রেইনকোট গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র)
রেইনকোট গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র): শিক্ষার্থীরা তোমাদের বাংলা গদ্য অংশ রেইন কোট এর সর্বশেষ বোর্ড প্রশ্ন উত্তরসহ এখানে দিয়েছি। আশাকরি তোমরা এখান থেকে প্রস্তুতি ও পরীক্ষার ধারণা নিতে পারবে।
সাজেশন
আরো পড়ুনঃ
যশোর বোর্ড ২০১৯
ক্ষত-বিক্ষত হয়েও সাজ্জাদ নীরব থাকে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে একটি ছাত্রাবাস থেকে মিলিটারিরা সাজ্জাদকে একজন দেশপ্রেমী মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মনে করায় তার বুক ফুলে ওঠে। মনে পড়ে বাবার শেষ উপদেশ, “জীবনের চেয়ে দেশ অনেক বড়।” নিজেকে তুলে নিয়ে যায়। অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে তারা তার পিতার নাম মুচে ফেলতে পারেনি।
ক. “সেই চোখ ভরা ভয়, কেবল ভয়” – ‘রেইনকোট’ গল্পে কোন চোখের কথা বলা হয়েছে?
খ. “ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের নতুন রূপে সে ভ্যাবাচ্যাকা খায়।” – কে, কেন ভ্যাবাচ্যাকা খায়?
গ. উদ্দীপকের সাজ্জাদ ‘রেইনকোট’ গল্পের কোন চরিত্রের সঙ্গে তুলনীয়? তুলনার যৌক্তিকতা তুলে ধর।
ঘ. সাজ্জাদের চেতনা ‘রেইনকোট’ গল্পের মূলভাবকে কতখানি ধারণ করে বলে তুমি মনে কর? তোমার মতের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন কর।
জ্ঞান
“সেই চোখ ভরা ভয়, কেবল ভয়” – এখানে ‘রেইনকোট’ গল্পে বাসের মধ্যে সন্দেহভাজন পটেকমারের চোখের কথা বলা হয়েছে।
খ অনুধাবন
ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের নতুন রূপে ভ্যাবাচ্যাকা খায় নুরুল হুদা। কারণ রেইনকোট পরে তাকে মুক্তিযোদ্ধা মিন্টুর মতো দেখাচ্ছিল।
গ প্রয়োগ
● উদ্দীপকের সাজ্জাদ ‘রেইনকোট’ গল্পের নুরুল হুদা চরিত্রের সঙ্গে তুলনীয়।
● আজ আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। এই দেশ স্বাধীন করতে বাঙালি জাতিকে চরম মূল্য দিতে হয়েছে। দীর্ঘ নয় মাসব্যাপী সংগ্রাম করে ত্রিশ লক্ষ শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতা।
প্রিন্সিপাল সাহেব তলব করলে প্রফেসর নুরুল হুদা কলেজে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়। বাইরে প্রচণ্ড বৃষ্টি শুরু হলে তার স্ত্রী তাকে রেইনকোট পরে যেতে বলে। সেই রেইনকোটটি তার ভাই মুক্তিযোদ্ধা মিন্টুর। নুরুল হুদা সেই রেইনকোট পরে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। নিজের নতুন রূপ দেখে সে ভ্যাবাচ্যাকা খায়। কারণ তাকে মুক্তিযোদ্ধা মিন্টুর মতো দেখাচ্ছিল।
সারকথা : ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নুরুল হুদা ভ্যাবাচ্যাকা খায়। কারণ তাকে মুক্তিযোদ্ধা মিন্টুর মতো দেখাচ্ছিল ।
