যেসব লক্ষণ দেখে বুঝবেন আপনাদের বিচ্ছেদ অনিবার্য
যেসব লক্ষণ দেখে বুঝবেন আপনাদের বিচ্ছেদ অনিবার্য

ভূমিকা
বিবাহ এবং সম্পর্ক মানবজীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। জীবনের এই পর্যায়ে স্থায়িত্ব এবং সুখের জন্য সঠিক সম্পর্ক গঠন করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সম্পর্কগুলি একটি নতুন পর্যায় পরিচালনার সময় আসলে মানব অনুভুতির গভীরতা প্রকাশ করে। সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে একটি সুস্থ সম্পর্ক দীর্ঘ সময় পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, সম্পর্কের মধ্যে বিশ্বাস, শ্রদ্ধা এবং সহযোগিতার মতো উপাদানগুলি সুস্থ সম্পর্কের অন্যতম মূল ভিত্তি। সম্পর্কের এই সকল গুণাবলী না থাকলে বিচ্ছেদের সম্ভাবনা বাড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যেসব দম্পতি একে অপরের প্রতি খোলামেলা এবং সৎ হয়, তাদের সম্পর্কের টেকসই হওয়ার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। বাস্তব অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে যে, সম্পর্কের মধ্যে সময়মত সমস্যাগুলি সমাধান না করলে বিচ্ছেদের পথ প্রশস্ত হতে থাকে।
অন্যদিকে, সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের পরিসংখ্যানও এ বিষয়টিকে সমর্থন করে। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বিবাহিত দম্পতিদের ৪০% এর বেশী তাদের সম্পর্ক বজায় রাখতে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হন, তবে তাদের মধ্যে যারা একাধিক সম্পর্ক সংরক্ষণে সচেষ্ট, তাদের মধ্যে বিচ্ছেদের হার অনেক কম; প্রায় ২০%।
অতএব, সম্পর্কের গুরুত্ব এবং সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তার সাথে তাত্ত্বিক এবং বৈজ্ঞানিক দুটি দৃষ্টিকোণ থেকেই এটি পরিষ্কার যে, মানব জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ অংশকে সচেতনভাবে পরিচালনা করতে হয়, অন্যথায় বিচ্ছেদের লক্ষণগুলি স্পষ্ট হয়ে উঠতে পারে।
সংযোগের অভাব
যখন একটি সম্পর্কের ক্ষেত্রে সংযোগের অভাব দেখা দেয়, তখন এটি উভয় পক্ষের মধ্যে অমানানিত যোগাযোগের ফলস্বরূপ হতে পারে। শারীরিক এবং মানসিকভাবে একে অপরের কাছে না থাকলে, সম্পর্কের গুণগত মান গৃহীত নাও হতে পারে। সংযোগের অভাব অনেক সময় অনুভূত হয় যখন দুই ব্যক্তির মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া বা সমঝোতা কমে যায়। দৈনন্দিন জীবনে একে অপরের চিন্তা, অনুভূতি এবং অভিজ্ঞতার প্রতি আগ্রহের অভাব এই পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করতে পারে।
একটি সম্পর্কের মধ্যে এই ধরনের সংযোগের অভাব ঘটলে, উভয় পক্ষের মধ্যে ভারসাম্য ও সম্পূর্ণতা নিশ্চিত করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। সম্পর্কের শারীরিক দিক যেমন আগের মতো উজ্জ্বল থাকে না, তেমনি মানসিক দিকও তাদের মধ্যে দূরত্বের কারণে ধীরে ধীরে দূর্বল হয়ে যায়। এতে অশান্তি এবং উভয় পক্ষের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়, যা পরবর্তীতে বিচ্ছেদের দিকে নিয়ে যেতে পারে। অনেক সময়, একটি সম্পর্কের মধ্যে বিচ্ছেদের লক্ষণগুলি ততক্ষণ সুস্পষ্ট হয় না যতক্ষণ না এর গুরুত্ব স্বীকার করা হয়।
