Hydra -র অন্তর্গঠন (Internal Structure of Hydra)

Hydra -র অন্তর্গঠন (Internal Structure of Hydra) :

Hydra -র অন্তর্গঠন (Internal Structure of Hydra)
Hydra -র অন্তর্গঠন (Internal Structure of Hydra)

Hydra -র অন্তর্গঠন (Internal Structure of Hydra)

Hydra-র দেহের অন্তর্গঠন অত্যন্ত সরল প্রকৃতির । কোষ-টিস্যু মাত্রার প্রাণী হওয়ায় এদের অন্তর্গঠনে কোনো জটিল টিস্যু, টিস্যুতন্ত্র, অঙ্গ বা অঙ্গতন্ত্র দেখা যায় না। দেহের অন্তর্গঠনে মূলত দুটি প্রধান অংশ থাকে, যথা-দেহপ্রাচীর এবং সিলেন্টেরন ।

দেহপ্রাচীরের কোষের গঠন-বৈশিষ্ট্য (Cellular Morphology of Body Wall)

Hydra-র দেহের চারদিকে বিদ্যমান কোষনির্মিত আবরণটিকে দেহপ্রাচীর বলে । এটি সিলেন্টেরনকে বেষ্টন করে অবস্থান করে । দেহপ্রাচীরের কোষগুলো দুটি স্তরে বিন্যস্ত থাকে, যথা-বহিঃস্থ এপিডার্মিস ও অন্তঃস্থ গ্যাস্ট্রোডার্মিস । ভ্রূণাবস্থায় এ স্তরদুটি যথাক্রমে এক্টোডার্ম (ectoderm) ও এন্ডোডার্ম (endoderm) নামে পরিচিত। এ দু’স্তরের মাঝখানে মেসোগ্লিয়া নামক এটি অকোষীয় স্তর থাকে । কাজেই পরিণত Hydra-র দেহপ্রাচীরের তিনটি প্রধান অংশ দেখা যায়- এপিডার্মিস, গ্যাস্ট্রোডার্মিস ও মেসোগ্লিয়া । নিচে এদের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো:

Hydra -র অন্তর্গঠন (Internal Structure of Hydra)
Hydra -র অন্তর্গঠন (Internal Structure of Hydra)

এপিডার্মিস বা বহিঃত্বক-এর কোষসমূহ

কাজের ভিন্নতা অনুযায়ী Hydra-র এপিডার্মিসের কোষের গঠনে বৈচিত্র্য দেখা যায় । একটি পাতলা ও নমনীয় কিউটিকল (cuticle)-এ আবৃত এপিডার্মিস Hydra-র বহিরাবরণ গঠন করে। Hydra-র এপিডার্মিস নিচে বর্ণিত সাত ধরনের কোষ নিয়ে গঠিত ।

Hydra -র অন্তর্গঠন (Internal Structure of Hydra)

১. পেশি-আবরণী কোষ (Musculo-Epithelial Cell) : এপিডার্মিসের অন্যান্য কোষের তুলনায় পেশি-আবরণী কোষগুলো আকারে বড় এবং সংখ্যায় অধিক। কোষগুলো কোণাকার বা নাসপাতি আকৃতির এবং এপিডার্মিসের সম্পূর্ণ পুরুত্ব বরাবর মেসোগ্লিয়ার উপর অবস্থান করে । প্রতিটি কোষের একটি বড় নিউক্লিয়াস, অনেকগুলো গহ্বর এবং আদর্শ প্রাণিকোষে উপস্থিত সকল অঙ্গাণুই বর্তমান । প্রতিটি কোষের দুটি কার্যকরী অংশ থাকে, যেমন- (i) বাইরের দিকের প্রশস্ত মিউকাস দানাযুক্ত আবরণী অংশ এবং (ii) ভিতরের দিকের সরু দুটি পেশি-প্রবর্ধন ও মায়োনিম (এক ধরনের নমনীয় ও সঙ্কোচন-প্রসারণশীল তন্তু) সূত্রক সমৃদ্ধ পেশিময় অংশ । কর্ষিকায় কোষগুলো বেশ বড় ও চাপা এবং কয়েকটি করে নিডোব্লাস্ট (পরিস্ফুটনরত নিডোসাইট) ধারণ করে । পেশি-আবরণী কোষগুলো বিভাজনে সক্ষম ।