উদ্দীপকের সাজ্জাদকে একটি ছাত্রাবাস থেকে পাকিস্তানি সেনারা তুলে নিয়ে গিয়ে অমানবিক অত্যাচার চালায় তার মুক্তিযোদ্ধা পিতার সন্ধান পাওয়ার জন্য। কিন্তু সে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেলেও নীরব থাকে। নিজের বাবার জন্য গর্বে বুক ফুলে ওঠে।
‘রেইনকোট’ গল্পেও কলেজ শিক্ষক নুরুল হুদাকে অমানবিক নির্যাতন করা হয় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার অভিযোগে। নুরুল হুদা নিজেকে মুক্তিযোদ্ধাদের একজন ভাবতে শুরু করে এবং শত নির্যাতন সত্ত্বেও সে একটি কথাও শত্রুসেনাদের সামনে বলে না। নিজের মধ্যে এক ধরনের উষ্ণতা অনুভব করে। যেটা দেশপ্রেমের, আত্মত্যাগের। উভয় চরিত্রের সাদৃশ্য এখানেই লক্ষ করা যায়।
সারকথা : উদ্দীপকের সাজ্জাদ নির্যাতন সহ্য করলেও মুক্তিযোদ্ধা পিতার কোনো খবর পাকিস্তানি সেনার কাছে দেয়নি। আলোচ্য গল্পের নুরুল হুদাও নিজেকে মুক্তিযোদ্ধাদের একজন ভেবে গর্ববোধ করেছে। তাই কোনো খবর সে সেনাদের কাছে জানায়নি।
উচ্চতর দক্ষতা
সাজ্জাদের চেতনা ‘রেইনকোট’ গল্পের মূলভারকে সম্পূর্ণরূপে ধারণ করে।
স্বাধীনতা আমাদের অহংকার। আমরা স্বাধীন দেশের গর্বিত নাগরিক। এ স্বাধীনতা বাঙালির রক্তে কেনা। স্বাধীনতা অর্জনে দেশের মানুষকে অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। লক্ষ লক্ষ শহিদের বুকের রক্তে লিখতে হয়েছে বাংলাদেশের নাম।
উদ্দীপকের সাজ্জাদ একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক। তাকে পাকিস্তানি সেনারা তুলে নিয়ে নির্মম নির্যাতন করে তার মুক্তিযোদ্ধা পিতার কথা জানতে চায়। সাজ্জাদ তাদের অত্যাচারে ক্ষতবিক্ষত হলেও কোনোকিছু প্রকাশ করে না। তার মনে পড়ে বাবার শেষ উপদেশ— ‘জীবনের চেয়ে দেশ অনেক বড়।’ গর্বে তার বুক ফুলে ওঠে। সাজ্জাদের এ চেতনা ‘রেইনকোট’ গল্পের মূলভাবকে সম্পূর্ণরূপে ধারণ করে। কেননা গল্পের মূলভাবও একই বিষয় প্রকাশ করে।
‘রেইনকোট’ গল্পে দেখা যায়, পাকিস্তানি সেনাদের অত্যাচারে ভিতু নুরুল হুদা দমে যায়নি। মুক্তিযোদ্ধা শ্যালকের রেইনকোট গায়ে দিয়ে তার মধ্যে সঞ্চারিত হয় উষ্ণতা, সাহস ও দেশপ্রেম। তার কাছে মনে হয় জীবনের চেয়ে দেশ অনেক বড়।
নিজেকে মুক্তিযোদ্ধাদের একজন মনে করে গর্বে তার বুক ফুলে ওঠে। সেনাদের নিমর্মতা তার কাছে স্রেফ উৎপাত মনে হয়। দেশের প্রতি ভালোবাসা তাকে সাহসী করে তোলে। উদ্দীপকের সাজ্জাদের চেতনাও একই ভাব প্রকাশ করে। তাই বলা যায়, সাজ্জাদের চেতনা ‘রেইনকোট’ গল্পের মূলভাবকে সবটুকু ধারণ করে।
সারকথা : উদ্দীপকের সাজ্জাদের চেতনায় সাহসিকতা ও একনিষ্ঠ দেশপ্রেম প্রকাশ পেয়েছে। ‘রেইনকোট’ গল্পের মূলভাবকেও অনুরূপ সাহসিকতা ও দেশপ্রেম প্রকাশ করেছে।
সিলেট বোর্ড ২০১৯
হয়তোবা ইতিহাসে তোমাদের নাম লেখা রবে না
বড় বড় লোকেদের ভিড়ে— জ্ঞানী আর গুণীদের আসরে
তোমাদের কথা কেউ কবে না, তবু এই বিজয়ী বীর মুক্তিসেনা
তোমাদের এই ঋণ কোনো দিন শোধ হবে না।
ক. ‘রেইনকোট’ গল্পে পিয়নের নাম কী?
খ. ‘ক্রাক ডাউনের রাত’ বলতে কী বুঝায়?