সংযোগের অভাব মূল্যায়ন করার জন্য, দু’জনের মাঝে যদি আসন্ন বিশেষণ এবং অনুভূতির অভাব দেখা দেয় বা সম্পর্কের মধ্যে গভীর আলোচনা অবহেলিত হয়, তবে তা একটি সতর্ক সংকেত। সম্পর্কের দুই সদস্যের মধ্যে যদি সচেতনতা ও আগ্রহের অভাব দেখা দেয় তবে সেটি অনিবার্যভাবে তাদের মধ্যে অবশ্যম্ভাবী বিচ্ছেদ নির্দেশ করতে পারে। সচেতনভাবে একে অপরের প্রতি যত্নশীল না হলে, এটি একটি সম্পর্কের স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে, যা পরবর্তীতে সম্পর্কের স্থায়িত্বের বিষয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
বিবাদ বা অশান্তি
সম্পর্কের মধ্যে বিরোধ বা অশান্তি যে কোনও সময় হতে পারে, কিন্তু যখন এটি নিয়মিত এবং অপরিবর্তনীয় হয়ে ওঠে, তখন এটি বিচ্ছেদের একটি প্রবল সংকেত হতে পারে। সম্পর্কের ক্ষতি সাধনকারী ছোট ছোট বিষয়গুলি যেভাবে অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়ে, তা অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ পরিণতি ডেকে আনে। সামান্য মতবিরোধ যখন প্রতিদিনের জীবনে খারাপ প্রভাব ফেলে, তখন সম্পর্কের স্থায়ীত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে।
মনে করুন, এক পক্ষের কারণে যদি অন্য পক্ষ সবসময় বিরক্ত হয় এবং তাদের মধ্যে একটি অশান্ত পরিবেশ তৈরি হয়, তাহলে তা দীর্ঘমেয়াদে সম্পর্কের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন মানুষ সবসময় নিজের কাজের প্রতি মনঃসংযোগ করে থাকেন এবং তার পার্টনার তাকে সমর্থন বা বোঝার পরিবর্তে অভিযোগ করে থাকেন, তাহলে এই পারস্পরিক অশান্তি একটি বৃহৎ সমস্যা তৈরি করতে পারে।
শুনতে অস্বাভাবিক হলেও, সম্পর্কের ছোট ছোট বিষয়গুলি সময়ের সাথে সাথে বড় অশান্তির জন্ম দিতে পারে। অপরিকল্পিত আলোচনা বা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে না পারা, বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে এবং একজনের প্রতি অপরজনের ক্ষোভ বৃদ্ধি করে। জীবনের নানা ক্ষেত্রে সম্পর্কের মধ্যে বিরোধ থাকা স্বাভাবিক, তবে সেই বিরোধ যখন সম্পর্কের মধ্যে মানসিক অশান্তি নিয়ে আসে, তখন সেই পরিস্থিতির গুরুত্ব বাড়ে।
যদি আপনি দেখতে পান যে আপনার সম্পর্কের মধ্যে নিয়মিত অশান্তি, বিরোধ ও সমস্যা চলছে এবং তা সমাধান করার কোনও ইচ্ছা বা আগ্রহ নেই, তবে এটি বিচ্ছেদের সম্ভাবনা নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টির একটি বড় চিহ্ন হতে পারে।
আবেগের অবসান
প্রেমের সম্পর্কের মধ্যে আবেগ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদিও সম্পর্কের শুরুতে উভয় পক্ষের মধ্যে মনোভাবে প্রবাহিত আবেগ প্রবাহিত হয়, সময়ের সাথে সাথে এই আবেগ ধীরে ধীরে কমে আসতে পারে। যখন কোন সম্পর্কের মধ্যে আবেগের তীব্রতা থাকে, তখন সেটি সম্পর্কটিকে শক্তিশালী করে এবং উভয় পক্ষ নির্ভরশীল বোধ করে। তবে, যখন এই আবেগের স্তর কমতে শুরু করে, তখন সম্পর্কের স্থায়িত্ব হুমকির সম্মুখীন হয়।
দুইজনের মধ্যে আগ্রহের অভাব আবেগের অবসানের একটি প্রকাশ হতে পারে। একে অপরের প্রতি আগ্রহ হারানো, দীর্ঘ সময় ধরে একসাথে থাকার পর হয়; এটি স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। সম্পর্কের ক্ষেত্রে, যথাযথ যোগাযোগের অভাব, একসঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগের অভাব এবং অন্যান্য সামাজিক বা ব্যক্তিগত কারণে একে অপরের প্রতি দৃষ্টি কমে যেতে পারে। ফলে, এক সময়ের প্রেমিকার পরিবর্তে তারা পরিচিতির স্তরে এসে দাঁড়ায়।
