অনার্স তৃতীয় বর্ষ গাইডলাইন:
নোট: আসসালামু আলাইকুম এই গাইডলানটি যারা ভালো করতে চায় তাদের জন্য। কারো ভালো না লাগলে এরিয়ে যাবেন প্লিজ। ভালো করতে গেলে কিছু কষ্ট অবশ্যই করতে হবে।)
প্রারম্ভিক আলোচনা : দেখেন প্রতি ইয়ারের কিছু না কিছু সাবজেক্ট থাকে যেগুলোতে দেখা যায় ইমপ্রুভ এর সংখ্যা বেশি। যেমন- অনার্স প্রথম বর্ষ হিসেব করলে ছত্রাকবিজ্ঞান, অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে- রসায়ন-২, ইংরেজি, অনার্স তৃতীয় বর্ষ- Plant biochemistry, Cytology and Cytogenetics, Plant Physiology, অনার্স চতুর্থ বর্ষ- Biostatistics, Molecular Biology
( এখানে উল্লেখ্য দুইটি সাবজেক্ট আগেই শুরু করবেন এবং আগেই শেষ করবেন সাবজেক্ট সমূহ: Cytology and Cytogenetics ও Plant Biochemistry ) প্রতিদিন দুই ঘন্টা / ১ ঘন্টা করে হলেও অন্য সাবজেক্ট এর সাথে পড়বেন। পাশাপাশি, plant Pathology এর প্যাথোজেনের নাম ও লক্ষণ ডেইলি একটা করে মুখস্ত করে ফেলবেন হয়ে যাবে ছোট শিট বানাবেন একটা খুব কাজে দিবে এটা পরীক্ষা এর সময় পাশাপাশি বিভিন্ন চাকরির ভাইবাতে।
জিম্নোস্পার্ম: এই সাবজেক্ট টা সহজি সচারাচর তেমন ফেল/ ইমপ্রুভ দিতে হয় না। বিগত ৬/৭ বছরের বোর্ড প্রশ্ন পড়লেই হয়ে যায়। পাশাপাশি ক- বিভাগ ২০১৪-২০২২ পর্যন্ত পড়লেই কমন পাওয়া যায়। নগ্নবীজী উদ্ভিদ নিয়ে এখানে পড়া বেশী তাই ওটায় ফোকাস একটু বেশী করবেন। সবচাইতে বেষ্ট হয় বোর্ড পরীক্ষা তে আসা সকল পার্থক্য ৫/৬ টা A4 পেজে সিরিয়ালি লিখে ফেলা। বৈশিষ্ট্য সমূহ, গুরুত্ব, পরাগরেণুবিজ্ঞান, Cycas প্রভৃতি জিনিস ৩/৪ বার মন মতো পড়তে পাড়লে মাথায় এটে যাবে। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস যেগুলো মনে থাকে না চুম্বক অংশ সেগুলো খাতায় লিখে রাখবেন ছোট নোট আকারে তাহলে বেশী সমস্যা হবে না।
সাইটোলজি এন্ড সাইটোজেনেটিক্স: দেখেন এই সাবজেক্ট টি অবশ্যই কঠিন একটা সাবজেক্ট এবং রয়েল সাবজেক্ট ও বলা চলে। তবে আক্ষরিক দৃষ্টিতে কঠিন হলেও বুজে বুজে পড়লে এই সাবজেক্ট এ এ+ নিশ্চিত। আলহামদুলিল্লাহ্ আমার এ+ এসেছিল। দেখেন, অনার্স তৃতীয় বর্ষে কোনো নন- মেজের নাই। বাট কিছু সাবজেক্ট যেমন: plant biochemistry, Plant physiology, Cytology এগুলো এগুলো ট্রিপিকাল সাবজেক্ট তাই খুব সতর্ক ও সেনসিটিভ ওয়েতে প্রস্তুতি নিতে হবে।
এই সাবজেক্ট সম্পর্কিত কিছু টিপস:
১.প্রতিদিন ১ ঘন্টা এই সাবজেক্ট মাষ্ট রুটিনে রাখবেন।
২.Cytogenetics পার্ট টা অনেক কঠিন তাই এই পার্টটা খুব গুরুত্ব সহকারে পরবেন প্লিজ। কোনো কিছু মুখস্ত করতে যাবেন না। বুজে বুজে পড়বেন কোনো কিছু না বুজলে আপনার নিজ ডিপার্টমেন্ট এর শিক্ষককে শেয়ার করবেন বুজিয়ে দিবে।
৩. ধরেন পরীক্ষা তে আসল পেরাসেন্ট্রিক ইনভারশন। আপনি এটা গাইড বই থেকে মুখস্ত করে গেলেন হুবহু কমন ও পড়ল। দেখা গেল হঠাৎ করে পরীক্ষা এর খাতায় লিখার সময় ভিতরের কোনো একটা টার্ম আপনি মাষ্ট বি ভুলে গেছেন তখন আপসোস হবে তাই প্লিজ বুজে বুজে খাতায় নোট করে পরবেন।
৪. গাইডে কিছু কিছু জিনিস ভুল আছে তাই মেইন বই অবশ্যই সাথে রাখবেন।
৫. সকল বোর্ড প্রশ্ন ভালো করে শেষ করবেন ও কঠিন টপিকগুলো খাতায় বারবার লিখে আয়ত্ত করবেন। আমি নিজেও ১৩/১৪ বার লিখে Practice করতাম।
