অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেবেন যেভাবে ২০২৫-২০২৬

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া খুবই সহজ। এ জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) একটি স্মার্ট ই-রিটার্ন সিস্টেম তৈরি করেছে

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেবেন যেভাবে ২০২৫-২০২৬
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেবেন যেভাবে ২০২৫-২০২৬

বর্তমান কক্ষে বসেই ইন্টারনেটে রিটার্ন জমা দিতে পারবেন, রিটার্নের প্রাপ্তি স্বীকার ও কর সনদ কালেক্ট করার জন্য পারবেন, ই-পেমেন্টও করার জন্য পারবেন। আবার ই-রিটার্ন সিস্টেম থেকে অফলাইন অর্থাৎ রিটার্ন পেপারও বানিয়ে নিতে পারবেন। ই-রিটার্ন ভেরিফাইও করার জন্য পারবেন।

সিস্টেমটি প্রয়োগ করার জন্য ট্যাক্স হিসাব সম্পর্কে জানার প্রয়োজন নেই। এটি নিজেই ট্যাক্স পরিমাপ করবে এবং আপনাকে সম্মুখে এগিয়ে যাওয়ার জন্য গাইড করবে।

যা যা দরকার হবে

ই-রিটার্ন সিস্টেমটি ব্যবহার করার সময় আপনার মোবাইল ফোন ফোন নম্বর যেটি বায়োমেট্রিকলি ভেরিফাইড তার সাথে ই-টিন নম্বর প্রয়োজন হবে। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় সব নথিপত্র যেমন- বেতন সনদপত্র, বিনিয়োগ (সঞ্চয়পত্র, এফডিআর, ডিপিএস, জীবন বিমা ইত্যাদি), ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ফ্ল্যাট, ভূমির তথ্য প্রভৃতি সাথে রাখতে হবে। না থাকে তাহলে প্রথমে তুলে নিতে হবে। আপনার ডকুমেন্টস হতে নিজস্ব অনেক তথ্য ই-রিটার্নে ইনপুট দেওয়ার জন্য হবে।

রেজিস্ট্রেশন করবেন যেভাবে

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার জন্য প্রথমেই ই-রিটার্ন সাইটে https://etaxnbr.gov.bd/ প্রবেশ করার জন্য হবে। এবার ই-রিটার্ন বাটনে ক্লিক করতে হবে। অতঃপর ডান পাশের সাইডবারের সবার পাদদেশে থাকা নিবন্ধন বাটনে ক্লিক করতে হবে।

এবার আপনার টিন নম্বর, মোবাইল ফোন নম্বর ও ক্যাপচা ঠিকভাবে দিয়ে ভেরিফাই অপশনে ক্লিক করার জন্য হবে। আপনার দেওয়া ফোন নম্বরে যে ছয় অক্ষরের ওটিপি কোড যাবে সেটি এই যাত্রায় বসিয়ে ১টি নতুন পাসওয়ার্ড দিয়ে দিতে হবে। নিউ পাসওয়ার্ডটি আবার দিয়ে সাবমিট করতে হবে। পিন কোড নিশ্চয়ই শক্তিশালী হতে হবে। রেজিস্ট্রেশন করার সাথে সঙ্গে আপনার ১টি ই-রিটার্ন অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়ে যাবে।

রেজিস্ট্রেশনের সময় অবশ্যই নিজের নামের মুঠোফোন নম্বরটি প্রয়োগ করতে হবে। অন্য কারও মুঠোফোন নম্বর ব্যবহার করার ট্রাই করলে আপনার টিনটি ব্লক করে দেওয়া হতে পারে। আপনি আর ই-রিটার্ন সিস্টেমে রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন না।

সাইন ইন

রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেলে সাইন ইন করতে হবে। সাইন ইন করার জন্য ই-রিটার্ন পেজে যেতে হবে পক্ষান্তরে সরাসরি এইখানে ক্লিক করেও যেতে পারবেন। সাইন ইন পেজে আপনার টিন নম্বর, পাসওয়ার্ড ও ক্যাপচা দিয়ে সাইন ইন করতে হবে। আপনাকে ই-রিটার্নের ড্যাশবোর্ডে নিয়ে যাবে। এখানে ই-টিনের সমুদয় তথ্য, রিটার্ন সাবমিশন ও ট্যাক্স রেকর্ডের সকল তথ্য পাবেন।

রিটার্ন সাবমিশন

ই-রিটার্ন ড্যাশবোর্ডের রিটার্ন সাবমিশন অপশনের ভেতর দুইটি রিটার্ন পেজ পাবেন। সিঙ্গেল পেজ রিটার্ন ও ডিটেইল রিটার্ন।

বর্তমান নীতি অনুযায়ী, বার্ষিক করযোগ্য ইনকাম পাঁচ লাখ অর্থের কম হলেই এক পাতার আয়কর বিবরণী জমা দিলেই হবে। এ ব্যতীত সম্পদের হিসাব ৪০ লাখ টাকার কম থেকে হবে, এমন শর্তও রয়েছে। আর অধিক থাকে তাহলে ডিটেইল রিটার্ন।

