আদর্শ নিডোসাইটের গঠন (Structure of a Typical Cnidocyte) / সূত্রক নিক্ষেপের কৌশল (Mechanism of Discharge of Nematocyst-thread)

আদর্শ নিডোসাইটের গঠন (Structure of a Typical Cnidocyte) / সূত্রক নিক্ষেপের কৌশল (Mechanism of Discharge of Nematocyst-thread)

আদর্শ নিডোসাইটের গঠন (Structure of a Typical Cnidocyte) / সূত্রক নিক্ষেপের কৌশল (Mechanism of Discharge of Nematocyst-thread)
আদর্শ নিডোসাইটের গঠন (Structure of a Typical Cnidocyte) / সূত্রক নিক্ষেপের কৌশল (Mechanism of Discharge of Nematocyst-thread)

আদর্শ নিডোসাইটের গঠন (Structure of a Typical Cnidocyte)

Hydra-র একটি আদর্শ নিডোসাইট দেখতে গোল, ডিম্বাকার, নাশপাতি আকার, পেয়ালাকার বা লাটিম আকৃতির এবং নিচে বর্ণিত অংশগুলো নিয়ে গঠিত ।

১. আবরণ (Membrane) : প্রতিটি কোষ দ্বিস্তরী আবরণে আবৃত । স্তরদুটির মাঝখানে দানাদার সাইটোপ্লাজম এবং কোষের গোড়ার দিকে একটি নিউক্লিয়াস থাকে ।

২. নেমাটোসিস্ট (Nematocyst) : নিডোসাইটের অভ্যন্তরে অবস্থিত, কাইটিনের মতো পদার্থে নির্মিত আবরণে আবৃত ও সূত্রকযুক্ত একটি ক্যাপসুলের নাম নেমাটোসিস্ট । আদর্শ নিডোসাইটে ক্যাপসুলটি প্রোটিন ও ফেনল-এর সমন্বয়ে গঠিত বিষাক্ত তরল হিপনোটক্সিন (hypnotoxin)-এ পূর্ণ থাকে । লম্বা, সরু, ফাঁপা সূত্রকটি যা প্রকৃতপক্ষে ক্যাপসুলেরই অগ্রপ্রান্তের অভিন্ন প্রসারিত অংশ সেটি অবস্থান করে। সূত্রকের চওড়া গোড়াটিকে বাট (butt) বা শ্যাফট (shaft) বলে ।

এতে তিনটি বড় তীক্ষ্ণ কাঁটার মতো বার্ব (barb) এবং সর্পিল সারিতে বিন্যস্ত ক্ষুদ্রতর কাঁটার মতো অসংখ্য বার্বিওল (barbules) দেখা যায়। স্বাভাবিক অবস্থায় সূত্রকটি বাট ও কাঁটাসহ থলির ভিতরে উল্টো অবস্থায় প্যাচানো থাকে ।

চিত্র ২.১.১৩ : নিডোসাইট:বায়ে স্বাভাবিক অবস্থায় এবং ডানে-সূত্রকটি উন্মুক্ত

৩. অপারকুলাম (Operculum) : স্বাভাবিক অবস্থায় নেমাটোসিস্টের সূত্রক ও ক্যাপসুল যে ঢাকনা দিয়ে আবৃত থাকে তার নাম অপারকুলাম । উন্মুক্ত অবস্থায় এটি পাশে সরে যায় ।

৪. নিডোসিল (Cnidocil) : নিডোসাইট কোষের মুক্ত প্রান্তের শক্ত, দৃঢ়, সংবেদনশীল কাঁটাটি নিডোসিল । প্রকৃতপক্ষে এটি একটি রূপান্তরিত সিলিয়াম (cilium)। নিডোসিল ট্রিগারের মতো কাজ করে ফলে অপারকুলাম সরে যায় এবং প্যাঁচানো সূত্রকটি বাইরে বেরিয়ে আসে ।

৫. পেশিতন্তু ও ল্যাসো (Muscle fibre & Lasso) : কোষের সাইটোপ্লাজম ও নেমাটোসিস্টের প্রাচীরে সঙ্কোচনশীল কিছু পেশিতন্তু থাকে । এছাড়াও কোষের নিচের প্রান্তে ল্যাসো নামের একটি প্যাঁচানো সূত্ৰক দেখা যায় ।

নেমাটোসিস্টের প্রকারভেদ (Types of Nematocysts )

নিক্ষিপ্ত সূত্রকের বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞানী ভার্ণার (Werner) ১৯৬৫ সালে নিডারিয়া জাতীয় প্রাণিদের দেহ থেকে ২৩ ধরনের নেমাটোসিস্ট শনাক্ত করেছেন । এর মধ্যে নিম্নোক্ত চার ধরনের নেমাটোসিস্ট Hydra-য় পাওয়া যায় ।

