ক্রসিং ওভার (Crossing over)
ক্রসিং ওভার (Crossing over)
মায়োসিস-১ এর প্যাকাইটিন উপ-পর্যায়ে এক জোড়া সমসংস্থ ক্রোমোসোমের দুটি নন-সিস্টার ক্রোমাটিড-এর মধ্যে অংশের বিনিময় হওয়াকে ক্রসিং ওভার বলে। ক্রসিং ওভারের ফলে ক্রোমোসোমের জিনসমূহের মূল বিন্যাসের পরিবর্তন ঘটে এবং লিঙ্কড জিনসমূহের মধ্যে নতুন সমন্বয় (combination) তৈরি হয়। থমাস হান্ট মর্গান (Thomas Hunt Morgan, 1866-1945) ১৯০৯ সালে ভূট্টা উদ্ভিদে প্রথম ক্রসিং ওভার সম্পর্কে ধারণা দেন। ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি নোবেল পুরষ্কার পান।
ক্রসিং ওভারের কৌশল বা প্রক্রিয়া
(i) প্রথমে দুটি নন-সিস্টার ক্রোমাটিড একই স্থান বরাবর ভেঙে যায় (Endonuclease এনজাইম এর কারণে)। পরে একটির অংশের সাথে অপরটির অন্য অংশ পুনরায় জোড়া লাগে ligase-এনজাইমের প্রভাবে। ফলে কায়াজমা (X আকৃতি) সৃষ্টি হয়।
(iii) শেষ পর্যায়ে প্রান্তীয়করণের মাধ্যমে ক্রোমাটিডের বিনিময় শেষ হয়। ক্রসিং ওভারের ফলে ক্রোমাটিডের মধ্যে অংশের বিনিময় ঘটে, সাথে সাথে জিনেরও বিনিময় ঘটে (যেহেতু জিন ক্রোমোসোমেই বিন্যস্ত থাকে)। জিন-এর বিনিময়ের ফলে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বিনিময় হয়, ফলে জীবে চারিত্রিক পরিবর্তন ঘটে।
চিত্র ২.১৪ : এক জোড়া সমসংস্থ ক্রোমোসোমের দুটি নন-সিস্টার ক্রোমাটিডের মধ্যে ক্রসিং ওভার।
ক্রসিং ওভারের গুরুত্ব বা তাৎপর্য : কিছু সংখ্যক নিম্নশ্রেণির জীব ছাড়া সব উদ্ভিদ ও প্রাণীর মধ্যে ক্রসিং ওভার ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়। ক্রসিং ওভারের গুরুত্ব নিচে উল্লেখ করা হলো :
১। ক্রসিং ওভারের ফলে দুটি ক্রোমাটিডের মধ্যে অংশের বিনিময় ঘটে, ফলে জিনগত পরিবর্তন সাধিত হয়।
২। জিনগত পরিবর্তন সাধনের ফলে সৃষ্ট জীবে বৈশিষ্ট্যগত পরিবর্তন সাধিত হয়।
৩। বৈশিষ্ট্যগত পরিবর্তনের মাধ্যমে সৃষ্টিকুলে আসে বৈচিত্র্য, সৃষ্টি হয় নতুন পরিবেশে টিকে থাকার ক্ষমতা, আবার কখনো সৃষ্টি হয় নতুন প্রজাতি।
৪। ক্রসিং ওভারের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত উন্নত বৈশিষ্ট্যবিশিষ্ট নতুন প্রকরণ সৃষ্টি করা যায়। এভাবেই ফসলি উদ্ভিদের ক্রমাগত উন্নতি সাধন করা হয়।
৫। কৃত্রিম উপায়ে ক্রসিং ওভার ঘটিয়ে বংশগতিতে পরিবর্তন আনা সম্ভব। কাজেই প্রজননবিদ্যায় ক্রসিং ওভারের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে।
৬। গবেষণার ক্ষেত্রেও ক্রসিং ওভারের গুরুত্ব রয়েছে। কারণ, ক্রোমোসোম দেহে জিনের রেখাকার বিন্যাস/অবস্থান প্রমাণে বা ক্রোমোসোম ম্যাপিং-এ ক্রসিং ওভার বৈশিষ্ট্য ব্যবহৃত হয়।
৭। ক্রোমোসোমে জিনের অবস্থান নির্ণয়।
৮। জেনেটিক ম্যাপ তৈরি করা।
৯। ক্রোমোসোমে জিনের নতুন বিন্যাসের ফলে জেনেটিক ভ্যারিয়েশন সৃষ্টি হয়।
মাইটোসিস ও মায়োসিসের মধ্যে পার্থক্য
এই অনিয়ন্ত্রিত মাইটোসিস ছাড়াও আরো জানুন