সিরাজউদ্দোলা নাটকের শিখনফল
সিরাজউদ্দোলা নাটকের শিখনফল

নাটকের সংক্ষিপ্ত পরিচয়
সিরাজউদ্দোলা নাটকটি বাংলাদেশের নাট্য জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাপ্তি। নাটকটি মূলত নবাব সিরাজউদ্দোলার জীবন ও রাজত্বকালের ঘটনাবলীকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে। এই নাটকের পটভূমি হল বাংলার ইতিহাসে একটি সংকটকাল, যেখানে সিরাজউদ্দোলা ছিল বিখ্যাত নবাব হিসাবে পরিচিত। নাটকে অনুপ্রবেশ করে সেই সময়ের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দ্বন্দ্ব যা ছিল বাংলা অঞ্চলের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতা।
নাটকের প্রধান চরিত্র সিরাজউদ্দোলা, একজন যুবক নবাব, যিনি শক্তিশালী শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করে তাঁর রাজ্যকে রক্ষার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তাঁর চরিত্র একটি উদ্যমী এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির সমাসন্ন, যেখানে তিনি নিজের দেশের মানুষের প্রতি আন্তরিকতার নজির স্থাপন করেন। সিরাজউদ্দোলার সাথে নাটকে অন্যান্য বেশ কিছু চরিত্রের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, ঢাকার আসাদের প্রধান এক মিত্র, অথবা নবাবের পাশে থাকা কুচক্রী এবং দন্দ্ব সৃষ্টিকারী বণিকেরা।
এই নাটকটিতে চরিত্রগুলোর ভূমিকা শুধুমাত্র কাহিনীকে এগিয়ে নিতে নয় বরং সামাজিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতার প্রশ্নগুলি উত্থাপন করতে সাহায্য করে। সিরাজউদ্দোলার ব্যক্তিত্ব নাটকের কেন্দ্রে অবস্থান করে, যেখানে তাঁর আদর্শিক যুদ্ধে তাঁর বন্ধু ও শত্রুদের পরিচয় প্রকাশ পায়। নাটকের প্রতিটি চরিত্রই নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ও ইচ্ছা নিয়ে এগিয়ে আসে, ফলে একটি গঠনমূলক গল্প নির্মাণ হয়। এইভাবে, সিরাজউদ্দোলা নাটকটি কাহিনীর ধারাবাহিকতার সঙ্গে দ্বন্দ্ব, প্রেম ও মানুষের সম্পর্কগুলোর বিচিত্র অনুষঙ্গ তুলে ধরে।
শিক্ষার গুরুত্ব
“সিরাজউদ্দোলা” নাটকটি বাংলাদেশের নাট্যশিল্পে একটি বিশেষ স্থানে অধিষ্ঠিত। নাটকটি শুধু বিনোদনের জন্য নয়, বরং জীবনের বিভিন্ন দিক এবং শিক্ষা মূলক বিষয়গুলির প্রতি একটি গভীর দৃষ্টিকোণ প্রদান করে। এই নাটকটির মাধ্যমে সিরাজউদ্দোলা, যে মুঘল আমলে বাংলার শেষ রাজা, তার ব্যক্তিত্ব ও নেতৃত্বের গুণাবলী দর্শকদের মাঝে আলোকিত করে। সিরাজের চরিত্রের মধ্যে আমাদের জন্য অনেক শিক্ষণীয় বিষয় নিহিত আছে, যা বর্তমান যুগেও প্র relev ও প্রাসঙ্গিক।
নাটকটি আমাদের শেখায় কীভাবে একজন নেতা সাধারণ মানুষের স্বার্থে কাজ করে এবং নিজের আদর্শের পক্ষে দৃঢ় থাকে। সিরাজউদ্দোলা যে সময়ে অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল, সেখান থেকে আমরা শিখি যে একজন নেতার উচিত তার সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বিচক্ষণতা ও সংকল্পের পরিচয় দেওয়া। তার নেতৃত্বের গুণাবলী, যেমন সাহস, দূরদর্শিতা, এবং সংকটমোচন, কেবল নাটকে নয় বরং বাস্তব জীবনে প্রযোজ্য।
অন্যদিকে, সিরাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদ্ধতি আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয় যে, বিনা চিন্তাভাবনার সিদ্ধান্ত নিলে সমস্যা বাড়তে পারে। নাটকে সিরাজ যখন তার সিদ্ধান্ত নিয়ে চিন্তা করে, তখন সে তার অধীনে থাকা মানুষের প্রতি দায়িত্বশীলতা প্রকাশ করছে। এর ফলে একজন নেতা হিসেবে তার কর্তব্যবোধ এবং জনসাধারণের প্রতি যে বিশ্বস্ততা থাকা দরকার, তা আমাদের জন্য অপরিহার্য হতে ওঠে।
