সারমর্ম ┃জেসএসসি , এসএসসি , এইচএসসি , ডিগ্রি, অনার্স, মাস্টার্স, বিসিএস
সারমর্ম ┃জেসএসসি , এসএসসি , এইচএসসি , ডিগ্রি, অনার্স, মাস্টার্স, বিসিএস জেসএসসি , এসএসসি , এইচএসসি , ডিগ্রি, অনার্স, মাস্টার্স, বিসিএস সহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নিন্মবর্ণিত গুরত্বপূর্ণ ২৭+ সারমর্ম দেওয়া হয়েছে। এই সারমর্ম গুলো অনুশীন করলেই পরীক্ষায় কমন আসবে।
Read More:
সারমর্ম অনুশীলন
১. ঠাই নাই, ঠাঁই নাই, ছোট সে তরী
আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি।
শ্রাবণ গগন ঘিরে ঘন মেঘ ঘুরে ফিরে,
শূণ্য নদীর তীরে রহিনু পড়ি—
যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী।
সারমর্ম: অনন্ত অসীম মহাকালের কাছে ব্যক্তির কোনো মূল্য নেই।ব্যক্তির জীবনের মহৎ অর্জন ও স্বর্ণতুল্য সৃষ্টিকর্মই মহাকালের কাছে অমরত্ব লাভ করে। ব্যক্তিকে রিক্ত অবস্থায় হারিয়ে যেতে হয় বিস্মৃতির ও শুণ্যতার অতল গহ্বরে। মহাকালের জঠরে চির-বিলীন হওয়ার জন্যেই ব্যক্তির অপেক্ষা।
২. সংসারে গড়িব এক নতুন সমাজ।
মানুষের সাথে কভু মানুষের রবে না বিচ্ছেদ-
সর্বত্র মৈত্রীর ভাব করিবে বিরাজ।
দেশে দেশে যুগে যুগে কত যুদ্ধ কত না সংঘাত
মানুষে মানুষে হল কত হানাহানি।
এবার মোদের পূণ্যে সমুদিবে প্রেমের প্রভাত
সোল্লাসে গাহিবে সবে সৌহার্দ্যের বাণী।
সারমর্ম: কবি পৃথিবীতে মানবিক ও সৌহার্দপূর্ণ একটি মানব সমাজ বিনির্মাণের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। যেখানে ঘুচে যাবে সকল ঘৃণা-বিদ্বেষ ও বাধা-ব্যবধান। সুপ্রাচীন কাল থেকে যুগ-যুগান্তরব্যাপী সংঘাত-সংঘর্ষ ও রক্তপাতে এ ধরণি আজ শ্রান্ত- অবসন্ন। এসব নৃশংসতার অবসান ঘটিয়ে কবি এক নতুন সূর্যোদয়ের প্রত্যাশা করেছেন যেখানে সবাই প্রেম-পূণ্য ও প্রীতির ধারায় মিলিত হবে মানুষের মাঝে।
৩. অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ পৃথিবীতে আজ,
যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দেখে তারা;
যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই-প্রীতি নেই-করুণার আলোড়ন নেই
পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।
যাদের গভীর আস্থা আছে আজও মানুষের প্রতি,
এখনো যাদের কাছে স্বাভাবিক বলে মনে হয়
মহৎ সত্য বা রীতি, কিংবা শিল্প অথবা সাধনা
শকুন ও শেয়ালের খাদ্য আজ তাদের হৃদয়।
