অ্যামাইটোসিস বা প্রত্যক্ষ কোষ বিভাজন / Amitosis or Direct Cell Division / কোষ বিভাজন
কোষ বিভাজন
প্রাথমিক আলোচনাঃ
বিভাজনের মাধ্যমে সংখ্যাবৃদ্ধি কোষের একটি স্বাভাবিক ও অতি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। এককোষীজীবসমূহ, যেমনব্যাকটেরিয়া, ঈস্ট প্রভৃতি বার বার বিভাজনের মাধ্যমেই একটি থেকে অসংখ্য এককোষী জীবে পরিণত হয়। বিশালদেহী একটি বটগাছের সূচনাও ঘটে একটি মাত্র কোষ (জাইগোট = নিষিক্ত ডিম্বক) হতে। গাছ থেকে গাছের সৃষ্টি হয়, সৃষ্টি হয় প্রাণী, আর তেমনি কোষ থেকেই কেবল কোষ সৃষ্টি হতে পারে।
আরো জানুনঃ
এককোষী নিষিক্ত ডিম্বক হতে কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় এক সময় কোটি কোটি কোষের সমন্বয়ে একটি পরিণত মানুষের সৃষ্টি হয়। জীবদেহে কোষ বিভাজন একটি মৌলিক ও অত্যাবশ্যকীয় প্রক্রিয়া, এর মাধ্যমেই জীবের দৈহিক বৃদ্ধি ও বংশবৃদ্ধি ঘটে।
যে প্রক্রিয়ায় জীবকোষ বিভক্তির মাধ্যমে একটি থেকে দুটি বা চারটি কোষের সৃষ্টি হয় তাকে কোষ বিভাজন বলা হয়। কোষ বিভাজনের ফলে সৃষ্ট নতুন কোষকে বলে অপত্য কোষ (daughter cell) এবং যে কোষটি থেকে অপত্য কোষ সৃষ্টি হয় সে কোষটি হলো মাতৃকোষ (mother cell)। Walter Flemming ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে সামুদ্রিক স্যালামান্ডার (Triturus maculosa) কোষে প্রথম কোষ বিভাজন লক্ষ্য করেন। “কোষ থেকেই কেবল কোষ সৃষ্টি হতে পারে”— এটি বলেন রুডলফ ভিরশাও ।
হ্যাপ্লয়েড বনাম ডিপ্লয়েড
প্রতিটি জীবে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক unique ক্রোমোসোম থাকে, যেমন— মানুষের ২৩টি। ফলের মাছির ৪টি। সবগুলো unique (অনন্য, অদ্বিতীয়) ক্রোমোসোম মিলে একটি ক্রোমোসোম সেট হয়। মানুষের দুই সেট ক্রোমোসোম থাকে অর্থাৎ প্রতিটি ক্রোমোসোম দুই কপি করে আছে। যে কোষে ২ সেট ক্রোসোসোম আছে তাকে বলা হয় ডিপ্লয়েড কোষ বা ‘2n’ । মানুষ ডিপ্লয়েড জীব।
যে কোষে এক সেট ক্রোমোসোম থাকে তাকে বলা হয় হ্যাপ্লয়েড কোষ বা ‘n’। n= stand for the number of unique chromosome. মানুষের দেহ কোষ ‘2n’ কিন্তু শুক্রাণু বা ডিম্বাণু ‘n’ ।
কোষ বিভাজনের প্রকার : জীব জগতে তিন প্রকার কোষ বিভাজন দেখা যায়।
যথা : ১। অ্যামাইটোসিস (Amitosis) বা প্রত্যক্ষ কোষ বিভাজন, (Without mitosis)
২। মাইটোসিস (Mitosis) বা সমীকরণিক কোষ বিভাজন (Gr. mitos = thread)।
৩ । মায়োসিস (Meiosis) বা হ্রাসমূলক কোষ বিভাজন। (Gr. Diminution)।
১। অ্যামাইটোসিস বা প্রত্যক্ষ কোষ বিভাজন (Amitosis or Direct Cell Division)
যে কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় একটি মাতৃকোষের নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম কোনো জটিল মাধ্যমিক পর্যায় ছাড়াই সরাসরি বিভক্ত হয়ে দুটি অপত্য (শিশু) কোষের সৃষ্টি করে তাকে অ্যামাইটোসিস বা প্রত্যক্ষ কোষ বিভাজন বলে ।
প্রক্রিয়া : অ্যামাইটোসিস প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের জটিলতা ছাড়াই সরাসরি মাতৃকোষের বিভাজন ঘটে থাকে। এক্ষেত্রে নিউক্লিয়াসটি প্রত্যক্ষভাবে সরাসরি দু’অংশে ভাগ হয়। নিউক্লিয়াসটি প্রথমে লম্বা হয় ও মাঝখানে ভাগ হয়ে দুটি নিউক্লিয়াসে পরিণত হয়। পরে কোষটির মধ্যভাগে একটি চক্রাকার গর্ত ভেতরের দিকে ঢুকে গিয়ে পরিশেষে দু’ভাগে ভাগ
চিত্র ২.১ : একটি মাতৃকোষ থেকে দুটি অপত্যকোষ সৃষ্টি (অ্যামাইটোসিস)।
করে ফেলে। ফলে একটি কোষ দুটি অপত্য কোষে (daughter cell) পরিণত । প্রতিটি অপত্য কোষ ক্রমে বৃদ্ধি পেয়ে মাতৃকোষের অনুরূপ আকার ও আকৃতি লাভ করে। কতক ঈস্ট, অ্যামিবা প্রভৃতি এককোষী জীবে এ প্রকার কোষ বিভাজন দেখা যায়। ব্যাকটেরিয়ার দ্বি-ভাজন প্রক্রিয়াও কতকটা অ্যামাইটোসিস এর মতোই। উভয় প্রক্রিয়া প্রায় সমার্থক ।
অ্যামাইটোসিস প্রক্রিয়ার তাৎপর্যঃ
(i) বিজ্ঞানী স্ট্রাসবার্জার (১৮৯২) এর মতে, অ্যামাইটোসিস প্রক্রিয়া থেকেই জটিল ও উন্নত কোষ বিভাজন পদ্ধতির উৎপত্তি হয়েছে।
(ii) কোনো কোনো এককোষী জীবের সংখ্যাবৃদ্ধির ক্ষেত্রে এ প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ এবং একমাত্র প্রক্রিয়া।
এই অ্যামাইটোসিস বা প্রত্যক্ষ কোষ বিভাজন / Amitosis or Direct Cell Division / কোষ বিভাজন ছাড়াও আরো জানুন