গ. “উদ্দীপকের মুক্তিসেনা যেন ‘রেইনকোট’ গল্পের মিন্টুকে মনে করিয়ে দেয়”— বর্ণনা কর ।
ঘ. ‘‘‘রেইনকোট’ গল্পের মূলভাব উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে।”- মন্তব্যটি যাচাই কর।
ক) ‘রেইনকোট’ গল্পে পিয়নের নাম ইসহাক।
খ অনুধাবন
‘ক্রাক ডাউনের রাত’ বলতে ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতকে বোঝায়।
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশের নিরীহ মানুষের ওপর নির্মম অত্যাচার ও নির্যাতন শুরু করে। তারা ছাত্রাবাস, বস্তিতে আগুন ধরিয়ে দেয়, যত্রতত্র গুলি করে মানুষ হত্যা করে। তাদের অত্যাচার থেকে ছাত্র-শিক্ষক, নারী-পুরুষ-বৃদ্ধ কেউ রেহাই পায়নি।
তাদের এ চরম অমানবিকতায় এদেশের মানুষ আতঙ্কে শিউরে ওঠে। তাদের নির্মম হত্যাযজ্ঞে এদেশের মানুষের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। পাকিস্তানি হানাদারদের সেই ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের রাতকে লেখক ‘ক্রাক ডাউনের রাত’ বলে অভিহিত করেছেন।
সারকথা : ‘ক্রাক ডাউনের রাত’ বলতে ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে ঢাকায় পাকিস্তানি হানাদারদের গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানোকে বোঝানো হয়েছে।
প্রয়োগ
“উদ্দীপকের মুক্তিসেনা যেন ‘রেইনকোট’ গল্পের মিন্টুকে মনে করিয়ে দেয়”- কারণ মিন্টুও দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছে।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলার দামাল ছেলেরা পশ্চিম পাকিস্তানি শত্রুবাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত থাকলেও মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ভয় পাননি। তারা প্রচণ্ড মনোবল এবং আত্মবিশ্বাস নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করে শেষ পর্যন্ত বিজয় অর্জন করেন।
• উদ্দীপকের কবিতাংশে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিজয়ী বীর মুক্তিসেনার কথা বলা হয়েছে। তাঁদের ঋণ যে কখনো শোধ হওয়ার নয় সে দিকটি এখানে কবি তুলে ধরেছেন। কবি বলেছেন, বাংলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ঋণ কখনো শোধ হবে না।
কারণ তাঁদের রক্তের বিনিময়ে, তাঁদের দীপ্ত চেতনার পথ ধরেই এদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। উদ্দীপকের মুক্তিসেনাদের মতো ‘রেইনকোট’ গল্পের মিন্টুও মুক্তিযোদ্ধা। তার ঋণও শোধ হওয়ার নয়। এ কারণে মুক্তিযোদ্ধাদের কথা উঠলে ‘রেইনকোট’ গল্পের মিন্টুর কথাও মনে পড়ে যায়।
সারকথা : ‘রেইনকোট’ গল্পে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ, সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ের কথা বলা হয়েছে। এ গল্পে মিন্টু একজন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা। উদ্দীপকেও তাঁর মতো মুক্তিযোদ্ধাদের কথাই বলা হয়েছে।
ঘ উচ্চতর দক্ষতা
‘‘রেইনকোট’ গল্পের মূলভাব উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে।”— মন্তব্যটি যথার্থ। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ মধ্যরাত থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশে গণহত্যা শুরু করে। দীর্ঘ নয় মাসব্যাপী তারা এদেশে হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। অবশেষে মুক্তিযোদ্ধারা ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করেন।
‘রেইনকোট’ গল্পে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় এদেশের সাধারণ মানুষের ওপর পাকিস্তানি মিলিটারির নির্মম অত্যাচার ও হত্যাযজ্ঞের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে। এ গল্পে কলেজ শিক্ষক নুরুল হুদার জবানিতে পাকিস্তানি সেনাদের নিষ্ঠুরতার দিকটি তুলে ধরা হয়েছে। নূরুল হুদার শ্যালক মিন্টু গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা। এ গল্পে ঢাকা শহরের গেরিলা যোদ্ধাদের মনোবল ও আত্মবিশ্বাস প্রকাশ পেয়েছে।
গেরিলা যোদ্ধারা শ্রমিকের ছদ্মবেশে ঢাকা কলেজের সামনে আক্রমণ করে সেখানকার বৈদ্যুতিক ট্র্যান্সফর্মার ধ্বংস করে দিয়েছেন। এতে পাকিস্তানি এক সেনা কর্মকর্তা সন্দেহ করে যে, গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে নুরুল হুদার যোগাযোগ রয়েছে। এ কারণে তাকে ক্যাম্পে ডেকে নিয়ে নির্মম নির্যাতন করে। উদ্দীপকেও মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানীদের কথা বলা হয়েছে। উদ্দীপকের কবিতাংশের বীর মুক্তিসেনারা পরাজয়বরণ করেননি।
পাকিস্তানি সেনাদের নির্যাতনের ভয়ে পালিয়ে বেড়ানো নুরুল হুদা শ্যালক মুক্তিযোদ্ধা মিন্টুর রেইনকোট পরার পরিপ্রেক্ষিতে প্রচণ্ড সাহসী হয়ে ওঠে। সে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়, তার মধ্যে স্বদেশপ্রেম সঞ্চারিত হয় । উদ্দীপকের মুক্তিসেনারাও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়েই মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। এভাবে ‘রেইনকোট’ গল্পে ১৯৭১ সালের যুদ্ধকালীন ভয়াবহ অবস্থা উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে।
সারকথা : ‘রেইনকোট’ গল্পে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ঢাকা শহরে গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ এবং কলেজ শিক্ষক নুরুল হুদার হঠাৎ সাহসী দেশপ্রেমিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে।
এই রেইনকোট গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (এইচএসসি বাংলা ১মপত্র) ছাড়াও আরো পড়ুন