সার্বিকভাবে, “সিরাজউদ্দোলা” নাটকটি শুধু একটি ঐতিহাসিক চিত্র তুলে ধরে না, বরং আমাদের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যা উপলব্ধি ও প্রয়োগ করা প্রয়োজন, তার এক অসাধারণ শিক্ষা প্রদানে সক্ষম।
সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
সিরাজউদ্দোলা নাটকটি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম একটি জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ রচনা, যা 1757 সালের পলাশীর যুদ্ধের পূর্ববর্তী ঘটনা ও সে সময়ের সামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে রচিত। এই নাটকটি মুসলিম শাসনামলের শেষ সময়ের একটি ক্লিস্ট বাস্তবতাকে তুলে ধরে, যখন ভারতবর্ষে ইংরেজ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিস্তার ঘটছিল। নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র সিরাজউদ্দোলা, নবাবের ভূমিকায়, কেবল একটি শাসক হিসেবে নয়, বরং একটি মানবিক চরিত্র হিসেবে উপস্থাপিত।
সিরাজ উদ্দোলার বিরুদ্ধাচারণে যে রাজনৈতিক চক্রান্ত চলছিল, তার প্রতিফলন নাটকের কাহিনীতে স্পষ্ট। ইংরেজদের সাথে স্থানীয় রাজাদের দ্বন্দ্ব, ধর্মীয় সংকট, এবং জনগণের মধ্যে বিভাজন নাটকের মাধ্যমে যাপন করা হয়েছে। নাটকের মধ্যে দেখা যায়, কীভাবে সিরাজুর্দ্দোলার হাতাবাহিত শাসন বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনৈতিক কাঠামোকে প্রভাবিত করছে। সেকালীন সমাজের দুর্বলতা, অবিচার ও অন্যায়, এবং মানুষের মধ্যে যে বিরোধিতা বিদ্যমান ছিল, এও নাটকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে, সিরাজউদ্দোলা নাটকটি সমাজের বিদ্যমান বৈপরীত্যগুলোকে চিত্রিত করে। এখানে দেখা যায়, ভিন্ন ধর্ম, বর্ণ ও শ্রেণির মানুষের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গির সীমাবদ্ধতা, যা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার উৎস হিসেবে কাজ করে। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্কগুলো সমাজের বিভিন্ন স্তরের মুখোমুখি সংঘাতকেও তুলে ধরেছে। নাটকটির মাধ্যমে ইতিহাসের এই পর্যায়ে জনগণের সংগ্রাম ও মানবিক দ্বন্দ্বগুলো প্রভাব বিস্তার করেছে, যা আজকের সমাজের বাস্তবতাকেও জোরালোভাবে তুলে ধরে।
চরিত্র বিশ্লেষণ
নাটক সিরাজউদ্দোলার মূল চরিত্র সিরাজউদ্দোলা, এক উগ্র যুবকের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যিনি ভারতীয় ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায়কে প্রতিনিধিত্ব করে। তাঁর চরিত্রের মধ্যে যে শক্তি ও সাহস বিদ্যমান, তা নাটকের ঘটনা প্রবাহে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। সিরাজউদ্দোলার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং নৈতিকতা তাকে সুযোগ নিতে সহায়তা করেছে, যা তাঁর শাসন আমলে একটি দৃঢ় পরিচয় নির্মাণ করেছে। তার চরিত্রের একাধিক প্রতিক্রিয়া শাসকের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সম্পর্ককে আরো জোরদার করেছে।