২. ইন্টারস্টিশিয়াল কোষ (Interstitial Cell) : পেশি-আবরণী কোষের অন্তর্মুখী সরু প্রান্তের ফাঁকে ফাঁকে, গুচ্ছাকারে, মেসোগ্লিয়া ঘেঁষে এসব কোষ অবস্থান করে । এগুলো গোল, ডিম্বাকার বা তিনকোণা, ৫um ব্যাস বিশিষ্ট এবং সুস্পষ্ট নিউক্লিয়াস, মসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক জালিকা, রাইবোজোম ও কিছু মাইটোকন্ড্রিয়া যুক্ত । কোষগুলো সম্মিলিতভাবে Hydra-র হাইপোস্টোমের নিচের দিকে একটি বৃদ্ধি এলাকা গঠন করে ।

কাজ: (i) দেহাবরণ তৈরির মাধ্যমে দেহকে রক্ষা করে। (ii) মিউকাস দানা নিঃসৃত রস কিউটিকল গঠনে অংশ নেয় ও দেহকে পিচ্ছিল রাখে । (iii) কর্ষিকাতে এরা নিডোরাস্ট ধারণ করে । (iv) প্রবর্ধনগুলো সঙ্কোচন-প্রসারণের মাধ্যমে দেহের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটিয়ে পেশির মতো কাজ করে প্রাণীর চলন, খাদ্যগ্রহণ ইত্যাদিতে সহায়তা করে । (v) দেহকে কোনো বস্তুর সাথে আবদ্ধ রাখতে সাহায্য করে । (vi) মিউকাস দানা সমৃদ্ধ অংশ শ্বসনে অংশ নেয় ।

কাজ : (i) এসব কোষ প্রয়োজনে অন্য যে কোনো ধরনের বহিঃত্বকীয় কোষে পরিণত হয়। (ii) পুনরুৎপত্তি ও মুকুল সৃষ্টিতে অংশ নেয়। (iii) প্রতি ৪৫ দিন অন্তর অন্তর Hydra-র দেহের সকল কোষ ইন্টারস্টিশিয়াল কোষ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয় (Brein, 1955) । কোষের এ বৈশিষ্ট্যকে টটিপোটেন্ট (totipotent) বলে ।

৩. সংবেদী কোষ (Sensory Cell) : এগুলো পেশি-আবরণী কোষের ফাঁকে ফাঁকে, সমকোণে ও বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ানো থাকে, তবে কর্ষিকা, হাইপোস্টোম ও পাদ-চাকতির চারদিকে বেশি দেখা যায় ।প্রতিটি কোষ লম্বা ও সরু। এর মুক্ত প্রান্ত থেকে সূক্ষ্ণ সংবেদী রোম ( sensory hair) বের হয় এবং অপর প্রান্ত থেকে গুটিকাময় বা নোডিওলযুক্ত (nodulated) সূক্ষ্ণ তন্তু নির্গত হয়ে স্নায়ুতন্তুর সাথে যুক্ত হয় ।

কাজ : পরিবেশ থেকে বিভিন্ন উদ্দীপনা (যেমন আলো, তাপ প্রভৃতি) গ্রহণ করে স্নায়ুকোষে সরবরাহ করে।

৪. স্নায়ু কোষ (Nerve Cell) : এসব কোষ মেসোগ্লিয়া ঘেঁষে অবস্থিত, অনিয়ত আকারবিশিষ্ট এবং একটি ক্ষুদ্র কোষদেহ ও দুই বা ততোধিক নোডিওলযুক্ত সূক্ষ্ণ শাখান্বিত স্নায়ুরোম নিয়ে গঠিত। তন্তুগুলো পরস্পর মিলে স্নায়ু-জালিকা গঠন করে ।