সারমর্ম: পৃথিবীময় আজ অন্যায় বিশৃঙ্খলার রাজত্ব। প্রেম-ভালোবাসাহীন বর্বরদের পরামর্শে চলছে পৃথিবী। অন্যদিকে অপশক্তির আঘাতে অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে সত্য ও সুন্দরের সাধনাকারী মহৎ হৃদয়বান মানুষ ।
৪. আমরা চলিব পশ্চাতে ফেলি পচা অতীত,
গিরি-গুহা ছাড়ি খোলা প্রান্তরে গাহিব গীত।
সৃজিব জগৎ বিচিত্রতর, বীর্যবান,
তাজা জীবন্ত সে নব সৃষ্টি শ্রম-মহান,
চলমান-বেগে প্রাণ-উছল
রে নবযুগের স্রষ্টাদল,
জোর কদম চলরে চল।
সারমর্ম: নষ্ট অতীতকে পেছনে ফেলে আত্মপ্রত্যয়ী যুবসমাজই গড়ে তুলবে এক নতুন পৃথিবী। তাই প্রাণময় তরুণদেরই সামনে এগিয়ে যেতে হবে বিপ্লবী বেশে।
৫. আমরা নূতন, আমরা কুঁড়ি, নিখিল মানব-নন্দনে,
ওষ্ঠে রাঙা হাসির রেখা, জীবন জাগে স্পন্দনে।
লক্ষ আশা অন্তরে, ঘুমিয়ে আছে মন্তরে,
ঘুমিয়ে আছে মুখের ভাষা পাপড়ি পাতার বন্ধনে।
সকল কাঁটা ধন্য করে ফুটব মোরা ফুটব গো,
প্রভাত-রবির সোনার আলো দু’হাত দিয়ে লুটব গো।
নিত্য নবীন গৌরবে, ছড়িয়ে দিব সৌরভে,
আকাশ পানে তুলব মাথা, সকল বাঁধন টুটব গো
সারমর্ম: শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ। জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয়ে একদিন নিজেদের তারা যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে। সব বাধা অতিক্রম করে জাতিকে পৌঁছে দেবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে।
৬. আমার একার সুখ, সুখ নহে ভাই
সকলের সুখ সখা, সুখ শুধু তাই ।
আমার একার আলো সে যে অন্ধকার,
যদি না সবারে অংশ দিতে আমি পাই।
সকলের সাথে বন্ধু, সকলের সাথে,
যাইব কাহারে বলো, ফেলিয়া পশ্চাতে।
একসাথে বাঁচি আর একসাথে মরি,
এসো বন্ধু, এ জীবন সুমধুর করি।
সারমর্ম: প্রকৃত সুখ হচ্ছে সমষ্টিগত, ব্যক্তিগত নয়। তাই ভেদাভেদ না করে সমষ্টিগতভাবে জীবন পরিচালনাই আমাদের কর্তব্য হওয়া উচিত।
৭) একদা ছিল না জুতা চরণ যুগলে,
দহিল হৃদয় মন সেই ক্ষোভানলে।
ধীরে ধীরে চুপি চুপি দুঃখাকুল মনে,
গেলাম ভজনালয়ে ভজন কারণে।
সেথা দেখি একজন পদ নাহি তার,
অমনি জুতার খেদ ঘুচিল আমার।
পরের দুঃখের কথা করিলে চিন্তন,
আপনার মনে দুঃখ থাকে কতক্ষণ?
সারমর্ম: অন্যের অধিকতর দুঃখ-বেদনা-ক্ষোভের কথা উপলব্ধি করলে নিজের ক্ষুদ্রতর দুঃখের যন্ত্রণার অবসান ঘটে। ‘অল্পে তুষ্ট’ বোধটি আমাদের সামাজিক যন্ত্রণা থেকে পরিত্রাণ দিতে পারে।
৮. কোথায় স্বর্গ, কোথায় নরক, কে বলে তা বহুদূর?