সিঙ্গেল পেজ রিটার্ন

সিঙ্গেল পেজ রিটার্ন অপশনে ক্লিক করলে একটি পপ আপ আসবে। ওই জায়গা এক পাতার রিটার্ন পূরণের শর্তাবলীগুলোতে টিক দিতে হবে।

যেমন- করযোগ্য ইনকাম অনূর্ধ্ব ৫,০০,০০০ (পাঁচ লক্ষ) টাকা; মোট পরিসম্পদ অনূর্ধ্ব ৪০,০০,০০০ (চল্লিশ লক্ষ) টাকা; গণকর্মচারী নন; মোটরযানের মালিক নন; সিটি কর্পোরেশনে বাড়ি সম্পত্তির মালিক নন; প্রবাসে পরিসম্পদের মালিক নন; কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার পরিচালক নন। তারপর রোজগারের শ্রেষ্ঠ উৎসের জায়গা নির্ধারণ করে সাবমিট করার জন্য হবে।

এরপর স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতার রিটার্ন খসড়া পেজ আসবে। সেখান হতে আপনি আপনার আয়ের উৎস, সর্বমোট পরিসম্পদ, মোট আয়, আরোপযোগ্য কর, কর রেয়াত, প্রদেয় কর, উৎসে কর্তিত কর, এই রিটার্নের সহিত প্রদত্ত কর, জীবনযাপন খরচা উল্লেখ করার জন্য পারবেন।

এরপর নিচের সেভ এজ ড্রাফটে ক্লিক করে সেভ করতে পারবেন। আবার সব ঠিকঠাক থাকে তাহলে ডানপাশের সাবমিট রিটার্ন অনলাইন বাটনে ক্লিক করে সাবমিট করার জন্য পারবেন।

ডিটেইল রিটার্ন

ডিটেইল রিটার্ন অপশনে ক্লিক করলে এসেসমেন্ট তথ্য ও হেডস বন্ধ এর পেজ আসবে। এখানে রিটার্ন স্কিম কক্ষে সেল্ফ, এসেসমেন্ট ইয়ার ও রোজগার ইয়ারের কামরায় সাল ও তারিখ ডিফল্ট থাকবে। এরপর ডান পাশের হেডস বন্ধ রোজগারের নিচের অপশনগুলোতে টিক দেওয়ার জন্য হবে।

যেমন- রোজগার ফ্রম ইম্পলয়মেন্ট; রোজগার ফ্রম রেন্ট; রোজগার ফ্রম এগ্রিকালচার; রোজগার ফ্রম বিজনেজ; ক্যাপিটাল গেইনস; আয় ফ্রম ফিনান্সিয়াল এসেটস ও আয় ফ্রম আদার সোর্সেস। এছাড়া এর নিচে বাংলাদেশের বাইরে থেকে ইনকাম হলে সেই ঘরেও টিক দেওয়ার জন্য হবে। তারপর সেভ অ্যান্ড কন্টিনিউ বাটনে ক্লিক করতে হবে।

এরপর এডিশনাল ইনফরমেশনে কোথায় জব করেন সেই স্থানের নাম সিলেক্ট করার জন্য হবে। যেমন- আচ্ছাদন নর্থ সিটি করপোরেশন, আচ্ছাদন সাউথ সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, আদার সিটি করপোরেশন, এনি আদার এরিয়া। তারপর ক্লেম ট্যাক্স রেবেট ফর ইনভেস্টমেন্ট, নিজের মোটর কার আছে কিনা বা সিটি করপোরেশনের মধ্যে নিজের বাড়ি- এসব তথ্যে টিক দিয়ে সেভ অ্যান্ড কন্টিনিউ বাটনে ক্লিক করার জন্য হবে।

এখন এসেসমেন্ট, ইনকাম, রেবেট, এক্সপেনডিওর, এসেটস অ্যান্ড লায়াবিলিটিস ও ট্যাক্স অ্যান্ড পেমেন্ট অপশনের পেজগুলো পূরণ করার জন্য হবে। এর পর রিটার্ন ভিউ দেখে নিয়ে সব ঠিকঠাক থাকে তাহলে পেজের নিচের সাবমিট রিটার্ন বাটনে ক্লিক করে রিটার্নটি সাবমিট করতে পারবেন।

অফলাইন (পেপার) রিটার্ন তৈরি

ই-রিটার্ন ওয়েবসাইটে গিয়ে সাইন ইন করে দরকারী অংশগুলোতে ইনপুট দিয়ে এগুতে থাকুন। এবার ট্যাক্স অ্যান্ড পেমেন্ট অংশে গিয়ে প্রসিড টু অফলাইন (পেপার) রিটার্ন সিলেক্ট করুন। ব্যস, আপনার অফলাইন (পেপার) রিটার্ন প্রস্তুত হয়ে পিডিএফ ফরম্যাটে সেভ হয়ে যাবে।

বুঝতে সমস্যা হলে কী করবেন?

রিটার্ন প্রস্তুত করার সময়, আপনি (?) চিহ্নে মাউস রেখে সিস্টেম সহায়তা পেতে পারেন। কল সেন্টারে (09643-717171) সরাসরি কল করেও সহযোগিতা নিতে পারবেন। আবার টিকেটিং সাপোর্টও নিতে পারবেন। এই ইউআএল-এ গিয়ে টিকেট সাবমিট করতে পারবেন।

আরো পড়ুনঃ