এছাড়াও, নাটকে অন্যান্য সংশ্লিষ্ট চরিত্রগুলি যেমন, আলিবর্দী খাঁ ও ইংরেজ প্রভুসাহেব, সিরাজউদ্দোলার জীবন এবং সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে। আলিবর্দী খাঁ, সিরাজের কাকা, শাসন কর্তৃত্বের মধ্যে বিশাল অভিজ্ঞতার অধিকারী একজন কঠোর শাসক। তাঁর চরিত্রটি গোপন রাজনৈতিক লেনদেন এবং তিক্ত সম্পর্কের একটি উদাহরণ, যা সিরাজের শাসনকালে নাটকীয় মোড়ের সৃষ্টি করে।
অন্যদিকে, ইংরেজ প্রভুসাহেব সিরাজউদ্দোলার শোষণের পক্ষে এবং কূটনীতির ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দেন। তাঁর চরিত্র সাদৃশ্য করে পশ্চিমা শক্তির বেড়ে ওঠা এবং ভারতীয় রাজনীতির অভ্যন্তরে বিদেশি হস্তক্ষেপকে প্রতিফলিত করে। এরূপভাবে, নাটকের চরিত্রগুলির মধ্যে সম্পর্ক এবং তাদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি একে অপরকে সমর্থন ও বিরোধিতা করছে, যা নাটকে যে নাটকীয়তা ঘটছে, তা শক্তিশালী করে।
এই সকল চরিত্রের গুণাবলি এবং তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক নাটকের কেন্দ্রবিন্দু তৈরি করে, দর্শকের মনে প্রশ্ন জাগায় যে সত্যি কী এবং শক্তির আধিপত্য কতদূর পর্যন্ত যেতে পারে। প্রতিটি চরিত্র যেন সিরাজউদ্দোলার দুর্দশার প্রতিফলন, যা আমাদের ইতিহাসের শিক্ষাকে উপলব্ধি করতে সহায়ক।
নাটকের লিখনশৈলী
সিরাজউদ্দোলা নাটকে লেখনশৈলী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। নাটকের ভাষা সৎ, প্রাঞ্জল এবং যূথবদ্ধ, যা পাঠক ও দর্শকের কাছে শোষণীয়। নাট্যকারের বাচনভঙ্গি সমৃদ্ধ, এতে স্থায়ী ও চিত্রময় একরূপতা লক্ষ্য করা যায়। গ্রামীণ ও শহুরে জীবনের ছাপ নাটকে ফুটে উঠেছে, যা চরিত্রগুলোর মাধ্যমে বর্ণনা করা হয়েছে। এছাড়া, নাটকের বাক্যবিন্যাসও যথেষ্ট প্রাঞ্জল ও প্রাণবন্ত, যা সংলাপের প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
নাট্যকারের স্টাইল সাধারণত নাট্য প্রকরণী কিংবা প্রথিতযশা রচনাশৈলীতে গড়ে উঠেছে। চরিত্রগুলোর বাচনভঙ্গি তাদের সামাজিক অবস্থান নির্দেশ করে এবং দর্শকের মনে একটি বাস্তব পরিবেশের সৃষ্টি করে। ভাষার ব্যবহার সেই সময়ের জনমানসে সাক্ষাৎকার জানাতে সক্ষম হয়েছে, যা নাটকটিকে সত্যিকার অর্থেই কাল্পনিকের চেও বেশি বাস্তবতর করেছে। এছাড়া, নাটকের মধ্যে বিভিন্ন সংস্কৃতির গ্রহণ-বর্জনের চিত্রও প্রতিফলিত হয়েছে। লোকায়ত সংস্কৃতির আবেদন নাটকের বৈচিত্র্য সৃষ্টি করেছে, যা দর্শককে প্রভাবিত করে।
নাট্যের নাটকীয় প্রভাবও অমান্য আছে। লেখায় জাগতিক বা দৈনন্দিন ঘটনার সাথে সৃজনশীলত্বের সংযোগ ঘটানো হয়েছে, যা নাট্যভাবনাকে আরো গাঢ় করেছে। নাট্যকার চরিত্রের মাধ্যমে মানব চিন্তাভাবনের বিভিন্ন দিক এবং সংঘাত—দুঃখ ও আনন্দ—প্রকাশ করেছেন। এই সমস্ত উপাদানের সংহতিকরণ সিরাজউদ্দোলার লিখনশৈলীকে একটি উৎকৃষ্ট সাহিত্যিক রূপ প্রদান করে, যা দর্শক ও পাঠকদের মনে ধারণা গড়তে সক্ষম হয়েছে।
নাটকের মাধ্যমে সামাজিক বার্তা
সিরাজউদ্দোলা নাটকটি একটি শক্তিশালী সামাজিক বার্তা নিয়ে উদ্বোধন করে যা মানবাধিকার, নৈতিকতা, এবং রাজনৈতিক সচেতনতার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে আলোচনা করে। নাটকটি যেন একটি প্রতিবন্ধকতার অংশীদার, যা সমাজের ভেতর থেকে অপরাধ, শোষণ এবং অসঙ্গতির প্রতি নজর দেয়। সিরাজউদ্দোলার কাহিনী, সাধারণ মানুষের সংগ্রামের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায় এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করে।