মানুষের মাঝে স্বর্গ-নরক, মানুষেতে সুরাসুর।
রিপুর তাড়নে যখনই মোদের বিবেক পায় গো লয়,
আত্মগ্লানির নরক অনলে তখনই পুড়িতে হয়।
প্রীতি ও প্রেমের পুণ্য বাঁধনে যবে মিলি পরস্পরে,
স্বর্গ আসিয়া দাঁড়ায় তখন আমাদেরই কুঁড়েঘরে।
সারমর্ম: পৃথিবীতেই মানুষের মধ্যে স্বর্গ ও নরকের অবস্থান। প্রীতি ও প্রেমেই স্বর্গীয় সুখ; হিংসা ও গ্লানিই দেয় নরক-যন্ত্রণা।
৯. ক্ষমা যেথা ক্ষীণ দুর্বলতা,
হে রুদ্র, নিষ্ঠুর যেন হতে পারি তথা
তোমার আদেশে। যেন রসনায় মম
সত্যবাক্য ঝলি ওঠে খরখভূগসম
তোমার ইঙ্গিতে। যেন রাখি তব মান
তোমার বিচারাসনে লয়ে নিজ স্থান।
অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে
তব ঘৃণা তারে যেন তৃণসম দহে।
সারমর্ম: ক্ষমা করা মহৎ গুণ। ক্ষমার অজুহাতে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া সমীচীন নয়। সেক্ষেত্রে যে অন্যায় করে আর যে ক্ষমা করে দুজনই সমান অপরাধী। দুজনকেই তাই সমানভাবে ঘৃণা করা উচিত।
১০. জোটে যদি মোটে একটি পয়সা
খাদ্য কিনি ও ক্ষুধার লাগি
দুটি যদি জোটে তবে অর্ধেকে
ফুল কিনে নিও, হে অনুরাগী।
বাজারে বিকায় ফল তন্দুল;
যে শুধু মিটায় দেহের ক্ষুধা
হৃদয় প্রাণের ক্ষুধা নাশে ফুল
দুনিয়ার মাঝে সেই তো সুধা।
সারমর্ম: মানুষের বেঁচে থাকার জন্য শারীরিক সুস্থতা অপরিহার্য। কিন্তু কেবল শরীর সুস্থ রাখলেই হবে না সেই সঙ্গে মনও সুস্থ রাখা প্রয়োজন। আর মনকে সুস্থ রাখতে দরকার সৌন্দর্যের সাধনা।
১১. তোমারি ক্রোড়েতে মোর পিতামহগণ
নিদ্রিত আছে সুখে জীবলীলা-শেষে,
তাদের শোণিত অস্থি সকলি এমন
তোমার দেহের সঙ্গে গিয়েছে মা মিশে,
তোমার ধলিতে গড়া এ দেহ আমার
তোমার ধূলিতে কালে মিশবে আবার।
সারমর্ম: নিজ নিজ দেশ সেই দেশবাসীদের ঐতিহ্যের ধারক,পূর্বপুরুষের কৃতিরও পরিচয়বহু। দেশের মাটিতে লালিত জীবন দেশের মাটিতেই মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বিলীন হয়ে যাবে। তাই দেশপ্রেমীক দেশবাসী দেশের প্রতি সশ্রদ্ধ কৃতজ্ঞতা জানায়।
১২. তরুতলে বসে পান্থ শ্রান্তি করে দূর,
ফল আস্বাদনে পায় আনন্দ প্রচুর।
বিদায়ের কালে হাতে ডাল ভেঙে লয়,
তরু তবু অকাতর কিছু নাহি কয়।
দুর্লভ মানবজন্ম পেয়েছ যখন,
তরুর আদর্শ কর জীবনে গ্রহণ
পরার্থে আপন সুখ দিয়ে বিসর্জন,
তুমিও হও গো ধন্য তরুর মতোন।
সারমর্ম: পরোপকারী যখন মানুষের সেবা করেন তখন সেই সেবা গ্রহণকারী হয়তো অকৃতজ্ঞের মতো তাঁরই ক্ষতি করে যায়। কিন্তু তাই বলে অন্যের উপকার করা যাঁর স্বভাব, তিনি তা থেকে পিছপা হন না।
১৩. দৈন্য যদি আসে আসুক, লজ্জা কিবা তাহে?
মাথা উঁচু রাখিস।
সুখের সাথী মুখের পানে যদি না চাহে
ধৈর্য ধরে থাকিস।
রুদ্ররূপে তীব্র দুঃখ যদি আসে নেমে,
বুক ফুলিয়ে দাঁড়াস্ ।
আকাশ যদি বজ্র নিয়ে মাথায় পড়ে ভেঙে
ঊর্ধ্বে দু’হাত বাড়াস।
সারমর্ম: জীবনের চলার পথে দুরবস্থা ও বিপর্যয়ে মানুষের ধৈর্য হারানো উচিত নয়। প্রতিকূলতাকে সাহস ও ধৈর্যের সঙ্গে প্রতিহত করাই মানুষের একান্ত করণীয়।
১৪. বিপদে মোরে রক্ষা করো, এ নহে মোর প্রার্থনা,
বিপদে আমি না যেন করি ভয়।
দুঃখ-তাপে ব্যথিত চিতে নাই-বা দিলে সান্ত্বনা,
দুঃখ যেন করিতে পারি জয়।
সহায় মোর না যদি জুটে, নিজের বল না যেন টুটে,
সংসারেতে ঘটিলে ক্ষতি, লভিলে শুধু বঞ্চনা
নিজের মনে না যেন মানি ক্ষয়।
সারমর্ম: বিধাতার কাছে বিপদ থেকে মুক্তির জন্য করুণা-ভিক্ষা নয়, প্রয়োজন বিপদ থেকে মুক্তির জন্য সংগ্রামশীলতা। সৃষ্টিকর্তা যেন মানুষকে সেই শক্তি দান করেন।
১৫. হাস্য শুধু আমার সখা। অশ্রু আমার কেহই নয়?