এছাড়াও, সম্পর্কের অভ্যন্তরে যদি এক বা উভয় পক্ষের মধ্যে পরিবর্তন ঘটে, যেমন কাজের কারণে ব্যস্ততা বা পারিবারিক দ্বন্দ্ব, তবে তা সম্পর্কের আবেগে প্রভাব ফেলে। এই কারণে, যদি partners আবেগের অভাব অনুভব করেন এবং একে অপরের প্রতি আগ্রহ কমে যায়, তবে বিচ্ছেদের সম্ভাবনা বাড়িতে থাকে। এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে সম্পর্কের মধ্যে উভয় পক্ষের হতে হবে সচেতন এবং বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে একে অপরের অনুভূতির প্রতি। যখন আগ্রহের অভাব সংবেদনশীল দূরত্বের দিকে পরিচালিত করে, তখন বিচ্ছেদ অনিবার্য হয়ে পড়ে।
বিশ্বাসের অভাব
সম্পর্কের মধ্যে বিশ্বাস একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। যখন বিশ্বাসের অভাব ঘটে, বিশেষ করে প্রতারণা বা গোপনীয়তার কারণে, তখন সম্পর্কগুলো ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যায়। একটি সম্পর্কের মূল ভিত্তি হচ্ছে পারস্পরিক আস্থা এবং সম্মান। যখন এই ভিত্তি ভঙ্গুর হয়ে পড়ে, তখন তা সম্পর্কের সংকটের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
বিশ্বাসের অভাব সাধারণত তখন শুরু হয় যখন একজন অংশীদার অন্যজনের প্রতি অদৃশ্য বা দৃশ্যমানভাবে গোপনীয়তা বা অTransparency বজায় রাখে। উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন বিবাহিত ব্যক্তি তার সঙ্গীকে অক্ষম ভাবে কিছু বিষয় সম্পর্কে না জানায়, তাহলে যোগাযোগের শূন্যতা সৃষ্টি হতে পারে, যা পরে সন্দেহের জন্ম দেয়। এই সন্দেহের ফলে একজনের মনে আস্থা ক্ষীণ হতে শুরু করে, যা সম্পর্কের প্রতিটি পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে।
দীর্ঘস্থায়ী বিশ্বাসের অভাবে, অনেক সময় সম্পর্কের মধ্যে প্রতারণার ছায়া পড়ে। যখন একজন ব্যক্তি প্রতারণার মাধ্যমে সম্পর্কের নিষ্ঠায় আঘাত হানে, তখন এটি আর একেবারে সহজভাবে সই করা সম্ভব হয় না। তা স্বীকার করে না নেওয়ার মধ্যে থাকলে, একটি সাধারণ প্রশ্ন উদ্ভব হয়: কি ঘটছে? এই প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করতে গিয়ে, সন্দেহই সম্পর্কের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরির সুযোগ করে দেয়।
একটি সম্পর্কের টিকে থাকার ক্ষেত্রে বিশ্বাস একটি অমূল্য সম্পদ হিসেবে কাজ করে। যখন সম্পর্কের মধ্যে বিশ্বাসের অভাব দেখা দেয়, তখন তার প্রভাব অনুভব করা খুব সহজ। সম্পর্কের ভবিষ্যৎ আলোচনা করতে হলে, বিশ্বাসের অভাব একটি গুরুতর লক্ষণ হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। এতে করে বিচ্ছেদের পূর্বাভাস স্বরূপ হতে পারে, যদি এই সমস্যা সমাধান না করা হয়।
কামনার দুর্বলতা
অনেক সম্পর্কের ক্ষেত্রে, শারীরিক সম্পর্ক এবং কামনার মধ্যে দুর্বলতা একটি গুরুতর সংকেত হিসেবে দেখা দেয়। যখন দুটি মানুষের মধ্যে শারীরিক আকর্ষণ এবং কামনা হ্রাস পেতে শুরু করে, তখন সম্পর্কের প্রাণশক্তিতে একটি সংকট দেখা দেয়। এটি মাঝে মাঝে ঘটতে পারে, বিশেষকরে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের সময়ে, যখন রোমান্সের উদ্দীপনা কমে যায়।
শারীরিক সম্পর্ক একটি স্বাস্থ্যকর সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এটি কেবল শারীরিক সান্নিধ্যই নয়, বরং মানসিক এবং আবেগজনিত জুড়িও গঠন করে। যখন শারীরিক আকর্ষণের অভাব দেখা দেয়, তখন এটি স্বাভাবিকভাবেই উভয়জনের মধ্যে দূরত্ব বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে, শারীরিক দুর্বলতা পরস্পরের প্রতি আগ্রহের সংকেত দিতে পারে, যা সম্পর্কের জন্য একটি উদ্বেগজনক লক্ষণ।
