Hydra-র চলন (Locomotion of Hydra)

Hydra-র চলন (Locomotion of Hydra)
Hydra-র চলন (Locomotion of Hydra)

Hydra-র চলন (Locomotion of Hydra)

খাদ্য সংগ্রহ, আত্মরক্ষা, উদ্দীপনায় সাড়া দেয়া, প্রজনন ইত্যাদি প্রয়োজনে প্রাণীরা যখন একস্থান থেকে অন্যস্থানে স্থানান্তরিত হয় তখন তাকে চলন বলে ।

আরো পড়ুনঃ

Hydra অধিকাংশ সময় পানিতে নিমজ্জিত বস্তুর সাথে পাদ-চাকতি দিয়ে লেগে থাকলেও খাদ্যসংগ্রহ, আত্মরক্ষা, জনন, স্পর্শ, ইত্যাদি উদ্দীপনার কারণে স্থানান্তরিত হয়। চলনের জন্য Hydra-র সুনির্দিষ্ট কোনো অঙ্গ নেই । চলন মূলত এপিডার্মিসের পেশি-আবরণী কোষ এবং গ্যাস্ট্রোডার্মিসের পুষ্টি পেশি কোষের পেশি লেজের বা পেশি প্রবর্ধকের মায়োনিমের সঙ্কোচন প্রসারণের মাধ্যমে ঘটে থাকে। তবে কর্ষিকা, নেমাটোসিস্ট, গ্রন্থিকোষ ও পাদ-চাকতি চলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে ।

কোনো কারণে Hydra উদ্দীপিত হলে সেই উত্তেজনা সংবেদী কোষ দ্বারা গৃহীত হয়ে স্নায়ু কোষে পৌঁছে । স্নায়ু কোষের স্নায়ুসূত্র পথে এ উদ্দীপনা পেশি-আবরণী কোষের পেশি লেজের মায়োনিমে পৌঁছালে এটি সঙ্কুচিত হয় ফলে Hydra-র দেহ খাটো ও মোটা হয়। অপরপক্ষে পুষ্টি পেশি কোষের পেশি লেজের মায়োনিমে উদ্দীপনা পৌঁছালে এটা বৃত্তাকার পেশির মতো কাজ করে অর্থাৎ এর সঙ্কোচনে দেহ লম্বা ও সরু হয় । দেহের একপাশের পেশি-আবরণী কোষের সঙ্কোচন এবং অপর পাশের পেশি-আবরণী কোষের প্রসারণের ফলে Hydra দেহকে যেকোনো দিকে বাঁকাতে পারে ।

Hydra-তে বিভিন্ন ধরনের চলন পদ্ধতি দেখা যায়।

নিচে এদের বর্ণনা দেয়া হলো-

১. লুপিং (Looping) বা হামাগুড়ি : লম্বা দূরত্ব অতিক্রমের জন্য Hydra সাধারণত লুপিং চলনের আশ্রয় নেয় । এ প্রক্রিয়ার শুরুতে এক পাশের পেশি-আবরণী কোষগুলো সঙ্কুচিত হয় এবং অপর পাশের অনুরূপ কোষগুলো সম্প্রসারিত হয় । ফলে Hydra গতিপথের দিকে দেহকে প্রসারিত করে ও বাঁকিয়ে মৌখিক তলকে ভিত্তির কাছাকাছি নিয়ে আসে এবং কর্ষিকার গুটিন্যান্ট নেমাটোসিস্টের সাহায্যে ভিত্তিকে আটকে ধরে।

এরপর পাদ-চাকতিকে মুক্ত করে মুখের কাছাকাছি এনে স্থাপন করে এবং কর্ষিকা বিযুক্ত করে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। এ পদ্ধতির পুনারাবৃত্তি ঘটিয়ে Hydra স্থান ত্যাগ করে । জোঁক বা শুঁয়াপোকা চলার সময় যেভাবে ক্রমান্বয়িক লুপ বা ফাঁসের সৃষ্টি হয় হাইড্রার এ চলনও দেখতে অনেকটা একই রকম হওয়ায় ফাঁসাচলনকে জোঁকা চলন বা শুঁয়াপোকা চলন নামেও অভিহিত করা যায় । এ পদ্ধতিতে প্রতিবার চলনে একটি লুপ তৈরি হয় এবং Hydra তার দেহের দৈর্ঘ্যের অর্ধেক দূরত্ব অতিক্রম করে ।