হাস্য করে অর্ধজীবন করেছি তো অপচয়।
চলে যারে সুখের রাজ্য, দুঃখের রাজ্য নেমে আয়,
গলা ধরে কাঁদতে শিখি গভীর সমবেদনায়।
সুখের সঙ্গ ছেড়ে করি দুঃখের সঙ্গে বসবাস,
ইহাই আমার ব্রত হউক, ইহাই আমার অভিলাষ।
যেথায় ক্লান্তি, যেথায় ব্যাধি, যন্ত্রণা ও অশ্রুজল,
ওরে তোরা হাতটি ধরে আমায় সেথায় নিয়ে চল।
পরের দুঃখে কাঁদতে শেখা— তাহাই শুধু চরম নয়,
মহৎ দেখে কাঁদতে জানা- তবেই কাঁদা ধন্য হয়।
সারমর্ম: হাসি-উল্লাস মানবজীবনের চরম সার্থকতা নয়; কান্নাও জীবনের অন্যতম অংশ। অন্যের ব্যথায় ব্যথিত হওয়া ও আর্তপীড়িতের অশ্রুমোচনের জন্যে এগিয়ে যাওয়াই জীবনের ব্রত হওয়া উচিত।
১৬. হায় হায় জনমিয়া যদি না ফুটালে
একটি কুসুমকলি নয়ন কিরণে,
একটি জীবনব্যথা যদি না জুড়ালে,
বুক ভরা প্রেম ঢেলে, বিফল জীবনে,
আপনা রাখিলে ব্যর্থ জীবন সাধনা,
জনম বিশ্বের তরে পরার্থে কামনা।
সারমর্ম: পরার্থে জীবন উৎসর্গ করতে পারাই মানবজীবনের চরম সার্থকতা। এ পৃথিবীতে যারা শুধু নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে তাদের জন্ম নিরর্থক বলে প্রতীয়মান হয়। অপরের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারলেই মানবজন্ম সফল হবে।
১৭. কহিল মনের খেদে মাঠ সমতল
মাঠ ভারে দেই আমি কত শস্য ফল;
পর্বত দাঁড়ায়ে রহে কি জানি কি কাজ
পাষাণের সিংহাসনে তিনি মহারাজ।
বিধাতার অবিচারে কেন উঁচু নিচু,
সে কথা বুঝিতে আমি নাহি পারি কিছু।
গিরি কহে, “সব হলে সমভূমি পারা
নামিত কি ঝরনার সুমঙ্গল ধারা?”
সারমর্ম: বিশ্বসংসারে একেক জনের কর্তব্য ও অবস্থান একেক রকম। নিজ নিজ অবস্থানে থেকে নিজ নিজ কর্তব্য করে যাওয়াই বাঞ্ছনীয়। অপরের অবস্থান ও কর্তব্যের মর্ম না জেনে হতাশায় দীর্ঘশ্বাস ফেলা উচিত নয় ।
১৮. হে মহাজীবন, আর এ কাব্য নয়—
এবার কঠিন কঠোর গদ্যে আনো
পদ-লালিত্য ঝংকার মুছে যাক,
গদ্যের কড়া হাতুড়িকে আজ হানো।
প্রয়োজন নেই কবিতার স্নিগ্ধতা—
কবিতা তোমায় দিলাম আজকে ছুটি,
ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়—
পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।
সারমর্ম: জাতির ক্ষুধাক্লিষ্ট জীবনে কাব্যের সুললিত বাণী নয়, প্রয়োজন বৈপ্লবিক • সংগ্রামের। নিম্নশ্রেণী, শ্রমিকশ্রেণী যখন শোষকের চরম বঞ্চনার শিকার, তখন পদ্যের স্নিগ্ধতার চেয়ে বেশি প্রয়োজন কঠোরতা। শোষক-শোষিতের ব্যবধান কঠোরভাবে দমন করাই কবির অভিপ্রায়।
১৯. ফুটিয়াছে সরোবরে; কমল নিকর
ধরিয়াছে কি আশ্চর্য শোভা মনোহর।
গুন গুন গুন রবে কত মধুকরে,
কেমন পুলকে তারা মধুপান করে,
কিন্তু এরা হায়াইবে এ দিন যখন;
আসিবে কি অলি আর করিতে গুঞ্জন?
