সহকারী জজ নিয়োগে মৌখিক পরীক্ষার শেষ সময়ের প্রস্তুতি
সহকারী জজ নিয়োগে মৌখিক পরীক্ষার শেষ সময়ের প্রস্তুতি

বিজেএস (বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস) পরীক্ষায় ভালো করতে চান? তাহলে লিখিত পরীক্ষার পাশাপাশি ভাইভা বা মৌখিক পরীক্ষার গুরুত্বও কিন্তু কম নয়। ভাইভা পরীক্ষা শুধু আপনার মেধা যাচাই করে না, এটি আপনার ভাগ্য এবং ব্যক্তিত্বেরও পরীক্ষা। তাই এই পরীক্ষায় ভালো করতে হলে কিছু বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া দরকার।
ভাইভা পরীক্ষার প্রস্তুতি কিভাবে নেবেন, কোন বিষয়গুলোর ওপর জোর দেবেন, আর ভাইভা বোর্ডে কেমন পোশাক পরে যাবেন—এসব নিয়েই আজকের আলোচনা।
ভাইভার জন্য পোশাক:
ভাইভা পরীক্ষার পোশাকের দিকে প্রথমেই নজর দেওয়া উচিত। পোশাক-আশাকের মার্জিত রুচি আপনার ব্যক্তিত্বের পরিচয় দেয়।
- ছেলেদের জন্য ফরমাল পোশাক সবচেয়ে ভালো। এক্ষেত্রে সাদা রঙের শার্ট, কালো প্যান্ট, মানানসই বেল্ট, কালো ব্লেজার ও ফরমাল জুতো আদর্শ।
- মেয়েদের জন্য ড্রেস কোডের বাধ্যবাধকতা না থাকলেও, শাড়ি অথবা থ্রি-পিস বেছে নিতে পারেন। ব্লেজার পরলে স্মার্ট দেখাবে। পোশাকের রং নির্বাচনে হালকা রংকে প্রাধান্য দেওয়া ভালো। সাদা-কালো পরতেই হবে এমন কোনো নিয়ম নেই, তবে ফরমাল লুক বজায় রাখাই জরুরি।
ভাইভা বোর্ডে যা করবেন:
ভাইভা কক্ষে প্রবেশের সময় কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে।
- ঘরে ঢুকে প্রথমেই পরীক্ষকদের সালাম দিন। তারা বসতে বললে বসুন।
- চেয়ারে বসার সময় posture-এর দিকে খেয়াল রাখুন। দুই হাত সামনের দিকে কোলের ওপর রাখতে পারেন।
- কথা বলার সময় নম্র ও মার্জিত ভাষা ব্যবহার করুন। মনে রাখবেন, ভাইভা শুধু আপনার জ্ঞানের পরীক্ষা নয়, আপনার ব্যক্তিত্বও এখানে গুরুত্বপূর্ণ।
- আপনি একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হতে যাচ্ছেন, তাই সেই পদের জন্য আপনি কতটা যোগ্য, সেটিও ভাইভা বোর্ডে দেখা হবে।
- আত্মবিশ্বাসী থাকুন এবং সুন্দরভাবে প্রশ্নের উত্তর দিন। প্রশ্ন বুঝতে অসুবিধা হলে বিনয়ের সঙ্গে আবার জিজ্ঞাসা করতে দ্বিধা করবেন না।
- প্রশ্নকর্তারা বাংলা বা ইংরেজি—যেকোনো ভাষাতেই প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি যে ভাষায় স্বচ্ছন্দ, স্যারের অনুমতি নিয়ে সেই ভাষাতেই উত্তর দিতে পারেন।
- ভাইভা বোর্ডে নিজের পরিচয় এবং কেন আপনি বিচারক হতে চান—এই দুটি বিষয়ে ইংরেজিতে ছোট প্রস্তুতি (পাঁচ-ছয় লাইনের মধ্যে) নিয়ে যেতে পারেন।
শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি:
ভাইভা পরীক্ষা অনেকটা অপ্রত্যাশিত হতে পারে, কারণ এর নির্দিষ্ট কোনো সিলেবাস নেই। তবে কিছু বিষয়ে ধারণা রাখতে পারলে পরীক্ষা সহজ হতে পারে।
- বিজেএস পরীক্ষার সিলেবাসে থাকা বিষয়গুলোর ওপর মোটামুটি ধারণা রাখতে হবে।
- ভাইভার শুরুতে সাধারণত নিজের পরিচয় জানতে চাওয়া হয়। তাই নিজের নাম, পরিবার, শিক্ষাগত যোগ্যতা, জীবনের লক্ষ্য, পছন্দ-অপছন্দ, নিজের ভালো-খারাপ দিক এবং বিচার বিভাগের প্রতি আগ্রহের কারণ—এগুলো গুছিয়ে প্রস্তুত করুন।
- ভাইভা বোর্ডে আপনার সুন্দর ও মার্জিত উপস্থাপনাই বেশি নম্বর পেতে সাহায্য করবে।
গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়:
বিজেএস ভাইভা বোর্ডে কিছু মৌলিক প্রশ্ন প্রায়শই করা হয়।
- নিজের নামের অর্থ ও তাৎপর্য জানুন। নামের সাথে বিখ্যাত কোনো ব্যক্তি থাকলে তাদের সম্পর্কে জেনে নিন।
- আপনার জন্মদিন কোনো ঐতিহাসিক ঘটনার সাথে সম্পর্কিত হলে সেই বিষয়ে জেনে রাখা ভালো।