অতিরিক্ত শারীরিক সম্পর্কের সংকটের পরিণতি হিসেবে অনেকেই মানসিক চাপের শিকার হতে পারে, যা তাদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করে। মানসিক এবং শারীরিক যৌনতা দুইয়েরই মিলন ঘটানো উচিত, নাহলে সম্পর্কের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হতে পারে। যদি এই দুর্বলতা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যায়, তবেই বিশাল সমস্যা সৃষ্টি হয়, যা সম্পর্কের সম্পূর্ণতার ক্ষতি করে।
সুতরাং, শারীরিক সম্পর্ক এবং কামনার দুর্বলতা অবহেলা করা উচিত নয়। এটি এক প্রকার সংকেত যে মানুষগুলি একে অপরের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, এবং প্রয়োজন হিসাবে এই বিষয়গুলো চিহ্নিত করা উচিত। সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করলে সম্পর্কের সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব।
প্রতারনা এবং সম্পর্কের অবিচার
প্রতারনা এবং অবিচার একজন মানুষের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। সম্পর্কের মধ্যে বিশ্বাস এবং আস্থার ভিত্তি ভেঙে গেলে, দুজনের মধ্যে দূরত্ব বেড়ে যায় এবং সম্পর্কের সঠিক সম্মান নষ্ট হয়। প্রতারণা শুধুমাত্র শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ঘটতে পারে না; এটি মানসিক ও আবেগগত ক্ষেত্রেও হতে পারে। যখন একজন সঙ্গী অন্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়, তা যেকোনো সম্পর্কের জন্য একটি বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। এসব কারণে বিচ্ছেদের প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু হতে পারে।
সংবাদ মতে, প্রতারণা সম্পর্কের ভিত্তিতে এমন এক ধরণের চাপ সৃষ্টি করে যা দূরবর্তী অবস্থানে গেলে দ্বন্দ্ব ও উত্তেজনার জন্ম দেয়। একজন সঙ্গী যদি তাদের অনুভূতি বা আবেগ ছড়িয়ে দেয়, তবে তারা অপর সঙ্গীর প্রতি অযাচিত ও অসন্তুষ্ট হতে পারে। এই অবস্থা যদি দীর্ঘ সময় ধরে চলে, তাহলে সম্পর্কের মধ্যে অবিচ্ছেদ্য সুতা ছিন্ন হয়ে যায় এবং বিচ্ছেদের ঘটনা অনিবার্য হয়ে ওঠে।
এছাড়া, অবিচার সম্পর্কিত পরিস্থিতির কারণে সামাজিক অবস্থানও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। মানুষের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সন্দেহ এবং অবিশ্বাস বেড়ে যেতে পারে, যা তাদের সম্পর্ককে আরো জটিল করে তোলে। প্রতারণার অভিজ্ঞতা কিংবা অবিচারের ঘটনা একজন মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে, অতিরিক্ত উদ্বেগ, বিষণ্ণতা এবং আত্মবিশ্বাসের হ্রাস ঘটাতে পারে।
সুতরাং, সম্পর্কের মধ্যে যদি প্রতারণা বা অবিচার ঘটে, তবে এটি একজনের জন্য দূর্বলতা এবং প্রভাব সৃষ্টি করে, যা অবশ্যম্ভাবীরূপে বিচ্ছেদের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
পরস্পরের সাথে পাঠাতে না পারা সময়
সম্পর্কের গুণগত মান নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হল একসাথে সময় কাটানোর অভ্যাস। যখন দুই পক্ষের মধ্যে ব্যস্ততা বাড়ে এবং একসাথে সময় কাটানোর সুযোগ কমে যায়, তখন সম্পর্কের মধ্যে অসন্তুষ্টি ও দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যদি দুজনেই একসাথে সময় কাটানোর জন্য প্রস্তুত না থাকে বা যত্ন না নেয়, তাহলে সম্পর্কের টানাপোড়েন বৃদ্ধি পেতে পারে। এটি বিশেষ করে তখন ঘটে, যখন কাজের চাপ বা পারিবারিক দায়িত্বের কারণে একসাথে সময় কাটানোর সুযোগ কমে যায়।