আশায় বঞ্চিত হলে আসিবে না আর,
আর না করিবে এ মধুর ঝংকার;
সুসময়ে অনেকেই বন্ধু বটে হয়,
অসময়ে হায় হায় কেহ কারো নয়।
কেবল ঈশ্বর বিশ্বপতি যিনি,
সকল সময়ের বন্ধু সকলের তিনি।
সারমর্ম: বাগানে ফুল ফুটলে মৌমাছির সমাগম ঘটে। মধু আহরণ শেষে এরা চলেও যায়। তেমনি মানবজীবনে সুসময়ে অনেক বন্ধু, সমর্থক, মোসাহেব জুটলেও দুঃসময়ে কাউকে পাশে পাওয়া যায় না।
২০. বন্ধু, বলিনি, ঝুট,
এইখানে এসে লুটাইয়া পড়ে সকল রাজমুকুট
এই হৃদয়ই সে নীলাচল, কাশী, মথুরা, বৃন্দাবন,
বুদ্ধ-গয়া এ, জেরুজালেম এ মদিনা, কাবা-ভবন,
মসজিদ এই, মন্দির এই, গির্জা এই হৃদয়,
এইখানে বসে ঈসা মুসা পেল সত্যের পরিচয়।
এই রণ-ভূমে বাঁশির কিশোর গাহিলেন মহা-গীতা,
এই মাঠে হলো মেষের রাখাল নবিরা খোদার মিতা।
সারমর্ম: প্রকৃতপক্ষে মানুষের হৃদয়ই শ্রেষ্ঠ উপাসনালয়। হৃদয়ধর্মকে প্রাধান্য দিয়েই যুগে যুগে মহামানবগণ ধর্মসাধনায় ব্রতী হয়েছেন। তাই মানুষের হৃদয়েই সকল দেবতা, যুগাবতার ও তীর্থের অধিষ্ঠান।
২১. বসুমতী কেন তুমি এতই কৃপণা?
কত খোঁড়াখুঁড়ি করে পাই শস্যকণা।
দিতে যদি হয় দে মা প্রসন্ন সহাস,
কেন এ মাথার ঘাম পায়েতে বহাস?
বিনা চাষে শস্য দিলে কি তাহাতে ক্ষতি?
শুনিয়া ঈষৎ হাসি কহে বসুমতি—
আমার গৌরব তাহে সামান্যই বাড়ে,
তোমার গৌরব তাহে একেবারে ছাড়ে।
সারমর্ম: বিনা শ্রমে মাটিতে ফসল জন্মালে তাতে পৃথিবীর গৌরব কিছুটা বাড়লেও মানুষের গৌরব একেবারে ক্ষুণ্ন হয়। কারণ শ্রমের মধ্যেই মানবজীবনের সার্থকতা ও গৌরব নিহিত।
২২. বিরহ মিলন কত হাসি, অশ্রুময়
মানুষের সুখে দুঃখে গাঁথিয়া সঙ্গীত
যদি গো রচিতে পারি অমর-আলয়।
তা যদি না পারি তবে বাঁচি যতকাল
তোমাদেরই মাঝখানে লভি যেন ঠাঁই,
তোমরা তুলিবে বলে সকাল বিকাল
নব নব সঙ্গীতের কুসুম ফুটাই।
সারমর্ম: মানুষের হাসি-কান্না, মান-অভিমান, আবেগ-ভালোবাসায় পৃথিবী পরিপূর্ণ। এসব বিষয়কে আশ্রয় করে জীবনঘনিষ্ঠ সৃষ্টির মাধ্যমে সকলের কাছে আদৃত হওয়া সম্ভব।
২৩. বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর,
সবার আমি ছাত্র,
নানান ভাবে নতুন জিনিস
শিখছি দিবারাত্র।
এই পৃথিবীর বিরাট খাতায়
পাঠ্য যে সব পাতায় পাতায়
শিখছি সে সব কৌতূহলে
নেই দ্বিধা লেশমাত্র।
সারমর্ম: বিশ্বের বিচিত্র উৎস থেকে মানুষ প্রতিনিয়ত শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা লাভ করে। বিশাল প্রকৃতি রাজ্য থেকে অর্জিত হয় মানুষের বহুমুখী শিক্ষা। প্রতিটি মানুষই প্রকৃতির ছাত্র হিসেবে প্রতিনিয়ত শিক্ষা গ্রহণ করছে।
২৪. যারে তুই ভাবিস ফণী
তারো মাথায় আছে মণি
বাজা তোর প্রেমের বাঁশি
ভবের বনে ভয় বা কারো?