এই নাটকটি সূচনাগুলির একটি আলোড়ন তুলে ধরে সমাজে নৈতিকতার গুরুত্বের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করে। এটি আমাদের জানায় যে নৈতিকতা এবং সততা মানুষের জীবনে কেমন ভূমিকা পালন করে। গল্পটির কেন্দ্রে থাকা চরিত্রগুলো তাদের নীতি ও আদর্শের লড়াইয়ে আবদ্ধ হয়ে পড়ে, যা বর্তমান সময়ে আমাদের সমাজে বাস্তবায়ন করতে পারার প্রয়োজনীয়তাকে স্থান দেয়। এছাড়া, রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পারলে মানুষ আত্মপরিচয়ে প্রবৃদ্ধি লাভ করতে পারে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম হয়।
নাটকটির মাধ্যমে রাজনৈতিক সচেতনতার গুরুত্ব তুলে ধরা হয় এবং দর্শকরা বুঝতে পারে কিভাবে তাদের ভোটের মাধ্যমে পরিবর্তন আনা সম্ভব। সিরাজউদ্দোলার কাহিনীতে গর্ভিত বার্তা হচ্ছে- মানুষকে তাদের অধিকার ও সম্মান রক্ষায় সচেতন হতে হবে। জনগণের মধ্যে এই সচেতনতা সৃষ্টি করাই নাটকের প্রধান উদ্দেশ্য, যা সাধারণের দুর্বলতার দিকে আঙ্গুল তুলে ধরে। তাই সিরাজউদ্দোলা নাটকটি বিভিন্ন সামাজিক সমস্যাকে ডিঙিয়ে, এক নতুন দিগন্তের দিকে আমাদেরকে চলতে সাহায্য করে।
সমসাময়িক প্রভাব
সিরাজউদ্দোলা নাটকটি বাংলা সাহিত্য এবং সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে। এই নাটকটির প্রভাব আজকের যুগে বিভিন্নভাবে দৃশ্যমান। একদিকে, নাটকটি আটকা পড়া মূল্যবোধ এবং সামাজিক নীতিকে প্রকাশ করে, অন্যদিকে, এটি রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর চিন্তা উদ্রেক করে। আধুনিক সমাজে আমরা যেসব নৈতিকতা এবং মূল্যবোধকে নাড়া দিচ্ছি, সেগুলো সিরাজউদ্দোলার চরিত্রগুলোর মধ্যে সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়।
নাটকটি যেমন ইতিহাসের একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করে, তেমনি এটি বর্তমান সামাজিক কাঠামোর বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলে। সিরাজউদ্দোলার স্বাধীনতার সংগ্রামের চিত্রগুলো আজকের সময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতার সাথে সম্পর্কিত। স্বাধীনতা, অধিকার এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের এই ধারণাগুলো আজও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্রগুলি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে, যা আমাদের বর্তমান রাজনৈতিক এবং সামাজিক সমস্যাগুলির সাথে সংহত হয়।
এছাড়া, নাটকটির মধ্যে রয়েছে একটি চিরন্তন বার্তা: শক্তিশালী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের লড়াই। এই বিষয়টি আজকের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, যেখানে ক্ষমতাবানদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের আওয়াজ আরও উজ্জীবিত হয়েছে। নাটকটি বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদেরকে মাত্রা দেয় যে, একতা এবং সংগ্রামের মাধ্যমে যেকোনো সামাজিক পরিবর্তন আনা সম্ভব। এইভাবেই সিরাজউদ্দোলা নাটকটি আজকের যুগে আমাদের চিন্তা ও কর্মকাণ্ডের উপর একটি স্থায়ী প্রভাব রেখে চলেছে।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা
