প্রধান চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস এবং শারীরিক ব্যায়াম। খাদ্যাভ্যাস কর্মসূচির ফলে অল্প সময়ের মধ্যে ওজন হারানো সম্ভব। কিন্তু ঐভাবে ওজন কমানো সমস্যার কারণ হতে পারে তাই মাঝে মাঝে শারীরিক ব্যায়ামের প্রয়োজন পড়ে। শারীরিক সমস্যা সমাধানে যে বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে তা হলো-

১. সুষম খাবার পরিমিত মাত্রায় খাওয়া। অর্থাৎ সুষম খাবার অল্প অল্প করে কয়েকবার খাওয়া, পরিশ্রমের কাজ করা।
২. তেলযুক্ত, ফাস্টফুড খাবার কম খাওয়া।
৩. প্রতিদিন সকাল বিকালে হাঁটা, ব্যায়াম করা ও সাঁতার কাটা।
৪. কম ক্যালরি ও পুষ্টি সমৃদ্ধ ফল, সবজি ও গোটা শস্য দানা গ্রহণ করা।
৫. নিয়মিত খেলাধুলা করা।
৬. শৈল্য চিকিৎসার মাধ্যমে বেলুন ব্যবহার করে পাকস্থলি ও অন্ত্রের আয়তন কমিয়ে আনা।
৭. চিকিৎসার পর আবার যেন স্থূলতা প্রত্যাবর্তনে সক্ষম না হয় সেজন্য নিয়মমাফিক সঠিকভাবে ব্যায়াম অব্যাহত রাখা।
৮. স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হওয়া।

ঘ নং প্রশ্নের উত্তর

ঘ) উদ্দীপকের উল্লেখিত খাদ্যগুলি পরিপাকের প্রধান শোষণকারী অঙ্গ হলো ক্ষুদ্রান্ত্র। নিম্নে খাদ্য পরিপাকে ক্ষুদ্রান্ত্রের ভূমিকা প্রদত্ত হলো-

পাকস্থলি থেকে পাকমণ্ড ক্ষুদ্রান্ত্রের ডিওডেনামে প্রবেশ করলে অগ্ন্যাশয় থেকে একটি ক্ষারীয় পাচকরস ডিওডেনামে আসে যা খাদ্যের অম্লভাব প্রশমিত করে । পাচক রসের এনজাইম দ্বারা শর্করা ও আমিষ পরিপাকের কাজ চলতে থাকে এবং স্নেহ পদার্থের পরিপাক শুরু হয়। পিত্তরস যকৃত থেকে নিঃসৃত হয়। এটি অম্লীয় অবস্থায় খাদ্যকেক্ষারীয় করে পরিপাকের উপযোগী করে তোলে। পিত্তলবণ স্নেহ পদার্থের ক্ষুদ্র কণাগুলোকে পানির সাথে মিশতে সাহায্য করে।

পিত্তলবণ পিত্তরসের অন্যতম উপাদান। লাইপেজের কাজ যথাযথ সম্পাদনের জন্য পিত্তলবণের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এ লবণের সংস্পর্শে স্নেহ পদার্থ সাবানের ফেনার মতো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দানায় পরিণত হয়। স্নেহ বিশ্লেষক লাইপেজ এ দানাগুলোকে ভেঙে ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারলে পরিণত করে। অগ্ন্যাশয় রসে অ্যামাইলেজ, লাইপেজ ট্রিপসিন নামক এনজাইম থাকে। আন্ত্রিক রসে আন্ত্রিক অ্যামাইলেজ লাইপেজ,মলটেজ, ল্যাকটেজ, শুক্রোজ ইত্যাদি এনজাইম থাকে। আংশিক পরিপাককৃত আমিষ ক্ষুদ্রান্ত্রে ট্রিপসিনের সাহায্যে ভেঙে অ্যামাইনো এসিড ও সরল পেপটাইডে পরিণত হয়।

পরিপাক ও শোষণ সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর | মানব শারীরতত্ত্ব | পরিপাক ও শোষণ বোর্ড প্রশ্ন ও উত্তর | HSC | ৩য় অধ্যায় সাজেশন

কুমিল্লা বোর্ড ২০২১

খাদ্য মানবদেহকে সুস্থ, সবল কর্মক্ষম রাখে। গ্রহণযােগ্য পুষ্টির জন্য প্রয়ােজন সঠিক পরিপাক প্রক্রিয়া। খাদ্য পরিপাকের প্রাথমিক রাসায়নিক উপাদান হলাে লালা। অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ দেহে স্থূলতার মতাে একটি স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করে।

ক, ভিলাই কী?
খ. যকৃতকে রক্তের ভাণ্ডার বলা হয় কেন?
গ. উদ্দীপকের প্রাথমিক রাসায়নিক উপাদানের উৎস, গঠন ও কাজ লেখাে।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত স্বাস্থ্য সমস্যার ক্ষতিকর প্রভাব ও প্রতিরােধ সম্পর্কে তােমার মতামত দাও।

ক) ক্ষুদ্রান্ত্রের অন্তঃপ্রাচীরে আঙুলের মতো যে প্রবর্ধক বা অভিক্ষেপ বের হয় তাই ভিলাই ।