৬. বোর্ড প্রশ্নের প্রতি অতি উৎসাহী হবেন না এই বিষয়ে কমন পরবে তবে এতো না। নমুনা হিসেবে ২০২১ সালের অনার্স তৃতীয় বর্ষ প্রশ্ন গ বিভাগ টা দেখতে পারেন। ডাবল পার্টে ( ক, খ) দিয়ে প্রশ্ন এসেছিল সময়ের অভাবে ফুল উত্তর করা যায় নাই আবার দেখা গেছে ক কমন আসলে খ কম নাই গ - বিভাগ এর।
৭. এই সাবজেক্ট খাতায় সুন্দর করে ডেলিভারি দিতে পারলে A+ নিশ্চিত।
৮. Cytology পার্টটা ইজি এখানকার অনেক পড়া আপনি ইন্টারে থাকতে পড়েছেন যেমন : কোষের গঠন, কোষ প্রাচীর, ফ্লুইড মোজাইক মডেল, ট্রাকিড, ভেসেল, আদি কোষ, প্রকৃত কোষ ইত্যাদি। এগুলো কয়েবার পড়লেই ভালো করতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।
প্ল্যান্ট প্যাথলজি: খুবি সহজ একটি সাবজেক্ট মার্ক তোলাও খুব ইজি। উপরে শুরুতেই বলে দিয়েছি প্যাথোজেন, জীবাণু এগুলো আগেই শেষ করে ফেলবেন এগুলো প্রতি বছর ই আসে। আরেকটা মজার বিষয় হলো। আলুর বিলম্বিত ধ্বসা রোগের প্রতিকার, বা আসল আঁখের লাল পঁচা রোগের প্রতিকার এগুলোর সব প্রতিকার ঘুরে ফিরে এক( মানে গাছটি আগাছা সহ তুলে ফেলতে হবে, গোড়াসহ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে, শস্য পর্যায় অনুসরণ করতে হবে, রোগমুক্ত চারা রোপন করতে হবে, আগাছা দমন করতে হবে, সম্বনিত রোগবালাই ও পোকামাকড় দমন পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে) এগুলোই ঘুরে ফিরে। বিগত বোর্ড প্রশ্ন অনুসরণ করলে ভালোই কমন আসে। এছাড়াও বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের অবদান, পরজীবী, বোর্দ্রো মিশ্রণ, বিভিন্ন টীকা এসে থাকে। এই সাবজেক্ট নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। ১০/১২ দিন ভালো করে পড়লেই কমপ্লিট প্রিপারেশন হয়ে যায়। আর প্যাথোজেনের নাম, লক্ষণ, প্রতিকার সঠিকভাবে লিখতে পারলে ফুল মার্ক
প্ল্যান্ট বায়োক্যামিস্ট্রি: এই সাবজেক্ট টা নিয়ে অনেকের মধ্যে প্রচুর ভয় কাজ করে। এর মূল এবং প্রধান কারণ হচ্ছে এই সাবজেক্টটি শুরুতেই শেষ না করে আগে সহজ সাবজেক্ট শেষ করা। পাশাপাশি, মুখস্ত করা। এটি এমন একটি সাবজেক্ট যেখানে অনায়াসে ছক্কা মারা সম্ভব এ+ পেয়ে নিজের জিপিত্র বাড়ানো পসিবল। এর সাবজেক্ট এর জন্য কিছু আদর্শ কাজ:
২.সকল পার্থক্য একীভূত করে লিখা।
৩. অ্যামাইনো এসিড/ ফ্লাভোনয়েড/লিপিড/ অ্যালকালয়েড ইত্যাদি বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য বোর্ডে আসে এগুলো মাষ্ট শিখবেন।
৪. বিভিন্ন গাঠনিক সংকেত( যেমন- অ্যামাইনো এসিড, স্টার্চ, সেলুলোজ, গ্লাইকোজেন ইত্যাদি) এগুলো খাতায় বারবার practice করবেন। আমি ১৩-১৪ বার খাতায় লিখতাম যেনো পরীক্ষাতে ভুল না হয়। যেমন- " এনজাইমের আধুনিক শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি এটা আভাদের সময় ২০২১ সাল আসবেই খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এটা ১৫/১৬ বার খাতায় লিখে গেছিলাম।
৫.বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়া/ Structure বই থেকে পড়বেন গাইড বইয়ে ভুল থাকে সাধু সতর্কতা।
৬. প্রতিদিন ১ ঘন্টা আপনার ডিকশনারীতে এই সাবজেক্ট টা মাষ্ট রাখবেন ভাই। এটা যদি ডেইলি না পরেন পরীক্ষা এর সময় পরেন ভাই হতাশ হবেন এবং চোখে সরষে ফুল দেখবেন!