কাজ : সংবেদী কোষে সংগৃহীত উদ্দীপনা দেহের বিভিন্ন অংশে সরবরাহ করে।

৫. গ্রন্থি কোষ (Gland Cell) : এগুলো ক্ষরণকারী দানাবিশিষ্ট এক ধরনের পরিবর্তিত লম্বাকার এপিডার্মাল কোষ। মুখছিদ্রের চারদিকে ও পাদ-চাকতিতে প্রচুর গ্রন্থি কোষ দেখা যায় ।

কাজ : (i) মিউকাস ক্ষরণ করে দেহকে কোনো বস্তুর সঙ্গে লেগে থাকতে সাহায্য করে। (ii) বুদবুদ সৃষ্টি করে ভাসতে সাহায্য করে। (iii) মুখছিদ্রের গ্রন্থিকোষের ক্ষরণ খাদ্য গলাধঃকরণে সাহায্য করে ।

৬. জনন কোষ (Germ Cell) : এসব কোষ জননাঙ্গে অবস্থান করে। জননকোষ দুধরনের: শুক্রাণু ও ডিম্বাণু । পরিণত শুক্রাণু অতি ক্ষুদ্র এবং নিউক্লিয়াসযুক্ত একটি স্ফীত মস্তক, সেন্ট্রিওলযুক্ত একটি সংকীর্ণ মধ্যখন্ড ও একটি লম্বা বিচলনক্ষম লেজ নিয়ে গঠিত । পরিণত ডিম্বাণুটি বড় ও গোল; এর সাথে তিনটি পোলার বডি (polar bodies) যুক্ত থাকে ।

কাজ : যৌন জননে অংশগ্রহণ করা ।

৭. নিডোসাইট (Cnidocyte) : Hydra-র পদতল ছাড়া বহিঃত্বকের সর্বত্র বিশেষ করে কর্ষিকার পেশি-আবরণী কোষের ফাঁকে ফাঁকে বা ঐসব কোষের ভিতরে নিডোসাইট অনুপ্রবিষ্ট থাকে। কোষগুলো গোল, ডিম্বাকার বা পেয়ালাকার এবং নিচের দিকে নিউক্লিয়াসবাহী ও দ্বৈত আবরণবেষ্টিত বড় কোষ । কোষের মুক্তপ্রান্তে ক্ষুদ্র, দৃঢ়, সংবেদী নিডোসিল (cnidocil) এবং অভ্যন্তরে গহ্বর ও প্যাঁচানো সুতাযুক্ত নেমাটোসিস্ট বহন করে। গহ্বরটি অপারকুলাম (operculum) দিয়ে ঢাকা । আদর্শ নেমাটোসিস্টের সুতার গোড়ায় ৩টি বড় কাঁটার মতো বার্ব (barb) থাকে এবং গহ্বরটি হিপনোটক্সিন (hypnotoxin) নামক বিষাক্ত রসে পূর্ণ । পরিস্ফুটনরত নিডোসাইটকে নিডোরাস্ট (cnidoblast) বলে ।

কাজ : (i) Hydra-র শিকার অসাড় করা ও ধরার কাজে ব্যবহৃত হয়। (ii) চলনে সহায়তা করে । (iii) আত্মরক্ষায় ব্যবহৃত হয় ৷ (iv) প্রাণীকে কোনো বস্তু আঁকড়ে ধরার কাজে সাহায্য করে । (v) নিডোসাইটের শ্রেণিতাত্ত্বিক গুরুত্ব রয়েছে।

Hydra -র অন্তর্গঠন (Internal Structure of Hydra) ছাড়াও আরো দেখুন

হাইড্রার পরিচিতি