চিত্র ২.১.২২ : Hydra-র লুপিং প্রক্রিয়ায় চলনের বিভিন্ন ধাপ

২. সমারসল্টিং (Somersaulting) বা ডিগবাজী : এটি Hydra-র সাধারণ ও দ্রুত চলন প্রক্রিয়া । স্বল্প দূরত্ব অতিক্রম করার জন্য Hydra সাধারণত এ পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকে । চলনের শুরুতে Hydra দেহকে বাঁকিয়ে চলনের গতিপথে কর্ষিকাস্থিত গুটিন্যান্ট জাতীয় নেমাটোসিস্টের সাহায্যে গতিপথকে স্পর্শ করে, ফলে একটি লুপ বা ফাঁস তৈরি হয় । পরে পাদ-চাকতি বিমুক্ত করে কর্ষিকার উপর ভর দিয়ে দেহকে সোজা করে দেয় এবং পুনরায় দেহকে বাঁকিয়ে পাদ-চাকতির সাহায্যে গতিপথকে স্পর্শ করে, ফলে আরেকটি লুপ তৈরি হয়।

এরপর কর্ষিকা মুক্ত করে পাদ-চাকতির উপর ভর করে দেহকে সোজা করে দেয় । বার বার এ প্রক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে Hydra দ্রুত সামনের দিকে এগিয়ে যায় । এরূপ চলনে Hydra একবার কর্ষিকার উপর এবং একবার পাদ-চাকতির উপর ভর করে দাঁড়ায় যা পর্যায়ক্রমে চলে, তাই একে ডিগবাজী চলন বলা হয় । এ পদ্ধতিতে প্রতিবার চলনে দু’টি লুপ তৈরি হয় এবং Hydra তার দেহের দৈর্ঘ্যের প্রায় দ্বিগুণ দূরত্ব অতিক্রম করে ।

চিত্র ২.১.২১ : Hydra-র সমারসল্টিং প্রক্রিয়ায় চলনের বিভিন্ন ধাপ

৩. গ্লাইডিং (Gliding) বা অ্যামিবয়েড চলন : এ প্রক্রিয়ায় Hydra পদতলের বহিঃত্বকীয় কোষগুলো থেকে পিচ্ছিল রস ক্ষরণ করে । পরে ঐ স্থান থেকেই প্রক্ষিপ্ত কোষীয় ক্ষণপদের অ্যামিবয়েড চলনের সাহায্যে দেহটি অত্যন্ত ধীরগতিতে মসৃণতলে খুব সামান্য দূরত্বে স্থানান্তরিত হয় ।

৪. ভাসা (Floating) : মাঝে মাঝে Hydra পাদ-চাকতির বহিঃত্বকীয় কোষ থেকে গ্যাসীয় বুদবুদ সৃষ্টি করে, ফলে প্রাণী ভিত্তি থেকে বিচ্যুত, হালকা ও উপুড় হয়ে পানির পৃষ্ঠতলে ভেসে উঠে । এখানে বুদবুদ ফেটে মিউকাস ভেলার মতো ছড়িয়ে গেলে Hydra নিম্নমুখী হয়ে ভেসে থাকে । এভাবে প্রাণী ঢেউয়ের আঘাতে কিছুদূর ভেসেও যেতে পারে ।

চিত্র ২.১.২২ : Hydra-র বিভিন্ন ধরনের চলন

৫. সাঁতার (Swimming) : কর্ষিকাগুলোকে ঢেউয়ের মতো আন্দোলিত করে এবং দেহকে ভিত্তি থেকে মুক্ত করে Hydra সহজেই দেহকে আন্দোলিত করে সাঁতার কাটতে পারে ।

৬. হামাগুড়ি (Crawling) : এ প্রক্রিয়ায় Hydra কর্ষিকার সাহায্যে কাছাকাছি কোনো বস্তুকে আঁকড়ে ধরে । পরে পাদ-চাকতি মুক্ত ও কর্ষিকা সঙ্কুচিত করে পাদ-চাকতিকে নতুন জায়গায় স্থাপন করে। এ প্রক্রিয়ায় Hydra-র আরোহণ ও অবরোহণ সম্পন্ন হয় ।

৭. হাঁটা (Walking) : এ ক্ষেত্রে Hydra তার দেহের ভার পাদ-চাকতির উপর না রেখে কর্ষিকার উপর স্থাপন করে এবং কর্ষিকাকে পায়ের মতো ব্যবহার করে উল্টোভাবে ধীর গতিতে চলতে পারে ।

৮. দেহের সঙ্কোচন- প্রসারণ (Body Contraction and Expansion) : এ প্রক্রিয়ায় Hydra দেহকে মুক্ত করে দেহপ্রাচীরের পেশি-আবরণী কোষের সঙ্কোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে দেহের আকার দ্রুত খাটো ও লম্বা করে, ফলে এক ধরনের চলনের সৃষ্টি হয় ।

লুপিং ও সমারসল্টিং চলনের পার্থক্য

Hydra-র চলন (Locomotion of Hydra)

এই হাইড্রা / Hydra ছাড়াও আরো দেখুন