৭. ভয়কে জয় করতে শিখতে হবে পরিশ্রম এর পাশাপাশি ভাগ্য ও থাকতে হবে। নিয়মিত আল্লাহর ইবাদাত আদায় করতে হবে।
ইকোলজি: এটি তুলনামূলক খুব সহজ একটি সাবজেক্ট। আপনি এই সাবজেক্ট এর বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে সম্যক ধারণা নিতে পারলেই আপনি পাশ করে যাবেন। যেহেতু প্রপার একটি থিওরী সাবজেক্ট তাই। সতর্কতা: প্রচুর লিখা লাগবে নতুবা মার্ক খুব কম পাবেন বি- এর বেশি আসবেই না। খ- বিভাগ ২/২.৫ পেজ। গ- বিভাগ লিখবেন ৫/৬ পেজ নতুবা খুব কম মার্ক পাবেন। নিজেই সাফারার অন্য সাবজেক্ট এর মতো মূল জিনিস লিখেছিলাম শুধুমাত্র এই সাবজেক্ট এ B+ পেয়েছিলাম তাই এই সাবজেক্ট এ সবার প্রতি অনুরোধ ভালো লিখতে হবে। পাশাপাশি, বোর্ড প্রশ্ন সব আয়ত্ত করে যেতে হবে।
প্ল্যান্ট ফিজিওলজি: এই সাবজেক্ট এ প্রতি বছর অনেক ইমপ্রুভ দেয় তাই এই সাবজেক্ট এর প্রস্তুতি খুব সতর্কতার সহীত নিতে হবে এবং প্রস্তুতি নিতে হবে বুজে বুজে। মনে রাখবেন এই সাবজেক্ট এ এমন কিছু টপিক আছে যেগুলো, ইন্টারে ছিল যেমন- সালোকসংশ্লেষণ, চক্রীয়/ অচক্রীয় ফটোফসফোরাইলেশন, আলোক নির্ভর পর্যায়, অন্ধকার পর্যায়, ফটোপিরিওডিজম, স্ববাত শ্বসন, অবাত শ্বসন, C3,C4, CAM, ভার্নালাইজেশন, ফার্মেন্টেশন প্রভৃতি এগুলোর কিছু অংশ HSC বেসড। তাই এগুলো আশা করি এগিয়ে থাকবেন। পাশাপাশি, বিগত বছরের বোর্ড প্রশ্নগুলো ফলো করবেন মোটামুটি কমন চলে আসে, মেইন বই মাষ্ট ফলো করবেন। বিক্রিয়া ও বিভিন্ন রাসায়নিক সংকেত। উদ্ভিদের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক হরমোন ( অক্সিন, সাইটোকাইনিন.....) প্রভৃতি খাতায় ১০/১৫ বার লিখে Practice করবেন। দেখবেন এই সাবজেক্ট এর বস হয়ে গেছেন। এই সাবজেক্ট পিউর থিওরী নয় তাই এই সাবজেক্ট এ ভালো কিছু করা সম্ভব। ঘাবড়ানোর কিছু নাই, আগেঈ ঘাবড়ে গেলে হেরে গেলেন। নোট করবেন নোট করলে লিখাটা ভালো মনে থাকে।
জেনেটিক্স: খুবি মজার একটি সাবজেক্ট এবং এই সাবজেক্ট এ এ+ পাওয়া খুব ইজি। তবে তবে তবে...... না বুজে কিছু পড়বেন না। ডাহা মুখস্ত করতে যাইয়েন না। ৯:৩:৩:১ ব্যখ্যা করতে বলছে হুবহু কপি তুলে দিয়েন না পরীক্ষা তে ভুল হতে পারে। Hsc Based কিছু বেসিক পাবেন যেমন- মেন্ডেলের প্রথম সূত্র, দ্বিতীয় সূত্র, ব্যতিক্রম, পলিজেনেটিক