১. স্টিনোটিল বা পেনিট্র্যান্ট (Stenotile or Penetrant) : Hydra-র চার ধরনের নেমাটোসিস্টের মধ্যে এগুলোই বৃহত্তম । এদের সূত্রক লম্বা, ফাঁপা, শীর্ষ উন্মুক্ত, বাট প্রশস্ত এবং তিনটি বড় তীক্ষ্ণ বার্ব ও তিন সারি সর্পিলাকারে সজ্জিত অতি ক্ষুদ্র বার্বিউলযুক্ত । এর ভিতরে হিপনোটক্সিন (hypnotoxin) নামক বিষাক্ত তরল থাকে।

কাজ: শিকারের দেহে সূত্রক বিদ্ধ করে বিষাক্ত হিপনোটক্সিন প্রবেশ করিয়ে তাকে অজ্ঞান ও অবশ করে ফেলে ।

২. ভলভেন্ট বা ডেসমোনিম (Volvent or Desmoneme) : এগুলো অপেক্ষাকৃত নেমাটোসিস্ট । সূত্রকটি খাটো, মোটা, স্থিতিস্থাপক, কাঁটাবিহীন এবং বন্ধ শীর্ষযুক্ত। ক্যাপসুলের ভিতর সূত্রকের একটি মাত্র প্যাচ থাকে, কিন্তু নিক্ষিপ্ত হওয়ার সাথে সাথে কর্ক-ক্রুর মতো অনেকগুলো স্টিনোটিল প্যাচের সৃষ্টি করে ।

কাজ : এটি শিকার কিংবা কোন বস্তুকে আঁকড়ে ধরে রাখতে সাহায্য করে ।

৩. স্ট্রেপটোলিন গুটিন্যান্ট বা হলোট্রিকাস আইসোরাইজা (Streptoline Glutinant or Holotrichous Isorhiza): এর সূত্রক লম্বা, সর্পিলাকারে সজ্জিত কাঁটাযুক্ত, বাট সুগঠিত নয় এবং শীর্ষদেশ উন্মুক্ত ।

কাজ : এগুলো আঠালো রস ক্ষরণ করে চলনে এবং শিকার আটকাতে সাহায্য করে ।

৪. স্টেরিওলিন গুটিন্যান্ট বা অ্যাট্রিকাস আইসোরাইজা (Stereoline Glutinant or Atrichous Isorhiza) : এগুলো ক্ষুদ্রতম নেমাটোসিস্ট; সূত্রক লম্বা, কাঁটাবিহীন, বাট সুগঠিত নয় এবং শীর্ষদেশ উন্মুক্ত ।

কাজ : এগুলোও এক ধরনের আঠালো রস ক্ষরণ করে চলন ও শিকার আটকে রাখতে সাহায্য করে । নেমাটোসিস্টের সূত্রক একবার নিক্ষিপ্ত হলে সেটাকে আর নিডোসাইটে ফিরিয়ে আনা যায় না বা আবার ব্যবহার করা যায় না কিংবা ঐ একই নিডোসাইট আর কোনো নেমাটোসিস্ট সৃষ্টিও করতে পারে না। এ ধরনের নিডোসাইট ধীরে ধীরে গ্যাস্ট্রোভাস্কুলার গহ্বরে প্রবেশ করে এবং অন্যান্য খাদ্যবস্তুর সাথে হজম হয়ে যায়। ৪৮ ঘন্টার মধ্যে নতুন নিডোসাইট সৃষ্টির মাধ্যমে ব্যবহৃত নিডোসাইট প্রতিস্থাপিত হয় ।

নেমাটোসিস্টের সূত্রক নিক্ষেপের কৌশল (Mechanism of Discharge of Nematocyst-thread)

তাই নেমাটোসিস্টের সূত্রক নিক্ষেপ যুগপৎভাবে একটি রাসায়নিক ও যান্ত্রিক প্রক্রিয়া । শিকারের বা শত্রুর সন্ধান অথবা অন্য যেকোনো কারণে নিডোসাইট উদ্দীপ্ত হলে এ প্রক্রিয়াটি শুরু হয়। কোন শিকার Hydra-র কর্ষিকার নিকটবর্তী হলে শিকার-দেহের রাসায়নিক পদার্থের প্রভাবে নেমাটোসিস্ট প্রাচীরের পানিভেদ্য ক্ষমতা বেড়ে যায়। এতে থলির ভিতরে দ্রুত পানি প্রবেশ করায় ভিতরের অভিস্রবণিক চাপও বেড়ে যায়।

নেমাটোসিস্টের সূত্রক নিক্ষেপের কৌশল (Mechanism of Discharge of Nematocyst-thread)
নেমাটোসিস্টের সূত্রক নিক্ষেপের কৌশল

এসময় থলির ভিতর পলি-y-গুটামেট (poly-y-glutamate) নামক রাসায়নিক পদার্থ ক্ষরিত হয়। শিকার নিডোসাইটের নিডোসিল স্পর্শ করামাত্র এর অপারকুলাম খুলে যায় এবং তখন দ্রুত পানি ভিতরে প্রবেশ করায় হাইড্রোস্ট্যাটিক চাপ (hydrostatic pressure) বেড়ে গেলে নেমাটোসিস্ট-সূত্রক ক্ষিপ্র গতিতে বাইরে নিক্ষিপ্ত হয় ।

নিডোসাইট ও নেমাটোসিস্টের মধ্যে পার্থক্য

আরো পড়ুনঃ