সবাই যে তোর মায়ের ছেলে
রাখবি কারে, কারে ফেলে?
একই নায়ে সকল ভায়ে
যেতে হবে রে ওপারে।
সারমর্ম: নশ্বর এ পৃথিবীতে সবার প্রতি প্রেমময় মনোভাব পোষণ করা উচিত। শত্রু-মিত্র নির্বিশেষে সবাইকে সমভাবে ভালোবাসতে হবে, আপন নিতে হবে। ভালোবাসা দিয়ে শত্রুকে জয় করাই জীবনের সার্থকতা।
২৫. স্বাধীনতা স্পর্শমণি সবাই ভালোবাসে,
সুখের আলো জ্বলে বুকে দুঃখের ছায়া নাশে।
স্বাধীনতা সোনার কাঠি খোদার সুধা দান,
স্পর্শে তাহার নেচে উঠে শূন্য দেহে প্রাণ।
মনুষ্যত্বের বান ডেকে যায় যাহার হৃদয়তলে,
বুক ফুলিয়ে দাঁড়ায় ভীরু স্বাধীনতার বলে।
সারমর্ম: স্বাধীনতা মানুষের কাছে স্পর্শমণির মতোই পরম সম্পদ, কাঙ্ক্ষিত বস্তু। খোদার দান এ স্বাধীনতা মানবহৃদয়ের দুঃখ-যন্ত্রণা তিরোহিত করে সুখের সন্ধান দেয়, হৃদয়হীনের অন্তরে জাগিয়ে তোলে মনুষ্যত্ববোধ। স্বাধীনতা লাভ করে ভীরু ও দুর্বল বীরেরা মহিমা লাভ করে।
২৬. সবারে বাসিব ভালো, করিব না আত্মপর ভেদ
সংসারে গড়িব এক নতুন সমাজ।
মানুষের সাথে কভু মানুষের রবে না বিচ্ছেদ-
সর্বত্র মৈত্রীর ভাব করিবে বিরাজ।
দেশে দেশে যুগে যুগে কত যুদ্ধ কত না সংঘাত
মানুষে মানুষে হলো কত হানাহানি
এবার মোদের পুণ্যে সমুদিবে প্রেমের প্রভাত
সোল্লাসে গাহিবে সবে সৌহার্দ্যের বাণী।
সারমর্ম: প্রেম-ভালোবাসা আর সৌহার্দ্যের সেতুবন্ধনে বিশ্বময় মানুষের মাঝে সুন্দরতম প্রাণের স্পন্দন জাগিয়ে তুলতে হবে। আর তাই সাম্প্রতিক বিশ্ববাসীর দাবি- যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই।
২৭. সন্ধ্যা যদি নামে পথে, চন্দ্র যদি পূর্বাচল কোণে
না হয় উদয়,
তারকার পুঞ্জ যদি ঢেবে যায় প্রবল জলদে
না করিব ভয় ।
হিংস্র ঊর্মি ফণা তুলি, বিভীষিকা মূর্তি ধরি যদি
গ্রাসিবারে আসে,
সে মৃত্যু লঙ্ঘিয়া যাব সিন্ধু পারে নবজীবনের
নবীন আশ্বাসে ।
সারমর্ম: মানবজীবনে চলার পথে বাধা-বিপত্তি আসাটা স্বাভাবিক। সকল বাধাকে অতিক্রম করে, ভয়কে জয় করে, অদম্য মনোবল নিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হবে। তবেই জীবনে মুক্তির স্বাদ যা আস্বাদন করা সম্ভব।
সারমর্ম ┃জেসএসসি , এসএসসি , এইচএসসি , ডিগ্রি, অনার্স, মাস্টার্স, বিসিএস ছাড়াও আরো জানুন