শীর্ষক নাটক "সিরাজউদ্দোলা" পরিবেশনা করতে গিয়ে আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতা কিছুটা ভিন্নতর ছিল। নাটকটি প্রথম দেখার সময়, আমি বিস্মিত হয়েছি যে ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্ব কিভাবে সেই সময়ের মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলেছিল। সিরাজ উদ্দোলা, যিনি একজন সুপারিশক রাজা ছিলেন, তাঁর সংগ্রামের মাধ্যমে তখনকার রাজনৈতিক বাস্তবতাকে তুলে ধরেন, যা আমাদের বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
নাটকটি উপভোগ করতে করতে, আমি অনুভব করেছি যে চরিত্রগুলোর মধ্যে সমন্বয় এবং সংঘর্ষ কিভাবে মানবিক অনুভূতি এবং আকাঙ্খাকে ব্যক্ত করে। বিশেষ করে সিরাজের দুর্দশার দৃশ্যগুলি আমাকে ভাবিয়ে তুলেছিল যে, একজন নেতা হয়ে ওঠার সূত্রে কিভাবে কাজে লাগানো হতে পারে বিচক্ষণতা, সাহস এবং সংকল্প। এই অভিজ্ঞতা আমার চিন্তাধারাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে, কারণ আমি অনুভব করেছি যে জীবনের সংগ্রামগুলি সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়, তবে মানবিক অনুভুতি সর্বদা অপরিবর্তিত থাকে।
এছাড়া, নাটকের ঘটনাবলির সাথে পরিচিত হওয়া আমাকে সমকালীন সমাজের বিভিন্ন সমস্যার প্রতি সচেতন করেছে। আমি যেমন দেখতে পাই, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট প্রতিটি মানুষের জীবনের উপর প্রভাব ফেলে, ঠিক তেমনই সিরাজের হতাশা ও সংগ্রাম আমাকে শিক্ষা দিয়েছে যে, পরিস্থিতি যতোই কঠিন হোক না কেন, আমাদের সাহস সঞ্চয় করতে হবে। নাটকটিতে শেখার কতকগুলো মূল বিষয়গুলি আমাকে আমার দৈনন্দিন জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন উপলব্ধি এবং শক্তি দিয়েছে।
উপসংহার
সিরাজউদ্দোলা নাটকটি বাংলা সাহিত্যের একটি ঐতিহাসিক তারকা, যা আমাদের অতীতের কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ও নৈতিকতা সম্পর্কে আমাদের অবহিত করে। নাটকটির কেন্দ্রীয় চরিত্র সিরাজউদ্দোলা, একজন তরুণ শাসক, যে তাঁর জনগণের জন্য নিষ্ঠার সাথে কাজ করে। এই নাটকের অন্যতম প্রধান শিক্ষা হলো সততা ও ন্যায়বিচার। সিরাজউদ্দোলা তাঁর নৈতিক মূল্যবোধ অনুযায়ী কাজ করে এবং এর ফলস্বরূপ তিনি জনগণের হৃদয়ে একটি বিশেষ স্থান অর্জন করেন।
অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হলো রাজনৈতিক চক্রান্ত ও বিশ্বাসঘাতকতা। নাটকটি আমাদের দেখায় কিভাবে একদল ব্যক্তি নিজের স্বার্থের জন্য অন্যের ক্ষতি সাধন করে। সিরাজউদ্দোলার জীবনে এই বিশ্বাসঘাতকতার ফলে যে সংকট সৃষ্টি হয়, তা আমাদেরকে সতর্ক করে যে, আমাদের চারপাশে সবসময় তাঁবজি বা লোভী মানুষের অবস্থান থাকে। এই অভিজ্ঞতা থেকে আমরা শিখতে পারছি যে, সতর্ক থাকা এবং সহানুভূতি প্রদর্শন করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
নাটকের শেষের দিকে আমরা দেখি, সিরাজউদ্দোলার আত্মত্যাগ ও গণমানুষের প্রতি তার ভালোবাসা। এটি জনগণের উপর তাঁর প্রভাবকে উজ্জ্বল করে তোলে এবং আমাদের শেখায় যে একজন নেতার জন্য জনগণের ভালোবাসা ও সমর্থন অপরিহার্য। নাটকটি এভাবেই আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, নেতৃত্বের মূল ভিত্তি হলো জনসেবা ও নীতি। সিরাজউদ্দোলা নাটকের শিক্ষাগুলো সময়ের পরীক্ষিত এবং আমাদের সমাজের উন্নয়নে সাহায্যকারী। পাঠকদের এই নাটকের প্রতি আরও আগ্রহী হওয়া উচিত এবং এর শিক্ষাগুলোকে মূল্যায়ন করা উচিৎ।