- নিজের বংশ, পরিবার এবং ব্যক্তিগত জীবনের বিশেষ কোনো উপলব্ধি থাকলে সেটিও প্রস্তুত রাখতে পারেন।
- ভাইভার দিন কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা বা দিবস থাকলে সে সম্পর্কে জেনে যেতে পারেন।
- নিজের গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, বিভাগ, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং হল—এগুলোর পরিচিতি ও বিশেষত্ব সম্পর্কে জেনে রাখা দরকার।
যে বিষয়গুলোতে জোর দেবেন:
-
সংবিধান: সংবিধানের মূল বিষয়গুলো ভালোভাবে পড়ুন। সংবিধানের ইতিহাস, বিভিন্ন সময়ে আসা সংশোধনী, গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ (Doctrine) এবং উল্লেখযোগ্য মামলাগুলো সংক্ষেপে জেনে যেতে হবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সংবিধানে কী কী পরিবর্তন এসেছে এবং ভবিষ্যতে কী পরিবর্তন আসতে পারে—এসব বিষয়ে নিজের মতামত তৈরি করতে পারেন। এক্ষেত্রে পত্রিকা ও সংবিধান বিষয়ক বইয়ের সাহায্য নিতে পারেন।
-
ফৌজদারি ও দেওয়ানি আইন: ফৌজদারি ও দেওয়ানি আইন ভালোভাবে বুঝতে হবে। একটি মামলা বা মোকদ্দমার বিভিন্ন ধাপ ও পদ্ধতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলো, বিশেষ করে যেগুলো লিখিত পরীক্ষার জন্য পড়েছেন, সেগুলো ঝালিয়ে নিন এবং ধারা উল্লেখ করে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করুন। সাক্ষ্য আইন ও দণ্ডবিধির গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলোও দেখে যাবেন।
-
পারিবারিক আইন: পারিবারিক আইনের উত্তরাধিকার অংশ থেকে সম্পত্তি বণ্টনের নিয়ম-কানুন এবং এ সংক্রান্ত আইন ও অধ্যাদেশগুলো ভালোভাবে দেখে যাবেন। বিবাহ, বিচ্ছেদ, দেনমোহর, ভরণপোষণ, অগ্রক্রয়, দান ও উইল—এই অধ্যায়গুলোর মূল ধারণা পরিষ্কার রাখতে হবে। যেমন, উইল ও উত্তরাধিকার সংক্রান্ত আইন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখা জরুরি।
-
সম্পত্তি আইন: সম্পত্তি আইনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো, যা লিখিত পরীক্ষার সময় পড়েছেন, সেগুলোই বারবার রিভিশন করুন।
-
ঐচ্ছিক আইন: ঐচ্ছিক আইনে আপনি যে বিষয়টি নির্বাচন করেছেন, সেটি ভালোভাবে পড়ুন। অন্য ঐচ্ছিক আইনগুলোও প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য যতটুকু পড়েছিলেন, ততটুকু একবার চোখ বুলিয়ে যেতে পারেন।
-
সাধারণ জ্ঞান, সাহিত্য, ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান: আইনের পাশাপাশি সাধারণ জ্ঞানও গুরুত্বপূর্ণ। নিজের দেশ, ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সাম্প্রতিক ঘটনা সম্পর্কে ধারণা রাখুন। বাংলা সাহিত্য থেকে প্রশ্ন আসতে পারে, তাই সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো দেখে যেতে পারেন। ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞানের বেসিক বিষয়গুলোও সংক্ষেপে দেখে যাওয়া ভালো। ভাইভা বোর্ডে ব্যাকরণের সাধারণ প্রশ্নও করা হতে পারে।
-
পড়াশোনার বাইরের জগৎ: অনেক সময় ভাইভা বোর্ডে পড়াশোনার বাইরের বিষয়েও প্রশ্ন করা হয়। ভালো কোনো বই বা বিখ্যাত সিনেমা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হতে পারে। বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিত্বদের সম্পর্কে ধারণা রাখতে পারেন।
ভাইভা পরীক্ষা আসলে জ্ঞানের পাশাপাশি আপনার ব্যক্তিত্ব, আত্মবিশ্বাস এবং পরিস্থিতি সামলানোর ক্ষমতাও যাচাই করে। তাই ভালোভাবে প্রস্তুতি নিন এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে পরীক্ষা দিন। শুভকামনা!