খ) যকৃতের মধ্যে হেপাটিক পোর্টাল শিরাসহ যত রক্তবাহিকা রয়েছে তাতে বিপুল পরিমাণে রক্ত ধারণ করে। যকৃত প্রায় ১৫০০ ঘন সে.মি. রক্ত সঞ্চয় করে রাখে। তাই যকৃতকে রক্তের ভাণ্ডার বলা হয়।

গ নং প্রশ্নের উত্তর

গ) উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রাথমিক রাসায়নিক উপাদানটি হলো লালা। লালার উৎস, গঠন ও কাজ নিচে বর্ণনা করা হলো-
উৎস : লালার উৎস হলো মুখগহ্বরের দুই পাশে অবস্থিত জোড়া গ্রন্থি। এদের নাম যথাক্রমে- ১. কানের নিচে থাকে প্যারোটিড গ্রন্থি,
২. ম্যান্ডিবলের নিচে থাকে সাবম্যান্ডিবুলার গ্রন্থি এবং ৩. জিহ্বার নিচে থাকে সাবলিঙ্গুয়াল গ্রন্থি।

গাঠনিক উপাদান :
১. পানি: ৯৫.৫%- ৯৯.৫%,
২. কোষীয় উপাদান : এপিথেলিয়াল কোষ, ইস্ট, প্রোটোজোয়া, ব্যাকটেরিয়া, লিউকোসাইট ইত্যাদি।
৩. গ্যাস : দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে O2, N2 , ও CO2.
৪. অজৈব উপাদান প্রায় ০.২%; সোডিয়াম ক্লোরাইড, পটাসিয়াম ক্লোরাইড, ক্যালসিয়াম কার্বোনেট ইত্যাদি।
৫. জৈব উপাদান : প্রায় ০.৩% এনজাইম, মিউসিন, ইউরিয়া, ভিটামিন ইত্যাদি।

লালার কাজ :
১. খাদ্যকে নরম ও পিচ্ছিল করে গিলতে সাহায্য করে।
২. শর্করা জাতীয় খাদ্য পরিপাকে অংশ নেয়।
৩. ph এর ভারসাম্য বজায় রাখে।
৪. ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে।
৫. মুখ, ঠোঁট, জিহ্বা লালায় সিক্ত রাখায় কথা বলতে সুবিধা হয়।ঘ) উদ্দীপকে যে স্বাস্থ্য সমস্যার কথা বলা হয়েছে তা হলো স্থূলতা ।

ঘ নং প্রশ্নের উত্তর

ঘ) স্থূলতার ক্ষতিকর প্রভাব ও প্রতিরোধ সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো-

স্থূলতার ক্ষতিকর প্রভাব : করোনারি হার্ট ডিজিজ, ডায়াবেটিস মিলিটাস, ক্যান্সার (কোলন, স্তন এবং জরায়ুতে), উচ্চ রক্তচাপ, ডিসলি পিডেসিয়া, স্ট্রোক, যকৃত ও পিত্তথলির রোগ, ঘুম ও শ্বসনজনিত সমস্যা, অস্টিওআর্থ্রাটিস, স্ত্রীরোগ (অস্বাভাবিক মাসিক এবং বন্ধ্যাত্ব) কোমার ব্যথা এবং তা স্থায়িত্ব লাভ করা, পেট বেড়ে যায়, কর্মে স্থবিরতা ও অনীহা সৃষ্টি হয়, সৌন্দর্য হ্রাস ইত্যাদি। স্থূলতার কারণে মানুষের জীবনকাল গড়ে ৬/৭ বছর হ্রাস পায়। শরীরে মেদের পরিমাণ বেড়ে গেলে ইনসুলিনের সাড়া প্রদান হ্রাস পায় ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে। এছাড়া শরীরে মেদের পরিমাণ বাড়ার কারণে হার্ট ফেইলিওর, ওভারিয়ান ক্যান্সার, শ্বাসকষ্ট, লো-ব্যাক পেইন, ক্রনিক রেনাল ফেইলিওর ইত্যাদি হতে পারে।

প্রতিরোধ:
১. সুষম খাবার পরিমিত মাত্রায় খাওয়া। অর্থাৎ সুষম খাবার অল্প অল্প করে কয়েকবার খাওয়া, পরিশ্রমের কাজ করা।
২., তেলযুক্ত, ফাস্টফুড খাবার কম খাওয়া ।
৩. প্রতিদিন সকাল বিকালে হাঁটা, ব্যায়াম করা ও সাঁতার কাটা।
৪. কম ক্যালরি ও পুষ্টি সমৃদ্ধ ফল, সবজি ও গোটা শস্য দানা গ্রহণ করা।
৫. নিয়মিত খেলাধুলা করা।
৬. শৈল্য চিকিৎসার মাধ্যমে বেলুন ব্যবহার করে পাকস্থলি ও অন্ত্রের আয়তন কমিয়ে আনা।
৭. চিকিৎসার পর আবার যেন স্থূলতা প্রত্যাবর্তনে সক্ষম না হয় সেজন্য নিয়মমাফিক সঠিকভাবে ব্যায়াম অব্যাহত রাখা।
৮. স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হওয়া

এই পরিপাক ও শোষণ সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর | মানব শারীরতত্ত্ব | পরিপাক ও শোষণ বোর্ড প্রশ্ন ও উত্তর | HSC | ৩য় অধ্যায় সাজেশন ছাড়াও আরো জানতে ক্লিকঃ

You cannot copy content of this page