একটি সম্পর্কের অগ্রগতির জন্য উভয় পক্ষের প্রচেষ্টা অপরিহার্য। যখন একটি ব্যক্তি অন্যের প্রতি যোগাযোগের সময় এবং মনোযোগ কমিয়ে দিতে শুরু করে, তখন অপর পক্ষের মধ্যে অবিশ্বাস এবং একাকিত্বের অনুভূতি বেড়ে যেতে পারে। এটি সম্পর্কের মান এবং গভীরতাকে বিপন্ন করে। উদাহরণস্বরূপ, যখন দম্পতিরা নিজেদের জন্য বিশেষ সময় বের করতে ব্যর্থ হয়, তখন তারা একে অপরের অনুভূতি এবং প্রয়োজনের প্রতি উদাসীন হয়ে পড়তে পারে, যা সম্পর্কের অগ্রগতির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।
যোগাযোগের অভাব এবং একসঙ্গে সময় কাটানোর অনিচ্ছা সম্পর্কের ভিত্তি দুর্বল করে দেয়। যদি একসাথে সময় কাটানোর সুযোগ হ্রাস পায় এবং এটি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে সম্পর্কের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে সম্পর্কের প্রথম পর্যায়ে উভয় পক্ষের মাঝে সময় ভাগাভাগি একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। অর্থাৎ, যদি কোনো সম্পর্কের মধ্যে সময় কাটানোর অভ্যাসটি অপর্যাপ্ত হয়, তখন তা দর্শন করতে পারে যে বিচ্ছেদের লক্ষণ সুস্পষ্ট হয়ে উঠছে। এইভাবে, একটি সম্পর্কের টেকসই এবং সফল ভিত্তি তৈরি করার জন্য সময় ভাগাভাগি অপরিহার্য।
সমস্যার সমাধানে আগ্রহের অভাব
যখন একটি সম্পর্কের মধ্যে সমস্যা দেখা দেয়, তখন উভয় পক্ষের জন্যই এটি একটি গভীর উদ্বেগের বিষয় হতে পারে। সম্পর্কের সমস্যা সমাধানে আগ্রহের অভাব অনেক সময় বিচ্ছেদের পূর্বলক্ষণ হিসেবে চিহ্নিত হয়। এটি একটি সুস্পষ্ট সংকেত যে, হয়তো একজন বা উভয়েই সম্পর্কের প্রতি যথাযথ যত্ন প্রদর্শন করছে না। সম্পর্কের উন্নতি ও স্থায়িত্বের জন্য উভয় পক্ষের প্রচেষ্টা অপরিহার্য। সমস্যাগুলোর দিকে নজর দেওয়া এবং একটি সুস্থ আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ বের করার চেষ্টা করা উচিত।
যখন এক партিতে সমস্যা সমাধানের জন্য উদ্যোগ নেওয়ার আগ্রহ নেই, তখন এটি সম্পর্কের একটি কষ্টদায়ক অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। এটি সম্পর্কের মধ্যে উদাসীনতা এবং অবহেলার অনুভূতি তৈরি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন সঙ্গী বারবার সমস্যার কথা বলার পরে সমস্যার সমাধানে আগ্রহ দেখায় না, তাহলে সেটি স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে তাদের মধ্যে যোগাযোগের অভাব রয়েছে। এটি এগিয়ে যাওয়ার জন্য একটি নেতিবাচক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।
সাধারণত, সম্পর্কের মধ্যে সংকট মোকাবিলার সময় উভয় পক্ষ এই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে আন্তরিকতা এবং ইচ্ছা দেখানো উচিত। যদি এটি ঘটে না, তবে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় দেখা দিতে পারে। সমস্যা সমাধানে আগ্রহের অভাব একটি সম্পর্কের জটিলতাকে বাড়িয়ে তোলে, এবং এটি বিচ্ছেদের দিকে নিয়ে যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে উভয় পক্ষকে সতর্কতা অবলম্বন করা এবং প্রয়োজনীয় পরিবর্তনগুলি করার জন্য একটি পদক্ষেপ নিতে হবে।