ইনহ্যারিট্যান্স, লিঙ্গ নির্ধারণ নীতি, মেন্ডেলীয় দ্বি- সংকর অনুপাত, ড্রসোফিলা, প্লাজমিড, DNA, RNA, DNA অর্ধরক্ষণশীল, লিংকেজ, ট্রান্সফরমেশন, ট্রান্সডাকশন, মিউটেশন, সম্পূর্ণ প্রকটতা, অসম্পূর্ণ প্রকটতা ইত্যাদি তদসংলগ্ন টপিক অতীতেও পরেছেন তাই আশা করি সমস্যা হবে না। বোর্ড প্রশ্ন মোটামুটি রিপিট হয়।
{ এছাড়াও একটি অঙ্ক রয়েছে প্রায় ই আসে, যেমন- কোন জিনটি মধ্যবর্ততী স্থানে অবস্থিত, জিনগুলোর মধ্যে দূরত্ব ও ক্রোমোজোম ম্যাপ নির্ণয়, কো- এফিসিয়েন্ট অব ইনসিডেন্স নির্ণয় এই টাইপ ম্যাথ একটা টাইপ শিখে নিলেই হলো। ১০ মার্ক সিউর} এছাড়াও টেকনিক্যালি প্রস্তুতি নিবেন। ৪ টি সাবজেক্ট নোট করবেন মাষ্ট: জেনেটিক্স, সাইটোলজি, ফিজিওলজি, Biochemistry. নোট করে পড়ার ফায়দা অনেক।
১.plant Biochemistry + Cytology and Cytogenetics পরীক্ষা এর আগেই শেষ করে ফেলবেন।
২.Plant Biochemistry +Physiology+ Genetics+ plant Pathology মাষ্ট বি নোট করে পড়বেন।
৩.ইকোলজি সাবজেক্ট টা একটু বেশি লিখবেন পরীক্ষা এর হলে ইতিহাসের মতো নতুবা মার্ক কম পাবেন।
৪.অনার্স তৃতীয় বর্ষ পরীক্ষা শুরু হতে অনেক সময় বাকি তাই প্রতিটা বিষয় ১৩ দিন করে টাইম নিলেও ৭ টা সাবজেক্ট ভালো ভাবে শেষ হয়ে যায়।
৫.বিগত বোর্ড প্রশ্ন (২০১৬-২১) পর্যন্ত সব পড়ে ফেলবেন পাশাপাশি ৯৯℅ গুলোও। কিছু সাবজেক্ট এ আবার বোর্ড প্রশ্ন কম রিপিট হয়
৬. পড়ার রুমে ঘড়ি না রাখাই উত্তম এতে করে দেখবেন আপনার সময় অতি দ্রুত চলে যাচ্ছে হতাশা বাড়ছে।
৭. পরীক্ষা এর হলে কাটাকাটি কম করবেন। নীল কলম ইউস করবেন এতে করে খাতাটি শ্রুতিমধুর হয়।
৮. পরীক্ষা এর হলে শুরুতে ক- বিভাগ লিখতে হয় ক বিভাগ সুন্দর করে লিখবেন মনে রাখবেন, First Impression is the best Impression. আপনি ক বিভাগ শুরুতে ফ্রেশ করে ১০ টা লিখতে পারলে পরীক্ষক এর আপনার প্রতি একটা পজিটিভ ধারণা চলে আসবে। যার প্রভাব পুরো খাতায় পরবে।
( উপোরোক্ত গাইডলাইনটি নিজের অভিজ্ঞতা এর আলোকে লিখা আমি যেভাবে পড়তাম শেয়ার করেছি ইনশাআল্লাহ। আল্লাহর রহমতে অনার্স তৃতীয় বর্ষে জিপিত্র - ৩.৬৯ এসেছিল আলহামদুলিল্লাহ্ )
( লিখাটি কেউ কপি করতে চাইলে কার্টেসী দিয়েন। যেকোন দরকারে কমেন্ট বা ইনবক্সে জানাবেন ধন্যবাদ আসসালামু আলাইকুম)